Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়ন করুন

Editorial  Desk

সম্পাদকীয় ডেস্ক

মঙ্গলবার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পার্বত্য চট্টগ্রাম। রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি, বান্দরবান- এই তিনটি জেলা নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম গঠিত। বাংলাদেশের এক-দশমাংশ আয়তনজুড়ে এর অবস্থান। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী, এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১৫ লাখ ৮৭ হাজার। এর মধ্যে আছে ১১টি ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠী, যারা মোট জনসংখ্যার ৫০ ভাগ। বাকিরা বাঙালি বা অ-উপজাতীয়।

বাঙালিদের সঙ্গে পাহাড়িদের সংঘাত দীর্ঘদিনের। পাশাপাশি বাস করলেও তাদের মধ্যে সংঘাত বাধে বারবারই। এর পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক জাতীয় কমিটির সঙ্গে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ করেন ১৯৯৭ সালে। তারপর থেকে পাহাড়ের পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলেও সম্প্রতি আবার বড় ধরনের সংঘাত বাধে পাহাড়ি-বাঙালিদের সঙ্গে।

সংঘর্ষ-সহিংসতায় পার্বত্য দুই জেলায় চারজন নিহত এবং অন্তত ৮০ জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। বর্ণিত এলাকাগুলোর শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখার উদ্যোগ গ্রহণসহ ঘটনার পেছনে প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে শনাক্তপূর্বক প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করে কমিশনকে অবহিত করার জন্য বিভাগীয় কমিশনার চট্টগ্রামকে বলা হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্র জানায়, প্রথমে চোর সন্দেহে গণপিটুনিতে দীঘিনালায় এক বাঙালির মৃত্যু, তারপর পাহাড়িদের বাড়ি-ঘরে হামলা-অগ্নিসংযোগ; এরপর সেনাবাহিনীর সঙ্গে গোলাগুলিতে তিন পাহাড়ি নিহত- সব মিলিয়ে উত্তপ্ত এখন পার্বত্য চট্টগ্রাম। দাঙ্গার আশঙ্কায় স্থানীয় প্রশাসন রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা জারি করেছিল, পরে তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি এখনো খুব অশান্ত।

এই সংঘাত থেকে মুক্তির উপায় কী? গতকাল সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যায়, পাহাড়ে সংকটের সমাধানের জন্য পার্বত্য চুক্তির বাস্তবায়নকেই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল রোববার রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তারা এসব কথা বলেন। তারা বলেছেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের চেতনায় পাহাড়িদের প্রতি বৈষম্য নিরসন করতে হবে। সেখানে অশান্তির প্রকৃত কারণ উপলব্ধি করে নিরসনের পদক্ষেপ নিতে হবে। অস্ত্রের হুমকি দিয়ে এবং আদিবাসীদের নির্মূল করে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা যাবে না।

সমাবেশ থেকে পাহাড়ে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় পাবর্ত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যক্রমের অগ্রাধিকারে রাখাসহ আট দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবির মধ্যে রয়েছে- অবিলম্বে পাহাড়ে সংঘটিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ; রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও দীঘিনালা হামলার ঘটনায় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন, পাহাড়ি অধিবাসীসহ পার্বত্য জেলার জুম্ম জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, গুলিতে নিহত ব্যক্তিদের পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ ও আহতদের সুচিকিৎসা প্রদান, জুম্ম জনগোষ্ঠীর ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহার পুনর্নির্মাণ ও দোকানপাট-বাড়িঘরের মালিকদের ক্ষতিপূরণ প্রদান।

শান্তিচুক্তি হলেও তা নিয়ে পাহাড়ি-বাঙালি উভয়েই অভিযোগ ছিল। তবে এ কথা সত্য, শান্তিচুক্তি হয়েছে বলেই তো রাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যে সহিংসতা, সেটা বন্ধ হয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশ কিছু উন্নয়নমূলক কাজ করা গেছে। সমতলের মানুষের জন্য সেখানে চলাচল অবারিত হয়েছে। এ ছাড়া এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো গড়ে উঠেছে। যেমন পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ, তিন পার্বত্য জেলায় জেলা পরিষদ গড়ে উঠেছে।

পার্বত্য চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হলে পাহাড়ে শান্তি ফিরে আসবে না, এমন ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরা। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে তাদের কাজের অগ্রাধিকারের মধ্যে পার্বত্য চুক্তির বিষয়টি রেখে তা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের জনগণের একাংশকে অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখে গণঅভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। তা না হলে তা পাহাড়ি-বাঙালি উভয়ের জন্যই বিপদ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ