Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

উচ্চাভিলাষী রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কতটা সম্ভব?

M A  Khaleque

এম এ খালেক

শুক্রবার, ২৪ মে ২০২৪

র্থনৈতিক বিষয়র সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটি আগামী তিন বছর মেয়াদি (২০২৪-২০২৫ থেকে ২০২৬-২০২৭ অর্থবছর) জাতীয় রপ্তানি নীতিমালার খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে। অনুমোদিত এই খসড়া রপ্তানি নীতিমালা যে কোনো বিচারেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নীতিমালায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারমূলক ও বিশেষ উন্নয়নমূলক খাতগুলোর জন্য তুলনামূলক স্বল্প সুদে ঋণদানসহ বিদ্যুৎ,পানি,গ্যাস ইত্যাদি খাতে ভর্তুকি এবং বিশেষ সুবিধা প্রদানের কথা বলা হয়েছে। তবে এই সুবিধাসমূহ দেয়া হবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার নীতিমালার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে। অনুমোদিত খসড়া রপ্তানি নীতিমালার সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হচ্ছে এতে প্রতি বছর ক্রমবর্ধমান হারে রপ্তানি আয় বাড়ানোর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। নীতিমালা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত সাল অর্থাৎ ২০২৬-২০২৭ অর্থবছরে দেশের মোট রপ্তানি আয় ১১ হাাজর কোটি মার্কিন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বিদ্যমান রপ্তানি নীতিমালার মেয়াদ আগামী ৩০ জুন শেষ হবে। ১ জুলাই থেকে নতুন রপ্তানি নীতিমালা কার্যকর হবে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ পণ্য ও সেবা রপ্তানি খাতে মোট ৬ হাজার ৩০৫ কোটি মার্কিন ডলার আয় করেছে। এর মধ্যে পণ্য রপ্তানি খাত থেকে আসে ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাৎ প্রস্তাবিত রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে আগামী তিন বছরে বিদ্যমান রপ্তানি আয় প্রায় দ্বিগুন করতে হবে।

অনুমোদিত খসড়া রপ্তানি নীতিমালা নানা কারণেই আলোচিত-সমালোচিত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদ এবং রপ্তানি সংশ্লিষ্টদের অনেকেই মনে করছেন, আগামী তিন অর্থ বছরের জন্য যে রপ্তানি নীতিমালা অনুমোদন করা হয়েছে তা মোটেও বাস্তবতার প্রতিফলক নয়। তাই এটা অর্জিত হবার সম্ভাবনা খুবই কম। আন্তর্জাতিক অর্থনীতি এবং বাংলাদেশে বিদ্যমান বাস্তবতায় মাত্রা তিন বছরের মধ্যে রপ্তানি আয় প্রায় দ্বিগুন করে ফেলাটা কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধির ধারা বর্তমানে সন্তোষজনক নয়। অনুমোদিত নতুন রপ্তানি নীতিমালা নিয়ে আত্মতৃপ্তি লাভ করা গেলেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব হবে না।

একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পণ্য সেবা রপ্তানি খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন সময় নানাভাবে রপ্তানি আয় বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেছে। অন্তত দৃশ্যমান উদ্যোগের কোনো অভাব পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু তারপরও আমাদের রপ্তানি আয় প্রত্যাশিত মাত্রায় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। এ নিয়ে কর্তৃপক্ষীয় পর্যায়ে তেমন কোনো উদ্বেগ আছে বলে মনে হয়নি। এক সময় বাংলাদেশের অর্থনীতি কার্যত কৃষি খাতের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল ছিল। স্বাধীনতা অর্জনের পরবর্তী এক দশক পর্যন্ত বাংলাদেশ অর্থনীতি মূলত কৃষি খাতের উপর নির্ভও করেই আবর্তিত হচ্ছে। আমাদের রপ্তানি পণ্যের শীর্ষস্থান দখল করে রেখেছিল পাট। বাংলাদেশ প্রচুর পরিমাণে কাঁচাপাট এবং কিছু আধা প্রক্রিয়াজাত পাট পণ্য রপ্তানি করতো। কিন্তু বিশ্বব্যাপী পাটজাত পণ্যের বিকল্প উদ্ভাবিত এবং ব্যাপক মাত্রায় ব্যবহারের ফলে পাটের সেই সুদিন বেশি সময় থাকেনি। বাংলাদেশ পাটজাত কিছু পণ্য রপ্তানি করতো কিন্তু সেগুলো উৎপাদন ব্যয় প্রতিযোগি দেশগুলোর চেয়ে অনেক বেশি হবার কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটপণ্য মার খেতে শুরু করে।

পরবর্তীতে বাংলাদেশ পাট বা এ জাতীয় প্রাথমিক পণ্য রপ্তানির পাশাপাশি ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের পণ্য রপ্তানি শুরু করে। বর্তমানে বাংলাদেশে পণ্র রাপ্তানি আয়ের ৮৪ শতাংশেও বেশি আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। কিন্তু এই খাতের সবচেয়ে বড় সমিাবদ্ধতা হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের অধিকাংশ কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে এই খাতে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার একটি বড় অংশই এসব পণ্য আমদানি বাবদ পুনরায় বিদেশে চলে যায়। বেশ কয়েক বছর আগের এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছিল, তৈরি পোশাক খাতে প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার তার অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই কাঁচামাল,ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে পুনরায় বিদেশে চলে যায়। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। বাংলাদেশ হয়তো তুলা উৎপাদনে খুব একটা সফল হতে পারবে না কিন্তু চেষ্টা করলে তুলার বিকল্প তন্তু উদ্ভাবন করা সম্ভব। পাট দিয়ে কৃত্রিম তন্তু তৈরি পন্থা উদ্ভাবিত হলেও তা সঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম সীমাবদ্ধতা হচ্ছে কাঁচামালের জন্য বিদেশ নির্ভরতা। অনেক তিন ধরেই অর্থনীতিবিদগণ স্থানীয় কাঁচামাল নির্ভর পণ্য রপ্তানি বাড়ানোর জন্য ব্যাপক এবং পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণের জন্য পরামর্শ দিলেও এতে কোনো কর্ণপাত করা হচ্ছে না। বাংলাদেশ এমন অনেক পণ্য আছে, যা স্থানীয় কাঁচামাল নির্ভর এবং আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকা সামান্য কিছু আইটেমের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল। স্থানীয় কাঁচামাল নির্ভর পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানির উদ্যোগ গ্রহণ করা না হলে রপ্তানি বাণিজ্যের সম্ভাবনাকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যাবে না। আমাদের দেশের রপ্তানিকারকগণ সাধারণত প্রাথমিক পণ্য রপ্তানি করে থাকেন। কিন্তু আমরা যদি ফিনিশড প্রোডাক্ট বেশি বেশি রপ্তানি করতে পারতাম তাহলে রপ্তানি আয় অনেকগুন বৃদ্ধি পেতো। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে পণ্য রপ্তানি খাত সবার শীর্ষে অবস্থান করছে। কিন্তু এই খাতের সম্ভাবনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারছি না। বাংলাদেশের রপ্তানি খাতের প্রায় পুরোটা জুড়ে রয়েছে তৈরি পোশাক সামগ্রি। কিন্তু এই খাতের মূল্য সংযোজনের হার তুলনামূলকভাবে কম এটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, মাছ, চা, কৃষিজাত পণ্য এগুলো যদি বর্ধিত পরিমাণে রপ্তানি করা যেতো তাহলে রপ্তানি আয় অনেকগুন বৃদ্ধি পেতো। আর স্থানীয় ভাবে কৃষক এবং তৃণমূল পর্যায়ের উৎপাদকগণ উপকৃত হতে পারতেন। তারা তাদের উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পেতে পারতেন। বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সীমিত সংখ্যক পণ্যের উপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল।

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের একটি বড় সীমাবদ্ধতা হচ্ছে সীমিত সংখ্যক দেশ ও অঞ্চলের উপর নির্ভর করে রপ্তানি বাণিজ্য আবর্তিত হচ্ছে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলতে হয় বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উপর নির্ভর করে ঘুরপাক খাচ্ছে। কোনো কারণে এই দু’টি অঞ্চলে রপ্তানি বিঘ্নিত হলে পুরো রপ্তানি কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য হবে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কখনোই কারো দয়ায় টিকে থাকতে পারে না। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে টিকে থাকতে হলে প্রতিযোগিতার সামর্থ্য এবং তুলনামূলক কম মূল্যে মানসম্পন্ন পণ্যের যোগান নিশ্চিত করতে হয়। যদি বলা হয়, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য এ পর্যন্ত যেটুকু সাফল্য অর্জন করেছে তার প্রায় পুরোটাই অন্যের করুনার উপর নির্ভরশীল তাহলে কি খুব বেশি ভুল করা হবে? মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০০৫ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশকে কোটা সুবিধা দিয়েছে। কোটা সুবিধার অর্থ হচ্ছে দেশটি প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পণ্য বাংলাদেশ থেকে আমদানি করতো। পরবর্তীতে বিশ^ বাণিজ্য সংস্থার নীতি মোতাবেক সব ধরনের কোটা সুবিধা বাতিল হয়ে যায়। তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানি সুবিধা সম্বলিত জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) সুবিধা প্রদান করে। পরবর্তীতে সরকারের কিছু নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি সুবিধা স্থগিত ঘোষণা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রর বাজারে প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশি পণ্য ঠাঁই করে নেবার পেছনে কোট এবং জিএসপি সুবিধা বিশেষ অবদান রেখেছে।

বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন হচ্ছে একক অঞ্চল হিসেবে বাংলাদেশি পণ্যের সবচেয়ে বড় বাজার। বর্তমানে বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৬২ শতাংশই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশ। বাংলাদেশি পণ্য কি অবাধ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে এমন অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে? না, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ১৯৭৬ সাল থেকে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে জিএসপি সুবিধা প্রদান করে আসছে। বাংলাদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একজন আমদানিকারককে কোনো ধরনের আমদানি শুল্ক দিতে হয় না। প্রতিযোগি দেশগুলো যারা জিএসপি সুবিধা পায় না তাদের পণ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে রপ্তানি করতে হলে অন্তত ১২ শতাংশ শুল্ক প্রদান করতে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ভিয়েতনাম হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগি। তারা এতদিন ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে জিএসপি সুবিধা পাচ্ছিল না। কিন্তু সম্প্রতি ভিয়েতনাম ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে স্বাক্ষরিক এক চুক্তির বলে জিএসপি সুবিধা পেতে যাচ্ছে। আর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের চূড়ান্ত তালিকায় উত্তীর্ণ হবে ২০২৬ সালে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তার পর বিশেষ বিবেচনায় বাংলাদেশকে ২০২৯ সাল পযৃন্ত জিএসপি সুবিধা প্রদান করবে। এরপর জিএসপি সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে তারা জিএসপি+ নামে নতুন এক ধরনের বাণিজ্য সুবিধা চালু করবে কিন্তু বাংলাদেশ কোনোভাবেই জিএসপি+ এর জন্য প্রদত্ত শর্ত পরিপালন করতে পারবে না। তাই ২০২৯ সালের পর ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের প্রবেশাধিকার নিশ্চিত ভাবেই সীমিত হয়ে পড়বে। আমরা কি সেই সময়ের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য কোনো প্রস্তুতি গ্রহণ করছি?

বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের একটি বড় অসঙ্গতি হচ্ছে, যেসব দেশে অধিক পরিমাণে পণ্য রপ্তানি করা হয় সেই সব দেশে আমাদের আমদানির পরিমাণ খুবই কম। আবার যে সব দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি করা হয় সেসব দেশে আমাদের পণ্য রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। অর্থাৎ এখানে অসঙ্গতি দৃশ্যমান। বাংলাদেশ তার আমদানি পণ্যের বেশির ভাগই আনে চীন এবং ভারত থেকে। কিন্তু এই দু’টি দেশের বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ খুবই কম। চীন এবং ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের বিপুল চাহিদা থাকলেও তারা আমাদের পণ্য আমদানি করে না। বাণিজ্য ক্ষেত্রে ‘ইটের বদলে পাটকেল’ পদ্ধতি প্রয়োগে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি। বাংলাদেশ যদি চীন ও ভারতকে এই বার্তা দিতে পারতো যে, তোমরা যদি আমাদের পণ্য আমদানি না করো তাহলে তোমাদের পণ্যও আমরা আমদানি করবো না তাহলে দেশ দু’টি বাধ্য হতো বাংলাদেশ থেকে আমদানি বাড়াতে। কিন্তু আমরা তা করছি না। একই সঙ্গে বিদেশে বাংলাদেশের যেসব দূতাবাস আছে সেখানে ইকোনমিক ডেক্স আছে। সেখানে যারা কর্মরত আছেন তারা রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে কি ভূমিকা রাখছেন তা মূল্যায়ন করা প্রয়োজন।

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারও রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যদি স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হয় তাহলে রপ্তানি বৃদ্ধি পায়। আর যদি স্থানীয় মুদ্রার অতিমূল্যায়ন করা হয় তাহলে রপ্তানি আয় হ্রাস পায়। স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার যদি অবমূল্যায়ন করা হয় তাহলে রপ্তানিকারকগণ আগের পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ পাবেন। এ জন্য তাদের কোনো বাড়তি ব্যয় করতে হবে না। উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বুঝানো যেতে পারে। কোনো একজন রপ্তানিকারক হয়তো একটি পণ্য রপ্তানি করে ১০০ মার্কিন ডলার আয় করতেন। স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার যদি ১০ শতাংশ অবমূল্যায়ন ঘটে তাহলে সেই ১০০ মার্কিন ডলারের বিপরীতে তিনি স্থানীয় মুদ্রায় ১১০ টাকা পাবেন। আমাদের দেশে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজার ভিত্তিক করার বিষয়ে কথা উঠলেই একটি মহল হৈ চৈ করে থাকেন। তাদের বক্তব্য হচ্ছে,স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন ঘটলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এতে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পাবে। তাত্ত্বিকভাবে তাদের এই বক্তব্য ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবতা কি বলে? মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকাকে অতিমূল্যায়িত করে রাখার ফলে আমদানি ব্যয় কি হ্রাস পেয়েছে? প্রতি প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার অনেক দিন ধরেই ১১০ টাকা নির্ধারিত করে রাখা হয়েছিল। এতে কি আমদানি ব্যয় কমেছে? এই উদ্যোগ তখনই সফল হতে পারতো যদি বাংলাদেশ ব্যাংক আমদানিকারকদের চাহিদা মতো মার্কিন ডলারের যোগান দিতে পারতো। আমদানিকারকগণ ব্যাংকিং চ্যানেল থেকে তাদের চাহিদাকৃত মার্কিন ডলার সংগ্রহ করতে না পেরে কার্ব মার্কেট থেকে ডলার সংগ্রহ করছেন। এতে আমদানি ব্যয় এমনিতেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারে পণ্য মূল্য বৃদ্ধির পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রাখছে রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট বাজার সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে কোনো দিনই বাজারে শৃঙ্খলা ফিরে আসবে না।

চীন আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ব্যাপক সফলতা অর্জনের একটি বড় কারণ হচ্ছে তারা স্থানীয় মুদ্রার বিনিময় হার ইচ্ছে করেই অবমূল্যায়ন করে রাখছে। ফলে তারা তুলনামূলক কম খরচে পণ্য উৎপাদন ও বিপণন করতে পারছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে স্থানীয় মুদ্রা ইচ্ছে করে অবমূল্যায়িত করে রাখার অভিযোগ জানিয়ে আসছে অনেক দিন ধরে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে স্থানীয় উৎপাদকদের পণ্য মার খাচ্ছে। বাংলাদেশ চীনের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে সুবিধা করতে পারতো।

এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার,বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতি বিষয়ক লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ