Views Bangladesh Logo

ঢাবি ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ

সবার আগে মানুষ হওয়া জরুরি

যে কোনো রাষ্ট্রীয় ইস্যুতে জনগণকে জিম্মি করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-আন্দোলন ঐতিহাসিক ব্যাপার। জিম্মি না করে এখানে সম্পৃক্ত শব্দটাই সমীচীন। কিন্তু দিন দিন জনগণ যেভাবে শিক্ষার্থীদের হাতের পুতুলে শিকার হচ্ছে তাকে জিম্মি বলাই শ্রেয়। দেশে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ কম নেই, রাষ্ট্রীয় ইস্যুরও অভাব নেই; যখন যার যে দাবি-দাওয়া তখন তা নিয়ে রাস্তায় নামে আন্দোলনে; তাতে জনগণের ভোগান্তি কোন স্তরে পৌঁছায় তা ভুক্তভোগীমাত্রই জানেন। তাই এর মধ্যে সংঘর্ষে জড়ানোয় শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধ নিয়ে অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

দেশে চলমান অসংখ্য সংকটের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে রাজধানীর সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ। স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে তারা অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন; তাদের আন্দোলনে জনগণ বহুবার ভুগেছে। এবার, গত রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে ভয়াবহ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে তাতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকা। মুহুর্মুহু সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ার গ্যাসের শেল নিক্ষেপে মধ্যরাতে কেঁপে ওঠে আশপাশ। সারারাত উভয় পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে ছিল। থেমে থেমে চলছিল ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া।

গতকাল সোমবার (২৭ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে গতকাল সোমবার রাতভর সংঘর্ষে এ পর্যন্ত ২২ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শিক্ষার্থী ছাড়াও আহত হন পথচারী ও সাংবাদিক। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজন এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনেকেই চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।

চিত্রনাট্যের মতো এ ঘটনা এখন নানাভাবে সাজানো সম্ভব। কে ঠিক কে বেঠিক এ নিয়ে নানাও তর্ক-বিতর্ক চলতে পারে। কিন্তু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এরকম ঘটনা ঘটা তো কোনোভাবেই কাম্য না। যদি অধ্যাপক মামুন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেই থাকেন তা নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের সঙ্গে বসা যেত। অনেকভাবেই এই সমস্যার সমাধান করা যেত। সামান্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে কেন এই রণক্ষেত্রের সূচনা? শিক্ষার্থীদের কেন এমন শিষ্টাচারবহির্ভূত কাজ? পক্ষে-বিপক্ষে নানা যুক্তি থাকতে পারে কিন্তু তার জন্য জনগণকে জিম্মি করা কেন? এসব সিদ্ধান্ত তো প্রশাসনিকভাবে হবে। এতে একদিকে যেমন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় ক্ষতি হচ্ছে আরেকদিকে দেশের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। আমরা আশা করব বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় সবার শুভবুদ্ধির উদয় হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তুচ্ছ ঘটনাকে ঘিরে কেন শিক্ষার্থীরা এভাবে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছেন। এ বিষয়ে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির চিত্র শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এসে পড়েছে। জবাবদিহি ও আইনের শাসনের ঘাটতি, অন্যায় করে পার পাওয়ার প্রবণতা, মূল্যবোধের চর্চা না থাকার কারণেই এমন ঘটনা ঘটছে।

আর কী করে এক কলেজের শিক্ষার্থীরা গিয়ে আরেক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বিবাদে জড়ায়! আচ্ছা, বিবেকবোধ কী হারিয়ে গেল শিক্ষার্থীদের? শিক্ষার উদ্দেশ্য তো মানুষ তৈরি করা, বিবেকবোধ তৈরি করা! তাহলে কেন এমন ধ্বংস? আমরা মনে করি, এগুলো আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতা। পাশাপাশি শিক্ষকরা কেন তাদের শিক্ষার্থীদের থামাতে ব্যর্থ হলেন। আমাদের সবার মনে রাখা উচিত, মানুষ না হলে আর বিবেকবোধ না থাকলে সব লেখাপড়া বৃথা! কাজেই সবার আগে মানুষ হওয়া জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ