Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

‘আই লাভ মেট্রোরেল’ ভালোবাসার সুবাতাস নিয়ে আসবে

Kachi  Khondoker

কচি খন্দকার

বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪

নপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা কচি খন্দকার ছেলেবেলা থেকেই এক শৈল্পিক পরিবেশের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন, কুষ্টিয়ার এক মফস্বলে। তার গল্পে বারবার ঘুরেফিরে আসে সেই মফস্বলজীবনের কথা। প্রায় বিশ বছর আগে নির্মাণ করেছিলেন তার প্রথম নাটক খসরু+ময়না। পরে ঢাকার নাগরিক জীবনের সংকট নিয়েও বেশ কিছু নাটক নির্মাণ করেছেন। আসছে ঈদে তার রচনা ও পরিচালনায় ‘আই লাভ মেট্রোরেল’ নাটক প্রচারিত হবে। তিনি তার শিল্পযাত্রার নানান মাত্রা নিয়ে কথা বলেছেন ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছে ভিউজ বাংলাদেশের কামরুল আহসান, মাহফুজ সরদার ফারজানা ববি

ভিউজ বাংলাদেশ: কেমন আছেন?
কচি খন্দকার:
খুব ভালো আছি। ভালো থাকা ছাড়া গতি নেই।

ভিউজ বাংলাদেশ: ভালো থাকা ছাড়া গতি নেই কেন?
কচি খন্দকার:
বেঁচে থাকতে হলে ভালো থাকতেই হবে। তাই ভালো থাকা ছাড়া গতি নেই।

ভিউজ বাংলাদেশ: আসছে ঈদে আপনি যে নাটকটি বানিয়েছেন, তাও গতির সঙ্গে সম্পর্কিত?
কচি খন্দকার:
হ্যাঁ, আমার আগামী নাটক ‘আই লাভ মেট্রোরেল’। মেট্রোরেল শুধু আমাদের যানজটের অভিশাপ থেকে মুক্তি দেয়নি, প্রেমের জন্যও আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। আমি তো থাকি ঢাকার শেওড়াপাড়া। মেট্রোরেল চালু হওয়ার আগে যানজটে অতিষ্ঠ ছিলাম। অনেকে বলাবলি করছিল, মেট্রোরেল বোধহয় আর হবেই না। এটা সম্ভব না। খালি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি হবে; কিন্তু মেট্রোরেল তো চালু হলো। চালু হওয়ার পর এখন নিয়মিত যাতায়ত করছি। আমি যেহেতু উত্তরায় শুটিং করি, আমার বাড়ির সামনে থেকে সুন্দরভাবে চলে যাই। জীবন এখন ফুরফুরা হয়ে গেছে। আমি এখন জানি কখন আমি কারওয়ান বাজার আসব, কখন উত্তরা গিয়ে পৌঁছাব।

ভিউজ বাংলাদেশ: ‘আই লাভ মেট্রোরেল’-এর গল্পটি কীরকম, সংক্ষেপে একটু বলবেন?
কচি খন্দকার:
আমার সব নাটকই সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে। যেমন, ক্যারম, কবি, খসরু-ময়না, বাইসাইকেল, জুতো আবিষ্কার বা ধারাবাহিক যেসব বানিয়েছি, এফডিসি, জেলাস, নো কোশ্চেন নো আনসার ইত্যাদি। এসব নাটকে আমি আমার সময়টাকে ধরতে চেয়েছি। গত ঈদেও আমি একটি নাটক বানিয়েছিলাম, ‘রুচির দুর্ভিক্ষ’। সেটিও ছিল একটি সমসাময়িক ইস্যু নিয়ে। নাট্যকার মামুনুর রশীদ এ কথাটি বলাতে চারদিকে অনেক কথা হয়েছে। আসলেই তো আমরা একটা রুচির দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছি। এর আগে আমি একটা নাটক বানিয়েছিলাম ‘অক্ষর-স্বাক্ষর’ একুশের ভাষা-আন্দোলন নিয়ে। সব ধর্মের মধ্যেই মঙ্গল-প্রদীপ জ্বালানোর একটা রীতি আছে; কিন্তু সব ধর্মের মানুষ একসঙ্গে প্রদীপ জ্বালায় না। তাই আমার ভাবনা এলো ভাষা-আন্দোলন এমন একটা ব্যাপার, যার মধ্য দিয়ে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে আমাদের জাতীয় চেতনা ফুটে উঠেছে। নড়াইলে আমি যে-সংগঠনটি করেছি; ওখানে একলাখ প্রদীপ জ্বালিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভাষা শহীদদের স্মরণ করি। অক্ষর-স্বাক্ষর নাটকটিরও মূল ভাবনা এই আলোর বার্তা ছড়িয়ে দেয়া নিয়ে। একটা ব্যাপার খেয়াল করেছি, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, ভাষা-আন্দোলন এখনো অনেকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারে না। বাংলাদেশের ডেপেলপমেন্ট অনেকেই দেখতে পারে না। উন্নয়ন সহ্য করতে পারে না। যারাই এটা পারে না, আমার মনে হয় তাদের একটা সমস্যা আছে। তো আমি দেখলাম যে, এই যে সময় ও গতি এটা একটা বড় ঘটনা। এই ভাবনা থেকেই ‘আই লাভ মেট্রোরেল’ নাটকটি করা। নাটকটির মূল বক্তব্য হচ্ছে, মেট্রোরেল চালু হওয়ার আগে আমাদের ঢাকা শহর অনেকটা স্থবির হয়ে ছিল। মেট্রোরেল আমাদের জীবনে অন্যরকম এক সুবাতাস নিয়ে এসেছে। একটা প্রেমের গল্পের মধ্য দিয়ে আমি এটা দেখাতে চেয়েছি। গল্পটা এমন, ঢাকার কাজীপাড়ায় থাকেন ইনতু, পরীবাগে থাকেন অধরা। প্রেম হওয়ার পর তাদের মধ্যে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় নিয়মিত দেখা করা। শাহবাগ, ছবির হাট বা চারুকলায় তারা দেখা করতে চান; কিন্তু ইনতু সময় মতো আসতে পারে না। প্রেম ভেঙে যায় যায় অবস্থা। ঠিক সেই সময় মেট্রোরেল এসে প্রেমটা বাঁচিয়ে দেয়।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনি চলচ্চিত্র নির্মাণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বললেন, কেমন প্রস্তুতি চলছে?
কচি খন্দকার
: চলচ্চিত্র নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই ভাবছি। দুটি গল্প এখন আমি নির্বাচন করেছি। একটি হচ্ছে ‘মাই ডিয়ার ফুটবল’, আরেকটি হচ্ছে ‘কবিতার মাকে শ্রদ্ধা’। দুটির মধ্যে যেটি ভালো মনে হয় সেটি নিয়ে চূড়ান্ত অগ্রসর হব।

ভিউজ বাংলাদেশ: অনুদানের জন্য জমা দিবেন?
কচি খন্দকার:
না, অনুদানের জন্য জমা দেব না। ওরকম কোনো ইয়ের মধ্যে ঢুকব না। নিজের মতো করব।

ভিউজ বাংলাদেশ: ওটিটি তো এখন জনপ্রিয় মাধ্যম। অটিটিতে কাজ করছেন?
কচি খন্দকার:
আসলে ওটিটি প্রথম যেরকম ভেবেছিলাম সেরকম হলো না। একটু থ্রিলারধর্মী হয়ে গেল। ওই জিনিসটা আমার মস্তিষ্কে ঠিক নেই। আমি একটু মৌলিক গল্প নিয়ে নাটক করি। আপনারা সবাই জানেন, মূলত মফস্বলধর্মী গল্পই আমার পছন্দ। তবে, ইদানীং ওটিটিতে একটা পরিবর্তন আসছে। অনেকেই মৌলিক গল্প নিয়ে ভাবছে। সে জায়গা থেকে আমিও একটা গল্প নিয়ে গবেষণা করছি। গল্পটি হচ্ছে, খসরু মাইনাস ময়না।

ভিউজ বাংলাদেশ: ওটিটি যখন বাজারে এলো সবাই খুব আশা করেছিল ভালো কিছু হবে; কিন্তু ওটিটি কেমন থ্রিলারেই আটকে গেল। এই নিয়ে অনেকে নেগেটিভ মন্তব্যও করছে। আপনার কী অভিমত?
কচি খন্দকার:
আমি ঠিক নেগেটিভ বলব না। একেকটা মাধ্যমের একেক রকম কাজ। তবে, যে কথাটি উঠেছে, তার কারণ হচ্ছে, নিশ্চয়ই অনেক ধরনের সংকট আছে। তবে, সংকট বলে ওটাকে আমি নিরুৎসাহিত করতে চাই না। আমি চাই যে, কাজ হচ্ছে কাজ করুক। ওটিটিতে যারা অভিনয় করছেন, তারা প্রত্যেকেই প্রশংসা পাচ্ছেন। এর কারণ ওটিটিতে অভিনয়টা মন দিয়ে করতে পারেন। একটি নাটকে একদিনে দশ থেকে পনেরোটি দৃশ্য করতে হয়; কিন্তু ওটিটিতে একদিকে দু-চারটি সিকোয়েন্স করে। ফলে পেশাদারিত্বটা বজায় থাকে। ওখানে প্রচুর টাকা। ফলে সময়টা পায়। পরিচালক, অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাই মন দিয়ে কাজটা করতে পারে।

ভিউজ বাংলাদেশ: আরেকটা অভিযোগ, ওটিটিতে নির্দিষ্ট কয়েকজন পরিচালকই ঘুরে-ফিরে কাজ করেন।
কচি খন্দকার:
হ্যাঁ, এক ধরনের সিন্ডিকেট তো আছেই। এটা হয়ে যায়। বাংলাদেশে সব ক্ষেত্রেই এমনটা হয়। অনেক যোগ্যলোক বাইরে থেকে যায়। বারবার কিছু নির্দিষ্ট লোকই সুযোগ পায়।

ভিউজ বাংলাদেশ: নাটকের ক্ষেত্রেও এমন কিছু সিন্ডিকেট আছে। নির্দিষ্ট কয়েকজন অভিনেতা-অভিনেত্রীই ঘুরেফিরে কাজ করছেন?
কচি খন্দকার:
এটা তো করছেন টেলিভিশনের মালিকরা। টেলিভিশন থেকে নির্দিষ্ট করে দেয়, ওকে ওকে নিলে আমার নাটক প্রচার হবে। চ্যালেন কালকে বলে দিক, অভিনেতা-অভিনেত্রীদের পরিচালক পছন্দ করবে, তিনি দেখবেন নাটকটা ভালো হলো কি না, তাহলেই এই সিন্ডিকেট ভেঙে যাবে।

ভিউজ বাংলাদেশ: অভিনেতা হিসেবে আপনি তো এখন বেশ পরিচিত মুখ। নাটক নির্মাণ করেও খ্যাতি অর্জন করেছেন। নাটক নির্মাণ করতে গিয়ে আপনি কোনোরকম সংকট বোধ করেন কি না?
কচি খন্দকার:
আমি সব সময়ই সংকটবোধ করি। আমি তো বারবারই বলি, ডিরেক্টরিয়াল মিডিয়া, ডিরেক্টরের হাতে না থেকে আর্টিস্ট মিডিয়া হয়ে গেছে। আর্টিস্ট মিডিয়া হয়ে গেলে তো পুরোটাই বিপরীত কথা, উল্টা কথা হয়ে গেল।

ভিউজ বাংলাদেশ: অভিনেতা, নাট্যকার, নির্মাতা কোন পরিচয়টাতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন?
কচি খন্দকার:
অভিনেতা পরিচয়ে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি না। আমাকে যদি কেউ বলে, নাট্যকার, নির্মাতা তাহলে ভালো লাগে। কেউ নাট্যকার হিসেবে চিনলে বুঝি এই লোকটা আমার খোঁজ পেয়েছে।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনার শৈল্পিকজীবন সম্পর্কে কিছু বলুন। কীভাবে জীবনে শিল্পের স্পর্শ পেলেন?
কচি খন্দকার:
এটা আমার পরিবার থেকেই এসেছে। আমার বাবা পেশাদারী ফুটবল খেলোয়াড় ছিলেন। তিনি গোলরক্ষক ছিলেন। আমার মা নিয়মিত বই পড়তেন। আমিও ছোটবেলা থেকে একটা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে জড়িয়ে পড়ি।

ভিউজ বাংলাদেশ: আপনি ভাইব্রাদার দলের সঙ্গ ছিলেন। মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সম্পর্কে কিছু বলুন।
কচি খন্দকার:
নাট্যকার ও পরিচালক হিসেবে আমার জীবনে যা অবদান তা তারই। দ্বিতীয় কেউ নেই।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ