Views Bangladesh Logo

সালতামামি ২০২৪

রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় উন্নতি

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নেয়া কয়েকটি প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় বিদায়ী বছরে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতায়ও নতুন নতুন রুট খুলেছে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ব্যবস্থারও।

১০ জানুয়ারি ঢাকা-কক্সবাজার-ঢাকা রেলরুটে যাত্রা শুরু করেছে দ্বিতীয় ননস্টপ আন্তঃনগর ট্রেন ‘পর্যটক এক্সপ্রেস’। সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে নতুন ট্রেনটি কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ৩৪৬ কিলোমিটারের রেলপথে প্রথমবারের মতো যাত্রী পরিবহন করে। আগের বছরের ১১ নভেম্বর নবনির্মিত দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইনের উদ্বোধন করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১ ডিসেম্বর থেকে রুটটিতে বিরতিহীন ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’- এ বাণিজ্যিক যাত্রী পরিবহন করছে রেলওয়ে।

২৯ জানুয়ারি দেশের প্রথম আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেল এমআরটি লাইন-১ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার রেললাইনের দুটি অংশ থাকবে। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর (বিমানবন্দর রুট) পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার অংশ যাবে মাটির নিচ দিয়ে এবং নতুন বাজার থেকে পূর্বাচল (পূর্বাচল রুট) পর্যন্ত প্রায় ১১ দশমিক ৩৬ কিলোমিটার যাবে মাটির ওপর দিয়ে।

১২ মার্চ লালমনিরহাটের পাটগ্রামের বুড়িমারী রেলস্টেশন থেকে বুড়িমারী-ঢাকা রুটে ‘বুড়িমারী এক্সপ্রেস’ ট্রেনের উদ্বোধন করেন লালমনিরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন। ট্রেনটি চালু হওয়ায় ভারত, ভুটান, নেপালের পাসপোর্ট ও ভিসাধারী যাত্রীদের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ স্থাপিত হলো। আর্থ-সামাজিকের পাশাপাশি অর্থনৈতিক উন্নয়নও ঘটাবে রেলরুটটি।

২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ঢাকা-রোম রুটে ফ্লাইট পুনরায় চালু হয়েছে। বোয়িং-৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের মাধ্যমে নয় বছর পর এ রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ১৯৮১ সালের ২ এপ্রিল বিমানের ঢাকা-রোম ফ্লাইট চালু হলেও কিন্তু যাত্রী সংকটসহ নানা কারণে ২০১৫ সালের ৬ এপ্রিল বন্ধ হয়ে যায়।

১০ অক্টোবর নবনির্মিত পদ্মা রেলসেতু দিয়ে ঢাকা থেকে প্রথম বাণিজ্যিক আন্তঃনগর ট্রেন চালানো হয় ফরিদপুরের ভাঙ্গা রেলস্টেশন পর্যন্ত। সে সময় পুরো প্রকল্পের ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে চালু হয় ৮২ কিলোমিটার। আর ভাঙ্গা জংশন থেকে মুকসুদপুর, লোহাগড়া, নড়াইল হয়ে প্রকল্পের বাকি ৯০ কিলোমিটার রেলপথ প্রস্তুত হলে প্রকল্পের পূর্ণাঙ্গ রেলপথে ২৪ ডিসেম্বর দুটি ট্রেন চালানো শুরু করেছে রেলওয়ে। এর আগে ৩০ মার্চ স্বপ্নের পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত ব্রডগেজ ওই রেলপথে ভাঙ্গা, কাশিয়ানী এবং যশোরের পদ্মবিলা ও সিঙ্গিয়ায় রেল জংশন রয়েছে। এসব স্টেশন-জংশনের মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল (ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে যশোরের রূপদিয়া) রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় চলে এসেছে। বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ অর্থায়নে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ‘চায়না রেলওয়ে গ্রুপ’ (সিআরইসি) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে।

১৮ এপ্রিল বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসা ও যোগাযোগ বাড়াতে চীনের দূতাবাস ঢাকায় আলাদা ভিসাকেন্দ্র চালু করেছে। ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত রাজধানীর বনানীতে প্রাসাদ ট্রেড সেন্টারে ইয়াও ওয়েন ওই ভিসাকেন্দ্রের উদ্বোধন করেন।

১৫ মে দেশের তৃতীয় ও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর পায়রার নিজস্ব জেটিতে প্রথমবারের মতো ভেড়ে বিদেশি জাহাজ (মাদার ভেসেল)। পানামার পতাকাবাহী জেন নোঙর করে প্রথমদিন। ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রামনাবাদ চ্যানেলে পায়রা বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রা এবং ২০১৬ সালের আগস্টে বহিঃনোঙরে অপারেশন কার্যক্রম শুরু হয়। ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে এই বন্দরে প্রথম টার্মিনাল, ইয়ার্ড, ছয় লেনের সংযোগ সড়কসহ অনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতের কাজ চলছে। আন্দারমানিক নদীতে ছয়লেনের সেতু নির্মাণও দ্রুত শুরু হতে যাচ্ছে।

১ জুন যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর ও বাগেরহাটের মোংলা নৌ-বন্দরের মধ্যে নতুন স্থাপিত রেললাইনে বাণিজ্যিকভাবে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। দুই বন্দরে যাতায়াতে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় ব্যবসা-বাণিজ্যের গতিও বেড়েছে।

৫ জুলাই সম্পন্ন হলো পদ্মাসেতু প্রকল্পের পুরো কাজ। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া উত্তর থানা এলাকায় সুধী সমাবেশের মধ্য দিয়ে সেতু প্রকল্পের কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত ঘোষণা করেন। বিশ্বব্যাংকসহ চারটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের ঋণে ভর করে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প চূড়ান্ত করে আওয়ামী লীগ সরকার। কিন্তু নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অজুহাতে ২০১২ সালে এ প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় সংস্থাগুলো। পরে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন, নিজেদের টাকায় পদ্মাসেতু করবেন। সিদ্ধান্ত অনুসারে ২০১৪ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে সেতুর কাজ শুরু হয়।

২১ অক্টোবর ঢাকা মহানগরীর ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা আনতে পুলিশের সঙ্গে কাজ করতে ৩০০ শিক্ষার্থীকে যুক্ত করা হয়। শিক্ষার্থীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে বাড়বে।

৩ নভেম্বর ঢাকায় জাপান ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের (ভ্যাক) কার্যক্রম শুরু হওয়ায় জাপানের ভিসা সেবা এখন বাংলাদেশেও পাওয়া যাচ্ছে। আবেদনকারীদের ‘কার্যকর ও সুবিন্যস্ত’ আবেদন জমার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে এই কেন্দ্র।

৩ নভেম্বর ইথিওপিয়ার সাথে সরাসরি প্লেন চলাচল শুরু হয়েছে। ঢাকা থেকে আকাশপথে প্রথমবারের মতো সরাসরি আফ্রিকা যাওয়ার পথ খুলে দিয়েছে আফ্রিকার শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ সংস্থা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনস। এয়ারলাইনসটি সপ্তাহে পাঁচটি ফ্লাইট চালাবে, যা বাংলাদেশ থেকে আফ্রিকা, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের ১৫৫টিরও বেশি গন্তব্যে যাওয়ার সুযোগ করে দেবে।

১১ নভেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ প্রবাসী লাউঞ্জের উদ্বোধন করেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে বিমানবন্দরের মাল্টিলেভেল কারপার্কিং এলাকার দ্বিতীয়তলায় ওই প্রশস্ত, আরামদায়ক ওয়েটিং লাউঞ্জটি তৈরি হয়েছে।

২৬ নভেম্বর যমুনা নদীতে নির্মিত উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের রেলসেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। ট্রেনটি টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর অংশের পূর্বপাড় থেকে ছেড়ে সিরাজগঞ্জের পশ্চিম অংশে আসে। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিডি) আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান জানান, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে নবনির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলসেতুটির নাম পরিবর্তন করে ‘যমুনা রেলসেতু’ রাখা হয়েছে। এর আগে ১৯ এপ্রিল সেতুটির চার দশমিক আট কিলোমিটারের পুরোটাই দৃশ্যমান হয়। এর সাত মাস পর সেতুর ওপর ডুয়েলগেজ রেললাইন বসানো শেষে পরীক্ষামূলক (ট্রায়াল) ট্রেন চলাচল শুরু হলো। আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে সেতুটি উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সেতু কর্তৃপক্ষ।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ