ঢাকার রাস্তায় চলতে কতকাল যুদ্ধ করতে হবে?
প্রতি বছর বর্ষা এলেই ঢাকার রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। রাজধানীবাসী এটা প্রায় মেনেই নিয়েছেন। এটা তাদের ভাগ্যের পরিহাস। উন্নয়নের নামে খোঁড়াখুঁড়ি চলবেই। কখনো গ্যাস পাইপ ঠিক করা হবে, কখনো পানির লাইন বসানো হবে, কখনো পয়ঃনিষ্কাশন ঠিক করা হবে। কখন যে কেন রাস্তা খোঁড়া হয়, এটা অনেকেই জানেন না। এমনও দেখা গেছে, একই রাস্তা প্রতি বছর খোঁড়া হচ্ছে, একেবারে ভালো রাস্তার একপাশ খুঁড়ে কীসের যেন পাইপ বসানো হচ্ছে।
এই চিত্র এখন মতিঝিল, কমলাপুর, টিকাটুলি থেকে পুরান ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকায়। মতিঝিল থেকে কমলাপুর পর্যন্ত একে তো মেট্রোরেলের কাজ চলছে, তার ওপর এরকম খোঁড়াখুঁড়িতে ওই এলাকার মানুষ নাজেহাল। সকালে অফিসগামী ব্যস্ত মানুষকে হাঁটতে হয় জীবন বাজি রেখে, রাস্তার একটি মাত্র শীর্ণ পাশ দিয়ে। মায়েদের হাত ধরে শিশুরা যখন স্কুলে যায়, তখন মনে হয় তারা সত্যিই যুদ্ধে যাচ্ছে।
রোববার (২ জুন) সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায় রাজধানীর দক্ষিণখানেও এই একই চিত্র। ৬ মাসের বেশি সময় ধরে রাজধানীর দক্ষিণখানের প্রধান সড়কে যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এর কারণ হচ্ছে, সড়কের বিভিন্ন অংশে ঠিক মাঝ বরাবর খুঁড়ে রাখা হয়েছে। সেখানে নালা নির্মাণের কাজ চলছে। পরিস্থিতি এমন যে, সড়কের কোনো কোনো অংশে হাঁটার জায়গাটুকুও এখন নেই। সড়কের খুঁড়ে রাখা অংশে নালার নোংরা পানি জমে মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকাই অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ। অনেক এলাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার জন্য একটির বেশি রাস্তা নেই। সেই রাস্তাতেই যদি চলাচল না করা যায়, তাহলে মানুষের দুর্ভোগ চিন্তা করা যায়! এই এলাকায় বয়স্ক মানুষ আছেন, রোগী আছেন, গর্ভবতী আছেন, তারা কীভাবে চলাচল করবেন, তা কি একবারও ভেবে দেখেছে প্রশাসন?
এসব বিষয় নিয়ে পত্রিকায় নিয়মিতই লেখালেখি হয়। গত তিন মাসে প্রায় প্রতিটি গণমাধ্যমেই এসব নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে; কিন্তু ফলাফল শূন্য। প্রশাসন গা করে না। তাদের যুক্তি, সড়ক মেরামত, পয়ঃনিষ্কাশন ও অন্যান্য কাজে খোঁড়াখুঁড়ি করতেই হবে। তা আমরাও মানি; কিন্তু আর কতকাল? আর কবে ঢাকাবাসী এই খোঁড়াখুঁড়ির দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে? এসব খোঁড়াখুঁড়ির ফলে যেমন মানুষের স্বাভাবিক জীবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তেমনি জনসাধারণ অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তবে, এতে কিছুসংখ্যক লোকের পকেট ভারী হয় বলে জনগণের বিশ্বাস। খোঁড়াখুঁড়ি দেখলে লোকজন তাই অদৃশ্য কারও উদ্দেশ্যে গালমন্দও করেন।
সামনে কোরবানি ঈদ। অনেক এলাকায় হাট বসবে। ঢাকাবাসী তখন আরও নাকাল হবে। তা ছাড়া বর্ষাও আসছে ঘনিয়ে। সব মিলিয়ে ঢাকাবাসী আতঙ্কে আছেন সামনের দিনগুলোর চরম ভোগান্তি নিয়ে। তাই প্রশাসনের কাছে আমাদের অনুরোধ, দ্রুত এই খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শেষ করুন। ঢাকাবাসীকে একটু শান্তি দিন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে