ভিপিএন ব্যবহার কতটা নিরাপদ?
বাংলাদেশে বর্তমান কোটা আন্দোলনের কারণে সতর্কতামূলকভাবে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম , হোয়াটসঅ্যাপ ও থ্রেডসহ বেশ কয়েকটি অ্যাপ এই তালিকায় আছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমসহ কিছু বিশেষ ব্যক্তির সামাজিকমাধ্যমে লক্ষ্য করা যায় বিভিন্ন পোস্ট ও কার্যক্রম। বর্তমানে অনেকেই ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে এসব সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করছেন। প্রশ্ন হচ্ছে, ভিপিএন ব্যবহার কতটা নিরাপদ?
ভিপিএনের পূর্ণরূপ হলো ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক। এটি একটি প্রযুক্তি, যা ব্যবহারকারীদের নিরাপদে এবং গোপনীয়ভাবে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে সহায়তা করে। ভিপিএন ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিককে এনক্রিপ্ট করতে পারেন এবং আপনার আইপি ঠিকানা লুকাতে পারেন, ফলে আপনার অনলাইন কার্যক্রম আরও নিরাপদ এবং গোপনীয় থাকে। ভিপিএন ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা বিবেচনা করে আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, এটি আপনার জন্য উপযুক্ত কি না। ভিপিএন ব্যবহারের কারণ এবং কখন ব্যবহার করবেন, তা নির্ভর করে আপনার প্রয়োজন এবং পরিস্থিতির ওপর।
ভিপিএন কখন ব্যবহার করবেন:
১. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময়: যখন আপনি ক্যাফে, বিমানবন্দর, হোটেল ইত্যাদির পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করছেন, তখন আপনার ডেটা সুরক্ষিত রাখার জন্য ভিপিএন ব্যবহার করুন।
২. সীমাবদ্ধতা বা সেন্সরশিপ এড়ানোর জন্য: আপনি যদি এমন দেশে থাকেন যেখানে ইন্টারনেটের ওপর বিধিনিষেধ রয়েছে, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি সেই বিধিনিষেধগুলো এড়িয়ে যেতে পারেন।
৩. বিদেশ থেকে কনটেন্ট অ্যাক্সেস করার সময়: ভ্রমণের সময় যদি আপনি আপনার দেশের কোনো কনটেন্ট বা সার্ভিস অ্যাক্সেস করতে চান, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করতে পারেন।
৪. সেন্সরশিপের শিকার হওয়ার সময়: যদি আপনি এমন ওয়েবসাইট বা পরিষেবা ব্যবহার করতে চান, যা আপনার দেশে ব্লক করা আছে, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি সেগুলো অ্যাক্সেস করতে পারেন।
৫. অনলাইন শপিং বা ব্যাংকিং করার সময়: আপনার ব্যক্তিগত এবং আর্থিক তথ্য সুরক্ষিত রাখতে ভিপিএন ব্যবহার করুন।
ভিপিএন ব্যবহারের সময় আপনার প্রয়োজন এবং সুরক্ষার স্তর বিবেচনা করে সঠিক সেবা বেছে নিন।
ভিপিএন কখন ব্যবহার করবেন না:
১. গতি হ্রাস: ভিপিএন ব্যবহার করার সময় ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে, কারণ ডেটা এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা হয় এবং বিভিন্ন সার্ভারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এটি বিশেষ করে উচ্চ ব্যান্ডউইথ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন স্ট্রিমিং, গেমিং বা বড় ফাইল ডাউনলোড।
২. বিশ্বস্ততার সমস্যা: সব ভিপিএন প্রোভাইডারই নিরাপদ নয়। কিছু প্রোভাইডার আপনার ডেটা লগ করতে পারে বা বিক্রি করতে পারে, যা আপনার গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৩. সেবা সীমাবদ্ধতা: কিছু ওয়েবসাইট এবং অনলাইন সেবা ভিপিএন ব্যবহারকারীদের ব্লক করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নেটফ্লিক্স এবং অন্যান্য স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলো প্রায়শই ভিপিএন ট্রাফিক শনাক্ত করে এবং অ্যাক্সেস সীমিত করে।
৪. ব্যবহার খরচ: ভালো মানের ভিপিএন সেবা সাধারণত বিনামূল্যে পাওয়া যায় না এবং এর জন্য সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়। বিনামূল্যের ভিপিএন সেবা সীমিত বৈশিষ্ট্য এবং সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
৫. সেটআপ এবং ব্যবহারের জটিলতা: কিছু ব্যবহারকারীর জন্য ভিপিএন সেটআপ এবং ব্যবহার করা কিছুটা জটিল হতে পারে, বিশেষ করে যারা প্রযুক্তিতে কম অভিজ্ঞ।
৬. আইনি সমস্যা: কিছু দেশে ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ হতে পারে বা কঠোর নিয়মাবলি থাকতে পারে। সেইসব দেশে ভিপিএন ব্যবহার করলে আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন।
৭. গোপনীয়তার মিথ্যা অনুভূতি: ভিপিএন ব্যবহার করলেও আপনি পুরোপুরি অপ্রকাশ্য বা সুরক্ষিত থাকবেন না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ভিপিএন সক্রিয় থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করেন, তাহলে সেই তথ্য এখনো ট্র্যাক করা যেতে পারে।
আপনার প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন যে ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত কি না। কিছু ক্ষেত্রে, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য ভিপিএন ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি অপ্রয়োজনীয় বা সমস্যাজনক হতে পারে।
ভিপিএন ব্যবহারে সমস্যা:
১. গতি হ্রাস: ভিপিএন ব্যবহার করার সময় ইন্টারনেটের গতি কমে যেতে পারে, কারণ ডেটা এনক্রিপ্ট এবং ডিক্রিপ্ট করা হয় এবং বিভিন্ন সার্ভারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। এটি বিশেষ করে উচ্চ ব্যান্ডউইথ প্রয়োজনীয় কাজের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে, যেমন স্ট্রিমিং, গেমিং বা বড় ফাইল ডাউনলোড।
২. বিশ্বস্ততার সমস্যা: সব ভিপিএন প্রোভাইডারই নিরাপদ নয়। কিছু প্রোভাইডার আপনার ডেটা লগ করতে পারে বা বিক্রি করতে পারে, যা আপনার গোপনীয়তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
৩. সেবা সীমাবদ্ধতা: কিছু ওয়েবসাইট এবং অনলাইন সেবা ভিপিএন ব্যবহারকারীদের ব্লক করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, নেটফ্লিক্স এবং অন্যান্য স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলো প্রায়ই ভিপিএন ট্রাফিক শনাক্ত করে এবং অ্যাক্সেস সীমিত করে।
৪. ব্যবহার খরচ: ভালোমানের ভিপিএন সেবা সাধারণত বিনামূল্যে পাওয়া যায় না এবং এর জন্য সাবস্ক্রিপশন ফি দিতে হয়। বিনামূল্যের ভিপিএন সেবা সীমিত বৈশিষ্ট্য এবং সুরক্ষা প্রদান করতে পারে।
৫. সেটআপ এবং ব্যবহারের জটিলতা: কিছু ব্যবহারকারীর জন্য ভিপিএন সেটআপ এবং ব্যবহার করা কিছুটা জটিল হতে পারে, বিশেষ করে যারা প্রযুক্তিতে কম অভিজ্ঞ।
৬. আইনি সমস্যা: কিছু দেশে ভিপিএন ব্যবহার অবৈধ হতে পারে বা কঠোর নিয়মাবলি থাকতে পারে। সেইসব দেশে ভিপিএন ব্যবহার করলে আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন।
৭. গোপনীয়তার মিথ্যা অনুভূতি: ভিপিএন ব্যবহার করলেও আপনি পুরোপুরি অপ্রকাশ্য বা সুরক্ষিত থাকবেন না। উদাহরণস্বরূপ, যদি আপনি ভিপিএন সক্রিয় থাকা অবস্থায় ব্যক্তিগত তথ্য প্রদান করেন, তাহলে সেই তথ্য এখনও ট্র্যাক করা যেতে পারে।
আপনার প্রয়োজন এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিন, ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত কি না। কিছু ক্ষেত্রে, গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তার জন্য ভিপিএন ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, আবার কিছু ক্ষেত্রে এটি অপ্রয়োজনীয় বা সমস্যাজনক হতে পারে।
ভিপিএন ব্যবহারে সুবিধা:
১. গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা: আপনার ইন্টারনেট ট্রাফিক এনক্রিপ্ট করা হয়, যার ফলে হ্যাকার, আইএসপি, এবং অন্যান্য তৃতীয় পক্ষের কাছ থেকে সুরক্ষিত থাকে। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় ডেটা সুরক্ষিত থাকে। পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করার সময় ভিপিএন আপনার ডেটা সুরক্ষিত রাখে, যা হ্যাকারদের আক্রমণ থেকে আপনাকে রক্ষা করতে পারে।
২. জিও-ব্লকড কনটেন্ট অ্যাক্সেস: বিভিন্ন দেশের নেটফ্লিক্স, হুলু, বা অন্যান্য স্ট্রিমিং সার্ভিসে জিও-ব্লকড কনটেন্ট দেখতে ভিপিএন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. সেন্সরশিপ এড়ানো: যদি আপনি এমন দেশে থাকেন যেখানে ইন্টারনেট সেন্সরশিপ প্রচলিত, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি ব্লক করা ওয়েবসাইট বা পরিষেবা অ্যাক্সেস করতে পারেন।
৫. কর্মক্ষেত্রে দূরবর্তী অ্যাক্সেস: অনেক কোম্পানি কর্মীদের ভিপিএন ব্যবহার করে তাদের প্রাইভেট নেটওয়ার্কে দূরবর্তীভাবে সংযোগ করতে দেয়, যা নিরাপদভাবে সংবেদনশীল তথ্য অ্যাক্সেস করার সুযোগ দেয়।
৬. অ্যানোনিমাস ব্রাউজিং: আপনার আসল আইপি ঠিকানা লুকিয়ে রেখে অনলাইনে অ্যানোনিমাস থাকতে ভিপিএন ব্যবহার করা যেতে পারে।
৭. অবস্থান পরিবর্তন: ভিপিএন ব্যবহার করে আপনি আপনার আইপি ঠিকানা পরিবর্তন করতে পারেন এবং অন্য দেশের আইপি ঠিকানা ব্যবহার করতে পারেন।
জিও-ব্লকড কনটেন্ট এবং সেবা অ্যাক্সেস করা যায়, যেমন বিভিন্ন দেশের নেটফ্লিক্স বা অন্যান্য স্ট্রিমিং সার্ভিস।
৮. সুরক্ষিত ফাইল শেয়ারিং: আপনি নিরাপদভাবে ফাইল শেয়ার করতে এবং ডাউনলোড করতে পারেন, বিশেষ করে পিয়ার-টু-পিয়ার (পিটুপি) নেটওয়ার্কে।
বাংলাদেশে ভিপিএন ব্যবহারের জন্য সরাসরি কোনো আইনগত নিষেধাজ্ঞা নেই, তবে ভিপিএন ব্যবহার করে অবৈধ কাজ করলে আইনগত জটিলতায় পড়ার সম্ভাবনা থাকে। ভিপিএন ব্যবহারের আগে এর সঠিক প্রয়োগ এবং আইনগত দিকগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
কিছু সম্ভাব্য জটিলতা বা অসুবিধা:
১. অবৈধ কার্যকলাপ: ভিপিএন ব্যবহার করে সাইবার অপরাধ বা অবৈধ কার্যকলাপ করলে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন (আইসিটি অ্যাক্ট) বা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট) অনুযায়ী শাস্তির মুখোমুখি হতে পারেন।
২. সরকারি নজরদারি: সরকার ভিপিএন ব্যবহারের ওপর নজরদারি করতে পারে এবং সন্দেহভাজন কার্যকলাপের জন্য ব্যবহারকারীকে চিহ্নিত করতে পারে।
৩. সেবা প্রদানকারীর দায়: ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীরা ভিপিএন ব্যবহারের বিষয়ে সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে বাধ্য, ফলে তারা আপনার কার্যকলাপ রিপোর্ট করতে পারে।
৪. ডাটা সুরক্ষা: ভিপিএন প্রোভাইডারের ডাটা পলিসি যদি যথাযথ না হয়, তবে আপনার তথ্য চুরি বা অপব্যবহার হতে পারে।
ভিপিএন ব্যবহার করা আপনার ইন্টারনেট ব্রাউজিংয়ের জন্য নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে। ভিপিএন ব্যবহার না করলে আপনি সরাসরি ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারীর (আইএসপি) মাধ্যমে ইন্টারনেট অ্যাক্সেস করেন, যা আপনার ব্রাউজিং কার্যকলাপ ট্র্যাক করতে পারে। ভিপিএন ব্যবহার করলে আপনার অনলাইন কার্যকলাপ এনক্রিপ্ট হয়ে যায় এবং আপনার আইপি ঠিকানাকে লুকিয়ে ফেলে, ফলে আপনার গোপনীয়তা আরও সুরক্ষিত থাকে।
তাই ভিপিএন ব্যবহার করা উচিত কি না, তা নির্ভর করে আপনার নির্দিষ্ট প্রয়োজন এবং পরিস্থিতির ওপর। আপনি যদি নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা বৃদ্ধি করতে চান, তাহলে ভিপিএন ব্যবহার করা একটি ভালো ধারণা হতে পারে।
আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ: ব্র্যান্ডিং কৌশল এবং ডিজিটাল মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে