Views Bangladesh Logo

বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস-২০২৫

যক্ষ্মা শনাক্তকরণে সচেতনতা বাড়ান, রোগ নির্মূলে ব্যবস্থা নিন

ক্ষ্মা রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে এবং এই রোগ নির্মূলের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে প্রতি বছর ২৪ মার্চ বিশ্বব্যাপী যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়। যক্ষ্মা (টিবি) এখনো বিশ্বে একটি গুরুতর সংক্রামক ব্যাধি, যা সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে প্রতিরোধ ও নিরাময়যোগ্য।


এক সময় যক্ষ্মা এতই ভয়াবহ রোগ ছিল যে, বলা হতো ‘যার হয় যক্ষ্মা তার নাই রক্ষা’; কিন্তু এখন যক্ষ্মার চিকিৎসা যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। এখন বরং বলা হয় যথাসময়ে সুচিকিৎসায় যক্ষ্মা ভালো হয়। যদিও বাংলাদেশে রোগটি যথাসময়ে শনাক্ত করাই কঠিন। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশের ১৮-২২ শতাং রোগী যথাসময়ে যক্ষ্মা রোগ শনাক্তের বাইরে থেকে যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, যক্ষ্মা নির্মূলে বাংলাদেশের এখনো পিছিয়ে থাকার অন্যতম কারণ হলো সব রোগী শনাক্ত করতে না পারা। যক্ষ্মা হলে মানুষ সহজে প্রকাশ করতে চায় না। এর মূলে রয়েছে লোকলজ্জা, রোগের ব্যাপারে অবহেলা, সচেতনতার অভাবের মতো বিষয়। তা ছাড়া কর্মজীবীরা কাজ বাদ দিয়ে সহজে রোগনির্ণয়ের জন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না।

তা ছাড়া যক্ষ্মা সম্পর্কে বাংলাদেশে কয়েকটি ভ্রান্ত ধারণাও এখনো চলমান। ভ্রান্ত ধারণাগুলো হলো: যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসে দেখা দেয়, যক্ষ্মা একটি জন্মগত রোগ, নেশা না করলে যক্ষ্মা হয় না, টিকা নিলে কখনো যক্ষ্মা হবে না ইত্যাদি। চিকিৎসাবিজ্ঞান জানিয়েছে, টিউবারকিউলোসিস (টিবি) রোগের কারণ একটি ব্যাকটেরিয়া, যার নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। ব্যাকটেরিয়া সাধারণত ফুসফুসে আক্রমণ করে; কিন্তু টিবির ব্যাকটেরিয়া দেহের যে কোনো অঙ্গেই রোগ ছড়াতে পারে যার মধ্যে পড়ে কিডনি, মেরুদণ্ড ও মস্তিষ্ক। তবে যাদের দেহে টিবির ব্যাকটেরিয়া থাকে, তারা সবাই অসুস্থ হয় না।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)-এর মতে, বাংলাদেশ বিশ্বের সবচাইতে যক্ষ্মা ভারাক্রান্ত দেশগুলোর মাঝে অন্যতম। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ১৯৯৩ সাল থেকে প্রত্যক্ষ কেমোথেরাপি স্বল্প মেয়াদি কোর্স (ডটস) চালু করেছে। যদিও বস্তিবাসীদের জন্য ডটস সেবার এখনো খানিকটা ঘাটতি রয়ে গেছে। পালমোনারি টিবি বা যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগী শনাক্তকরণের ৮১% এবং চিকিৎসায় সাফল্যের ৯৩% থাকা সত্ত্বেও শনাক্তকরণে বিলম্ব ঘটায় রোগ ছড়ানোর হার বেড়ে চলেছে। শহরের বস্তি এলাকাগুলো অধিক হারে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বস্তি এলাকায় ঘনবসতি, অপুষ্টি, অপ্রতুল আলো বাতাস এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এই ঝুঁকি বাড়াতে ভূমিকা রাখছে। মানুষ তার আবাসস্থল বা কর্মস্থল উভয় ক্ষেত্রেই আক্রান্ত রোগীর সংস্পর্শে আসতে পারে।

যক্ষ্মা রোগ প্রতিরোধে বাংলাদেশে এখনো যে যথেষ্ট সচেতন নয় তার প্রমাণ বিভিন্ন প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। ঘনবসতি, দরিদ্রতা, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামগ্রিক চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি অবহেলা, শিক্ষাগত দুর্বলতা- নানা কারণই এর জন্য দায়ী। কিন্তু যক্ষ্মা এমন ভয়াবহ একটি ব্যাধি, অবহেলার সুযোগে এটি মহামারির রূপ নিতে পারে। তাই আর অবেহেলা নয়, যক্ষ্মা শনাক্তকরণে এখনই সচেতনতা বাড়ান এবং রোগ নির্মূলে যথাযথ ব্যবস্থা নিন। যক্ষ্মা নির্মূলে চিকিৎসক-শিক্ষাবিদ-রাজনীতিবিদসহ সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রের মানুষকেই সচেতন ভূমিকা পালন করতে হবে।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ