ছুটির ফাঁদে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
শিক্ষাবর্ষ সম্পন্ন হবে কোন উপায়ে!
এ বছর পাঠ্যপুস্তক হাতে পেতে অনেক দেরি হয়েছে শিক্ষার্থীদের। কোনো কোনো স্কুলে তিন-চার মাস লেগে গেছে। এর মধ্যে গত ঈদুল ফিতর উপলক্ষে একবার লম্বা ছুটির ফাঁদে পড়েছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো। এবার ঈদুল আজহা উপলক্ষেও লম্বা ছুটির কবলে পড়ছে। গতকাল বুধবার (১৪ মে) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ১ জুন শুরু হচ্ছে ১৯ দিনের ছুটি। কর্তৃপক্ষ বলছে, শিক্ষাপঞ্জি অনুযায়ী ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন অবকাশ। অভিভাবকরা বলছেন, দীর্ঘ ছুটিতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা ব্যাহত হচ্ছে। বিকল্প উপায়ে পড়তে পারে না- এমন শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে পড়ছে।
এর মধ্যে অনেক স্কুলে প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হয়নি বা হওয়ার পথে। অনেক স্কুলে হয়তো ঈদের আগেই প্রথম সাময়িক পরীক্ষা হয়ে যাবে। যদিও অনেক স্কুলেই প্রথম সাময়িকের জন্য সিলেবাসের নির্ধারিত অধ্যায়গুলো পাঠদান সম্পন্ন হয়নি। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীরা সত্যিই উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে বলে মনে করছেন শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও অভিভাবকবৃন্দ।
শিক্ষা-সংশ্লিষ্টরা জানান, নতুন পাঠ্যবই হাতে না পাওয়ায় শিক্ষাবর্ষের প্রথম দুই মাস গেছে পড়াশোনা ছাড়া। তৃতীয় মাস (২ মার্চ শুরু) থেকে রোজাসহ ৪০ দিনের ছুটি ছিল। খোলার পর দুই দিন ক্লাস পেয়েছিল শিক্ষার্থীরা। এরপর শুরু হয় এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা; যা এখনো চলছে। আসছে ঈদুল আজহা ও গ্রীষ্মকালীন ছুটির পর আবার শুরু হবে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা জানান, ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের বেশিরভাগ বড় ছুটি পড়ে গেছে বছরের প্রথমার্ধে। এতে তারা সিলেবাস শেষ করা নিয়ে গলদঘর্ম হচ্ছেন। কারণ ‘অ্যাকটিভ ক্লাসরুম টাইম’ পাওয়া তাদের জন্য দুষ্কর হয়ে পড়েছে। অভিভাবকরা বলছেন, বিদ্যালয় খোলা না থাকলে সন্তান শুয়েবসে সময় কাটায়। পড়াশোনায় মনোযোগ থাকে না। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সন্তানদের কোচিং সেন্টার বা শিক্ষকের কাছে ব্যাচে পড়ান। এতে শিক্ষাব্যয় বাড়ে। আবার গ্রামের অভিভাবকদের সামর্থ্য না থাকায় সন্তানরা খেলাধুলা করে ছুটি কাটায়। ফলে তারা জ্ঞান অর্জনে পিছিয়ে পড়ছে।
বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। গণ-অভ্যুত্থানের পর আশা করা গিয়েছিল দেশের সবকিছু যেহেতু নতুন করে সংস্কার হচ্ছে, শিক্ষাব্যবস্থারও প্রয়োজনীয় সংস্কার হবে। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে রাষ্ট্র বিনির্মাণের লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকার ১১টি সংস্কার কমিশন গড়ে তুললেও এখন পর্যন্ত শিক্ষা সংস্কার কমিশন গড়ে তোলেনি। অথচ সবার প্রথমে দরকার ছিল বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার আমূল সংস্কার। সম্প্রতি বাংলাদেশের সাধারণ শিক্ষাধারার সংস্কারকৃত তথা পরিমার্জিত পাঠ্যপুস্তক প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শিক্ষা-প্রয়োগ পদ্ধতির সংস্কার না হলে শুধু পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন করে যে কোনো ফল হবে না তা নীতিনির্ধারকরা নিশ্চয়ই জানেন।
শিক্ষা-প্রয়োগ পদ্ধতির কথা তখনই আসে যখন নিয়মিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান সম্পন্ন হবে; কিন্তু বছরের তিন-চার মাসই যদি শিক্ষার্থীরা ছুটির কবলে পড়ে থাকে তাহলে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নতি কঠিনই বৈকি। শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে খুব শিগগিরই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো এই দীর্ঘ ছুটির ফাঁদ থেকে মুক্তি দেয়া হোক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে