বগুড়ায় চুরি-ডাকাতি-ছিনতাই আতঙ্ক, রাত জেগে পাহারায় গ্রামবাসী
রাজশাহীর সিটি বাজার থেকে ছয়টি মহিষ কিনে পিকআপে বাড়িতে ফিরছিলেন তোজাম। পথে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সুখানগাড়ী গ্রামে একদল ডাকাতের কবলে পড়েন তিনি ও তার সঙ্গের লোকজন। সড়কে গাছ ফেলে তাদের আটকে দেয়া হয়। মহিষবাহী পিকআপসহ তোজাম ও তার সঙ্গে থাকা লোকজনের মোবাইল ফোন ডাকাতি হয়। এ সময় সড়কে যাতায়াতকারী কয়েকজনও একই ডাকাত দলের শিকার হন।
ঘটনাটি ১৫ অক্টোবর রাত সাড়ে ৯টার দিকের। ডাকাতির শিকার তোজাম ও অন্যরা সিরাজগঞ্জের কাজীপুর উপজেলার গোদারবাগ গ্রামের বাসিন্দা। ২৫ অক্টোবর রাত সোয়া ১টায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটে দুপচাঁচিয়া উপজেলার চামরুল তালুকদারপাড়া গ্রামে। ঘুমিয়ে ছিলেন তিনিসহ তার পরিবারের সবাই। ১৩-১৪ জনের একদল ডাকাত ঢুকে পড়ে গ্রামের আব্দুল হালিমের বাড়িতে। ঘুম থেকে তুলে মারধর করে হালিম এবং তার স্ত্রী ও মেয়েকে। পরে গোয়ালঘর থেকে চারটি গরু, স্বর্ণের গহনা ও তিনটি মোবাইল ফোন ডাকাতি করে নিয়ে যায়।
১০ অক্টোবর দুপুর ১২টার দিকে শেরপুর উপজেলার আন্দিকুমড়া গ্রাম থেকে শাজাহান আলীর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চুরি হয়। গত ২৭ নভেম্বর রাত ১১টার পরে বগুড়া সদর উপজেলার চালিতাবাড়ী গ্রামে ঢোকে একদল ডাকাত। গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে ঘর থেকে বের হতে গিয়ে গ্রামটির বাসিন্দা স্বপ্না খাতুন দেখেন, দরজা পেছন থেকে আটকানো। তার চিৎকারে প্রতিবেশী এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করেন। পরে গোয়ালঘরে গিয়ে দেখেন, গরু নেই। তার দুটি গরুই চুরি হয়ে গেছে।
স্বপ্না খাতুনের বাড়িতে প্রবেশের আগে পাশের দুটি বাড়ির দরজাও পেছন থেকে আটকে রেখে তাদের গরুগুলোও চুরি করে পালিয়ে যায় ডাকাত দল। স্বপ্না খাতুন ও তার স্বামী শাহ আলম জানান, গ্রামে হঠাৎ করে গরু চুরি বেড়ে গেছে। এসব ঠেকাতে রাত জেগে গ্রাম পাহারা দিচ্ছেন তারা। একেক রাতে একেক দল পাহারায় থাকছেন।
দুঁপচাচিয়া উপজেলার তালোড়া বাজারের ব্যবসায়ী মো. হাশেম জানান, চুরি-ছিনতাইর ঘটনাই বেশি বেড়েছে। মাসখানেকের মধ্যে শুধু তালোড়া এলাকায়ই একটি পিকআপ, অটোভ্যান ও একটি রাস্তায় ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবাই আতঙ্কে রয়েছেন।
তবে, চুরি-ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন অভিযানে অনেককে গ্রেপ্তারও করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। চুরি-ডাকাতি হওয়া কিছু মালপত্রও উদ্ধার হচ্ছে। জেলা পুলিশের তথ্যমতে, বগুড়ায় চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচটি ডাকাতি ও ১৪৫টি চুরির মামলা হয়েছে।
একাধিক ভুক্তভোগী জানান, চুরি-ডাকাতির ঘটনায় থানা কর্তৃপক্ষ সহজে মামলা নেয় না। পুলিশ শুধু লিখিত অভিযোগ করতে বলে। এমনকি অভিযোগের রিসিভ কপিও তাদের দেয়া হয় না। অভিযোগ থানায় লিপিবদ্ধ হয়েছে কি না, সে বিষয়েও কিছুই জানতে পারেন না তারা।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, চুরি ও ডাকাতি হচ্ছে, জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ মালপত্র উদ্ধারও করা হচ্ছে। এসব রোধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে