গণতান্ত্রিক পরিবেশ কতটা অক্ষুণ্ন আছে?
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ অনেক দিন থেকেই নেই। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তিনটি নির্বাচন হয়েছে সর্বময় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছাড়া। তা ছাড়া রাষ্ট্রের বহু প্রতিষ্ঠানই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ছিল নিয়ন্ত্রিত। মত প্রকাশে ভয় ছিল সর্বত্র। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে বাংলাদেশ এক নতুন রাষ্ট্র গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে যাত্রা শুরু করেছে। রাষ্ট্র সংস্কার চলছে। সংস্কার কার্যক্রম শেষ হলে নির্বাচন হবে; কিন্তু বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ কতটা অক্ষুণ্ন আছে এখন?
গণতন্ত্র শুধু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে বোঝা যায় না। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ বোঝার সহজ উপায় সেই সমাজে মত প্রকাশের স্বাধীনতা কতটুকু আছে তা দিয়ে। ভিন্নমতকে কতখানি সহনশীলতার সঙ্গে দেখা হয় তা দিয়ে। তা ছাড়া রাষ্ট্রের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান কতখানি দুর্নীতিমুক্ত, নারী-পুরুষের সমতা কতখানি প্রতিষ্ঠিত, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছে এ সবকিছুই গণতান্ত্রিক পরিবেশের মাপকাঠি।
কিন্তু আমরা যদি আমাদের সমাজ-রাষ্ট্রের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব এখনো আমাদের সমাজে-রাষ্ট্রে সহনশীলতা নেই, ভিন্ন মতকে সহ্য করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেনি। এখনো ভিন্ন মতকে দমন করা হচ্ছে আগের মতোই। কখনো ব্যক্তিগত ক্ষমতাবলে, বিশেষ দলগোষ্ঠী দিয়ে, কখনো বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কার্যালয় ঘেরাওয়ের হুমকি এবং অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে কার্যালয়টির সামনে সতর্ক অবস্থান নেয়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকশ সদস্যের উপস্থিতিই প্রমাণ করে দেশে এখনো সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পরিবেশ গড়ে উঠেনি। তাহলে কোনো ব্যক্তি বা বিশেষ কোনো জনগোষ্ঠীর ডাকে দীর্ঘকালের একটি রাজনৈতিক অফিসের সামনে পুলিশের এমন সতর্ক প্রহরায় থাকতে হতো না।
১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠিত তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি যা পরবর্তীতে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি হিসেবে রূপান্তরিত হয়, রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান, মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী দেশগঠন, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুসংহত রাখা সব কিছুতেই সিপিবির ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এক সময় দলটির নেতৃত্ব দিয়েছেন নেপাল নাগ, মণি সিংহ, মোহাম্মদ ফরহাদ, মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের মতো আত্মত্যাগী রাজনীতিবিদগণ। যে কোনো রাজনৈতিক দলেরই পক্ষে-বিপক্ষে মতামত থাকে, তাদের কিছু কার্যক্রমের যেমন প্রশংসা থাকে, তেমনি অনেক সমালোচনাও থাকে। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সিপিবির ভূমিকা নিয়েও নানা সমালোচনা অবশ্যই হতে পারে। কিন্তু ব্যক্তিবিশেষের প্ররোচনায় তাদের অফিসে হামলার হুমকি কেন?
গতকাল রোববার (১৬ মার্চ) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, হত্যা, ধর্ষণ, নিপীড়নের বিচার এবং স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার অপসারণের দাবিতে গণমিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে ৮টি সংগঠন। মূলত বাম দলগুলো থাকলেও নেতৃত্বে ছিল সিপিবি। এর বিরুদ্ধে অনেকে সমালোচনা করছেন, সিপিবির হাত ধরেই আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসছে। যেসব দল আওয়ামী ফ্যাসিবাদের সহায়ক ছিল তাদের বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে রাজনীতি করতে হবে এমনটাই দাবি জুলাই বিপ্লবীদের; কিন্তু জুলাই বিপ্লবীর নামে এখন অনেক ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ভিন্নমত দমনে নেমেছেন, তা কতখানি যৌক্তিক? আমাদের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে তা কতখানি সুসংহত রাখবে? আমরা চাই বাংলাদেশে ভিন্নমত প্রকাশের পরিবেশ গড়ে উঠুক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে