যা ভাবি, যা বিশ্বাস করি, যা বলতে চাই, তা নিয়েই সিনেমা বানাই
দেশের প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ফাখরুল আরেফিন খান। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ভুবন মাঝি (২০১৭) সরকারি অনুদান লাভ করে। এরপর তিনি গণ্ডি (২০২০), জেকে ১৯৭১ (২০২৩) নির্মাণ করেন। লালন সাঁইকে নিয়ে তৈরি করেছেন প্রামাণ্যচিত্র ‘হকের ঘর’। ২০২০ সালে ‘গণ্ডি’ সিনেমার জন্য শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার পুরস্কার পান তিনি। তার ‘নীল জোছনা’ চলচ্চিত্রটি নির্মাণাধীন। ভিউজ বাংলাদেশের সঙ্গে আলাপে ফাখরুল আরেফিন খান কথা বলেছেন নিজের নির্মাণ, চিন্তা এবং চলচ্চিত্র শিল্প নিয়ে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফারজানা সাজনীন অর্চি।
ভিউজ বাংলাদেশ: অনেক আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘নীল জোছনা’ সিনেমার কাজ শুরু করেছেন; কিন্তু এখনো মুক্তি পায়নি কেন? কবে মুক্তি পাবে?
ফাখরুল আরেফিন খান: ২০১৮ সালে আমি নীল জোছনার স্ক্রিপ্ট লিখেছিলাম। এটি একটি প্যারাসাইকোলজিক্যাল সিনেমা; কিন্তু যখন কাজ করতে যাব, তখন মাথার মধ্যে হঠাৎ করে ‘গণ্ডি’ সিনেমার ভূত চাপে। সেটি শুরু করে ২০২০ সালে মুক্তি দেই। এরপর ইংরেজি সিনেমা ‘জেকে ১৯৭১’ বানাই। এজন্য নীল জোছনার কাজ শুরু করতে পারিনি। ২০২৩ সালে সিনেমাটি নির্মাণে সরকারের কাছে অনুদানের আবেদন জানাই এবং সার্টিফায়েড হয়। গত বছরের ৩ জুলাই নীল জোছনার শুটিং শুরু করে ১৫ জুলাই পর্যন্ত করতে পেরেছিলাম। শুটিং শেষ হওয়ার কথা ছিল ২১ জুলাই; কিন্তু আন্দোলনের কারণে বন্ধ রাখতে বাধ্য হই। আজ পর্যন্ত শেষের ছয় দিনের শুটিং করতে পারিনি। কারণ, ৩০ শতাংশ শুটিং হলে সরকারের দ্বিতীয় কিস্তির টাকা দেয়ার কথা ছিল; কিন্তু সিনেমার কাজ ৭০ শতাংশ হলেও এখন পর্যন্ত টাকা পাইনি। টাকাটা দিতে সরকারকে আমরা নিয়মিত জানাচ্ছি। প্রায় দুমাসেও সাড়া না পেলেও আমরা আশাবাদী, দ্রুতই টাকা পাব। টাকা যদি পেয়ে যাই আর ভারতীয় অভিনেত্রীর ভিসা-সংক্রান্ত জটিলতা যদি তৈরি না হয়, তাহলে আশা করছি, চলতি বছরের মধ্যেই মধ্যেই সিনেমাটি মুক্তি পাবে।
ভিউজ বাংলাদেশ: প্যারাসাইকোলজি নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে কেন হলো?
ফাখরুল আরেফিন খান: সাইকোলজি মানে মনস্তত্ত্ব। আর প্যারাসাইকোলজি হলো মনস্তত্ত্বের আগের বা পরের স্তর। মানুষের মনের অনেক স্তর আছে। বিভিন্ন স্তরে মন বিভিন্নভাবে কাজ করি। আমরা সাধারণ মানুষ সাব-কনশাস মাইন্ড, অ্যাবসেন্ট মাইন্ড, ড্রিম এসব বুঝি; কিন্তু মানুষের মনের যে এতো আনলিমিটেড স্তর আছে বা এতো রহস্যময়, তা আমি নিজেও জানতাম না। সিনেমার কাজটা করতে মানুষের মনের রহস্য নিয়ে পড়তে শুরু করার পর থেকে মনে হচ্ছে, আমি নিজেই একজন রহস্যময় মানুষে পরিণত হচ্ছি।
আমরা ধার্মিকেরা বলি, সৃষ্টিকর্তা এক। বিজ্ঞানও বলে, সব শক্তি একটি শক্তির উৎস থেকেই সৃষ্টি। আমাদের পুরো বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড শক্তিতে ভরপুর এবং আমরা একে অন্যের সঙ্গে এই শক্তির মাধ্যমেই যুক্ত আছি। তো, এতো চমৎকার শক্তির মধ্যে থেকেও আমরা যারা জীবনে শক্তি পাই না বা জীবনে কোনো উদ্দেশ্য পাই না, কেন পাই না বা পারি না আবার এই বিশ্বময় মহাশক্তি মানে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের মতো ক্ষুদ্র শক্তি অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক কী, এসব বিষয় আমাকে তাড়না করত। সে জায়গা থেকে প্যারাসাইকোলজি বিশেষ করে কোয়ান্টাম ফিজিক্স আমাকে সিনেমাটি তৈরির অনুপ্রেরণা দিয়েছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: প্যারাসাইকোলজি নিয়ে দেশে আগে তেমন সিনেমা তৈরি হয়নি। তো সিনেমাটি মুক্তির পর দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কেমন হবে বলে মনে করেন?
ফাখরুল আরেফিন খান: আমাদের দেশের অধিকাংশ দর্শকদের রুচি অনেক নিচে নেমে গেছে। তারা এখন খুন, রাহাজানি, অবৈধভাবে অর্থ পাচার, অর্থাৎ অনেকটা তামিল স্টাইলের সিনেমা দেখতে ভালোবাসেন। আশি-নব্বই বা দুই হাজারের প্রথম দশকের ‘মাটির ময়না’, ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ বা ‘আগুনের পরশমনি’ দেখার মতো দর্শক এখন নেই। তো, তারা কেন আমাদের মতো পরিচালকদের সো কলড ইন্টারেস্টিং থটফুল সিনেমা দেখবেন!
তাই দর্শকদের ওপর আমার কোনো আস্থা নেই, চিন্তাও নেই। আমি সবার জন্য সিনেমা বানাইও না। আবার ‘তুফান’ বা ‘পরাণ’- এর মতো আমার সিনেমা অনেক টাকা আয় করবে, সে আশায়ও বানাই না। আমি যা ভাবি, যা বিশ্বাস করি, যা বলতে চাই, তা নিয়েই সিনেমা বানাই।
আবার ভালো সিনেমা হলে দর্শকরা নিজের তাগিদেই হলে গিয়ে দেখেন। যেমন, আমার সিনেমা ‘ভুবন মাঝি’ প্রচুর দর্শক দেখেছেন। দর্শকদের প্রতি আমার তেমন আশাও ছিল না। তারা দেখেছেন নিজেদের প্রয়োজনেই। এখন বলতে পারেন, তাহলে আমি কার জন্য সিনেমা বানালাম, যদি দর্শকদের কাছে সিনেমা না পৌঁছে দেই! সেক্ষেত্রে একজন পরিচালক হিসেবে আমি সিনেমার ক্যাম্পেইন বা প্রমোশনের কাজ করব; কিন্তু অনেক বেশী দর্শক দেখতে এলেন কি এলেন না, সে দায়িত্ব আমি নেব না।
ভিউজ বাংলাদেশ: দর্শকদের সিনেমা বা নাটক দেখার রুচিতে এই যে পরিবর্তন এসেছে, এর কারণ কী বলে মনে হয় আপনার?
ফাখরুল আরেফিন খান: এর মূল কারণ হলো, আমাদের সামাজিক জীবনযাপন পদ্ধতি। সমাজে, উপার্জনে, শিক্ষায়, আচরণে, খাদ্যাভাসে এবং অর্থনৈতিক চিন্তা-ভাবনা বা পরিবারের মাঝেও প্রতিনিয়ত মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আসছে। ফলে পরিবর্তন এসেছে রুচিতেও। আমাদের ছেলেবেলায় পরিবারগুলোতে অভাব ছিল; কিন্তু দারিদ্র্য ছিল না। আমরা মনস্তাত্ত্বিকভাবে কেউ গরিব ছিলাম না। আগে আমরা ছোট বাড়িতেও সবাই মিলে-মিশে থাকতাম; কিন্তু এখন তো ২ হাজার ৩০০ স্কয়ার ফিটেও দুজন মানুষ থাকতে পারে না। সারাক্ষণ আফসোস করে যে, ঘর ছোট লাগছে। এই পরিবর্তনগুলো আসলে পশ্চিমা বিশ্ব আমাদের মধ্যে প্রবেশ করাচ্ছে। আমরা এখন তাদের ফলো করতে গিয়ে ভাতের বদলে বার্গার খাই, হটডগ খাই। সবাই একরকম অস্থির জীবনযাপন করছেন, সবকিছুতেই তাড়াহুড়ো। এই যে মানুষের অতিরিক্ত সুখী হওয়ার লোভ বা পরিবর্তনগুলো এসেছে, এর প্রভাব তো সিনেমা হলেও পড়বে। তো, শান্তশিষ্ট সিনেমা মানুষের পছন্দ না করারই কথা।
ভিউজ বাংলাদেশ: আপনার নির্মিত তিনটি চলচ্চিত্রেই পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের দেখা গেছে। এর কী বিশেষ কোনো কারণ আছে?
ফাখরুল আরেফিন খান: অবশ্যই কারণ আছে। সিনেমা খুব বড় বিষয়। তাই দেশ বলে যে কনসেপ্ট তার মধ্যে আমি সিনেমাকে আটকাতে চাই না। আমার ভাষা যতদূর যাবে সিনেমা নিয়েও আমি ততদূর যাব। শিল্প সাহিত্যের মূল বিষয়ই তো সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেয়া। এখন শামসুর রহমান বাংলাদেশের কবি তাই বলে পশ্চিমবাংলার কেউ যে তার কবিতা পড়তে পারবে না বিষয়টা তো তেমন না। শামসুর রহমান বাংলা ভাষাভাষী সব মানুষেরই কবি। তাই শিল্প সাহিত্যকে আমি কোনো বাঁধাধরা ছকের মধ্যে ফেলতে চাই না।
ভিউজ বাংলাদেশ: পাওলি দামের সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
ফাখরুল আরেফিন খান: পাওলি দাম শিল্পী হিসেবে খুবই প্রফেশনাল। সময়মতো সেটে আসেন, সময়মতো কাজ করেন। শিল্পীদের যে ‘স্টারডম’ থাকে, তা একদমই তার মাঝে নেই। খুবই ফ্রেন্ডলি এবং হেল্পফুল মানুষ। চমৎকার অভিনেত্রীও।
ভিউজ বাংলাদেশ: ওপার বাংলার অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সঙ্গে বাংলাদেশের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের কোনো পার্থক্য আছে কী?
ফাখরুল আরেফিন খান: কোনো পার্থক্য নেই। সবাই প্রফেশনাল এবং ভালো। আমি শিল্পীদের মধ্যে তেমন পার্থক্য দেখি না। তবে হ্যাঁ, অনেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী হয়ে ওঠেন; কিন্তু অভিনয়শিল্পী হতে পারেন না। সেক্ষেত্রে তারা নিজেদের মধ্যে হয়তো শিল্প বিষয়টি ধারণ করতে পারেন না।
ভিউজ বাংলাদেশ: বাংলাদেশে তেমন শৈল্পিক ঘরানার সিনেমার তৈরি হচ্ছে না। এ বিষয়ে আপনার কী অভিমত?
ফাখরুল আরেফিন খান: এখনকার সময়ের একটা ট্রেন্ড হলো, যে সিনেমা ভালো আয় করে, সেটিই ভালো সিনেমা। আগে ছিল এর ঠিক উল্টোটা। বেশি আয়ের সিনেমাকে আমরা ভালো সিনেমা বলতাম না। যেমন ধরেন ‘রংবাজ’ বা ‘বেদের মেয়ে জোছনা’ অনেক টাকা আয় করেছে; কিন্তু তা তখনই ভালো সিনেমা নয়। আমাদের শৈশবে কখনোই শুনিনি যে, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘মেঘের অনেক রং’-এর চেয়ে এগুলো ভালো সিনেমা। কারণ, আগে ভালো সিনেমা এবং অর্থনৈতিকভাবে সফল সিনেমার মধ্যে পার্থক্য ছিল। যারা ভালো সিনেমার দর্শক, তারা ভালো সিনেমা এলেই হলে যেতেন। আর যারা কমার্শিয়াল সিনেমার দর্শক, যারা নিম্নবিত্ত অর্থাৎ দিনমজুর বা শ্রমিক তারা ‘বাবা কেন চাকর’, ‘শান্ত কেন মাস্তান’, ‘স্বামী কেন আসামি’- এসব সিনেমা দেখতেন; কিন্তু যারা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত, রুচিশীল, সিনেমা থেকে নতুন কিছু শিখতে চান, তারা ভালো চিন্তাশীল সিনেমাগুলো দেখতেন; কিন্তু এখনকার বেশিরভাগ দর্শক সস্তা সংলাপ বা চটুল গান যেগুলোতে আছে, সেসব সিনেমা দেখতে চান। এমনকি সিনেমাহলে এসব গান, ডায়লগ শুনে নাচানাচিও করেন; কিন্তু শৈল্পিক ঘরানার সিনেমা তো আর তেমন হয় না। যার জন্য হয়তো এখন শৈল্পিক ঘরানার সিনেমার নির্মাণ কম।
ভিউজ বাংলাদেশ: এখন দেশে ওয়েব সিরিজের জনপ্রিয়তা বাড়ছে; কিন্তু কিছু কিছু ওয়েব সিরিজে দেখা যাচ্ছে, নারীকে ছোট বা অবমাননা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?
ফাখরুল আরেফিন খান: আমার তেমন ওয়েব সিরিজ দেখা হয় না। অনেক আগেই পৃথিবীতে ওয়েব সিরিজের যাত্রা শুরু হয়েছে। তার মধ্যে আমি কেবল ইউরোপ-আমেরিকার ৪-৫টি সিরিজ দেখেছি। বাংলাদেশ বা কলকাতার ওয়েব সিরিজ আমি দেখিইনি। দেখার ইচ্ছেও নেই। কারণ, আমি এমন কিছু দেখতে চাই না, যাতে আমার মেধার ক্ষতি হতে পারে। আমি অনেকের চেয়ে মেধাহীন, কিন্তু নিজের মেধার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি তাই সব লেখকের লেখা পড়ি না, সব পরিচালকের সিনেমা দেখি না এবং অবশ্যই ওয়েব সিরিজ দেখি না। এমনকি আমাকে যদি কেউ অফারও করেন, তবু আমি ওয়েব সিরিজ তৈরি করব না।
আমার মনে হয়, এই ওয়েব সিরিজ সেক্টরের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। তবে নারীর অবমাননা ‘সুড়ঙ্গ’সহ আমাদের সিনেমাতেও এসেছে। এ নিয়ে অনেক লেখালেখিও হয়েছে। এটিকে অনেকটা নরমালাইজড করেও ফেলেছেন নির্মাতারা। এখন নারীকে সিনেমায় পুড়িয়ে মারার মধ্যে কেউ যদি আনন্দ পান, তাতে যদি ১০ টাকা লাভ হয়, আর দর্শকরাও গ্রহণ করেন সেক্ষেত্রে যে কেউ এর সুযোগ নেবেন। এখন আমরা কেউ বিনোদনকে শান্তিময় জীবনযাপনের পদ্ধতির মধ্যে নিয়ে আসার চেষ্টাও করছি না। বরং বিনোদনকে আমরা অস্থির এবং চিত্তহীন করে তোলার চেষ্টা করছি। এই চেষ্টার মধ্যে নারী চরিত্র তো নিঃসন্দেহে অধিকাংশ পুরুষের কাছে ভোগ্যপণ্য।
আমাদের দেশে কতোজন মানুষ নারী এবং পুরুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থানটাকে সমানভাবে চিন্তা করেন, আমি ঠিক নিজেও জানি না। আমি নারীবাদীদেরও দেখেছি পুরুষদের অকারণে ঘৃণা করতে। আবার পুরুষরা তো বাদী নন, তারা ভয়ানকভাবে গোপনে লাস্যময়ী জাতি কিন্তু উপরে উপরে একটি সভ্য মুখ রাখেন। যখন দেখেন, পুরুষরা দশ টাকা খরচ করতে রাজি হন নারীদের দৈহিক কোন বিবরণ দেখতে, তখন তো এই ব্যবসা সবাই করতে চাইবেন। যেমন, ‘ভুবন মাঝি’ সিনেমাতে একটা ধর্ষণের সিন ছিল। একজন সোকলড প্রডিউসার মানে মেইন প্রডিউসার না, সহযোগী হিসেবে যিনি থাকেন, তিনি আমাকে অফার করেছিলেন, যদি ধর্ষণের সিনটা আমরা খোলাখুলিভাবে করতে পারি, তাহলে তিনি অনেক টাকা ঢালতে রাজি আছেন; কিন্তু আমি তা মানা করে দেই এবং ধর্ষণ সিনটা আলো-আঁধারির মাধ্যমেই শেষ করি। এ কথা আগে কোনো গণমাধ্যমে আমি বলিনি। আমি কিন্তু চাইলেই তার অফারে রাজি হতে পারতাম, কিন্তু হইনি। কারণ, আমার নায়িকা অবশ্যই রাজি হতেন না। তার নিজেরও রুচি আছে এবং তার প্রতি আমি শ্রদ্ধাশীল। যার জন্য ‘ভুবন মাঝি’ অনন্য সিনেমা হতে পেরেছে।
ভিউজ বাংলাদেশ: তাহলে এই চলচ্চিত্র বা ওয়েব সিরিজ নির্মাণে রুচির দীনতা থেকে উত্তরণের উপায় কী?
ফাখরুল আরেফিন খান: এখনকার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা নিজেদের পেট চালাতে হয়তো বাজে স্ক্রিপ্টে কাজ করেন। কারণ, সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তো কারও অর্থনৈতিক দায়িত্ব নেবে না। তাহলে একজন শিল্পী ভালো স্ক্রিপ্টের জন্য কতোদিন অপেক্ষা করবেন? আবার দর্শক সিনেমা হলে আসবেন কি না, তা নিয়েও সন্দেহ থাকে। একটি খুব ভালো সিনেমা হলো, কিন্তু হলে দর্শক নেই, প্রযোজক টাকা পেলেন না, শিল্পীদের টাকাও শোধ করতে পারলেন না, শিল্পীরা অভুক্তই থাকলেন। তাহলে আল্টিমেটলি মালিক, শিল্পী অভুক্ত থাকছেন। তাই যারা ভালো কাজ জানেন বা করতে পারেন, তাদেরকে সামাজিক সুরক্ষা দিতে হবে; কিন্তু আমরা তা করতে পারছি না বলে রুচির দীনতা তো থাকবেই!
ভিউজ বাংলাদেশ: নতুন নির্মাতাদের কাছে কী প্রত্যাশা রাখছেন?
ফাখরুল আরেফিন খান: নতুন যারা নির্মাণে আসছেন, তারা অত্যন্ত মেধাবী। অনেকে ভালো ভালো কাজ করছেন। অনেকের কাজ দেখেছি, ভালোও লেগেছে। যেমন আরিফুর রহমানের প্রযোজনায় ‘মাটির প্রজার দেশে’ এবং আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদের ‘রেহানা মরিয়ম নূর’। আমার বিশ্বাস, বেঁচে থাকার লড়াইয়ের বাইরেও চলচ্চিত্রের পরিবর্তনে কাজ করবেন নতুন নির্মাতারা। চেষ্টা করবেন চলমান রুচির খরা বদলেরও।
ভিউজ বাংলাদেশ: ভবিষ্যতে সাহিত্যনির্ভর কোনো চলচ্চিত্র নির্মাণের ইচ্ছে আছে কী?
ফাখরুল আরেফিন খান: আমার জীবোদ্দশায় মোট সাতটি চলচ্চিত্র নির্মাণের পরিকল্পনার মধ্যে তিনটি মুক্তি পেয়েছে। চতুর্থটি নীল জোছনা হয়তো এই বছরেই মুক্তি পাবে। বাকি তিনটি চলচ্চিত্রের মধ্যে একটি হিউম্যান ট্রাফিকিং আর অন্যটি স্পিরিচুয়ালিটি নিয়ে। শেষ চলচ্চিত্রটি কী নিয়ে করবো, এখনো ঠিক করিনি। তবে সাহিত্যভিত্তিক নির্মাণের খুব ইচ্ছে আছে। বিশেষ করে হুমায়ুন আহমেদ স্যারের ‘বাদশাহ নামদার’ বইটি আমার অনেক পছন্দের। তো যদি এটি নিয়ে সিনেমা করতে পারি, তাহলে বিগ বাজেটেরই হবে। দেখা যাক, ঈশ্বর কী রেখেছেন ভাগ্যে। আমি চেষ্টা করবো।
ভিউজ বাংলাদেশ: আপনাকে ধন্যবাদ
ফাখরুল আরেফিন খান: ভিউজ বাংলাদেশকেও ধন্যবাদ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে