ভারত নাকি নিউজিল্যান্ড, কে হবে চ্যাম্পিয়ন?
আগামী ৯ মার্চ দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হবে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনাল। ওয়ানডে ক্রিকেটের সেরা ৮ দলের এই টুর্নামেন্টের শিরোপা নির্ধারণী মঞ্চে মুখোমুখি হবে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। দুটি দলই উঠেছে ‘এ’ গ্রুপ থেকে। যেখানে ছিল বাংলাদেশও। সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে ৪ উইকেটে হারায় ভারত আর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৫০ রানে জিতেছে নিউজিল্যান্ড। গ্রুপ পর্ব ও সেমিফাইনালে সেরা পারফরম্যান্স শো করে যোগ্য দল হিসেবেই ফাইনালের টিকিট কেটেছে দুদল। এখন অপেক্ষা- চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জয়ী কে হবে, ভারত নাকি নিউজিল্যান্ড তা দেখার।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফির শিরোপা জয়ের দৌড়ে ভারত কিংবা নিউজিল্যান্ড কাউকেই এগিয়ে কিংবা পিছিয়েও রাখার সুযোগ নেই। শক্তি-সামর্থ্য আর বর্তমান ফর্ম বিবেচনায় দুটি দলই দুর্দান্ত, সমানে সমান। অনেকে বলতে পারেন, ভারত তো উপমহাদেশের দল, ফেভারিট হিসেবে খেলছে। আবার দুবাইয়ের একক ভেন্যুতে খেলার সুবিধাও পাচ্ছে, স্পিন জাল বিছিয়ে এশিয়ার বাইরের যে কোনো দলকে ফাঁদে ফেলতে পারে- এমন নানা কথা। অবশ্য এসব কথায় যুক্তি থাকলেও নিউজিল্যান্ড দলটি অন্য যে কোনোবারের চেয়ে ভিন্ন। খেলার ধরন, খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স, লড়াইয়ের মনোভাব আর জয়ের যে তাড়না, এসব কিছু দলটিকে আলাদা করে রাখছে। ফলে ভারতের সামনে নিউজিল্যান্ড দলটি হবে খুবই ভীতি জাগানিয়া।
শক্তির দিক চিন্তা করলে দেখা যাবে, ভারত দলে যেমন রোহিত শর্মা আর বিরাট কোহলির মতো বড় মাপের ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেয়ার মতো ব্যাটার আছেন, নিউজিল্যান্ড দলেও কেন উইলিয়ামসন আর রাচিন রবীন্দ্রর মতো খেলোয়াড়রা আছেন। দুদলেই অলরাউন্ডারে ছড়াছড়ি। ব্যাটিং আর বোলিং অলরাউন্ডাররা ভারত ও নিউজিল্যান্ডের দলের গভীরতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ফাস্ট বোলিংয়েও বিধ্বংসী ভারত নাকি নিউজিল্যান্ড। বুমরার অনুপস্থিতিতে মোহাম্মদ শামি, আর্শদীপ সিং, হারশিত রানা, হার্দিক পান্ডিয়ারা গতির ঝড় তুলছেন টুর্নামেন্টজুড়ে। নিউজিল্যান্ড দলে ফাস্ট বোলিংয়ে ম্যাট হেনরি, জ্যাকব ডফি, উইল ও’রুকরা যে কোনো ব্যাটারদের জন্য এখন আতঙ্কের নাম। স্পিনেও ভালো নিউজিল্যান্ড। ব্রেসওয়েল, স্যান্টনার, রাচিন আর ফিলিপসরা আছেন দারুণ ছন্দে। তবে তাদের দলে একজন লেগ স্পিনারের অভাব রয়েছে। যেখানে ভারত দলে আছেন বাঁহাতি রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব। তার সঙ্গে রবীন্দ্র জাদেজা, অক্ষর প্যাটেল ও বরুন চক্রবর্তী মিলে ভারতের স্পিন শক্তিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।
তবে উপমহাদেশের স্পিনারদের কীভাবে খেলতে হয়, সেটি গত কয়েক বছরের রপ্ত করে ফেলেছে নিউজিল্যান্ড। ফলে কন্ডিশন, উইকেট আর প্রতিপক্ষ- এই তিনটি বিষয়ে যে ধারণা হয়েছে তাদের, সেটি কাজে লাগিয়ে দুর্দান্ত দলে পরিণত হয়েছে তারা। এসব মিলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে প্রবল প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখা যেতে পারে নিউজিল্যান্ড দলটিকে।
দুবাইয়ের মাঠে ফাইনাল। কাজেই দর্শকের বড় একটা সাপোর্ট পাবে ভারত দল। সবচেয়ে বড় কথা- এই দলটি কোনো ম্যাচে না হেরে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে এসেছে। এর মধ্যে গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডকেও হারায় রোহিত শর্মারা। ধারাবাহিক জয়ের যে দারুণ একটা ছন্দ পেয়েছে ভারত, সেটি কাজে লাগিয়ে ফাইনালের মঞ্চও জয়ে রাঙিয়ে দিতে পারেন তারা। আইসিসি যে কোনো টুর্নামেন্টে অন্যতম সফল দল ভারত। আগে চ্যাস্পিয়নস ট্রফিতে চারবার ফাইনালে খেলে দুবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে তারা। এবার পঞ্চমবারের মতোই ফাইনাল খেলবে দলটি। তাদের সামনে তৃতীয় শিরোপা জয়ের হাতছানি। এছাড়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে দুইবার ফাইনালে উঠে একবার শিরোপা জয়ের রেকর্ড আছে তাদের। চারবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে দুইবার শিরোপা ঘরে তুলেছে ভারত। ওয়ানডে ক্রিকেটে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অতীত রেকর্ড বেশ ভালো ভারতের। এ পর্যন্ত ভারত ও নিউজিল্যান্ড ১১৯টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে ৬১টি ম্যাচ জয়ের রেকর্ড ভারতের আর নিউজিল্যান্ডের জয় ৫০টি। একটি ম্যাচ টাই হয়েছে। বাকি ৭টি ম্যাচের ফল হয়নি। চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে দুটি ম্যাচ খেলেছে দুদল। প্রত্যেকের জয় সমান একটি করে।
অতীত রেকর্ড ভারতের মতো উজ্জ্বল না হলেও ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের জন্য বড় অনুপ্রেরণা চ্যাম্পিয়নস ট্রফি শুরুর আগে ত্রিদেশীয় সিরিজের শিরোপা জয়ের সাফল্য। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে স্বাগতিক পাকিস্তানকে হারায় তারা। এ জয় চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে আত্মবিশ্বাসের বাড়তি জ্বালানি হতে পারে তাদের জন্য। আরেকটি জায়গায়, ভারতের বিপক্ষে ফাইনালে নিউজিল্যান্ডের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিতে পারে। সেটি হলো- টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জয়। ২০১৯-২০২১ চক্রের যে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছিল নিউজিল্যান্ড, ফাইনালে ভারতকেই হারিয়েছিল দলটি।
তাছাড়া ২০০০ সালে যখন চ্যাম্পিয়নস ট্রফির নাম নকআউট ট্রফি ছিল- সেই আসরের ফাইনালেও ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় নিউজিল্যান্ড। আইসিসি টুর্নামেন্টে যে দুটি শিরোপা জিতেছে তারা, দুটির ফাইনালেই ভারতকে হারানোর রেকর্ড আছে তাদের। ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনাল থেকেও অনুপ্রেরণা নিতে পারেন কেন উইলিয়ামসনরা। ওই আসরের ফাইনালে ভারতকে তাদের ঘরের মাটিতে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় নিউজিল্যান্ডের পার্শ্ববর্তী দেশ অস্ট্রেলিয়া।
তবে ফাইনালের হারের দুঃখও কম নয় নিউজিল্যান্ডের। ২০১৫ ও ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপ, ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০০৯ সালে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে হারের রেকর্ড আছে দলটির। তবে এবারের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে খেলছে যেন এক নতুন নিউজিল্যান্ড। ভয়-ডরহীন খেলে যাওয়া এই নিউজিল্যান্ড কি ৯ মার্চ থামিয়ে দিতে পারবে ভারতের জয়রথ? এর উত্তর যেটাই হোক, জমজমাট ফাইনালে জয় হবে ক্রিকেটের- এমন প্রত্যাশা সবার।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে