Views Bangladesh Logo

এতিমখানার মানোন্নয়ন করুন

তিম শিশুরা এমনিতেই দুঃখী, বাবা কিংবা মা বা উভয়কেই হারিয়ে আত্মীয়স্বজন কারও বাড়িতে জায়গা না পেয়ে এতিম শিশুদের ঠাঁই হয় এতিমখানায়, সেখানেও যদি তাদের ঠিক মতো যত্ন না হয়, টিকে থাকে ধুঁকে ধুঁকে, তাহলে অত্যন্ত দুঃখজনক।

সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায় দেশের বেশির ভাগ এতিমখানার শিশুরাই বড় হচ্ছে রুগণ শরীরে, অনাদরে আর অবহেলিত পরিবেশে। নির্ধারিত গণ্ডির মধ্যে কাটছে তাদের বন্দিজীবন। ঠিকমতো খাওয়া-খাদ্যও নেই। ফলে ভুগছে অপুষ্টিতে। বেশির ভাগ শিশুরই বয়সের তুলনায় ওজন ও উচ্চতা কম।

খুলনা নগর থেকে প্রত্যন্ত গ্রামের ৫৫টি এতিমখানায় পুষ্টিকর খাদ্য, বস্ত্র, আবাসন, চিকিৎসা, সুশিক্ষার ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই বড় হচ্ছে এতিমখানার শিশুরা। বড় অযত্ন-অবহেলা-অনাদরে দিন পার করছে ওরা। বেশির ভাগ এতিমখানায় অন্ধকার-অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে রাখা হয় শিশুদের। খেলার জন্য বিকেলে এক ঘণ্টারও কম সময় দেয়া হয়। ২৩ ঘণ্টাই কঠোর রুটিনের মাঝে বন্দি থাকতে হয়। ফলে সহজাত প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে না।

এরকম তথ্যের জন্য সরেজমিন তদন্তেরও দরকার নেই। একটু চোখ-কান খোলা রেখে আশপাশের যে কোনো এতিমখানার দিকে দৃষ্টি দিলেই একই করুণচিত্র দেখা যাবে। সারা দেশের বেশির ভাগ এতিমখানার চিত্রই এরকম। এর কারণ এতিমখানাগুলো চলে সামাজিক দানে। লিল্লাহ বোর্ডিংয়ের নামে অনেক মাদ্রাসাকেন্দ্রিক শিক্ষাব্যবস্থাও বস্তুত চলে এতিমখানার মতোই।

৯৫ ভাগ কওমি মাদ্রাসায় লিল্লাহ বোর্ডিং আছে। দুস্থদের সঙ্গে সেখানে এতিমরাও থাকে। দেশে এরকম কতগুলো লিল্লাহ বোর্ডিং ও এতিমখানা আছে, তা হিসাবের বাইরে। সমাজসেবা অধিদপ্তরের বাইরে দেশে মোট কতগুলো এতিমখানা আছে, তা সরকারেরও অজানা। এসব এতিমখানা খুলতে কোনো সংস্থার অনুমতিও লাগে না।

সামাজিক সেবা হলেও অনেকে এসব এতিমখানা বা লিল্লাহ বোর্ডিং খোলেন নিজের ব্যক্তিগত লাভের আশায়, বাবা-মার নামের আশায় বা সওয়াবের আশায়। অনেক মাদ্রাসা, লিল্লাহ বোর্ডিং বা এতিমখানার শিশুদের বাড়ি বাড়ি দান সংগ্রহ করতে পাঠানো হয়। এতিমখানার শিশুদের দূরবস্থা দেখেও অনেকে কিছু বলে না। বলে, যাক, বেঁচে আছে এটাই বড় কথা; কিন্তু এ কীরকম অমানবিক জীবন?

এসব শিশুর কোনো মানবিক মর্যাদা নেই বললেই চলে। এসব শিশুকে নিয়ে সরকারেও কোনো পরিকল্পনা নেই। তারা এতিমখানায় কোনোরকমে ধুঁকে ধুঁকে বড় হয়। বড় হয়ে এটা-সেটা করে টিকে থাকে। জনশক্তিরও এতে করে বিপুল অপচয় ঘটে। বিপুলসংখ্যক এই শিশুর দায়িত্ব না নিয়ে এতিমখানার দিকে ঠেলে দেয়া সরকারেরই এক গাফিলতি।

এতিমখানা চালুর জন্য যুগোপযোগী নীতিমালা তৈরি করতে হবে এমনটাই আমরা চাই। সেখানে শিশুদের থাকার ব্যবস্থা, খাবার, লেখাপড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কারিকুলাম কী হবে, সবকিছু উল্লেখ থাকবে। সেগুলো নিশ্চিত করার পরেই প্রতিষ্ঠান চালু হবে।

এতিমখানা পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশগ্রহণ ও মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এতিমখানাগুলোতে শিশুদেরকে পরিবারের আদরে বড় করতে হবে। কোনোভাবেই তারা যেন আদর-স্নেহ থেকে বঞ্চিত না থাকে। মানবীয় গুণ না পেলে ধর্মীয় জ্ঞান এক সময় কাজে লাগবে না। তাই সরকারি-বেসরকারি সব পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নজর দেয়া জরুরি।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ