মার্কিন নির্বাচনের ট্রাম্পকার্ড বদলে দিতে পারে বিশ্ব কূটনীতি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৭তম রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইউএস ক্যাপিটলে হামলার প্ররোচনা দিয়েছিলেন, অপরাধমূলক অভিযোগে দোষীসাব্যস্ত হয়েছিলেন- এমন একজন সাবেক প্রেসিডেন্টের জন্য এটি অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনই বটে।
তবে দুটি হত্যাচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েও ৫ নভেম্বরের ভোটে পরাজয় স্বীকার করতে নারাজ ছিলেন ট্রাম্প। দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউসের বাসিন্দা হতে নির্বাচনি সমাবেশগুলোতে প্রতিপক্ষ কমলা হ্যারিসের সমালোচনায় তীব্র ভাষা ব্যবহার আর তার বিরুদ্ধে আক্রমণে দৈন্য ও বর্ণবাদ প্রদর্শন করেন। চিত্রিত করেন ‘অভিবাসীদের হাতে অপরাধ ও সমস্যার শিকার যুক্তরাষ্ট্র’- এমন একটি ভয়াবহ চিত্রও।
তারপরও রাজনৈতিক মেরুকরণে আক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের ভোটারদের, বিশেষত পুরুষদের কাছে ট্রাম্পের আবেদন অত্যন্ত আকর্ষণীয়ই ছিল। তিনি প্রেসিডেন্টের আসনে ফিরে আসায় বোঝা যায় যে, মার্কিন সমাজের পুরুষ এবং নারী উভয়ই পিতৃতন্ত্র, দুর্বৃত্তায়ন, বর্ণবাদ এবং ফ্যাসিবাদকে ভোট দিয়েছেন। হতে পারে, এটিই মার্কিন সমাজের প্রকৃতি, যা আগের চেয়ে আরও বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। ইরাক যুদ্ধ এবং তার আগে থেকে সমস্ত মানবাধিকার, আন্তর্জাতিক আইন, শালীনতা এবং সততার প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করে চলেছে দেশটি। এমনকি নেটিভ আমেরিকানদের ওপর গণহত্যাও এই সমাজের আসল প্রকৃতির নিদর্শন।
পর্যালোচনা করা যাক, ট্রাম্পের দ্বিতীয় প্রেসিডেন্সিয়াল শাসন কেমন হবে:
ট্রাম্প তার প্রথম পর্বে ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেছিলেন। এই নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলো থেকে সরে দাঁড়ান তিনি। তবে চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু ও স্পষ্টভাষায় মিত্রদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বেশ কয়েকটি মার্কিন প্রতিপক্ষের সঙ্গে আলোচনাও করেন।
মার্কিন অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে তার দ্বিতীয় মেয়াদে ফেডারেল সরকারের ধারাবাহিক পুনর্নির্মাণ এবং শত্রুদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার এজেন্ডা অনুসরণ করবেন ট্রাম্প। তিনি বলেই দিয়েছেন যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষগুলোর বিরুদ্ধে সামরিক বাহিনী মোতায়েন করবেন। ‘প্রতিকূল সম্প্রচারকারী’ সংবাদ সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া, এমনকি সংবিধান স্থগিত করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
মার্কিন ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাসন কর্মসূচির পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্প। শত্রুদের সাজা দিতে বিচার বিভাগকে ব্যবহারেও পিছপা হবেন না তিনি। এমনকি দ্বিতীয় দফার ক্ষমতা প্রয়োগেও পররাষ্ট্রনীতিতে শূন্য-অঙ্কের পদ্ধতি অনুসরণ করতে চান। পদ্ধতিটি ন্যাটোসহ দীর্ঘস্থায়ী বিদেশি জোটগুলোকে উপেক্ষার হুমকি দেয়। ট্রাম্প বলেছেন, অনুগতদের সঙ্গে নিজেকে ঘিরে রাখবেন তিনি, যারা তার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবেন। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের সব এজেন্ডা বাস্তবে পরিণত হলে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকে ‘সেরা’ বলার দাবিটিকেই পুনর্বিবেচনা করতে হবে।
নতুন বছরের জানুয়ারিতে হোয়াইট হাউসে আসার পর নানা চ্যালেঞ্জে পড়বেন ট্রাম্প। তালিকায় বর্ধিত রাজনৈতিক মেরুকরণ এবং বিশ্বজুড়ে মার্কিন প্রভাবকে পরীক্ষার অনেক বৈশ্বিক সংকট তৈরি হয়েছে।
এবারের নির্বাচনি প্রচারাভিযানে চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ৬০ শতাংশ আমদানি শুল্ক এবং বাকি বিশ্বের পণ্যে অতিরিক্ত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। রোল্যান্ড বার্জার পরামর্শক সংস্থার সমীক্ষা অনুসারে, প্রতিক্রিয়া হিসেবে বেইজিং এবং ব্রাসেলস থেকে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়া হলে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অর্থনীতিতে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ৫৩৩ বিলিয়ন ডলার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৭৪৯ বিলিয়ন ডলার এবং চীনে ৮২৭ বিলিয়ন ডলারের সমান আর্থিক প্রভাব পড়বে।
তার প্রথম মেয়াদে ইরান চুক্তি এবং প্যারিস জলবায়ু চুক্তিসহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করেছিলেন ট্রাম্প, যেজন্য দেশগুলোকে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে হচ্ছে। অন্য কূটনৈতিক সিদ্ধান্তের মধ্যে ছিল, রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তি, যা স্নায়ুযুদ্ধের যুগ থেকে নির্দিষ্ট পারমাণবিক অস্ত্রের বিকাশকে সীমিত করেছিল, ওপেন স্কাই চুক্তি, যা দেশগুলোকে সামরিক পুনরুদ্ধার ফ্লাইট পরিচালনা করতে দেয় এবং অভিবাসন-সংক্রান্ত দুটি আন্তর্জাতিক চুক্তি।
প্যারিস জলবায়ু চুক্তি থেকেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ট্রাম্প, যা প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ফের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রে। বিশেষত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জাতিসংঘের কিছু সংস্থায় মার্কিন সহযোগিতা কমানোরও অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন তিনি। উপরন্তু ট্রাম্প নতুন শুল্কের পক্ষে কথা বলেছেন, যা মার্কিন বাণিজ্য অংশীদারদের জন্য পণ্য আমদানিতে ২০ শতাংশে পৌঁছাতে পারে। এমনকি ২০২৪ সালের হিসাবে মার্কিন পণ্যের বৃহত্তম ব্যবসায়িক অংশীদার মেক্সিকোর ক্ষেত্রে এ শুল্ক ১০০ শতাংশে বাড়ানোরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
ট্রাম্পের পক্ষে ন্যাটোর সঙ্গে মার্কিন চুক্তি পরিবর্তন কঠিনই হবে। ন্যাটো চার্টার সহজে প্রত্যাহারের অনুমতি দেয় না। সম্প্রতি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ন্যাটো ছেড়ে যেতে চাইলে কংগ্রেসের অনুমোদন নেয়ার আইন পাস করতে হয়েছে। তবে, এশিয়া বা ইউরোপের যে কোনো দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে জড়িত, তা পরিবর্তন করতে পারেন ট্রাম্প। তিনি সৈন্য প্রত্যাহার বা ঘাঁটি বন্ধ এবং জোটকে শক্তিশালী রাখতে সক্ষম যৌথ প্রকল্প ও রসদগুলোতে বিনিয়োগ বন্ধ করতে পারেন। এটি ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে।
ইউক্রেনের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যেও শান্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ট্রাম্প। বারবার বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে ইরানের ওপর তার চাপনীতির কারণে ইসরায়েলে আক্রমণ করত না হামাস। ট্রাম্প সম্ভবত ইরানের ওপর তার আরও প্রকট চাপের নীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করবেন। ইরানের বিরুদ্ধে আরও উল্লেখযোগ্য নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করবেন।
তবে ট্রাম্প মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে কোনো চেষ্টাই করেন না কেন, চলমান গণহত্যা থেকে ফিলিস্তিনিদের বাঁচার কোনো অবকাশ নেই। কেননা, প্রথম মেয়াদে জোরালোভাবে ইসরায়েলপন্থি নীতি প্রণয়ন করেছিলেন তিনি নিজেই। এ নীতির অনুসরণে জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে নামকরণ এবং তেল-আবিবে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর করেন ট্রাম্প। পদক্ষেপগুলো খ্রিষ্টান ইভানজেলিকালদের শক্তিশালী করেছিল এবং ফিলিস্তিনের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালাতে ইসরায়েলকে শক্তিশালী করার প্রধান পদক্ষেপ হিসেবে প্রমাণিত হয়েছিল। সমালোচকরা যুক্তি দেন, তার নীতি এই অঞ্চলে অস্থিতিশীল প্রভাব ফেলেছিল এবং এটি এখনো ফিলিস্তিনিদের নৃশংস গণহত্যার শিকার করছে।
জেরুজালেমের প্রতি ফিলিস্তিনিদের দাবি অস্বীকার করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে আরও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল ওয়াশিংটন, যখন ট্রাম্প তথাকথিত ‘আব্রাহাম অ্যাকর্ডস’- চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন। যা ইসরায়েলকে স্বীকৃতির বিনিময়ে ইসরায়েল এবং বেশ কয়েকটি আরব দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা বলে। ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়ার বিনিময়ে উন্নত মার্কিন অস্ত্র আরবদের হাতে তুলে দেয়ার কথাও বলা হয় ওই চুক্তিতে। ইসরায়েলের পাশাপাশি ভবিষ্যৎ স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে গ্রহণ না করেই ট্রাম্প এই চুক্তির প্রস্তাব দেন। দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান ইসরায়েলের ওপর স্বীকৃতির পূর্বশত ছিল আরব দেশগুলোর। ট্রাম্পই প্রথম দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের ধারণাটি পুরো বাদ দেয়ার পক্ষে নানা যুক্তি সবার সামনে তুলে ধরেন। এ ধরনের সমাধানের আকাঙ্ক্ষা করে আসছিল ইসরায়েলও; কিন্তু ট্রাম্প জায়নবাদীদের প্রকাশ্যে এবং বেপরোয়াভাবে দ্বি-রাষ্ট্র নীতি অস্বীকার করার অনুমতি দেন। এসবের জেরেই ট্রাম্প প্রশাসনকে বয়কট এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বিচ্ছিন্ন করেন করেছিলেন ফিলিস্তিনিরা। ট্রাম্পের কারণেই ঘটা সেই ঘটনার ফলাফল সারা বিশ্বের কাছে স্পষ্ট।
প্রায়ই তার হুটহাট সিদ্ধান্ত নেয়ার অভ্যাসকে কূটনৈতিক আলোচনায় বড় অসুবিধা হিসাবে চিহ্নিত করেন ট্রাম্পের সমর্থকরাও। ফলে ফিলিস্তিনিদের প্রতি তার ‘বৈরী’ ও ‘কর্তৃত্বসুলভ’ আচরণ অব্যাহত থাকলে মধ্যপ্রাচ্যে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা সামনে আরও অনিশ্চয়তায় পড়বে।
চীনের প্রতি মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গি ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতির সবচেয়ে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। এটি বৈশ্বিক নিরাপত্তা এবং বাণিজ্যে সবচেয়ে বড় প্রভাব ফেলবে। ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে কিছু পণ্যে চীনের ওপর আমদানি শুল্ক আরোপ এবং দেশটিকে ‘কৌশলগত প্রতিদ্বন্দ্বী’ বলে অভিহিত করেন। জবাবে মার্কিনিদের জন্য আমদানি শুল্ক আরোপ করে বেইজিং। কভিড মহামারির কারণে এই বাণিজ্য বিরোধ কমিয়ে আনতে অনেকের প্রচেষ্টাই ব্যর্থ হয়েছিল এবং ট্রাম্প কভিডকে ‘চীনা ভাইরাস’ চিহ্নিত করায় সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছিল। বাইডেন প্রশাসন চীন নীতিতে আরও দায়িত্বশীল দৃষ্টিভঙ্গি নেয়ার দাবি জানালেও আমদানিতে ট্রাম্প-যুগের শুল্ক প্রত্যাহার করেনি।
একদিকে ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে একজন অত্যন্ত কার্যকর নেতা হিসেবে প্রশংসা করেন, অন্যদিকে তাইওয়ানে সামরিক সহায়তা অব্যাহত রাখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যেটিকে চীন নিজের একটি প্রদেশ মনে করে এবং শেষ পর্যন্ত বেইজিংয়ের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।
ট্রাম্প ক্ষমতায় আসায় চীন-মার্কিন সম্পর্কের এতসব জটিলতা আবারও ফিরে আসার সম্ভাবনা রয়েছে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে যে ‘বাণিজ্য যুদ্ধ’ চালানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, তাতে বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি দুর্বল হওয়ারও ঝুঁকি রয়েছে। বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির ৬০ শতাংশই এশিয়া থেকে আসে। মার্কিন-চীন বাণিজ্য যুদ্ধ এটিকেও কঠোরভাবে আঘাত করবে, যেমনটি আগেই সতর্ক করেছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল।
অধিকন্তু, ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সিয়াল কার্যক্রম মার্কিন ডলারকে শক্তিশালী করেছিল। বিনিয়োগকারীরাও আশা করেন যে, তার নীতিগুলো এবারও মূল্যস্ফীতি আরও বেশি বাড়াবে। এর অর্থ হলো, ফেডারেল রিজার্ভকে অর্থনীতিকে অত্যধিক চাপে পড়া থেকে রোধে উচ্চহারে শুল্ক আরোপ করতে হবে। বাণিজ্য শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের পরিকল্পনা, ইউরোপীয় মিত্রদের প্রতিরক্ষায় আরও বেশি অর্থ দিতে বাধ্য করা এবং বহুপাক্ষীয় প্রতিষ্ঠানের অর্থায়ন হ্রাস বিশ্বের অন্য অঞ্চলে প্রবৃদ্ধি কমাতে পারে, যা বাড়িয়ে দেবে ডলারের লাভকেই। বিশ্লেষকরা তাই আশা করছেন, ট্রাম্পের আগামী মেয়াদ বিশ্বজুড়ে ডলারকে আরও আকর্ষণীয় করবে।
তার প্রথম মেয়াদে আফ্রিকাকেও উপেক্ষা করেছিলেন ট্রাম্প। কমিয়ে দিয়েছিলেন কিছু সহায়তাও। অভিবাসন রোধ এবং মহাদেশটির কিছু দেশকে ‘অত্যন্ত বাজে রাষ্ট্র’ হিসাবে উল্লেখ করেছিলেন। তবে জো বাইডেন এসে বোঝানোর জোর চেষ্টা করেছিলেন যে, আফ্রিকা মূল্যবান এবং অপরিহার্য অংশীদার। তার প্রচেষ্টার কিছু ফলও পাওয়া যায়। অ্যাঙ্গোলা, ডিআর কঙ্গো এবং জাম্বিয়ার মধ্য দিয়ে প্রসারিত লবিটো করিডোর নামে পরিচিত রেললাইনে বিনিয়োগের জন্য প্রশংসিত হয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
২০২০ সালে জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর থেকে আফ্রিকায় ২২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এবার ট্রাম্প এই বিনিয়োগ এবং বাণিজ্য চলমান রাখবেন না বলেই মনে হচ্ছে। যোগ্য আফ্রিকান দেশগুলোকে ২০০০ সাল থেকে কর না দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কিছু পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম করে আফ্রিকান গ্রোথ অ্যান্ড অপরচুনিটি অ্যাক্ট (আগোয়া)। ট্রাম্প বলেছিলেন, ২০২৫ সালে মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে স্কিমটি পুনর্নবায়ন করা হবে না।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে তার অধিকাংশ সহায়তা পায় আফ্রিকা। চলতি আর্থিক বছরে এটি প্রায় ৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন মাকিন ডলারে উন্নীত হয়। প্রথম মেয়াদে বিশ্বজুড়ে বৈদেশিক সাহায্য কমানোর বার বার প্রস্তাব করেছিলেন ট্রাম্প। বাইডেনের সময় প্রধানত মালি, নাইজার এবং বুরকিনা ফাঁসোর মতো জঙ্গিদের হাতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে সৈন্য ও অস্ত্র দিয়ে আফ্রিকায় তার উপস্থিতি বাড়ায় রাশিয়া। প্রতিপক্ষের এই ক্রমবর্ধমান অবস্থান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগজনক। আফ্রিকায় উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অগ্রগতি করেছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে চীনও।
ট্রাম্প কি রাশিয়া ও চীনকে আফ্রিকার দেশগুলোকে এই সমর্থন করা থেকে বিরত রাখতে পারবেন? এটা সম্ভব বলে মনে হয় না। কারণ, লেনদেনকেন্দ্রিক নেতৃত্বে বিশ্বাসী সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হয়তো সে অনুসারেই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন তিনি।
ট্রাম্পের বিজয় ব্যাপক প্রভাব ফেলবে লাতিন আমেরিকায়ও। আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট জাভিয়ের মিলেই, এল সালভাদরের প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেল এবং ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর মতো রক্ষণশীলরা ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ট্রাম্প এ ধরনের নেতাদের পছন্দ করেন এবং ট্রাম্পের বিজয়ে উৎসাহিত তারাও। তবে কলম্বিয়ার গুস্তাভো পেট্রো এবং মেক্সিকোর ক্লডিয়া শিনবাউমের মতো প্রগতিশীলরা সম্ভবত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জটিল সম্পর্কের মুখোমুখি হবেন। মেক্সিকো সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখোমুখি হবে। কারণ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক অংশীদার দেশটি। মেক্সিকোর রপ্তানিকে কঠোরভাবে আঘাত করবে ট্রাম্পের রক্ষণশীল শুল্কনীতি।
সর্বোপরি, জটিল সময়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ব। ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর কীভাবে নতুন পরিস্থিতি সামলে উঠবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সাইমন মোহসিন: রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশ্লেষক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে