চালের মজুত বাড়ান, দাম কমান
মাছে-ভাতে বাঙালি যুগ যুগ ধরেই বারবার ভাতের সংকটে পড়েছে। কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা-খড়া; কখনো-বা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণেও বাঙালিকে দুবেলা দুমুঠো পেটভরে ভাত খাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ভাত শুধু আর বাঙালির প্রধান খাদ্য হিসেবে নেই, গভীর অনুভূতির সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। এমন অনেককে দেখা গেছে, সারা দিন যতই ভালো খাক, একবেলা পেট ভরে ভাত খেতে না পারলেই হাহাকার শুরু করে দেয়। ভাতের অভাব বাঙালির জন্য এক মানবিক বিপর্যয়ের নাম।
আর তাই চালের দাম বেড়ে গেছে শুনলেই বাঙালি বিচলিত হয়ে পড়ে। সম্প্রতি চালের দাম বাড়ার খবরে চারদিকে তাই একরকম অস্থিরতা নেমে এসেছে। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় সমস্ত পণ্যদ্রব্যের দাম চড়া, তার ওপর চালের দাম বাড়াতে শুধু নিম্নআয়ের মানুষ নন, মধ্যবিত্ত পরিবারেও একরকম টানাটানি শুরু হয়ে গেছে।
গতকাল বুধবার (৩০ অক্টোবর) সংবাদপত্রে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বাজারে চালের দাম বাড়ছে। এর মধ্যে উদ্বেগজনক খবর হলো, সাম্প্রতিক অতিবৃষ্টি ও ভারতসহ উজানের দেশগুলো থেকে আসা ঢলে আমনের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উৎপাদনে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে প্রায় ৮ লাখ ৩৯ হাজার টন। খাদ্য অধিদপ্তরও বলছে, তাদের গুদামে এখন চালের মজুত ১০ লাখ টনের নিচে নেমেছে, যা গত ১৫ আগস্ট ছিল প্রায় সাড়ে ১৪ লাখ টন। সরকারিভাবে বিতরণ বাড়ানোয় মজুত কমছে। যে হারে চাল বরাদ্দের পরিকল্পনা রয়েছে, তাতে আগামী বছরের জুলাই নাগাদ প্রয়োজনের তুলনায় ১১ লাখ টন চালের ঘাটতি হতে পারে। নিরাপত্তা মজুত ও সম্ভাব্য ঘাটতি বিবেচনায় ১০ লাখ টন চাল আমদানি করা দরকার। বেসরকারি খাতকেও চাল আমদানি বাড়াতে উৎসাহ দেয়া প্রয়োজন।
ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) উদ্ধৃত করে বলা হয়েছে, গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম ৭ থেকে ১০ শতাংশ বেশি। এক মাসে বেড়েছে ২ শতাংশ পর্যন্ত। টিসিবির হিসাবে, বাজারে এখন মোটা চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকা। মাঝারি চাল ৫৮-৬৩ টাকা। সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭২ থেকে ৮০ টাকা কেজি। এক সপ্তাহে চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২ থেকে ৮ টাকা। সরু চালের সর্বনিম্ন দর ৮ টাকা বেড়ে ৭২ টাকা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছে টিসিবি।
টিসিবি আরও বলছে, গত ৮ আগস্ট নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর মোটা চালের সর্বনিম্ন দাম কেজিতে ২ টাকা, মাঝারি চাল ৪ টাকা এবং সরু চালের দাম ১২ টাকা বেড়েছে। বাংলাদেশের অনেক পরিবার তিন বেলাই ভাত খায়। বড় পরিবারে দৈনিক তিন-চার কেজি চাল লাগে। কেজিপ্রতি চালের দাম এত বেড়ে গেলে নিঃসন্দেহে পরিবারগুলো বিপদে পড়বে। বিশেষ করে যেখানে অন্যান্য জিনিসপত্রেরও দাম বাড়তি।
গরিব মানুষের খাদ্য ব্যয়ের একটি বড় অংশ যায় চালের পেছনে। চালের দাম এমন সময় বাড়ছে, যখন ভোজ্যতেল, চিনি, সবজি, ডিম, মুরগির মাংসসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম চড়া। অন্যান্য দ্রব্যের দাম বাড়লেও তা না কিনে না খেয়ে মানুষ থাকতে পারে; কিন্তু ভাত না খেয়ে তো কেউ থাকতে পারবে না। ভাতের বিকল্পে অন্য কিছু খাওয়ার মতো অবস্থাও আমাদের দেশের মানুষের নেই। আটার দামও বাড়তি। তাহলে মানুষ যাবে কোথায়?
চাল সরকারের জন্য একটি সংবেদনশীল পণ্য। যে করেই হোক- উৎপাদন করে হোক, আমদানি করে হোক সরকারকে চালের মজুত বাড়াতেই হবে এবং দামও কমাতে হবে। আমরা চাই অতি দ্রুত চালের মজুদ বাড়ানো হোক এবং দাম কমানো হোক। এহেন অন্য কোনো উপায় নেই। আর যাই হোক, মানুষকে ভাত খাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে