Views Bangladesh Logo

বিনা তদন্তে সরকারি কর্মচারীদের অব্যাহতি আইন কতটা যৌক্তিক?

বাংলাদেশে অনেক বছর ধরেই একটা কথা প্রচলিত আছে, সরকারি চাকরি নিজে থেকে না ছাড়লে কখনো যায় না। অর্থাৎ, যতই অনিয়ম-দুর্নীতি করুক, হয়তো বদলি হয়, জরিমানা হয়, অন্যান্য শাস্তি হয়; কিন্তু চাকরি কখনো যায় না। এবার সেই আইনেরই পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। সরকারি কর্মচারীদের বিরুদ্ধে তদন্ত ছাড়াই চাকরিচ্যুতি বা অব্যাহতির বিধান অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। নতুন আইনে সরকার কর্মচারীদের মাত্র ৮ দিনের নোটিশে অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষমতা পাবে, বিশেষ করে যারা দাপ্তরিক কাজে বিঘ্ন সৃষ্টি করবেন।

গত বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, এ আইনের খসড়া প্রস্তাব করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন পেলে এটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে। মূলত, ২০১৮ সালে বাতিল হওয়া ‘সরকারি কর্মচারী (বিশেষ বিধান) অধ্যাদেশ, ১৯৭৯’-এর পরিবর্তে এই আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে।

এ আইনের কিছু ভালো দিক অবশ্যই আছে। সরকারি কর্মচারীদের স্বেচ্ছাচারিতা এতে কিছুটা কমবে; কিন্তু এর বিপদও আছে। আইনটি পরিবর্তিত সংবিধানের সঙ্গে কতটা স্বীকৃত হবে সেটা দেখার বিষয় আছে। মানুষের মৌলিক অধিকার এতে লঙ্ঘিত হবে কি না ভেবে দেখার অবকাশ আছে। তদুপরি, বিনা বিচারে, বিনা তদন্তে চাকরিচ্যুতি কি ভালো কোনো সিদ্ধান্ত? এরকম আইন রাজনৈতিক ও ব্যক্তি স্বার্থে ব্যবহার হবে না, তা কি নিশ্চিত করে বলা সম্ভব?

সূত্রে জানা গেছে, জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা অনুপস্থিত ছিলেন এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে পেশাগত দ্বন্দ্ব ও সচিবালয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এই পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এই নতুন আইন প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আমরা দেখেছি জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর বিশেষ এক গোষ্ঠীর সরকারি কর্মচারীরা নানারকম অনিয়ম-বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করা হয়েছে, তার পেছনে রাজনৈতিক কারণ ছিল সত্য, আবার উলটো দিকে এও সত্য, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লোকদেরও নানাভাবে নাজেহাল করা হয়েছে, তাদের জোর করে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এমনো কি হতে পারে না আইনটি ভবিষ্যতেও কেবল বিশেষ রাজনৈতিক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধেই প্রয়োগ হবে। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা, হতাশা ও নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হওয়ার অবকাশ থাকবে।

তাই আমরা মনে করি, আইনটি নিয়ে বর্তমান সরকার ও রাজনীতিবিদদের আরও ভালো করে ভেবে দেখা দরকার। তা ছাড়া ৮ দিনের নোটিশে অব্যাহতি দেওয়াও বেশ দ্রুত সিদ্ধান্ত ও বিচার হয়ে যায়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে অনেক ধরনের ‘রাজনীতি’ থাকে; যে কেউ এতে শিকার হতে পারে। তাই আমাদের পরামর্শ অন্তত তদন্ত সাপেক্ষে অব্যাহতি দেয়ার আইন পাস হোক এবং সিদ্ধান্ত নেয়ার বিষয়ে আরও কিছুদিন সময় বাড়ানো হোক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ