বেলুচিস্তানে বিএলএর জোড়া হামলায় ১৪ পাকিস্তানি সেনা নিহত
বেলুচিস্তানে স্বাধীনতাকামী বেলুচ লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) দুটি হামলায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন পাকিস্তানি সেনা। প্রদেশটির বোলান ও কেচ এলাকায় পৃথকভাবে রিমোট-কন্ট্রোলড ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস বোমার (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটায় বিদ্রোহীরা।
প্রথম ঘটনায় বুধবার (৭ মে) দুপুরে বোলান জেলার মাচের শোরকান্দে একটি আইইডি একটি সামরিক কনভয়ে আঘাত করে। শক্তিশালী ওই বিস্ফোরণে দুই স্পেশাল অপারেশন কমান্ডারসহ ১২ জন সৈন্য নিহত হন। পাহাড়ি রাস্তাটিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গাড়িবহর চলার সময় আইইডির বিস্ফোরণ ঘটে বলে জানিয়েছে সেনা কর্তৃপক্ষ।
এর পর পরই কেচ জেলার কুলাগ টিগ্রানে দ্বিতীয় আইইডি হামলা ঘটে, যেখানে দুজন সেনার মৃত্যু হয়েছে।
বিএলএর মুখপাত্র জিয়ান্দ বালুচ দুটি হামলার দায় স্বীকার করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে ‘ভাড়াটে বাহিনী’ বলে অভিহিত করেছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানের সেনাবাহিনী আমাদের ভূমি দখলের চেষ্টা করছে। ভবিষ্যতে হামলা আরও বাড়বে’। হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ছেড়ে কথা বলব না’।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল ও দ্য ডেইলি গার্ডিয়ান জানায়, বিএলএ-এর স্পেশাল ট্যাকটিকাল অপারেশন স্কোয়াডের (এসটিওএস) প্রথম হামলাটিতে পাকিস্তানি সামরিক যানটি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়। নিহত ১২ জন সেনার মধ্যে ছিলেন স্পেশাল অপারেশনস কমান্ডার তারিক ইমরান ও সুবেদার ওমর ফারুক।
পাকিস্তানি বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের ওপর চালানো দ্বিতীয় হামলাটিতেও ব্যবহার করা হয় রিমোট কন্ট্রোল আইইডি। স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে ওই দলটি এলাকায় ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালাচ্ছিল।
মার্চ মাসে বেলুচ বাহিনী অশান্ত প্রদেশটির কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পেশোয়ারগামী একটি ট্রেন ছিনতাই করেছিল। ট্রেনটিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী, আইএসআই ও নিরাপত্তা সংস্থার বহু সদস্য ছিলেন। বিদ্রোহীদের দাবি ছিল, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে, না হলে পণবন্দিদের হত্যা করা হবে। যদিও সময়সীমার আগেই তাদের উদ্ধার করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। তবে বেলুচদের দাবি, অন্তত ৫০ জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করে তারা।
এরপর এপ্রিলে কোয়েটা শহরের কাছে নিরাপত্তা বাহিনীর একটি গাড়ির পাশে শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে চার সেনা নিহত ও তিনজন আহত হন। রোববার (৪ মে) বেলুচিস্তানের পুলিশ ভ্যানে হামলা চালিয়ে পাঁচ পুলিশ কর্মকর্তাকে জিম্মি করা হয়। এর দুদিনের মধ্যেই মঙ্গলবার (৬ মে) কাচ্চি জেলার মাচ এলাকায় পেতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান সাত সেনা সদস্য। এসব হামলার পেছনেও বিএলএসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলোর সংশ্লিষ্টতা সন্দেহ করা হচ্ছে।
বেলুচিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের মধ্যে এই হামলাগুলোকে সহিংসতার তীব্র বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করে, যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলো পাকিস্তানি রাষ্ট্রকে রাজনৈতিক প্রান্তিকীকরণ, অর্থনৈতিক শোষণ এবং পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। এতে আরও নড়বড়ে হয়ে পড়েছে পাকিস্তানের ভেতরের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে