Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়েছে ভারতের ওষুধ শিল্প ও মেডিকেল ট্যুরিজমে

Tanmay Mondal, Kolkata

তন্ময় মণ্ডল, কলকাতা

শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির প্রভাব ফেলেছে প্রতিবেশি দেশগুলোতেও। বিশেষ করে যেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে; আমদাদি-রপ্তানির সমস্যার কারণে সেখানকার ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ভারতীয় ওষুধ রপ্তানিকারক এবং মেডিকেল পর্যটন কোম্পানিগুলির ওপর বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতির জোরালো প্রভাব পড়েছে।

ভারতীয় ফার্মা কোম্পানিগুলো বকেয়া পেমেন্ট, শিপমেন্ট আটকে থাকা-সহ আমদানিকারকদের সঙ্গে দীর্ঘ সময়ের যোগাযোগের সমস্যা নিয়ে চিন্তিত হয়ে আছে।

অন্যদিকে, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অস্থিরতার কারণে চিকিৎসার জন্য ভারতমুখী হওয়া অনেক বাংলাদেশি নাগরিকই আকস্মিকভাবে ভারতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাতিল করছেন। ফলত ভারতের চিকিৎসা-পর্যটনে এর প্রভাব পড়েছে।

ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা ফার্মাসিউটিক্যালস এক্সপোর্ট প্রমোশন কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার (Pharmexcil) ভাষ্যমতে, ভারতীয় কোম্পানিগুলি বকেয়া এবং আর্থিক স্থিতিশীলতার বিষয়ে উদ্বেগের কারণে বাংলাদেশে পণ্য সরবরাহ করার ব্যাপারে দোটানায় আছে।

ওই সংস্থার ডিরেক্টর জেনারেল রাজা ভানু সংবাদমাধ্যমে জানান, বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে, ভারতীয় ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি – যা ওষুধ এবং ওষুধ তৈরিতে ব্যবহৃত পণ্য রপ্তানি করে– অপরিশোধিত বকেয়া, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং পরিবহনের সমস্যা নিয়ে উদ্বেগসহ বেশ কিছু চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি দ্রুত বাংলাদেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’

ফার্মেক্সিল (Pharmexcil)-এর তথ্য অনুযায়ী, সমগ্র বাংলাদেশের ওষুধের উৎপাদানের ৩০ শতাংশ ভারত থেকে যায়। ভারতের বড় ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থাগুলির পাশাপাশি ছোট এবং মাঝারি আকারের সংস্থাগুলিও এই ঔষধ তৈরির উপকরণসামগ্রী রপ্তানি করে।

ভারতের সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে রপ্তানি ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ওঠানামা করলেও জুন মাসে তা অনেকটাই কমে গেছে।

মুম্বাই-ভিত্তিক ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থার কর্ণধার, যিনি বাংলাদেশে রপ্তানি করেন, সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতা পুরোপুরি ঠিক না হওয়া পর্যন্ত সংস্থাটি নতুন কোনো পণ্য রপ্তানি করবে না।

আরেকটি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থা জানিয়েছে, ‘যদিও চালান চলাচলের অবস্থা এখন তুলনামূলক ভালো। বাংলাদেশে চূড়ান্ত অস্থিরতার সময়ে হারিয়ে যাওয়া কয়েক লাখ টাকার পণ্য এখনও খুঁজে বের করতে পারিনি আমরা। পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আমরা বাংলাদেশে নতুন করে রপ্তানি করছি না।’

অন্যদিকে, মেডিকেল ভ্যালু ট্র্যাভেল কোম্পানি যা এনআরআই রোগীদের ভারতে চিকিৎসাগ্রহণে সহায়তা করে, সেই কোম্পানির সিইও রাজীব তানেজারের সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া বিবৃতি অনুযায়ী, তার কোম্পানি ২০২৩ সালে সারা পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক রোগীকে পরিষেবা দিয়েছে।

আরেকটি মেডিকেল ট্র্যাভেল কোম্পানি মেডিজার্নের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইশান দোধিওয়ালা বলেছেন, ‘বাংলাদেশের অস্থিরতা নিঃসন্দেহে ভারতে চিকিৎসার জন্য রোগীদের আসায় প্রভাব ফেলেছে। স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী এবং সংশ্লিষ্ট পরিষেবাগুলির জন্য কিছু চ্যালেঞ্জও তৈরি হয়েছে।’

মোটের ওপর একথা স্পষ্ট, বাংলাদেশ থেকে চিকিৎসার কারণে আসা মানুষের সংখ্যা কমে যাওয়ার তাদের ওপরও যে জোরালো প্রভাব পড়ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
পাশাপাশি এই কোম্পানিগুলোর কর্ণধারদের কণ্ঠে আশার কথাও প্রতিধ্বণিত হচ্ছে। তাদের বয়ান অনুযায়ী ভারতীয় ভিসাকেন্দ্রে আবেদপত্র জমা পড়ছে বলে তারা জেনেছেন। আশা করা যাচ্ছে আগামী সপ্তাহ থেকে বাংলাদেশ থেকে আরো মানুষ চিকিৎসার জন্য আসবেন।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ