যেভাবে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমা দেবেন
‘না দাঁড়িয়ে লাইনে, রিটার্ন দিন অনলাইনে’ স্লোগানে করদাতাদের জন্য নানা সুখবর নিয়ে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অনলাইনে করদানের পাশাপাশি সবার জন্য রিটার্ন জমার সেবাটি আবারও উন্মুক্ত করেছে সংস্থাটি।
প্রতি বছর ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারেন ব্যক্তিশ্রেণির করদাতারা। গত ৯ সেপ্টেম্বর তাদের জন্য ২০২৪-২৫ করবর্ষের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল কার্যক্রম শুরু করেছে এনবিআর। অনলাইনে নিবন্ধন নিয়ে ঘরে বসেই নিজের আয়-ব্যয়ের তথ্য জানিয়ে এ বছরের আয়কর রিটার্ন জমা দিতে পারছেন যে কোনো করদাতা।
এনবিআর জানায়, অনলাইনে কর পরিশোধ কার্যক্রম চলছে অনেক আগে থেকেই। ইন্টারনেট ব্যাংকিং, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে যে কোনো করদাতা রিটার্ন জমার পাশাপাশি কর পরিশোধ করতে পারছেন। একই অনলাইন ব্যবস্থা থেকে দাখিল করা রিটার্নের কপি, প্রাপ্তি স্বীকারপত্র, আয়কর সনদ, কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ডাউনলোড ও প্রিন্ট করতেও পারছেন তারা।
গত সপ্তাহে কয়েকটি খাতের পেশাজীবীদের অনলাইনে রিটার্ন দাখিল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে আছেন চার সিটি করপোরেশনে অবস্থিত সরকারি কর্মচারী, সারা দেশের তপশিলি ব্যাংকের কর্মকর্তা, মোবাইল প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, ম্যারিকো, বার্জার পেইন্টস, বাটা সু কোম্পানি ও নেসলের কর্মীরা।
এতে করদাতাদের দুর্দশা লাঘব হয়েছে এবং দুর্নীতিমুক্ত পরিবেশে কর ও আয়কর রিটার্ন দিতে পারছেন তারা। ফলে কর পরিশোধের মতোই ই-রিটার্নেও করদাতাদের আগ্রহ তুঙ্গে। এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি সপ্তাহে অনলাইনে রিটার্ন জমা ১ লাখ ৭০ ছাড়িয়ে গেছে। সংস্থাটি আশা করছে, চলতি অর্থবছরে অনলাইনে অন্তত ১৫ লাখ রিটার্ন জমা পড়বে।
ই-রিটার্ন দিতে www.etaxnbr.gov.bd/ ঠিকানায় গিয়ে প্রথমে করদাতাকে নিবন্ধন নিতে হবে। নিবন্ধন নিতে করদাতার নিজের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) ও বায়োমেট্রিক করা মোবাইল নম্বর লাগবে। এ দুটি দিয়ে নিবন্ধন করে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেয়া যাবে।
ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিভিন্ন ধরনের কাগজ জমা দিতে হলেও ই-রিটার্ন জমায় কোনো ফাইল সংযুক্ত করতে হবে না। শুধু ওইসব দলিলের তথ্য দিলেই হবে।
এ-সংক্রান্ত এনবিআরের কল সেন্টার প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চালু আছে, যার নম্বর ০৯৬৪৩৭১৭১৭১। কোনো করদাতা অনলাইনে নিবন্ধন ও রিটার্ন জমা দিতে কোনো সমস্যায় পড়লে কল সেন্টারটির সহায়তা নিতে পারেন।
কল সেন্টারে ফোন দিলে একজন কর কর্মকর্তা করদাতার সমস্যার সমাধান করে দেবেন। তবে মাঝে-মধ্যে অনলাইন সিস্টেমে প্রবেশে সমস্যার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। অবশ্য আয়কর কর্মকর্তারা বলেছেন, একসঙ্গে বিপুলসংখ্যক করদাতা অনলাইনে ঢোকায় এ সমস্যা হচ্ছে, তবে তা সাময়িক।
এর আগেও অনলাইনে রিটার্ন দাখিলের ব্যবস্থা করেছিল এনবিআর; কিন্তু তখন করদাতাদের তেমন একটা উৎসাহ দেখা যায়নি। ২০১৬ সালে ৫১ কোটি টাকা ব্যয়ে অনলাইনে আয়কর রিটার্ন জমার প্রক্রিয়াটি চালু হয়, যা চার বছর অব্যাহত ছিল। ওই চার বছরের প্রতিবারই গড়ে মাত্র ৫-৬ হাজার করদাতা বার্ষিক রিটার্ন জমা দিতেন। সেজন্য ২০১৯ সালে ওই সিস্টেম বন্ধ করে দেয় এনবিআর। পরে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে এনবিআরের আয়কর বিভাগের বিশেষ দল মাত্র ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন অনলাইন ব্যবস্থাটি চালু করে। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অনলাইনে রিটার্ন জমা দেন ২ লাখের বেশি করদাতা।
কোনো করদাতার বার্ষিক আয় ৫ লাখ টাকার কম হলে এক পাতার রিটার্ন ফরম পূরণ করলেই চলবে। এক পাতার ফরমে সব মিলিয়ে ১৬ ধরনের তথ্য দিতে হবে। এগুলো হলো করদাতার নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর (এনআইডি), কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন), সার্কেল, কর অঞ্চল, করবর্ষ, আবাসিক মর্যাদা, মোবাইল নম্বরসহ যোগাযোগের ঠিকানা, আয়ের উৎস, মোট সম্পদ, মোট আয়, আরোপযোগ্য কর, কর রেয়াত, প্রদেয় কর, উৎসে কর কাটার পরিমাণ (যদি থাকে), এই রিটার্নের সঙ্গে প্রদত্ত কর এবং জীবনযাপনের ব্যয়।
রিটার্ন জমার সময় প্রমাণপত্র হিসেবে কিছু কাগজপত্র লাগবে। তার মধ্যে রয়েছে বেতন খাতের আয়ের দলিল, সিকিউরিটিজের ওপর সুদ আয়ের সনদ, ভাড়ার চুক্তিপত্র, পৌরকরের রসিদ, বন্ধকী ঋণের সুদের সনদ, মূলধনি সম্পদের বিক্রয় কিংবা ক্রয়মূল্যের চুক্তিপত্র ও রসিদ, মূলধনী ব্যয়ের আনুষঙ্গিক প্রমাণপত্র, শেয়ারের লভ্যাংশ পাওয়ার ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট, সুদের ওপর উৎসে কর কাটার সার্টিফিকেট।
সরকারি-বেসরকারি ৪৭টি সেবা পেতে এখন আয়কর রিটার্ন জমার রসিদ লাগে। এসব সেবা পাওয়ার চিন্তা-ভাবনা বা সম্ভাবনা থাকলে করদাতাকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। এটি দিয়ে বিনিয়োগ করে কর রেয়াতের সুযোগও নিতে পারেন তারা। দেশের ৮৬৯টি সার্কেলের করদাতাদের ৪১টি কর অঞ্চলে সেবা বুথ স্থাপনের মাধ্যমে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে আয়কর রিটার্ন সেবা দেয়া হবে বলেও জানিয়েছে এনবিআর।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে