কারা কর্তৃপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে যেভাবে পালালেন ফাঁসির আসামিরা
শুধুমাত্র একটি স্ক্রু-ড্রাইভার ও স্টিলের পাত দিয়ে কারাগারের ছাদ ফুটো করে কারাগার থেকে পালান ফাঁসির সাজাপ্রাপ্ত চার কয়েদি। তবে পালিয়ে লাভ হয়নি তাদের। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় বিফলে যায় তাদের এ দুঃসাহসিক চেষ্টা। কারাগার থেকে পালানোর দেড় ঘণ্টার মধ্যেই পুলিশের ফাঁদে ধরা পড়েন তারা।
এ ঘটনাটি ঘটে বগুড়া জেলা কারাগারে। তবে এ ঘটনা বলে দিচ্ছে কেমন ছিল বন্দিশালার নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যদিও কয়েদিদের দীর্ঘদিনের এ চেস্টা কীভাবে কারা কর্তৃপক্ষের আড়ালে ছিল তার উত্তর এখন পর্যন্ত মেলেনি।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে জেলা কারাগার থেকে পালিয়ে যান চার কয়েদি। তাদের লক্ষ্য ছিল কারগার ঘেঁষে বয়ে যাওয়া করতোয়া নদী পার হওয়া। এরপরই পরিকল্পনা অনুযায়ী যে যার মতো গন্তব্যে চলে যাবে। কিন্তু বন্দিশালা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে গিয়ে গ্রেপ্তার হন তারা। পুলিশেরও ধারণা ছিল, আসামিরা পালানোর জন্য নদীই বেছে নেবেন। তাই নদীর ধার দিয়েই নজরদারি বাড়ানো হয়েছিল।
কারাগার থেকে পালানো চার কয়েদি
কারাগার থেকে পালানো চার আসামি হলেন- নরসিংদির ফজরকান্দি গ্রামের আমির হামজা ওরফে আমির হোসেন (৪১), কুড়িগ্রাম জেলার ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা নজরুল ইসলাম মঞ্জুর (৬০), বগুড়া কাহালু উপজেলার উলট্ট গ্রামের জাকারিয়া (৩৪) ও বগুড়া সদরের কুটিরবাড়ি গ্রামের ফরিদ শেখ (৩০)। তারা সকলেই হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ড সাজা পাওয়া আসামি।
তাদের মধ্যে হামির হামজা ও নজরুল ইসলাম মঞ্জুর ২০১৪ সালের ১৪ জানুয়ারি ভুরুঙ্গামারী উপজেলার দিয়াডাঙ্গা গ্রামে একই পরিবারের চারজনকে কুপিয়ে হত্যা করেন। সেই মামলায় ২০২১ সালের ১৬ ফ্রেব্রুয়ারি আদালত তাদের ফাঁসির রায় ঘোষণা করে।
পুলিশের দেয়া তথ্যমতে, এই চার আসামির বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি মামলা আছে।
এসপির সংবাদ সম্মেলন
চার আসামিকে গ্রেপ্তারের পর বুধবার (২৬ জুন) সকালে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করেন বগুড়ার পুলিশ সুপার (অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী।
এ সময় এসপি বলেন, আসামিরা প্রথমে ছাদ ফুটো করে বের হন। পরবর্তীতে বিছানার চাদর ও পোশাক ব্যবহার করে রশি বানিয়ে জেলের দেয়াল টপকান। বুধবার ভোররাতে সংবাদ পেয়ে শহরে তল্লাশি শুরু করা হয়। এক পর্যায়ে শহরের চেলোপাড়া চাষীবাজার থেকে চারজনকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, জেলা কারাগার থেকে পাঠানো ছবি দেখে আসামিদের সনাক্ত করা হয়। পরে তাদেরকে জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কার্যালয়ে নেয়া হয়। সেখানে কারা কর্তৃপক্ষ তাদেরকে সনাক্ত করে।
যেভাবে গ্রেপ্তার হন পলাতক আসামিরা
কারগার থেকে আসামি পালানোর খবর পেয়ে তাদের ধরতে অভিযানে নামে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। করতোয়া নদীর পাড় দিয়ে আসামিদের খুঁজছিলেন বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) খোরশেদ আলম। এক পর্যায়ে শহরের চেলোপাড়া এলাকার চাষীবাজারে চারজনের দেখা পান তিনি। তখনই সঙ্গীয় ফোর্সসহ তাদেরকে গ্রেপ্তার করেন তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এসআই খোরশেদ বলেন, আমার ধারণা ছিল যে, আসামিরা করতোয়া নদীর ধার দিয়েই পালাতে পারেন। এ কারণে সেদিকে নজরদারি বাড়ানো হয়। এক পর্যায়ে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের শরীর ভেজা ছিল।
বগুড়া জেলা কারাগার
বগুড়া জেলা কারাগার অনেক পুরোনো ভবনে অবস্থিত। ১৮৩৩ সালে এই কারাগার নির্মাণ করা হয়। সেই ভবনের ছাদ ও দেয়ালের অনেক স্থানে বেড়ে উঠেছে ছোট ছোট গাছ। দুর্বল হয়ে পড়েছে ভবনটির চার দেয়ালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ কারণেই কয়েদিরা ভবনের ছাদ ফুটো করে পালানোর পরিকল্পনা করেন।
কারাগার থেকে আসামি পালানোর ঘটনাটি কি শুধুই কারা কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব অবহেলা? নাকি এ কাজে তাদেরও কেউ জড়িত-এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো জবাব মেলেনি।
তবে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমান জানান, কয়েদি পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় তদন্ত করা হবে। কারা কর্তৃপক্ষের যার যে দায়িত্ব সেই অনুযায়ী এ ঘটনার দায় নির্ধারণ করা হবে। একইসঙ্গে কারাগারের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে