সফটওয়্যারে দেখানো চাল মানুষ খাবে কী করে!
বাঙালিদের একটা বহুল প্রচলিত প্রবাদ আছে- ‘কাজির গরু কিতাবে আছে, বাস্তবে নেই’; তেমনই এক প্রহসনমূলক ঘটনা ঘটল গত এপ্রিল মাসে রাজশাহীতে, টিসিবির বরাদ্দে চাল থাকলেও বাস্তবে চাল ছাড় করা হয়নি; কিন্তু সফটওয়্যারে দেখানো হয়েছে উপকারভোগীরা চাল পেয়েছেন। এখন এই সফটওয়্যারে দেখানো চাল মানুষ খাবে কী করে সেটাই প্রশ্ন।
আজ শনিবার ১৭ মে সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, টিসিবির পরিবেশকরা বলছেন, চালের তথ্য না দিলে সফটওয়্যার এন্ট্রি নিচ্ছে না। তারা জেলা প্রশাসকের বাণিজ্য শাখার পরামর্শ অনুযায়ী চালসহ বিতরণ দেখাচ্ছেন। এ বিষয়ে রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মির্জা ইমাম উদ্দিন গত সোমবার বিকেলে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘সফটওয়্যার কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করা হয়। আমরা স্থানীয়ভাবে কিছু করতে পারছি না।’
টিসিবির এপ্রিল মাসের বরাদ্দের অনুমোদনপত্রে দেখা যায়, প্রত্যেক উপকারভোগী ২ লিটার ভোজ্যতেল, ১০ কেজি চাল, ২ কেজি মসুর ডাল বরাদ্দ পাবেন। প্রতি কেজি চাল ৩০ টাকা, ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা ও তেল প্রতি লিটারের দাম ১০০ টাকা। নিত্যপণ্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে এ বরাদ্দ অনুমোদন করা হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত মতে, টিসিবির অ্যাকটিভেটেড স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের বিপরীতে বরাদ্দ দিতে হবে। কার্ড ছাড়া কোনো বরাদ্দ দেয়া যাবে না। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কার্ড নিয়েও আছে গোলমাল। টিসিবি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী জেলা ও মহানগর মিলে টিসিবির মোট উপকারভোগী কার্ড ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৪০টি। আওয়ামী লীগের নেতারা অনেক কার্ড ইচ্ছেমতো করে নিয়েছেন- এমন অভিযোগে গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর কার্ড অ্যাকটিভেশনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বর্তমানে অ্যাকটিভেটেড কার্ডের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৮ হাজার ৮৮৭টি। এই কার্ডের বিপরীতে এপ্রিল মাসের বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাজশাহী মহানগরে পরিবেশক আছেন ৮১ জন ও জেলায় ১৪২ জন। তবে এপ্রিল মাসের বরাদ্দ দেয়া অন্যান্য পণ্যের সঙ্গে টিসিবি থেকে অনুমোদনের পরও পরিবেশকদের চাল দেয়া হয়নি। জনপ্রতি ১০ কেজি চাল দেয়া হয়েছে লেখা থাকলেও বাস্তবে কাউকে চাল দেয়া হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, সফটওয়্যারে দেখানো চাল মানুষ খাবে কী করে? আরও প্রশ্ন, এ কেমন সফটওয়্যার বাস্তব কার্যক্রম ছাড়া এন্ট্রি দেখাতে হয়? দ্বিতীয় যারা চাল পাননি তারা তাহলে পরে কীভাবে চাল পাবেন? তৃতীয় প্রশ্ন, একবার যখন একটি পণ্যে এরকম হয়েছে, পরবর্তীতেরও এরকম আরও ঘটনা ঘটতে পারে। যদি তা প্রকাশিত না হয় তাহলে চুরির সুযোগ থাকবে। বাংলাদেশের বহু ক্ষেত্রেই ইতোপূর্বে এরকম দেখা গেছে খাতাপত্রে হিসাব থাকলেও বাস্তবে উপকারভোগীরা উপকার পাননি, বরং অসাধু ব্যক্তিরা এই সুযোগে আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। এটা বাংলাদেশে একটা অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে দীর্ঘকাল আগেই। ডিজিটাল পদ্ধতি আসার পর আশা করা গিয়েছিল এ ধরনের গরমিল কমবে; কিন্তু দেখা যাচ্ছে সফটওয়্যারেও লুকোচুরি কর্মকাণ্ড ভালোই করা যাচ্ছে।
সফটওয়্যার কারা কেন্দ্রীয়ভাবে পরিচালনা করেন তাদের চিহ্নিত করা হোক। তাদের কাছ থেকে জবাবদিহি আদায় করা হোক। তাদের গাফিলতির অপরাধ প্রমাণিত হলে বিচারের আওতায় আনা হোক। তারা এখন যেভাবেই ঘটনার ব্যাখ্যা দিক, এটা যে বড় ধরনের একটা অপরাধ তাদের স্বীকার করতেই হবে। এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার না হলে ভবিষ্যতেও এসব ঘটনা ঘটতে থাকবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে