থমাস ন্যাস্টের কার্টুনের গাধা ও হাতি যেভাবে মার্কিন নির্বাচনের প্রতীক হয়ে উঠল
৫ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ৬০তম প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এই নির্বাচনে কে জিতবে? গাধা না হাতি? আপনি যদি মার্কিন নির্বাচনের প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের প্রতীক সম্পর্কে না জানেন, তাহলে ভাবতে পারেন এ আবার কেমন কথা? গাধা-হাতির প্রসঙ্গ আসছে কেন? আসলে গাধা ডেমোক্রেটদের প্রতীক আর হাতি রিপাবলিকানদের প্রতীক; কিন্তু কোনো পার্টির প্রতীক কি গাধা হতে পারে? বাঘ-হাতি হলে একটি মানানসই ব্যাপার ছিল। তাই বলে গাধা! কিন্তু সত্যিই দেড়শ বছর ধরে গাধা প্রতীকে নির্বাচন করছেন ডেমোক্রেট প্রেসিডেন্ট প্রার্থীরা।
শুরুটা হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের সপ্তম প্রেসিডেন্ট (১৮২৯-১৮৩৭) প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনের হাত ধরে। সে সময় নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অ্যান্ড্রু জ্যাকসনকে ‘জ্যাকঅ্যাস’ বলে ডাকত। অর্থাৎ গাধা। ওই সময় একজন কার্টুনশিল্পী তার মাথাটি একটি গাধার শরীরের ওপর বসিয়ে কার্টুন আঁকেন। সেই শিল্পীর নাম থমাস ন্যাস্ট। কার্টুনটি ছিল অনেকটা এরকম: অ্যান্ড্রো জ্যাকসনের মাথা একটি গাধার শরীরে বসিয়ে দেয়া হয়। খুবই আপত্তিকর হতে পারত ব্যাপারটি; কিন্তু অ্যান্ড্রো জ্যাকসন এটাকে গ্রহণ করলেন নিজের সম্পর্কে একটি স্বীকৃতি হিসেবে। তিনি উল্টো বললেন, গাধা তো ভালো। সহিষ্ণুতার প্রতীক। এখন থেকে গাধাই হবে ডেমোক্রেটদের প্রতীক।
ভালো কথা। মজার ব্যাপার হলো এর কিছুদিন পর থমাস ন্যাস্ট আরেকটি কার্টুন আঁকেন। এই কার্টুনের বিষয়বস্তু হলো: সিংহের চামড়া পিঠে চাপিয়ে একটি গাধা বনের সব প্রাণীকে ভয় দেখাচ্ছে। সিংহের ছদ্মবেশী সেই গাধাকে দেখে সবাই ভয়ে পালাচ্ছে; কিন্তু সবাই ভয়ে পালালেও বনে একটি হাতি অসীম সাহস নিয়ে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাতির এই নির্ভীক ভঙিটা প্রতীক হিসেবে গ্রহণ করলেন রিপাবলিকরা। অর্থাৎ ডেমোক্রেট ও রিপাবলিকদের প্রতীক একই শিল্পীর আঁকা।
তাহলে নিঃসন্দেহে থমাস ন্যাস্টই হচ্ছেন পৃথিবীর ইতিহাসের সবচেয়ে প্রভাবশালী কার্টুনিস্ট; কিন্তু কে এই থমাস ন্যাস্ট? থমাস ন্যাস্ট একজন জার্মান-বংশোদ্ভূত আমেরিকান। তার জন্ম ১৮৪০ সালে জার্মানিতে। তার বাবা জোসেফ থমাস ন্যাস্ট সরকারের সঙ্গে বড় ধরনের একটি ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েন। তাই এক দিন স্ত্রী আর সন্তানকে তুলে দেন নিউইয়র্কগামী এক জাহাজে। মায়ের হাত ধরে থমাস আমেরিকায় পৌঁছান ১৮৪৬ সালে। ইতিহাসবিদরা দাবি করেন, নিউইয়র্ক শহরে এই উদ্বাস্তু কিশোরের বেড়ে ওঠা ছিল অত্যন্ত মর্মান্তিক। নানাভাবে তিনি নানারকম বুলিং, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাই তার সমগ্র পেশাগত জীবনে কার্টুন হয়ে ওঠে প্রতিবাদের হাতিয়ার।
তিনি তার কার্টুনে দেখাতে চেয়েছেন ক্ষমতার প্রতি অবজ্ঞা। সমস্তরকম নির্যাতনের প্রতি উপহাস। ছোট্ট এই কিশোর এক সময় হয়ে ওঠেন আমেরিকান কার্টুনের জনক। ১৮৬২ সাল থেকে ১৮৮৬ সাল পর্যন্ত তিনি কাজ করেছেন হার্পারস উইকলিতে। তাকে বলা হয় আমেরিকার প্রথম মহান রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট। তার ব্যাঙ্গচিত্র ছিল ছুরির মতো ধারালো। রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের ভক্ত, অর্থাৎ রিপাবলিকান।
১৮৮০ দিকে থমাস ন্যাস্ট ছিলেন মার্কিন রাজনীতির জন্য এক ভীতি ধরানো নাম। ডানপন্থি হোক আর বামপন্থি, উভয়পক্ষই তাকে সমান ভয় পেতেন। কার্টুন এঁকে এক সময় বিপুল অর্থ সঞ্চয় করেছিলেন তিনি; কিন্তু এক জায়গায় বিনিয়োগ করতে গিয়ে সব অর্থ হারান। ১৮৯০-এর দিকে ক্রিস্টমাসের চিত্র এঁকে নিজের ভাগ্য কিছুটা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেন। ১৯০২ সালে তিনি মারা যান দক্ষিণ আমেরিকার ইকুয়েডরে ভ্রমণকালে। আজও মার্কিন নির্বাচনী প্রতীকের মধ্য দিয়ে স্মরণীয় হয়ে আছে থমাস ন্যাস্টের নাম।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে