Views Bangladesh Logo

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন কতটা গ্রহণযোগ্য

Rased Mehedi

রাশেদ মেহেদী

সাংবাদিক কামাল আহমেদের নেতৃত্বাধীন গণমাধ্যম কমিশনের প্রতিবেদনটি একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে মনোযোগ দিয়ে পড়েছি। কারণ ২৯ বছরের পেশাগত জীবনে ২৭ বছর এক নাগারে মাঠের রিপোর্টিং করতে গিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি। সেই চ্যালেঞ্জ উত্তরণের জন্য নিজেও গণমাধ্যমে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেছি। কোনো রাজনৈতিক সরকারের আমলেই এ ধরনের সংস্কার কমিশন হয়নি। এ কারণেই এই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন পড়ার জন্য প্রবল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করেছি। ১৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন তৈরিতে নিশ্চিতভাবেই কমিশনের প্রধানসহ সম্মানিত অন্যান্য সদস্য অত্যন্ত পরিশ্রম করেছেন। তাদের ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা। এই প্রতিবেদনে কয়েকটি দেশে সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনার উৎকৃষ্ট উদাহরণ সামনে আনা হয়েছে।

স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশে বিভিন্ন সরকারের আমলে বিভিন্ন ধরনের সংবাদমাধ্যম কী ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছে, তার বিস্তৃত বিবরণ এসেছে। বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন ধরনের সংবাদমাধ্যমের মালিকানার ধরন তুলে ধরা হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ দুটি আইনের খসড়া দেওয়া হয়েছে, যা অবশ্যই ইতিবাচক ও প্রশংসার দাবিদার। তবে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই বলতে চাই, টানা ২৭ বছর সংবাদপত্র এবং টেলিভিশনে নিরবচ্ছিন্নভাবে রিপোর্টিং করা একজন সাংবাদিক হিসেবে এই প্রতিবেদন অনেকাংশেই প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি বরং কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশা হোঁচট খেয়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের ‘প্রধান এবং কমন’ চ্যালেঞ্জটিই সুনির্দিষ্টভাবে সামনে আসেনি। কমিশনের প্রতিবেদনে মফস্বলের সাংবাদিকতা, সাংবাদিক নির্যাতন এবং চ্যালেঞ্জ এই প্রতিবেদনে একেবারেই উপেক্ষিত থেকেছে। ফলে এটি সংস্কারের বড় জায়গাটিই আসলে চিহ্নিত হয়নি। এ কারণে প্রতিবেদনটি এক অর্থে খণ্ডিত থেকে গেছে।

প্রধান চ্যালেঞ্জ সামনে আসেনি
প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের দুর্বলতার দিক হিসেবে একজন উদ্যোক্তা বা একটি করপোরেট গ্রুপের মালিকানায় একাধিক সংবাদমাধ্যম পরিচালিত হওয়াকে বড় দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এটা একটি দুর্বলতা হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে; কিন্তু প্রধান দুর্বলতা নয়। প্রধান দুর্বলতা হচ্ছে, বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমগুলো দুর্বল সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা ও ভঙ্গুর সাংগঠনিক কাঠামো, যেটা প্রতিবেদনের কোনো পর্যায়ের আলোচনাতেই আসেনি। একটি উদাহরণ দিলে স্পষ্ট হবে। বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী এবং প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম হচ্ছে প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। দুটি প্রতিষ্ঠানের সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত দৃঢ়। সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ঘন ঘন বদলানো যায় না। কারণ একজন সম্পাদকের দৃষ্টিভঙ্গি ও দূরদর্শিতার মাধ্যমেই একটি সংবাদমাধ্যমের সুদৃঢ় নীতি ও সম্পাদকীয় কাঠামো তৈরি হতে পারে। ঘন ঘন সম্পাদকের বদল হলে সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা বলে কিছুই থাকে না। প্রথম আলো এবং ডেইলি স্টার এ জন্যই শক্তিশালী, এর সম্পাদকরা স্বাধীনভাবে দীর্ঘমেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে পেরেছেন এবং একটি সুদৃঢ় সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সমর্থ হয়েছেন। যে কারণে এ দুটি প্রতিষ্ঠানের সাংগঠনিক কাঠামোও অত্যন্ত শক্তিশালী থেকেছে সব সময়, সব সরকারের আমলে।

এসব প্রতিষ্ঠান থেকে একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক কর্মীর পদত্যাগের ঘটনাও কখনো ঘটেনি। প্রথম আলো যখন গঠিত হয়, তখন ভোরের কাগজের প্রায় ৯০ শতাংশ কর্মী একই দিনে পদত্যাগ করে প্রথম আলোতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই ভোরের কাগজ আর কখনই শক্তিশালী সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা কিংবা সাংগঠনিক কাঠামোতে দাঁড়াতে পারেনি। সম্ভবত, সেই অভিজ্ঞতা থেকেই প্রথম আলোর সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা এবং সাংগঠনিক কাঠামো তৈরির ক্ষেত্রে দূরদর্শী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল শুরু থেকেই। এই পদক্ষেপটা আসলে কি ছিল। কোন ধরনের ব্যবস্থাপনার কারণে প্রথম আলো-ডেইলি স্টার এত দৃঢ় সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনার ওপরে দাঁড়াতে সক্ষম হলো, আর কেন ট্রান্সকম গ্রুপের চেয়েও বেশি সম্পদ এবং ক্ষমতার মালিক হয়েও অন্যান্য কয়েকটি শিল্প গ্রুপের সংবাদমাধ্যম কেন অত্যন্ত ভঙ্গুর সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারল না, তার একটা পর্যালোচনা হওয়া উচিত ছিল গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। তাহলে বাংলাদেশে সংবাদপত্র এবং সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে মালিকানা ও সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা যেত এবং শক্তিশালী ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার জন্যও কার্যকর সুপারিশ করা সম্ভব হতো। আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কার্যক্রম এবং প্রভাবের বিষয়টি যথাযথভাবে মূল্যায়ন করা গেলে অনলাইন সংবাদমাধ্যমের জন্যও কার্যকর সুপারিশ দেওয়া সম্ভব হতো।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে ভাসা ভাসাভাবে কিছু মূল্যায়ন, সুপারিশ এসেছে; কিন্তু সুনিদির্ষ্টভাবে আসেনি। এর কারণ প্রধান দুর্বলতা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে কমিশনের প্রতিবেদন এগোয়নি। সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনার দুর্বলতার কারণেই সংবাদপত্র এবং সম্প্রচারমাধ্যমে শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো তৈরি হয় না। যে কারণে ওই সংবাদমাধ্যমগুলোতে সাংবাদিকরাও সুরক্ষিত থাকে না। বরং চরম অনিশ্চয়তা ও অনিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেন। আর অস্থিরতার মধ্যে দায়িত্ব পালন করেন বলেই সংবাদকর্মীরা পেশাদার হতে পারেন না বরং মালিকপক্ষ এবং তাদের মনোনীত সংবাদ ব্যবস্থাপকদের ক্রীড়নক হয়েই চাকরি বাঁচিয়ে চাকরি করতে হয়। আর সংবাদমাধ্যমগুলোতে অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা যখন ধারাবাহিক হয়ে যায়, তখন সাংবাদিকতা পেশায় মেধাবী, যোগ্যতাসম্পন্নরা খুব কমই আসতে চান। যখন মেধাবীরা সাংবাদিকতায় আসেন না তখন মেধাহীনরা সেই শূন্যস্থান পূরণ করেন এবং দেশের সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকতার পুরো ক্ষেত্রই তখন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হয়ে থাকে।

যেহেতু বাংলাদেশের কোম্পানি আইনে গ্রুপ অব কোম্পানিজ প্রতিষ্ঠার বিধান আছে এবং সেই বিধান অক্ষুণ্ন রেখে একজন মালিকের একটি সংবাদমাধ্যম এই নীতি বাস্তবায়নের সুপারিশ বাস্তবসম্মত নয়। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেই বলা হয়েছে, বড় বড় ব্যাংকগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল থেকে সংবাদমাধ্যমে বিনিয়োগ করতে পারে। তাহলে যদি বড় কোনো করপোরেট প্রতিষ্ঠানও একইভাবে সামাজিক দায়বদ্ধতা তহবিল কিংবা স্টার্ট-আপ তহবিল থেকে সংবাদমাধ্যমের জন্য বিনিয়োগ করে তাহলে সেটা দোষের হওয়ার কথা নয়। আর সেই বিনিয়োগ ওই করপোরেট প্রতিষ্ঠানের ভর্তুকি হিসেবেও বিবেচিত হয়, তাহলেও আপত্তির কিছু নেই। একটা সংবাদমাধ্যম কয়েক বছরেও লাভে না এলেও যদি ভর্তুকির টাকায় চলে, পেশাদারিত্ব বজায় রেখে সাংবাদিকতা করে, পেশাদার সাংবাদিকরা নিয়মিত বেতন পায় তাহলে তো প্রশ্ন ওঠার কথা নয়। অথচ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে কেন একটি প্রতিষ্ঠান লাভজনক না হওয়ার পরও সংবাদমাধ্যমের কার্যক্রম পরিচালিত করছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, যেটা যুক্তিযুক্ত বিবেচিত হয় না।

প্রতিবেদনের সুপারিশে একটি সংবাদমাধ্যমের সম্পাদকের যোগ্যতা কী হবে, সে ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে। এটা খুবই ইতিবাচক। অবশ্যই সম্পাদক কে হবেন, তার একটা মানদণ্ড থাকা উচিত। সেই মানদণ্ড ছাড়া কোনোভাবেই সম্পাদক নিয়োগ হওয়া উচিত নয়। অতীতে দেখা গেছে সাংবাদিকতার ন্যূনতম অভিজ্ঞতা ছাড়াই রাজনৈতিক সরকারের সাবেক মন্ত্রী, সাবেক আমলা, বিনিয়োগকারী নিজে কিংবা বিনিয়োগকারীর মনোনীত কোনো করপোরেট কর্মকর্তা সম্পাদকের আসনে বসে গেছেন। ফলে সার্বিকভাবে সম্পাদকীয় প্রতিষ্ঠানই প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে এবং সত্যিকারের পেশাদার সম্পাদকদের সামনেও দায়িত্ব পালনে বড় চ্যালেঞ্জ এসেছে। বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বার্থে রাজনৈতিক সরকারকে খুশি করার জন্য সেই দলের অনুগত ব্যক্তিকেও সম্পাদক নিয়োগ করেছে, যেটা ওই সংবাদমাধ্যমের পেশাদারিত্বের মানকেই দুর্বল করেছে।

টেলিভিশন চ্যানেলের বার্তাপ্রধান কিংবা অনুষ্ঠানপ্রধানের এই অবস্থা আরও করুণ। সংবাদপত্রে সম্পাদকের যেটুকু কাজ করার স্বাধীনতা আছে টেলিভিশনগুলোতে বার্তা কিংবা অনুষ্ঠানপ্রধানের তাও নেই। এখানে কোনো নীতিমালা, নৈতিকতা নয়, মূলত বিনিয়োগকারীর পছন্দ কিংবা ইচ্ছানুযায়ী চলে। যে কারণে নিয়োগের ক্ষেত্রেও মালিকের আত্মীয়স্বজন এবং রেফারেন্সের প্রাধান্য দেখা যায়। এখানে চাকরি করার ক্ষেত্রেও পেশাদারিত্ব প্রমাণের চেয়ে মালিকের আস্থাভাজন হওয়ার বিষয়টিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে কর্মীদের কাছে। এখানে বার্তাপ্রধান, অনুষ্ঠানপ্রধান কেবলই একটি রুটিন পদ। ফলে যে বিনিয়োগকারীর যেমন রুচিবোধ তার মালিকানাধীন টিভি চ্যানেলের পর্দায় মূলত তারই প্রতিফলন দেখা যায়। দু-একটি টেলিভিশনে সাংবাদিকরা প্রধান নির্বাহীর পদও অলংকৃত করেছেন। তবে তারাও কাজের ক্ষেত্রে মালিকের ইচ্ছাধীন। তবে প্রধান নির্বাহীর পদে যারা থাকেন তারা পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে কাজ করলে তার ইতিবাচক প্রতিফলন পর্দায় ঘটে, এ রকম দু-একটি নজির আছে। গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সংবাদপত্র, টেলিভিশন চ্যানেলের সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা এবং সাংগঠনিক কাঠামো নিয়ে ‘কেসস্টাডি’-ভিত্তিক অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা নেই। যে কারণে প্রতিবেদনে বাংলাদেশে সংবাদমাধ্যমের প্রধান চ্যালেঞ্জ সুনির্দিষ্ট হয়নি।

মফস্বল সাংবাদিকদের চ্যালেঞ্জ ও নির্যাতনের চিত্র অনুপস্থিত
প্রতিবেদনে বিভিন্ন সরকারের আমলে পেশাদার সাংবাদিক এবং সম্পাদকরা কীভাবে নির্যাতন-হয়রানির শিকার হয়েছেন তার একটি বিবরণ এসেছে; কিন্তু সেটা শুধু ঢাকা বা কেন্দ্রের চিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। সেখানে মফস্বল সাংবাদিকদের চিত্র একেবারেই অনুপস্থিত। একটি সাধারণ ধারণা হচ্ছে, ঢাকার বাইরে যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের অধিকাংশ নানা ধরনের অপকর্ম, ধান্ধাবাজির সঙ্গে যুক্ত। আমি ২৬ বছরের টানা রিপোর্টিংয়ের সময়ে পেশাগত দায়িত্বপালনের জন্য প্রায় সারা দেশ ঘুরেছি। সব জেলা শহর এবং শতাধিক উপজেলায় ঘুরেছি। আমার অভিজ্ঞতা হচ্ছে মফস্বলে অধিকাংশ সাংবাদিকরাই বড় ঝুঁকি নিয়ে নিষ্ঠার সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন করছেন। তারা অনেক বেশি বঞ্চিত। ঢাকায় যারা সাংবাদিকতা করেন তাদের নানাভাবে সুরক্ষার একটা ব্যবস্থা থাকে। ঝুঁকিপূর্ণ রিপোর্ট হলে, হুমকির মুখে পড়লে অফিস সরাসরি দায়িত্ব নিতে পারে; কিন্তু মফস্বল সাংবাদিকদের প্রতিনিয়ত দায়িত্বপালন করতে হয় স্থানীয় প্রশাসন, রাজনৈতিক দল, মস্তান চক্র, অপরাধী চক্র সবার হুমকির মুখেই।

হাতে গোনা কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ছাড়া মফস্বলের সাংবাদিকরা নিয়মিত বেতন পান না। বেশ কিছু প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যম যারা ঢাকায় সাংবাদিকদের ভালো বেতন দেন তারা মফস্বলের সাংবাদিকদের সামান্য বেতন দেন। এখানে একটা কঠিন বাস্তবতাকেও বুঝতে হবে। সংবাদমাধ্যমে যে বিনিয়োগ হয় এবং প্রতি মাসে যে পরিচালনা ব্যয় থাকে সেখানে মফস্বলের জন্য কেন্দ্রের মাপকাঠিতে বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা সম্ভব হয় না বরাদ্দের বাস্তবতা থেকেই। যে কারণে মফস্বলে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, আইনজীবী বা ছোটখাটো স্বাধীন উদ্যোক্তাদের সাংবাদিকতার জন্য বেছে নেওয়া হয়। তারা অন্য পেশার দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সাংবাদিকতা করেন। এটা অনেক আগে সংবাদপত্রের ক্ষেত্রে হয়ে আসছে; কিন্তু গত দুই দশকে টেলিভিশন সাংবাদিকতার বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে অনেক জায়গায় স্থানীয় কিছু মস্তান, সন্ত্রাসের সঙ্গে যুক্ত রাজনৈতিক কর্মী এবং টাউট-বাটপাররা রিপোর্টিংয়ে যুক্ত হয়েছে। ‘বেতন নয় কার্ড’ এই ধারা চালু হয়েছে দু-একটি টেলিভিশন চ্যানেলের হাত ধরেই। পরবর্তীতে এটি সংক্রমিত হয়েছে সংবাদপত্রে, বিশেষত ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ সংবাদপত্রে। পরে অনলাইনের যুগে এসে তা মহামারি আকার ধারণ করেছে। ফলে মফস্বলে পেশাদার সাংবাদিকতা আরও বেশি ঝুঁকি এবং চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বড় সম্পাদকদের প্রতি নির্যাতন-হয়রানির কথা উঠে এসেছে; কিন্তু মফস্বলে শতাধিক সাংবাদিক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, কারাগারে গেছেন, তারা উপেক্ষিত থেকেছেন। কুড়িগ্রামের তৎকালীন জেলা প্রশাসকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির রিপোর্ট করার কারণে ২০০০ সালের ১৩ মার্চ কুড়িগ্রামে স্থানীয় সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগ্যানের বাড়িতে মধ্যরাতে মোবাইল কোর্টের নামে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছিলেন স্থানীয় প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা। রিগ্যানকে শারীরিক নির্যাতন করে গুরুতর আহত অবস্থায় তার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছিলেন। সরকারি তদন্ত প্রতিবেদনে সেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছিল; কিন্তু পরে সেই অপরাধী প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের গুরুতর অপরাধ ক্ষমা করে দেয় পতিত আওয়ামী লীগ সরকার। প্রত্যাশা ছিল ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফসল এই সরকারের আমলে সেই অপরাধী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে; কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এটা একটি উদাহরণ। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ধরনের সাংবাদিক নির্যাতনের উদাহরণ শতাধিক আছে। দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এর একটিও উঠে আসেনি। বিগত সময়ে মফস্বলে যত সাংবাদিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে তার একটিরও বিবরণ এবং হত্যাকাণ্ডের বিচার কেন হয়নি, তার কোনো পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ, সংস্কার কমিশনের ১৮০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদনে নেই। একটি বিষয় বুঝতে হবে, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে সাংবাদিকতার পরিধিতে ভরকেন্দ্র মফস্বল সাংবাদিকরাই। তারাই নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে তৃণমূলের অর্জন, উদ্ভাবনের পাশাপাশি অসংগতি, অনিয়মের নানা খবর নীতিনির্ধারকদের সামনে তুলে আনছেন। তাদের সংস্কার কার্যক্রমের বাইরে রেখে কোনোভাবেই গণমাধ্যম সংস্কার সম্ভব নয়।

সাংবাদিক সংগঠনগুলোর দুর্বলতা ও ভয়ংকর আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার কথা নেই
বাংলাদেশ সম্ভবত পৃথিবীর একমাত্র দেশ, যেখানে সাংবাদিক ইউনিয়ন রাজনৈতিক দলের আনুগত্যের বিচারে দুই ভাগে বিভক্ত। ১৯৯২ সালে এই ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন বিভক্ত হয়। স্বাভাবিকভাবে ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নও বিভক্ত হয়ে যায়। জাতীয় প্রেস ক্লাবের নির্বাচনেও দুটি ফোরামের প্যানেল দেখা যায়। প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ দেওয়া নিয়ে বড় ধরনের জটিলতার সৃষ্টি হয়। কোনো একটি রাজনৈতিক দলের মদদপুষ্ট ফোরামের মনোনয়ন ছাড়া প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ পাওয়া পেশাদার সাংবাদিকদের জন্য অসম্ভব হয়ে পড়ে। সেই অসুস্থচর্চা এখন পর্যন্ত বিদ্যমান। প্রেস ক্লাবের সদস্যপদ নিয়ে জটিলতা চরম মাত্রায় গেলে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি নামে পেশাদার রিপোর্টারদের একটি সংগঠনের জন্ম হয়; কিন্তু খুব বেশিদিন এই সংগঠনও পেশাদার সাংবাদিকদের থাকেনি। এটির নেতৃত্ব নির্বাচনও শেষ পর্যন্ত আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার ভোটারদের ভোটের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে।

রাজনৈতিক বিভক্তির কারণে সাংবাদিকদের পেশাগত অধিকার সুরক্ষার মূল সংগঠন সাংবাদিক ইউনিয়ন দুর্বল হয়ে পড়ে। সে দুর্বলতার সুযোগে ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ মিডিয়ার সাংবাদিক পরিচয়ে বড় সংখ্যায় টাউট-বাটপার দুই অংশের সাংবাদিক ইউনিয়ন এবং প্রেস ক্লাবে সদস্যপদ পায়। ফলে পেশাদার সাংবাদিকরা ইউনিয়নের নেতৃত্বে থাকলেও নির্বাচনে জেতার জন্য সেই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ মিডিয়ার তথাকথিত সাংবাদিকদের ওপরই নির্ভরশীল হয়ে পড়তে হয়। ফলে সাংবাদিক ইউনিয়ন একদিকে রাজনৈতিক সরকারের আমলে ক্ষমতাসীন দলের অনুগতদের অনৈতিক সুবিধা আদায় এবং আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার ধান্দাবাজদের ধান্দাবাজির স্বার্থরক্ষার প্ল্যাটফর্মে পরিণত হয়। বাংলাদেশ ছাড়া আর কোনো দেশে এভাবে ডজন ডজন আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়া আছে বলে আমার জানা নেই। এখন বুঝতে হবে আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়া কি? ২০০৫ সালে আমি জনকণ্ঠে থাকার সময় এই আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়া নিয়ে একটি অনুসন্ধানী সিরিজ রিপোর্ট করেছিলাম। সে সময় প্রবল হুমকির মুখে থাকতে হয়েছে দীর্ঘ সময় ধরে। সংবাদপত্র প্রচারসংখ্যায় কমবেশি হতে পারে; কিন্তু প্রচারসংখ্যা আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার মাপকাঠি নয়। প্রচারসংখ্যায় কম কোনো মিডিয়াতে পেশাদার সম্পাদক, সাংবাদিক এবং সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা এবং সংবাদ প্রকাশে ন্যূনতম পেশাদারিত্বের মান বজায় থাকলেও সেটাকে আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়া বলা যায় না। বরং বহুল প্রচারিত একাধিক সংবাদমাধ্যমের চেয়েও প্রচারসংখ্যা কম এমন কয়েকটি সংবাদপত্র আছে যেখানে সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা, সাংগঠনিক কাঠামো এবং সংবাদ প্রকাশে পেশাদারিত্বের মান অনেক উন্নত।

‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ মিডিয়া হচ্ছে সেসব মিডিয়া, যেগুলো মূলত এক ব্যক্তি কিংবা ছোট কোনো গোষ্ঠীর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সেই ২০০৫ সালেই আমার অনুসন্ধানে দেখেছিলাম রাজধানীর ফকিরাপুলের কয়েকটি প্রেস থেকে শতাধিক দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করা হয়। এদের প্রচারসংখ্যা পঞ্চাশ থেকে একশর বেশি নয়। এসব মিডিয়ার বেশিরভাগেরই কে সম্পাদক জানা যায় না, কোনো অফিস নেই, সাংবাদিক পরিচয়ে দুই-চারজনের অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও তারা হচ্ছে মূলত ব্ল্যাকমেইলার, ধান্ধাবাজ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজিই এদের মূল পেশা। মূলত এরাই ঢাকায় সবচেয়ে বড় প্রতারক চক্র। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে এসব আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার মালিকানায় রয়েছেনে একাধিক রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। তাদের কেউ কেউ আবার সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব এবং রিপোর্টার্স ইউনিটিরও নেতা। এদের অনেকের রয়েছে ‘ডিক্লারেশন’ ব্যবসা। এরা বেশ সহজে পত্রিকার ডিক্লারেশন পায়। সেই পত্রিকার ভুয়া সার্কুলেশন দেখিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপন হাতিয়ে নেয়। এটাই তাদের আয়ের মূল উৎস। আমার অনুসন্ধানে দেখেছি একটি পেশাদার মিডিয়া হাউস করার জন্য ডিক্লারেশন পাওয়া কঠিন হলেও এই ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ চক্রের গন্ডায় গন্ডায় মিডিয়ার ডিক্লারেশন পেতে কোনো সমস্যাই হয় না। টেলিভিশন চ্যানেলের ক্ষেত্রেও দু-একটি চ্যানেলের কার্যক্রম আন্ডারগ্রাউন্ড পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে দেখা গেছে।

পরবর্তী সময়ে অনলাইন মিডিয়ার যুগে এই আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়া মহামারি আকার ধারণ করে। কোনো ধরনের সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা এবং সাংগঠনিক কাঠামো এবং পেশাদার সাংবাদিক নিয়োগ ছাড়াই শত শত অনলাইন মিডিয়া চালু হচ্ছে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অনলাইন মিডিয়ার নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু করলে দেখা যায়, এই আন্ডারগ্রাউন্ড চক্র পত্রিকার ডিক্লারেশনের মতোই খুব সহজে নিবন্ধন পাচ্ছে। পতিত সরকারের আমলে অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা না থাকা আন্ডারগ্রাউন্ড অনলাইন তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে নিবন্ধন পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির উৎকর্ষের যুগে যেভাবে মান্ধাতার আমলের প্রক্রিয়ায় নিবন্ধন দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে মূলত, সে সুযোগই নিয়েছে আন্ডারগ্রাউন্ড সিন্ডিকেট। অন্যদিকে যারা পেশাদার অনলাইন মিডিয়া প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছেন তাদের সবকিছু ঠিক থাকার পরও নিবন্ধন পেতে দিনের পর দিন ঘুরতে হয়েছে। একটা যথাযথ অনুসন্ধান হলে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে। সে সময় পেশাদার ব্যবস্থাপনায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু অনলাইন নিবন্ধন পায়নি। এ বিষয়গুলো সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও এসেছে; কিন্তু নিবন্ধনের জন্য আবেদন করা থেকে শুরু করে পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো ধরনের দুর্বলতা, অস্বচ্ছতা আছে, হয়রানির ধরনটা কেমন, কী ধরনের অনিয়ম হচ্ছে, তার কোনো কেসস্টাডি কিংবা অনুসন্ধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে নেই। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অনলাইন মিডিয়ার নিবন্ধন কীভাবে সহজ ও স্বচ্ছ করা যায়, সে বিষয়েও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নেই।

তবে সম্পাদকীয় ব্যবস্থাপনা একটি প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রের মতো হলেও এবং বিনিয়োগের দৃঢ় ভিত্তি থাকলেই কেবল একটি অনলাইন পোর্টালকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার যে সুপারিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে করা হয়েছে, তা প্রশংসার যোগ্য। নিবন্ধন দেওয়ার এখতিয়ার প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কমিশনের হাতে ন্যস্ত করার যে প্রস্তাবনা সেটাও সময়োপযোগী এবং যুক্তিযুক্ত। সার্বিকভাবে বলা যায়, সাংবাদিক ইউনিয়ন রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত হওয়ার কারণেই দলীয় লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা ছড়িয়ে পড়েছে একাধিক প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমেও। সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে দলীয় লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা নিয়ে বিশ্লেষণ, সমালোচনা থাকলেও এর উৎস অনুসন্ধান করা হয়নি। ফলে লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা বন্ধে কার্যকর সুপারিশও নেই। রাজনৈতিকভাবে বিভক্ত সাংবাদিক ইউনিয়নের পরিবর্তে ঐক্যবদ্ধ পেশাদার সাংবাদিক ইউনিয়ন গড়ে তোলা ছাড়া দলীয় লেজুড়বৃত্তির সাংবাদিকতা বন্ধের কোনো উপায় নেই। এ বিষয়ে কোনো পরামর্শ, মতামত কিছুই নেই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। অন্যদিকে আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার ধান্ধাবাজি, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের কারণে সার্বিকভাবে বাংলাদেশে সাংবাদিকতার সামাজিক মর্যাদা প্রতিনিয়ত ক্ষুণ্ন হচ্ছে। পেশাদার সাংবাদিকতা জিম্মি হয়ে যাচ্ছে আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার সাংবাদিক নামধারী প্রতারক, ধান্দাবাজদের কাছে। কঠোর আইনি পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রতারণা, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত আন্ডারগ্রাউন্ড মিডিয়ার বিলোপ ছাড়া সাংবাদিকদের পেশাদারিত্ব এবং সামাজিক মর্যাদাও জিম্মি দশা থেকে মুক্ত করা সম্ভব নয়। এসব বিষয়েও সুনির্দিষ্ট সুপারিশ নেই সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে। এতবড় চ্যালেঞ্জ উপেক্ষা করে কার্যকর সংস্কার কীভাবে সম্ভব?

গণমাধ্যম কমিশন ও আইন
সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে সুনির্দিষ্ট আইন প্রণয়নের মাধ্যমে গণমাধ্যম কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে, যেটা এই প্রতিবেদনের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক। গণমাধ্যম কমিশন গঠনে যেভাবে প্রস্তাব করা হয়েছে তা ঠিকই আছে। তবে আইনে একটি বিধান স্পষ্ট থাকা উচিত যেন কোনোভাবেই সরকারি আমলাদের কেউই এ গণমাধ্যম কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য বা সাচিবিক প্রধান হতে না পারেন। সাচিবিক সহায়তার জনবল কমিশনের নিজস্ব নিয়োগ প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই নিয়োগ পাওয়া উচিত। এক্ষেত্রে প্রথম কমিশন গঠনের ক্ষেত্রে আমার প্রস্তাব হচ্ছে, যে গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন এই প্রতিবেদন দিয়েছে, সেই কমিশনের প্রধান ও সদস্যদের সমন্বয়েই প্রথম কমিশন গঠিত হতে পারে। কারণ সংস্কার কমিশনের সদস্যরা প্রত্যেকেই যার যার অবস্থানে পেশাদারিত্বের জন্য সুপরিচিত ও পরীক্ষিত। ফলে প্রথম কমিশন গঠনে জটিলতা ও সময় দুই-ই বাঁচবে।

রাশেদ মেহেদী: সম্পাদক, ভিউজ বাংলাদেশ। 

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ