জিম্বাবুয়ে সিরিজ অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে যেভাবে
আগামীকাল রোববার বাংলাদেশের সঙ্গে শুরু হচ্ছে জিম্বাবুয়ের টেস্ট সিরিজ। অথচ এই সিরিজকে ঘিরে কারো মাঝেই নেই তেমন কোনো আগ্রহ। বাংলাদেশ-জিম্বাবুয়ে সিরিজটি সরাসরি সম্প্রচার করতে আগ্রহ দেখায়নি কোনো বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও। সংশ্লিষ্টদের মতে, সময়ের পরিক্রমায় এই দুই দলের মধ্যে যে বিস্তর ব্যবধান তৈরি হয়েছে, এতে এক পেশে লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা থেকেই মূলত এমন নিরুত্তাপ আবহের সৃষ্টি। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মাঠে নামা মানেই বাংলাদেশের জয় অবধারিত। প্রতি সিরিজে এমন দৃশ্যই দেখে থাকেন দর্শকরা। এবারও ফলাফল ব্যতিক্রম হওয়ার কথা ভাবছেনা কেউ। তবে পুরো পরিসংখ্যান বলছে ভিন্ন কথা।
এ পর্যন্ত দুদল পরস্পরের বিপক্ষে ১৮টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের জয় ৮টি আর জিম্বাবুয়ের ৭টি ম্যাচে। বাকি ৩টি ম্যাচ ড্র হয়েছে। বলা যেতে পারে প্রায় সমান সমান। কিন্তু সাম্প্রতিক ফর্ম, শক্তি, সামর্থ্যরে বিবেচনায় বাংলাদেশের চেয়ে জিম্বাবুয়ে অনেক পিছিয়ে। এমন অবস্থায় ২০ এপ্রিল থেকে সিলেটে শুরু হতে যাওয়া সিরিজের প্রথম টেস্ট নানা দিক থেকে অর্থবহ করে তুলতে পারে বাংলাদেশ।
প্রথমত, স্পোর্টিং উইকেটের কথা বলা যায়। হোম অ্যাডভান্টেজ না নিয়ে (স্পিন ট্র্যাক তৈরি করে ফাঁদে ফেলা) স্পোর্টিং উইকেটে খেলে টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থানটা যাছাই করে নিতে পারে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ে সিরিজের মাধ্যমে ঘরের মাঠে স্পোর্টিং উইকেটে খেলার যাত্রাটাও জোড়ালোভাবে শুরু হতে পারে। এরই মধ্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ ফিল সিমন্স বলেছেন, ‘প্রপার’ উইকেটেই খেলতে চান তারা। এজন্য দল প্রস্তত। ভবিষ্যতে টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ যে জায়গায় পৌঁছানোর লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, সেই মানে যেতে হলে স্পোর্টিং উইকেটে খেলা চাই-ই চাই। গত বছর বিদেশের মাটিতে স্পোর্টিং উইকেটে খেলেই বেশি সাফল্য পেয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানকে তাদের ঘরের মাঠে দুই টেস্ট ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে নাজমুল হোসেন শান্তরা। এরপর গত নভেম্বরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে স্মরণীয় জয় এসেছে। ৬টি অ্যাওয়ে টেস্ট ম্যাচ খেলে ৩টিতেই জয় পায় বাংলাদেশ। কিন্তু ৪টি হোম টেস্ট ম্যাচ খেলে একটিতেও জিতেনি তারা। প্রতিপক্ষ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলংকা। এবার কোচ ফিল সিমন্সের অধীনে প্রথমবারের মতো ঘরের মাঠে টেস্ট ম্যাচ খেলবেন শান্তরা। তার এই নতুন যাত্রাটা স্পোর্টিং উইকেটে খেলেই শুরু হোক দলের, সেটাই চাওয়া। স্পোর্টিং উইকেটে খেলার অভ্যস্ততা গড়ে উঠলে যেকোনো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী গড়ে তুলতে সক্ষম হবে বাংলাদেশ।
দ্বিতীয়ত, জিম্বাবুয়ে সিরিজটি প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারদের যাছাই করে নেওয়ার বড় মঞ্চ হতে পারে। বর্তমান দলে সিনিয়র পাঁচ ক্রিকেটারদের মধ্যে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে আছেন মুশফিকুর রহিম। সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, তামিম ইকবাল অবসরে গেছেন। অনেক আগেই টেস্ট ক্রিকেট খেলেন না মাশরাফি বিন মুর্তজা। এই সিনিয়রদের যুগ পেরিয়ে নতুন দিগন্তে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ। এছাড়া জিম্বাবুয়ে সিরিজে ইনজুরির কারণে খেলছেন না অভিজ্ঞ পেসার তাসকিন আহমেদ। চোট পাওয়া লিটন কুমার দাসও ছুটিতে আছেন। ফলে তারুণ্যদীপ্ত দল নিয়ে খেলছে বাংলাদেশ। ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিংয়ে তরুণরা কেমন করেন, সেটি দেখে নেওয়ার পালা এবার।
তৃতীয়ত, টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের দৈন্য-দশা নতুন কিছু নয়। গত সিরিজগুলো ব্যাটারদের অসহায়ত্বের চিত্রই ফুটে উঠে বার বার। সেই ব্যর্থতার খোলস থেকে বেরিয়ে ব্যাটাররা প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখতে পারেন এই জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে। সেশন বাই সেশন ধরে খেলে টেস্ট মেজাজের আসল ব্যাটিংটা যদি জিম্বাবুয়ে সিরিজে উপহার দিতে পারেন তারা, তাহলে সেটি পরবর্তীতে যেকোনো দলের সঙ্গে আত্মবিশ্বাসের জ্বালানি হবে। চতুর্থত, বাংলাদেশ তরুণ পেস অ্যাটাকের সামনেও দারুণ সুযোগ। বিদেশের মতো ঘরের মাঠেও দাপট দেখিয়ে টেস্ট ম্যাচ জেতাতে কার্যকরি ভূমিকা রাখতে পারেন পেসাররা। এই সিরিজের মাধ্যমে নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদরা নিজেদের আরো শাণিত করতে পারেন।
এরপর পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতার ধরে রাখার প্রসঙ্গও আসতে পারে। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে স্মরণীয় টেস্ট জয়ের যে সাফল্য দেখাল বাংলাদেশ, সেই ধারাবাহিকতা সামনের দুই টেস্ট ম্যাচে ধরে রেখে দাপুটে ক্রিকেট খেলতে পারলেই বাংলাদেশের জন্য অর্থবহ হবে জিম্বাবুয়ে সিরিজ। আর এই অর্থবহ সিরিজটি বাংলাদেশ টেলিভিশন তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সরাসরি সম্প্রচার করে দলকে আরো উজ্জীবিত করতে চলেছে, বলাই যায়।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে