আর্থিক শক্তির নির্দেশক ব্যক্তির পার্চেজিং পাওয়ার
ব্যক্তিগত জাগতিক সুখার্জনে কনজ্যুমার্স পার্চেজিং পাওয়ার বা ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার কোনো বিকল্প নেই। যদিও বলা হয়, অর্থই সকল অনর্থের মূল অথবা টাকা-পয়সা হাতের ময়লা। এতসব বিরূপ মন্তব্যের পরও আমরা কোনোভাবেই ব্যক্তির জীবনে অর্থের আবশ্যকতা উপেক্ষা করতে পারি না। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, বাস্তবতা হচ্ছে এটাই যে, অর্থ ছাড়া আমাদের একমুহূর্তও চলে না। যে কোনো কাজের জন্যই অর্থের প্রয়োজন হয়। বিনিময়ের মাধ্যম হচ্ছে টাকা, যা ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার ভিত রচনা এবং শান্তির পথ রচনা করে। তিন ধরনের শক্তি মানুষের জীবনকে আবর্তন করে রাখে। এগুলো হচ্ছে শারীরিক শক্তি, মানসিক শক্তি এবং আর্থিক ক্ষমতা বা শক্তি। এই তিনটি শক্তি কারও জীবনে একত্রিত হলে তিনি সবচেয়ে বেশি সুখি মানুষ হিসেবে বিবেচিত হতে পারেন।
সাধারণত এই তিনটি শক্তি সবার জীবনে একীভূত হয় না। তবে ব্যক্তির জীবনে অর্থ সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। এমন এক সময় ছিল যখন মানুষকে অর্থবিত্তের মাপকাঠিতে মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে উপার্জিত অর্থের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হতো। কেউ যদি অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জন করতেন তাহলে সমাজে তার তেমন কোনো মর্যাদা থাকত না। তিনি অর্থবান হিসেবে বিবেচিত হলেও ভালো মানুষ বলে সমাজে গণ্য হতেন না। এ ধরনের অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থের মালিকদের সঙ্গে সমাজে গণ্যমান্য ব্যক্তিগত আত্মীয়তা করতেও রাজি হতেন না; কিন্তু এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। এখন মানুষ অর্থের মাপকাঠিতে মূল্যায়িত হয়। সেই অর্থ কীভাবে উপার্জিত হয়েছে সেটা কোনো বিবেচ্য বিষয় নয়। অর্থাৎ অর্থ সামাজিক মূল্যবোধ বদলে দিয়েছে।
দেশে মানুষের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় বাড়ছে। বিভিন্ন তথ্য-পরিসংখ্যান থেকে এটি প্রতীয়মান হচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর দেয়া তথ্য মতে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় ছিল ১ হাজার ৩১৬ মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৮৪ মার্কিন ডলার। অর্থাৎ মাত্র ১০ বছরের ব্যবধানে দেশের মানুষের মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। এটা যে কোনো মানুষকেই উল্লসিত করবে। মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় বৃদ্ধির বিষয়টি সরকারের সাফল্যের মুকুটে একটি নতুন পালক যোগ করেছে। এ নিয়ে সরকারের উল্লাসের কোনো কমতি নেই। সরকার বলছে, তাদের পরিকল্পিত নীতি বাস্তবায়নের ফলেই মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে এমন সাফল্য অর্জিত হয়েছে। বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে দাবি করা হচ্ছে।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় দিয়ে একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জনগণের সুখ-শান্তি পরিমাপ করা যায় না। কারণ মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় কখনোই ব্যক্তির পার্চেজিং পাওয়ার বা ক্রয়ক্ষমতাকে নির্দেশ করে না। মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় প্রদর্শন করা এক ধরনের প্রতারণার শামিল। কারণ এতে ব্যক্তি বিশেষের অর্থনৈতিক অবস্থার প্রকৃত চিত্র প্রতিফলিত হয় না। একটি নির্দিষ্ট বছরে দেশের অভ্যন্তরে যে পণ্য ও সেবা উৎপাদিত হয়, তার সঙ্গে রেমিট্যান্স এবং বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা মিলিয়ে জাতীয় আয় নির্ধারণ করা হয়। দেশের জনসংখ্যা দিয়ে মোট জাতীয় আয়কে ভাগ করলে যে ফলাফল পাওয়া যায় সেটাই মাথাপিছু গড় জাতীয় আয়; কিন্তু আমরা কি নিশ্চিত করে বলতে পারব, একটি বছরের মোট জাতীয় আয় সবার মাঝে সমানভাবে ভাগ করে দেয়া হয়? ব্যক্তির উপার্জন যখন সামষ্টিকভাবে যোগ করা হয়, তখন তা মোট জাতীয় আয়ে পরিণত হয়।
একজন মানুষ হয়তো নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে এবং বাইরে থেকে বছরে ১০ কোটি টাকা উপার্জন করলেন। আর একজন মানুষ বছরে ১ লাখ টাকা আয় করলেন। তাদের দুজনের আয় মিলে জাতীয় আয় দাঁড়াবে ১০ কোটি ১ লাখ টাকা। গড় জাতীয় আয় নির্ধারণের সময় এদের দুজনের উপার্জিত মোট আয়কে দুই সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হবে। তাহলে যে ফল পাওয়া যাবে, অর্থাৎ গড় হবে ৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এটাই হচ্ছে সেই বছরে তাদের দুজনের গড় জাতীয় আয়। এভাবে মোট গড় জাতীয় আয় নির্ধারণ প্রক্রিয়া কোনোভাবেই সমর্থনীয় নয়। কারণ এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির প্রতি অবিচার করা হয়, যিনি বছরে ১০ কোটি টাকা আয় করেন তার উপার্জন কমিয়ে দেখানো হচ্ছে। আবার যিনি বছরে ১ লাখ টাকা আয় করেন, তার উপার্জন বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে। এভাবে মাথাপিছু গড় জাতীয় আয় প্রদর্শন করে কখনোই ব্যক্তির সঠিক পার্চেজিং পাওয়ারকে মূল্যায়ন করা যায় না।
ব্যক্তি বা ভোক্তার জীবনে পার্চেজিং পাওয়ার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। ব্যক্তির জাগতিক সুখ নির্ধারণে পার্চেজিং পাওয়ার বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। বাজারে ডিমের হালি যদি ৫ হাজার টাকা হয়, তাহলেও ভোক্তার কোনো অসুবিধা নেই যদি এক হালি ডিম ক্রয়ের জন্য তার কাছে ৫ হাজার টাকা থাকে। আবার সেই এক হালি ডিমের মূল্য যদি ৫০ টাকাও হয়, তাহলে কোনো লাভ নেই যদি ভোক্তার কাছে এক হালি ডিম ক্রয়ের জন্য ৫০ টাকা না থাকে। এখানেই পার্চেজিং পাওয়ারের গুরুত্ব। একজন মানুষের জন্য পার্চেজিং পাওয়ার কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা অনুধাবন করার বিশেষ কোনো কৌশল অবলম্বন করার প্রয়োজন হয় না। আশপাশে ছড়িয়ে থাকা নানা ঘটনা থেকেই তা আমরা উপলব্ধি করতে পারি। একজন উচ্চ শিক্ষিত কর্মক্ষম ব্যক্তি যদি কোনো কর্মে নিযুক্ত হতে না পারেন, তাহলে তিনিই বলতে পারবেন ব্যক্তি জীবনে পার্চেজিং পাওয়ারের গুরুত্ব কতটা। মানুষের পার্চেজিং পাওয়ার সৃষ্টি এবং বৃদ্ধি বা বিকাশের জন্য উপযুক্ত কর্মসংস্থান এবং ক্রমাগত আয়বর্ধন প্রক্রিয়া খুবই জরুরি। আবার শুধু উপার্জন করলেই হবে না।
সেই উপার্জন হতে হবে ক্রমবর্ধমান এবং সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়াতে হবে। বিশেষ করে একটি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতি যেভাবে বৃদ্ধি পায়, পার্চেজিং পাওয়ার সেই অনুপাতে অথবা তার চেয়ে বেশি হারে বৃদ্ধি পেতে হবে। অন্যথায় মানুষের পার্চেজিং পাওয়ার কমে যেতে বাধ্য। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের ব্যাংকিং সেক্টরে আমানত প্রবৃদ্ধি কমে যাচ্ছে। আমানতকারিদের অনেকেই ব্যাংকে আমানতকৃত অর্থ উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছেন। পরে সেই অর্থ আর ব্যাংকে ফেরত আসছে না। অনেকেই বলে থাকেন, আমানতকারীরা ব্যাংকিং সেক্টরের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে আমানত উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। এই ধারণা প্রশ্নাতীতভাবে মেনে নেয়া যায় না। কারণ মানুষ ব্যাংকিং সেক্টরের দুরবস্থার কথা চিন্তা করে আমানত উত্তোলন বা প্রত্যাহার করছে এটা ঠিক নয়। বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক অবস্থায় দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে ২ বছরেরও বেশি সময় ধরে। মূল্যস্ফীতি হ্রাস পাবার কোনো লক্ষণই দেখা যাচ্ছে না।
এ অবস্থায় সাধারণ মানুষের আর্থিক সামর্থ্য হ্রাস পেয়েছে। তাদের অনেকেই ব্যাংকে নতুন করে আমানত সংরক্ষণের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছেন। যারা এর আগে ব্যাংকে আমানত সংরক্ষণ করেছিলেন তারাও সংসারের নিত্যদিনের ব্যয় নির্বাহের জন্য আমানত ভেঙে খরচ করতে বাধ্য হচ্ছেন। কোনো কারণে মানুষের আয় যদি প্রত্যাশিত মাত্রায় না বাড়ে। বিশেষ করে সৃষ্ট মূল্যস্ফীতির চেয়ে বেশি হারে যদি আয় না বাড়ে তাহলে মানুষের পার্চেজিং পাওয়ার কমে যেতে পারে। মানুষটি বিপর্যয়ের মুখোমুখি হতে পারে। মূল্যস্ফীতি এবং মজুরি বৃদ্ধির পরস্পর নিবিড়ভাবে সম্পর্কায়িত। মূল্যস্ফীতি যে হারে বৃদ্ধি পায় মানুষের আয় যদি ঠিক সেভাবে বাড়ে, তাহলে কোনো সমস্যা হবে না। মূল্যস্ফীতির চেয়ে মানুষের আয় যদি বেশি মাত্রায় বৃদ্ধি পায়, তাহলে মানুষের পার্চেজিং পাওয়ার বৃদ্ধি পাবে এবং মানুষ তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকবেন। এমনকি মানুষের আয় যদি বৃদ্ধি নাও পায়, তাহলে সে ভালো থাকতে পারবে যদি মূল্যস্ফীতি নিগেটিভ প্রবৃদ্ধির ধারায় থাকে। যেমন কোনো মানুষের বার্ষিক আয় হয়তো ১০০ টাকা।
পণ্য মূল্যও ১০০ টাকা। এক বছর পর পণ্যমূল্যস্ফীতি যদি ১০ শতাংশ কমে যায়, তাহলে পণ্যের মূল্য ১০০ টাকা থেকে কমে দাঁড়াবে ৯০ টাকা; কিন্তু ব্যক্তির মজুরি বা বেতন-ভাতা ১০০ টাকাই স্থির থাকলো। তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আয় না বাড়লেও তার পার্চেজিং পাওয়ার বৃদ্ধি পারে। পার্চেজিং পাওয়ার বৃদ্ধি পাবার কারণে ব্যক্তিটি একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে আগের তুলনায় বেশি পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারবেন। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে; কিন্তু সেই তুলনায় মানুষের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে না; বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মানুষের আয় কমে যাচ্ছে। তাই অনেকেই আছেন, যারা ধারকর্জ করে সাংসারিক ব্যয় নির্বাহ করছেন। মানুষের আয় এবং ব্যয়ের মধ্যে যে কোনো সামঞ্জস্য নেই, তা বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে উঠে এসেছে। ২০২৩ সালের মে মাসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে সার্বিক মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৯৪ শতাশ। আর একই সময়ে মজুরি বৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ। অর্থাৎ মজুরি বৃদ্ধির তুলনায় মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পেয়েছিল ২ দশমিক ৬২ শতাংশ।
গত ১২ মাসে মূল্যস্ফীতি যেভাবে বেড়েছে মজুরি বৃদ্ধির হার তার চেয়ে ২ থেকে আড়াই শতাংশ কম ছিল। মূল্যস্ফীতির তুলনায় মজুরি বৃদ্ধির হার যদি বেশি না হয়, তাহলে সমস্যা থাকবেই। এ মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতিই দেশের অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দিয়েছে। মূল্যস্ফীতি সহনীয় মাত্রায় নামিয়ে আনা না গেলে কোনোভাবেই সাধারণ মানুষের পার্চেজিং পাওয়ার বাড়ানো সম্ভব হবে না। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কার্যক্রম গ্রহণ করেছে; কিন্তু এগুলো কি মূল্যস্ফীতি কমানোর ক্ষেত্রে সহায়ক নাকি মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিচ্ছে? কয়েক মাস আগে ব্যাংক ঋণের সুদেও সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশে নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়,যা ছিল দেশটির বিগত ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি। ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) সেই অবস্থায় গৃহীত অন্যান্য ব্যবস্থার সঙ্গে নীতি সুদহার বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়। তারা দুই বছরের মধ্যে নীতি সুদহার অন্তত ১৩ বার বৃদ্ধি করেছে।
নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশলটি অত্যন্ত সাধারণ একটি কৌশল। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি নীতি সুদহার বাড়িয়ে দেয় তাহলে ব্যাংক ঋণের সুদের হারও আনুপাতিকভাবে বৃদ্ধি পাবে। এতে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করা আগের তুলনায় ব্যয়বহুল হবে। ফলে সম্ভাব্য ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে অনেকেই নতুন করে ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। এতে বাজারে অর্থের সরবরাহ কমে যাবে। এর স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। বিশ্বের অন্তত ৭৭টি দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধির মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের কৌশল গ্রহণ করে সফল হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। গত দুই বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতি সুদহার একাধিকবার বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগে যেখানে নীতি সুদহার ছিল ৫ শতাংশ এখন তা সাড়ে ৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
কিন্তু কিছু দিন আগ পর্যন্তও ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করে রাখার ফলে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ আগের তুলনায় সহজ এবং সস্তা হয়ে যায়। ফলে ব্যক্তি খাতে ঋণ গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। গৃহীত ঋণের অর্থ উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োজিত না হয়ে নানা প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাজারে চলে আসে, যা মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেয়। ব্যাংক ঋণের সুদের হার নির্ধারিত করে রেখে পলিসি রেট বাড়ানোর ফলাফল কি হতে পারে তা কি বাংলাদেশ ব্যাংক জানত না? তারা বিশেষ মহলকে সুবিধা দেয়ার জন্যই এই কাজটি করেছে বলে অনেকেই অভিযোগ করে থাকেন। অর্থনীতিতে গৃহীত যে কোনো নীতির উদ্দেশ্য হওয়া উচিত সাধারণ মানুষের পার্চেজিং পাওয়ার বাড়ানো। কারণ পার্চেজিং পাওয়ার না বাড়লে কোনোভাবেই জনকল্যাণ সাধন করা যাবে না।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে