Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ব্যাংক আইন যেভাবে সংস্কার করা হয়েছে তা যথেষ্ট নয়

Salehuddin  Ahmed

সালেহউদ্দিন আহমেদ

শুক্রবার, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

দেশের ব্যাংকিং সেক্টর নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে আছে অনেক দিন ধরেই। বিদ্যমান ব্যাংকিং কোম্পানি আইনের মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হচ্ছিল না। তাই অনেক দিন ধরেই স্থানীয় অর্থনীতিবিদ এবং ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন এবং হালনাগাদকরণের জন্য অনেক দিন ধরেই পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) কাছ থেকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলার ঋণের অনুমোদন পেয়েছে। সেই ঋণ ছাড়করণের জন্য বেশ কিছু শর্ত দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য শর্ত হচ্ছে ব্যাংকিং সেক্টরের ব্যাপক সংস্কারের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ সৃষ্টির প্রবণতা যৌক্তিকভাবে কমিয়ে আনা এবং অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিতকরণ।

 

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের জন্য যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয় তা মূলত আইএমএফের ঋণের শর্তের জন্যই করা হয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য বিদ্যমান আইনটি যেভাবে সংস্কার করা হয়েছে আমি মনে করি তা যথেষ্ট বা পর্যাপ্ত নয়। আইনটি আরো ভালোভাবে সংশোধন করে যুগোপযোগি এবং অধিকতর কার্যকর করার সুযোগ ছিল। দেশে ব্যাংকের সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। ফলে ব্যাংকিং সেক্টরে জটিলতা এবং সমস্যাও আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় বেড়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ব্যাংক কোম্পানি আইন আরও গভীরভাবে পর্যালোচনা করে কার্যকরভাবে সংশোধনের সুযোগ ছিল। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন দ্বারা এই খাতে বিদ্যমান সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। এখানে আরও একটি সমস্যা হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন আইন বাস্তবায়নের উদ্যোগ বা চেষ্টা করলেও তাদের পক্ষে সব সময় তা করা সম্ভব হয় না। বিশেষ করে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ওপর বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ খুবই কম। বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ওপর যেভাবে আইন প্রয়োগ করতে পারে, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে তা পারে না। বিশেষ করে বাংলাদেশ ব্যাংক রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়োগ এবং অপসারণের ক্ষেত্রে তেমন কোনো ভূমিকা রাখতে পারে না। যদিও তারা ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের নিয়োগ ও অপসারণের ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে পারে।

 

ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান এই দ্বৈতকর্তৃত্ব কোনোভাবেই ভালো ফল দিচ্ছে না। টার্মস অব রেফারেন্স থাকলেও এর মধ্যে অনেকরকম ফাঁক-ফোঁকর রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে আইনের সঠিক প্রয়োগ করা সব সময় সম্ভব হয় না। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের ক্ষেত্রে পরিচালক নিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু সমস্যা রয়েছে। ব্যাংকিং খাতে গভর্ন্যান্স ভালোভাবে করা যাচ্ছে না। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে যারা স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে থাকেন, তাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে; কিন্তু এমন সব লোকদের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় তারা মূল উদ্যোক্তাদের আত্মীয়-স্বজন অথবা বন্ধুবান্ধব। ফলে তারা স্বাধীনভাবে ভূমিকা পালন না করে, মালিক পক্ষের স্বার্থেই কথা বলেন। অবশ্য এর ব্যতিক্রমও আছে। যদি উপর্যুক্ততার ভিত্তিতে সঠিক লোককে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেত, তাহলে তারা আমানতকারিদের স্বার্থে অবদান রাখতে পারতো। কারণ স্বতন্ত্র পরিচালকরা যদি কোনো ব্যাপারে তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক তাকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকে আগে একই পরিবার থেকে একযোগে দুই জন পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। তারা অব্যাহতভাবে দুই টার্ম (প্রতি টার্ম তিন বছর করে) দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। কয়েক বছর আগে এই আইনের সংশোধন করে একই পরিবার থেকে একযোগে ৪ জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়। তারা অব্যাহতভাবে ৩ টার্ম অর্থাৎ নয় বছর দায়িত্ব পালন করতে পারতেন।

 

আইএমএফের শর্ত মোতাবেক ব্যাংকিং আইন সংশোধন করা হয়েছে। এই সংশোধিত আইনে একই পরিবার থেকে একযোগে তিন জন পরিচালক নিয়োগের বিধান করা হয়েছে। আমি যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলাম তখন একই পরিবার থেকে একযোগে ২জন পরিচালক নিযুক্ত হতে পারতেন। তারা অব্যাহতভাবে ৬ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারতেন। সেই আইনটি ছিল আন্তর্জাতিক মানের। কিন্তু এখন আইনি সংস্কারের মাধ্যমে ব্যাংকের ওপর পারিবারিক প্রাধান্য বিস্তারের সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এখন পরিচালকদের কার্যকালের মেয়াদও বাড়ানো হয়েছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। বর্তমানে আইনি সুযোগ নিয়ে পরিবারের অনেকেই ব্যাংকের পরিচালক হয়ে যান। ছেলে, ছেলের বউ, মেয়ে-মেয়ের জামাই সবাই এখন ব্যাংকের পরিচালক হতে পারেন। এখানে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। ব্যাংকিং কার্যক্রমে অভিজ্ঞতা আছে এমন ব্যক্তিদেরই পরিচালক নিয়োগ করা উচিত।

 

আশির দশকের পর আমাদের দেশে ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। দেশে অনেকগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এসব ব্যাংকের কিছু কিছু বিভিন্ন সময় সমস্যায় পতিত হয়েছে। সেগুলোকে বিভিন্নভাবে সংস্কারের মাধ্যমে সচল রাখা হয়েছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সবই বর্তমানে ভালোভাবে চলছে এটা জোর দিয়ে বলা যাবে না। কোনো কোনো ব্যাংক মূলধন সংকটে রয়েছে। ব্যাংকিং সেক্টরে যে দ্বৈত কর্তৃত্ব রয়েছে তা কোনোভাবেই ভালো নয়। কারণ, যে কোনো খাতের ওপর একক কর্তৃত্ব না থাকলে সেই খাতে সঠিকভাবে পরিচালিত হতে পারে না। তাই এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।

 

ব্যাংকিং সেক্টরে সবচেয়ে জটিল সমস্যা হচ্ছে, পর্বতসমান খেলাপি ঋণের উপস্থিতি। খেলাপি ঋণের পরিমাণ কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। নানা ধরনের আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানো হচ্ছে; কিন্তু এটা খেলাপি ঋণের প্রকৃত অবস্থা নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক খেলাপি ঋণের যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে থাকে তার চেয়ে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি। আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর থাকাকালে কোনো ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণ করতে হলে প্রথমবার মোট পাওনা ঋণের ১০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে ব্যাংকে জমা দিতে হতো। দ্বিতীয়বার পুনঃতপশিলীকরণের ক্ষেত্রে ২০ শতাংশ এবং তৃতীয়বারের জন্য পুনঃতপশিলীকরণ করতে হলে ৩০ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে জমা দিতে হতো। কোনো ঋণ হিসাব সর্বোচ্চ ৩ বছরের জন্য পুনঃতপশিলীকরণ করা যেত।

 

কিছুদিন আগে আইনের এই বিধান সংশোধন করে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট হিসেবে জমা দিয়ে এক বছর গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ হিসাব ১০ বছরের জন্য পুনঃতপশিলীকরণের সুযোগ দেয়া হয়েছে। এটা না করে বরং ঋণ হিসাব পুনঃতপশিলীকরণের আইন আরও কঠিন করা প্রয়োজন ছিল। আগে কোনো ঋণ হিসাব অবলোপন করতে হলে সংশ্লিষ্ট ঋণ হিসাব মন্দ মানে, শ্রেণিকৃত হবার পর ৫ বছর অতিক্রান্ত হলে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের-পূর্বক শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করে অবলোপন করা যেত; কিন্তু এখন কোনো ঋণ হিসাব মন্দমানে শ্রেণিকৃত হবার পর তিন বছর অতিক্রান্ত হলেই তা অবলোপন করা যাচ্ছে। এ জন্য শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। ৫ লাখ টাকার কম স্থিতিযুক্ত ঋণের ক্ষেত্রে উপযুক্ত আদালতে মামলা দায়ের কোনো শর্ত রাখা হয়নি। ফলে ঋণ হিসাব অবলোপন করা এখন আগের তুলনায় সহজ হয়েছে। এভাবে আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর যে প্রচেষ্টা তা কখনোই ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য সুফল দিতে পারে না। আইনি পরিবর্তনের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দেখানোর পরিবর্তে বরং কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে নির্মোহভাবে খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে যারা ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলপি তাদের এমন একটি বার্তা দিতে হবে যে, ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ করা ব্যতীত কোনো গত্যন্তর নেই। এখন খেলাপি ঋণের যে পরিমাণ প্রদর্শন করা হচ্ছে প্রকৃত খেলাপি ঋণের পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। খেলাপি ঋণের কিস্তি আদায় না করে কৃত্রিমভাবে খেলাপি ঋণ কমিয়ে দেখানোর মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই।

 

ঋণখেলাপিদের বিভিন্ন ধরনের সুযোগ দেবার কারণে যারা নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধ করেন তারা হতোদ্যম হচ্ছেন। তারা ঋণের কিস্তি পরিশোধের বিষয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। তারা দেখছে, ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা ফেরত না দিলেও কোনো অসুবিধা হয় না। যারা ঋণ খেলাপি তারা গৃহীত ঋণের অর্থ অন্য খাতে প্রবাহিত করছেন। এতে সামাজিক বৈষম্য সৃষ্টি হচ্ছে। যারা ঋণের কিস্তি নিয়মিত ফেরত দিচ্ছেন তারা ঋণ খেলাপিদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না। যেমন কোনো ঋণ গ্রহীতা যদি একটি বাড়ি ভাড়া নিতে যান তার প্রকল্পের জন্য তাহলে তিনি যে ভাড়া অফার করবেন ঋণ খেলাপি হয়তো তার চেয়ে বেশি ভাড়া অফার করবেন। এতে নিয়মিত ঋণের কিস্তি পরিশোধকারী প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়বেন। কোনো কোনো ঋণখেলাপি গৃহীত ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করছেন বলেও অনেক অভিযোগ করেন। এই অভিযোগের সত্যতা যাচাই করা যেতে পারে। এমন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন যাতে একজন ঋণ গ্রহীতার মনে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায় যে ব্যাংকের ঋণের কিস্তি নিয়মিত এবং সময়মতো ফেরত না দিলে কোনোক্রমেই পার পাওয়া যাবে না। আমাদের দেশে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে যে, একজন ঋণখেলাপি নিশ্চিতভাবেই মনে করতে পারছেন যে, তিনি ব্যাংক থেকে যে অর্থ ঋণ নিয়েছেন তা ফেরত না দিলেও কোনো অসুবিধা হবে না।

 

১৯৯১ সালে যে ব্যাংক কোম্পানি আইন প্রণয়ন করা হয় তাতে বিভিন্ন ধরনের স্ববিরোধিতা আছে। এসব স্ববিরোধিতার কারণে আইনের সঠিক প্রয়োগ অনেক সময় সম্ভব হতো না। উচিত ছিল একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করে দেশের বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যাংক কোম্পানি আইনকে হালনাগাদ করে ব্যাপক ভিত্তিক সংস্কারের মাধ্যমে অধিকতর কার্যকর আইনে পরিণত করা। ব্যাংক কোম্পানি আইনের খসড়া প্রণয়নের পর তা পর্যালোচনার জন্য জনমক্ষে উপস্থাপন করা প্রয়োজন ছিল। তারপর জাতীয় সংসদে আইনটি পাসের জন্য পেশ করা যেত; কিন্তু তা করা হয়নি। জাতীয় সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটিতে প্রস্তাবিত আইন আলোচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে ঠিকই; কিন্তু সংসদীয় স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ে বেশি কার্যকর হতো, যদি দেশের বরেণ্য ব্যাংকার এবং অর্থনীতিবিদদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে তার মাধ্যমে আইনটি প্রণয়ন ও পর্যালোচনার ব্যবস্থা করা হতো। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোকে কয়েক বছর আগে লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত করা হয়েছে। যদিও এসব ব্যাংকের সব শেয়ারই সরকার ক্রয় করে রেখেছে। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর শেয়ার পর্যায়ক্রমে বাজারে ছেড়ে দেয়ার। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোতে অভ্যন্তরীণ সুশাসনের অভাব রয়েছে। যে কারণে তারা প্রত্যাশিত অবদান রাখতে পারছে না।

 

দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার ‘ঋণমান’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নানা বিবেচনায় তারা এখন বাংলাদেশের ঋণমান কমিয়ে দিয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ দেশের নীতিনির্ধারকদের অনেকেই এটি মানতে চান না। মান উন্নত হলে তারা বলেন আমরা ভালো করছি। আর মান খারাপ হলে তারা বলেন, এসব মানের কোনো গুরুত্ব নেই। ব্যাংক সাধারণ অন্যসব প্রতিষ্ঠানের মতো নয়। ব্যাংক পরিচালিত হতে হবে নির্মোহভাবে। ব্যাংক পরিচালিত হতে হবে পেশাগত দৃষ্টিকোণ থেকে। আর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকে পরিচালক নিয়োগে ক্ষেত্রে শুধু দলীয় বিবেচনা না করে দক্ষ এবং যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে হবে। কারণ ব্যাংকের মতো স্পর্শকাতর প্রতিষ্ঠান বাস্তবতার ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত। পরিচালকরা যাতে ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ কাজে কোনো হস্তক্ষেপ না করেন তা নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংক হচ্ছে আস্থা ও বিশ্বাসযোগ্যতার প্রতীক। তাই এমনভাবে আমানতকারীদের আস্থা অর্জন করতে হবে যাতে তারা নিশ্চিন্তে তাদের উদ্বৃত্ত অর্থ ব্যাংকে সংরক্ষণ করতে পারেন। কোনোভাবেই এমন কিছু করা উচিৎ নয় যাতে ব্যাংকের ওপর থেকে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। একই সঙ্গে ব্যাংকিং নিয়ে যাতে কোনো গুজব না রটে তা নিশ্চিত করতে হবে।  

লেখক: অর্থনীতিবিদ ও সাবেক গভর্নর বাংলাদেশ ব্যাংক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ