টিসিবির ট্রাকে পণ্য বাড়ান
নিত্যপ্রয়োজনীয় কিছু পণ্য মজুত রেখে আপৎকালীন সময়ে স্বল্প ও ন্যায্যমূল্যে সাধারণ ও নিম্নআয়ের মানুষের মধ্যে বিক্রি করে বাজার স্থিতিশীল রাখা ও উপকারভোগী মানুষের কাছে পণ্য সরবরাহ করাই ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-এর উদ্দেশ্য। প্রথম দিকে টিসিবির পণ্য সরবরাহ ভালোই ছিল। কিন্তু দিন দিন ক্রেতার সারি যেমন দীর্ঘ হচ্ছে, ট্রাকে পন্য সরবরাহও কমে আসছে।
গত বৃহস্পতিবার (২১ নভেম্বর) পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মতিঝিলের নটর ডেম কলেজ ও বক চত্বর- এই চার স্থানে গতকাল সরেজমিনে দেখা গেছে, টিসিবির ট্রাকের পেছনে দীর্ঘ সময় সারিতে দাঁড়িয়ে থেকেও পণ্য না পেয়ে খালি হাতে ফিরে গেছেন অনেকে। কারণ, পণ্যের তুলনায় ক্রেতার সংখ্যা বেশি। গতকাল রাজধানীর ৫০টি স্থানে এভাবে পণ্য বিক্রি করে টিসিবি। প্রতিটি ট্রাকে ৩৫০ জনের জন্য পণ্য ছিল। তবে অধিকাংশ জায়গাতেই এর চেয়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন বেশি মানুষ উপস্থিত ছিলেন।
এক সময়, প্রথম প্রথম যখন টিসিবির পণ্য বাজারে আসে তখন ট্রাকের লাইনের পেছনে মধ্যবিত্ত পরিবারের অনেকে দাঁড়াতে সংকোচ বোধ করতেন। কিন্তু এখন মতিঝিল এলাকায় দেখা যায় প্যান্টশার্ট পরা অফিসফেরত অনেক ভদ্রলোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। এর কারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, পাঁচ কেজি চাল ও তিন কেজি আলু কিনতে পারছেন। বাজারে সম্প্রতি আলুর দাম বেড়েছে। এ জন্য গতকাল থেকেই আলু বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। এসব পণ্যের মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০, চাল ৩০ টাকা ও আলু ৪০ টাকায় কেনা যায়। এই চার পণ্য কিনতে একজন গ্রাহককে দিতে হয় ৫৯০ টাকা। আর খুচরা বাজার থেকে এসব পণ্য কিনতে লাগে প্রায় ১ হাজার ৫০ টাকা, অর্থাৎ টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনলে অন্তত ৪৫০ টাকা সাশ্রয় হয়।
দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণে একদিকে যেমন ট্রাকের পেছনে সারি বাড়ছে, তেমনি ট্রাকের পণ্য সরবরাহও কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ আছে। কয়েক ঘন্টা ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকে পণ্য না কিনে যারা খালি হাতে চলে যান তাদের চোখেমুখে এক ধরনের অসহায়ত্ব ভর করে। এই দৃশ্য ঢাকার রাস্তায় হাঁটলেই এখন চোখে পড়ে। এটাকেও এক প্রকার নিরব দুর্ভিক্ষ বলা যায়।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশে দেড় বছরের বেশি সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। অক্টোবর মাসেও মূল্যস্ফীতির হার ছিল ১০ দশমিক ৮৭ শতাংশ। খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৬৬ শতাংশে। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ। এখন দেশে যদি মূল্যস্ফীতি না কমানো যায়, ট্রাকের পণ্যও যদি না বাড়ানো যায় সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়?
বাজারে শীতের সব্জি পুরোদমে উঠতে এখনো অনেক দেরি। নতুন আলু উঠলেও দাম ধরাছোঁয়ার বাইরে। শিম, পেঁয়াজ, ফুলকপি, বাঁধাকপি সবই নাগালের বাইরে। শীতের সব্জি বিক্রি না করলেও আলু-পেঁয়াজ বিক্রি করে টিসিবি, তাও যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে তাতেও সাধারণ মানুষের একটু উপকার হয়। তাই আমরা চাই টিসিবির ট্রাকে পণ্য সরবরাহ বাড়ানো হোক। তা নাহলে সারি ছোট হবে না, বরং দিন দিন দীর্ঘই হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে