Views Bangladesh Logo

অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো কতটা সহজ?

Amin Al  Rasheed

আমীন আল রশীদ

যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে- সেই দলটি দেশ স্বাধীন হওয়ার ৫৩ বছর পর গণঅভ্যুত্থানের মুখে ক্ষমতাচ্যুত হলো- তার পেছনে অন্তত বিশটি কারণ আছে। এখানে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব বা বিদেশি ইন্ধনের অভিযোগ যতই থাকুক, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় আওয়ামী লীগ যে দুর্নীতি, দলীয়করণ ও স্বজনপ্রীতির কারণে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল- সেটি অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই।

গত বছরের ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে যে ধরপাকড় শুরু হয়েছে তাতে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ জন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, প্রায় অর্ধশত সংসদ সদস্য, পুলিশের সাবেক দুই আইজি, সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেলসহ উচ্চপদস্থ ৩২ জন কর্মকর্তা কারাগারে আছেন। সাবেক দুই মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী এবং এম এ মান্নান জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। এছাড়া সারা দেশের কারাগারে আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ-সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী জেলে।

দলের প্রধান শেখ হাসিনাসহ আরও অনেক নেতা ভারত ও যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। দিল্লিতে অবস্থান করলেও শেখ হাসিনা মাঝেমধ্যেই অনলাইনে দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কিছু নেতাও মাঝেমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হন। কেউ কেউ অনলাইনভিত্তিক কিছু টকশোতে হাজির হন। বিচ্ছিন্নভাবে দলটির নেতাকর্মীরা মাঝেমধ্যে ঝটিকা মিছিল করার চেষ্টা করেন। যার অবশ্যম্ভাবী পরিণতিতে তাদের অনেকে গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান। সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ এ মুহূর্তে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে বললেও ভুল হবে না।

আগামী জাতীয় নির্বাচন কবে হবে সেটি এখনো নিশ্চিত নয়। বরং আগামী ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে বলে প্রধান উপদেষ্টা ঘোষণা দিলেও রাজনৈতিক দলগুলো তো বটেই, সাধারণ মানুষেরও বিরাট অংশ এখনো এটা মনে করে না যে, এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন হবে। কেননা, এনসিপি খুব স্পষ্ট করেই বলছে আওয়ামী লীগের বিচার ও সংস্কার শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নির্বাচন হবে না। এটা মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, এনসিপি এখনো একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল না হলেও সরকারের ভেতরে তাদের প্রভাব অনেক এবং এই দলটির অনেক অবস্থানই সরকারের অবস্থান বলেও মনে করা হয়। সুতরাং বিচার ও সংস্কার যেহেতু একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং আগামী বছরের জুনের মধ্যে এগুলো সম্পন্ন করা করা কঠিন- ফলে এই সময়ের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাবনা আপাতদৃষ্টিতে কম।

তবে নির্বাচন কবে হবে- আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা বা তাদের নিবন্ধন বাতিল করা হবে কি না- তার পাশাপাশি বিদ্যমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো কতটা সহজ সেটি আলোচনার দাবি রাখে। বিশেষ করে দলটির ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক কৌশল, সংগঠনগত শক্তি ও জনভিত্তির অবস্থান নতুন করে বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।

১. সংগঠন ও নেতৃত্বের কাঠামো: আওয়ামী লীগ একটি সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের দল। বিশেষত ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের জুলাই পর্যন্ত টানা ক্ষমতায় থাকার সুবাদে দলের সাংগঠনিক কাঠামো ছিল সুসংহত। তবে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতায় থাকার ফলে তৃণমূলে বিভাজন, একটি নির্দিষ্ট সুবিধাভোগী শ্রেণির উদ্ভব এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় শেখ হাসিনার একনায়কতান্ত্রিক হয়ে ওঠাসহ নানা কারণে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ দুর্বল হয়েছে। কেননা দলের ভেতরে ব্যক্তি শক্তিশালী হয়ে উঠলে দল দুর্বল হয়ে যায়। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে তা-ই হয়েছে। ফলে ঘুরে দাঁড়াতে হলে আওয়ামী লীগকে তৃণমূল থেকে সংগঠিত করতে হবে যা সময়সাপেক্ষ ও শ্রমসাধ্য।

২. জনসমর্থন ও জনবিরোধী ইমেজ: দীর্ঘমেয়াদি শাসনকালে দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও জবাবদিহির ঘাটতির কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জনমনে একধরনের বিরূপ ধারণা গড়ে উঠেছে- জুলাই আন্দোলনে যার চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের মধ্যে পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা তীব্র হয়েছিল বলে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা একটি ‘ছোট আন্দোলন’ ধীরে ধীরে সরকার পতনের এক দফায় পরিণত হয়- যেখানে শেষ দিকে দল-মত নির্বিশেষে প্রচুর সাধারণ মানুষ একাত্ম হয়ে যান। ফলে শুধুমাত্র একটি বিশাল ভোটব্যাংক, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহ্য বা অতীত সাফল্যের ওপর ভর করে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়ানো কঠিন হবে।

৩. আন্তর্জাতিক সমীকরণ: আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষত ভারত, চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা ছিল দলটির অন্যতম শক্তি; কিন্তু অভ্যুত্থানের পর এই আন্তর্জাতিক অংশীদারদের অবস্থান কী হবে তা এখনো পরিষ্কার নয়। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দলটির প্রধান শেখ হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিলেও ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে ভারতের অবস্থান কী হবে তা এখনো খুব পরিষ্কার নয়। তাছাড়া বাংলাদেশ একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র হওয়ায় ভারত চাইলেও এখানে যা খুশি করতে পারবে না। কারণ তাকে কূটনীতি এবং আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মানতে হবে। দিল্লির কেন্দ্রীয় সরকারকেও তার নিজের দেশের ভেতরেই নানাবিধ সংকট মোকাবিলা করতে হয়।

৪. আন্দোলনের সক্ষমতা: অতীতে বিরোধী দলের ভূমিকায় আওয়ামী লীগ যে ধরনের গণআন্দোলন গড়ে তুলতে সক্ষম ছিল, এখন সেই দক্ষতা অনেকটাই হারিয়েছে। নেতৃত্বের বার্ধক্য, নতুন নেতৃত্বের সংকট এবং তরুণদের মধ্যে অনীহা- এসব কিছু দলটির আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

. রাষ্ট্রযন্ত্রে প্রভাব: একটি বড় সংকট হলো আওয়ামী লীগ বহু বছর রাষ্ট্রযন্ত্রের ওপর নির্ভর করেই টিকে ছিল। প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এমনকি বিচারব্যবস্থায়ও দলীয় প্রভাব ছিল স্পষ্ট। অভ্যুত্থানের পর সেই কাঠামো ভেঙে পড়ায় দলটি এখন নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়েছে- যা তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে অনেকগুলো ‘যদি-কিন্তু’র মধ্যে ঠেলে দিয়েছে।

৬. সামরিক বাহিনীর ভূমিকা: জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলন দমনে রাষ্ট্রের অন্যান্য বাহিনীর মতো সামরিক বাহিনী সরাসরি সরকারের আদেশ পালন করেনি। অর্থাৎ তারা আন্দোলনকারীদের দমনে অস্ত্র ব্যবহার করেনি- যা আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। সুতরাং আগামী দিনের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের ফিরে আসা বা ঘুরে দাঁড়ানো কতটা সহজ হবে সেটি অনেকখানি নির্ভর করবে এই সামরিক বাহিনীর ওপর। বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৯৭৫ ও ২০০৭ সালের ঘটনা এটি প্রমাণ করে যে, সেনাবাহিনী কেবল জাতির ক্রান্তিকালে তাদের ‘ত্রাণকর্তা’ হিসেবে আবির্ভূত হয় না- বরং অনেক সময় তাদের নিজেদেরও রাজনৈতিক অভিলাস থাকে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনেকটাই নির্ভর করবে সেনাবাহিনী নতুন শাসনব্যবস্থাকে কতটা দীর্ঘস্থায়ী করতে চায় এবং অপরাপর দলগুলোর ব্যাপারে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী- তার ওপর।

৭. ইসলামপন্থিদের ভূমিকা: অভ্যুত্থানের পর ইসলামপন্থি দল ও গোষ্ঠীগুলো- বিশেষত জামায়াত, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মতো দল ও সংগঠনগুলো অনেক বেশি সক্রিয়। এমনকি খেলাফতের দাবিতে আন্দোলনরত নিষিদ্ধ দল হিযবুত তাহরীরও ৫ আগস্টের পর থেকে বড় পরিসরে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা করেছিল। যদিও সরকার তাদের সেই সুযোগ দেয়নি; কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানে এই ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর বড় ভূমিকা থাকায় অন্তর্বর্তী সরকার তাদের ব্যাপারে ‘সহানুভূতিশীল’। উপরন্তু আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে একটি বড় অভিযোগ ছিল যে, তারা ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোকে দমন-পীড়ন করেছে ফলে সেই শক্তিগুলো যখন মাঠে সক্রিয়, তখন আওয়ামী লীগকে ঘুরে দাঁড়াতে হলে এই গোষ্ঠীগুলোকেও মোকাবিলা করতে হবে- যা বেশ কঠিন।

৮. দ্বিমুখী চাপ: ইসলামপন্থিদের উত্থান আওয়ামী লীগের জন্য একটি দ্বিমুখী চাপ তৈরি করবে। যেমন একদিকে সংগঠিত ধর্মীয় রাজনীতির চ্যালেঞ্জ অন্যদিকে আন্তর্জাতিক পরিসরে নিজেদের অবস্থান ব্যাখ্যার দায়। যদি আওয়ামী লীগ ধর্মীয় রাজনীতির সঙ্গে আপসের পথ না নেয় তাহলে বিরোধী রাজনীতির জায়গায় দাঁড়িয়ে ইসলামী দলগুলোর প্রভাব মোকাবিলা করা তার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে।

৯. প্রবাসী রাজনীতি ও লবি: আওয়ামী লীগ বহির্বিশ্বে বিশেষত প্রবাসী বাঙালি কমিউনিটিগুলোর মধ্যে এখনো শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দলটির অভিবাসী শাখাগুলোর শক্তিশালী লবি ও গণসংযোগ কাঠামো রয়েছে- যারা জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান পার্লামেন্ট, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ কিংবা অ্যামনেস্টির মতো সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণে সক্রিয় ভূমিকা নিতে পারে। পাশাপাশি, পশ্চিমা শক্তিগুলোর কাছে জুলাই অভ্যুত্থানকে গণতন্ত্রের বিপর্যয় ও চরমপন্থার উদ্ভব হিসেবে চিত্রিত করছে। এই কৌশল কতটা সফল হবে সেটি নির্ভর করছে অন্তর্বর্তী সরকারের আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক দক্ষতা এবং আঞ্চলিক শক্তিগুলোর (বিশেষত ভারত ও চীন) অবস্থানের ওপর।

১০. বিএনপির ভূমিকা: এ মুহূর্তে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা এবং তাদের নিবন্ধন বাতিলের দাবিতে সোচ্চার জুলাই অভ্যুত্থানের নেতত্বে থাকা তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। এই ইস্যুতে জামায়াতের অবস্থান এনসিপির কাছাকাছি হলেও বিএনপির অবস্থান মাঝামাঝি। তারা জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালীন গণহত্যার অভিযোগে দায়েরকৃত মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা এবং তৎকালীন সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিচার দাবি করলেও কোনো দলকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে নয় বলে জানিয়েছে। এমনকি বৃহস্পতিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, যারা আগে আওয়ামী লীগ করতেন কিন্তু দলটির দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে সরব ছিলেন, এলাকায় সম্মানিত এবং যাদের ভাবমূর্তি ভালো তারা বিএনপির সদস্য হতে পারবেন। তার ভাষায়, স্বৈরাচার আমলে অনেকেই বিএনপির সদস্য হতে চেয়েও পারেননি। এখন সেই ভীতিকর পরিস্থিতি না থাকায় অনেকেই সদস্য সংগ্রহ অভিযানে সাড়া দেবেন বলে তিনি মনে করেন।

অনেকে মনে করেন, নির্বাচন ইস্যুতে বিএনপি এবং তাদের শরিকদের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব বাড়তে থাকলে বা নির্বাচন অনিশ্চিত হয়ে পড়লে যদি রাজপথে তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলে তখন ভেতরে ভেতরে আওয়ামী লীগের মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীরা হয়তো বিএনপির সঙ্গে গাটছড়া বাঁধবেন; কিন্তু সেটিও নির্ভর করছে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের কৌশলের ওপর। শীর্ষ নেতৃত্ব বলতে যাদের বোঝানো হয় তাদের কেউই দেশে নেই। থাকলেও কারাগারে। ফলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা কার নির্দেশনায় কাজ করবেন, সেটি বড় প্রশ্ন। তবে স্থানীয়ভাবে টিকে থাকার কৌশল হিসেবে অনেকে বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হতে পারেন বলে ধারণা করা হয়। সেটিও শেষ পর্যন্ত দল হিসেবে আওয়ামী লীগের ঘুরে দাঁড়াতে কতটা সহায়ক হবে তা এখনই বলা মুশকিল।

আমীন আল রশীদ: সাংবাদিক ও লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ