Views Bangladesh Logo

বান্দরবানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সীমানা ঘেঁষে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব

বান্দরবানের থোয়াইংগ্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব পাশে অবৈধভাবে পাহাড় কাটার মহোৎসবে মেতেছে পাহাড় খেকোরা। দিন-রাত স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা চললেও স্থানীয় প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো তৎপরতা নেই। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশে ও রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে এই পরিবেশবিরোধী কর্মকাণ্ড চলছে। এতে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অপরদিকে বর্ষায় ভূমিধসের কারণে প্রাণহানীর শঙ্কাও বাড়ছে।

বুধবার সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, কয়েক দিন ধরে প্রকাশ্যে দিন-রাত স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। কাটা পাহাড়ের মাটি পাঁচটি ডাম্পার ট্রাকে করে জলাশয় ও নিচু জমি ভরাটের জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। পাহাড় কাটা ও বৃষ্টির মধ্যে ট্রাকে মাটি পরিবহনের কারণে আশপাশের রাস্তাগুলো পিচ্ছিল ও বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। এতে থোয়াইংগ্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিও হুমকির মুখে পড়েছে। বিদ্যালয়ের সীমানা ঘেঁষে অবস্থিত সবুজে ঘেরা উঁচু পাহাড়টি কেটে অবৈধভাবে মাটি বিক্রি করা হচ্ছে।

স্থানীয় বাসিন্দা সাথোয়াই মারমা ও জয় বাবু অভিযোগ করে বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ভোর থেকে রাত পর্যন্ত স্কেভেটর দিয়ে পাহাড় কাটা হচ্ছে। এতে পরিবেশের ক্ষতি তো হচ্ছেই, আমাদের ঘরবাড়িও হুমকির মুখে। পাড়ার শিশুরা প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে স্কুলে যায়। পাহাড় ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা দ্রুত এই কাটাকাটি বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানাচ্ছি।’

থোয়াইংগ্যাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দন কান্তি দেবনাথ বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পাশে সারাদিন পাহাড় কাটা হচ্ছে। ভারী মাটিবোঝাই ট্রাকগুলো বিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে চলাচল করছে। বর্ষাকালে কাঁচা রাস্তা খুব পিচ্ছিল হয়ে যায়। মেশিনের বিকট শব্দে শিক্ষার্থীদের পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে এবং শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। যে কোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।’

ডাম্পার ট্রাকের চালক মামুন ও সাইফুল ইসলাম রিমন জানান, তারা দুই দিন ধরে মাটি পরিবহন করছেন। প্রতিদিন প্রতি ট্রাকে ৪০ থেকে ৫০ বার মাটি পরিবহন করা হচ্ছে। বর্তমানে পাঁচটি ট্রাক দিয়ে এই কাজ চলছে।

স্কেভেটর চালক জামাল উদ্দিন বলেন, বালাঘাটার বাসিন্দা নাজিম উদ্দিনের নির্দেশে কয়েক দিন ধরে পাহাড় কাটা হচ্ছে। কাটা মাটি নিচু জমি ভরাটের জন্য বিক্রি করা হচ্ছে। নাজিম প্রতি ট্রাক মাটির জন্য তাকে ১৩০ টাকা দিচ্ছেন।

এদিকে অভিযুক্ত ঠিকাদার মো. নাজিম উদ্দিন জানান, তিনি স্বর্ণমন্দির এলাকার জমি ভরাটের কাজের ঠিকা নিয়েছেন। এজন্য পাহাড় কাটা হচ্ছে।

তবে পাহাড় কাটার কোনো অনুমোদন আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি স্পষ্ট উত্তর না দিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এ ব্যাপারে বান্দরবান পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিদর্শক নুর উদ্দিন বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

বান্দরবান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফা সুলতানা খান হীরামনি বলেন, ‘পাহাড় কাটার বিষয়টি আমার জানা আছে। অবৈধভাবে পাহাড় কাটার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ