মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে উসকে দেয়
গত দুবছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা সবচেয়ে আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অর্থনীতিতে লুণ্ঠন পরিস্থিতির পাশাপাশি উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ে নানামুখী চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, রাজনৈতিক সমঝোতা কঠিন কিন্তু চাঁদাবাজির সমঝোতা সহজ। অর্থাৎ তিনি বুঝাতে চেয়েছেন, জনকল্যাণে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতা সৃষ্টি করা কঠিন; কিন্তু অনৈতিক কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে আর্থিক দুরাচারের লিপ্ত হওয়া মোটেও কঠিন নয়। অর্থাৎ অবৈধভাবে ব্যক্তি স্বার্থ চরিতার্থ করার ক্ষেত্রে এক শ্রেণির মানুষ বড়ই পটু। আর্থিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য রাজনৈতিক চরম প্রতিপক্ষও পরস্পর সহযোগিতা করে থাকে। আর্থিক দুর্বৃত্তরা পরস্পর সহযোগিতার মাধ্যমেই তাদের কর্মকাণ্ডে পরিচালনা করে থাকে। দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক শাসনের অবসান হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে চলে যাবার পর আশা করা হয়েছিল তার আমলে সৃষ্ট আর্থিক ক্ষতগুলো হয়তো দ্রুতই সারিয়ে তোলা যাবে; কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ৫ মাস অতিবাহিত হতে চলেছে; কিন্তু এখনো আর্থিক সমস্যাগুলো নিরসনের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিগত সরকারের আমলে একটি সাধারণ প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যেত, তাহলে যে কোনো সময় যুক্তিসঙ্গত কারণ ছাড়াই কোনো কোনো পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেত। এতে সাংঘাতিকভাবে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হতো; কিন্তু এখনো সেই প্রবণতা বিদ্যমান রয়েছে।
কোনো কারণে একটি দেশের অর্থনীতিতে পারিপার্শ্বিক অবস্থা অপরিবর্তিত থাকা সত্ত্বেও যৌক্তিক কারণ ছাড়াই পণ্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়াকে মূল্যস্ফীতি বলা যেতে পারে। যেমন কোনো সময় দেশের পণ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকা সত্ত্বেও পণ্যমূল্য যদি বেড়ে যায়, তাহলে সেই অবস্থাকে মূল্যস্ফীতি বলা যেতে পারে। মূল্যস্ফীতি যেসব সময় অর্থনীতির জন্য খারাপ, তা নয়। অনেক সময় উৎপদনের স্বার্থে কিছুটা মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত হতে পারে। যদি মূল্যস্ফীতি নেতিবাচক অবস্থায় চলে যায়, তাহলে ভোক্তারা লাভবান হলেও তৃণমূল পর্যায়ের উৎপাদন শ্রেণি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পাবে না। এ অবস্থার সৃষ্টি হলে উৎপাদকরা পরবর্তী বছর অধিক উৎপাদনের আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারেন। এতে দেশের পণ্য উৎপাদন ও জোগান ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই একটি নির্দিষ্ট হারে মূল্যস্ফীতি থাকাটা বাঞ্ছনীয়। বাংলাদেশের মতো একটি অর্থনীতিতে ৩ থেকে ৪ শতাংশ মূল্যস্ফীতি থাকাটা সহনীয় বলে বিবেচিত হতে পারে; কিন্তু তার চেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি সৃষ্টি হলেই তাকে বিপর্যয়কর বলে মনে করা যেতে পারে।
অনেকের মধ্যে এমন একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, কোনো একটি বা দুটি পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেলেই তাকে মূল্যস্ফীতি বলে মনে করেন; কিন্তু আসলে তা নয়। মূল্যস্ফীতি পরিমাপের জন্য কিছু নির্দিষ্ট পণ্যকে বিবেচনায় নেয়া হয়। অর্থনীতির পরিভাষায় কোনো একটি বা দুটি নির্দিষ্ট পণ্যের মূল্য বৃদ্ধিকে মূল্যস্ফীতি বলা হয় না। বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে থাকে। তারা নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের গড় মূল্য বৃদ্ধি বা হ্রাসকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করে থাকে। এই নির্দিষ্ট পণ্যগুলো আবার দুভাগে ভাগ করা হয়। কোনোটি শহরের জন্য আবার কোনোটি গ্রামের জন্য। শহরের জন্য মূল্যস্ফীতি নির্ণয়ের জন্য ৪২২টি পণ্যকে বিবেচনায় নেয়া হয়। আর গ্রামের ক্ষেত্রে ৩১৮টি পণ্যকে বিবেচনায় নিয়ে মূল্যস্ফীতি পরিমাপ করা হয়। এ সমস্ত পণ্যের গড় মূল্য যদি বৃদ্ধি পায় তাকে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আবার যদি এসব পণ্যের গড় মূল্য হ্রাস পায় তাহলে মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী হয়েছে বলে মনে করা হয়। মূল্যস্ফীতিকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়। এর মধ্যে একটি খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি এবং অন্যটি খাদ্য বহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি।
স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময় হার কমে যাওয়া বা মূল্য হ্রাস পাওয়াকেই মূল্যস্ফীতি বলা যেতে পারে। অথবা স্থানীয় মুদ্রার ক্রয় ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়াটাকেও মূল্যস্ফীতি বলা যেতে পারে। মূল্যস্ফীতির প্রবণতা সৃষ্টি হলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা আগের তুলনায় কমে যায়। এতে সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে যারা স্বল্প এবং নির্দিষ্ট আয়ের মানুষ তাদের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। মূল্যস্ফীতি যখন উচ্চ মাত্রায় চলে যায় তখন তাকে অর্থনীতির জন্য দানব বলে চিহ্নিত করা হয়। এই অবস্থায় ভোক্তা আগের সমপরিমাণ অর্থ ব্যয় করে একই মাত্রায় পণ্য ও সেবা ক্রয় করতে পারে না। ফলে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি হয়। আমরা যাদের সুবিধাবঞ্চিত মানুষ মনে করি উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাদের কল্যাণের স্তর অনেকটা নিচের দিকে নেমে আসে। তারা তাদের চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এই সুবিধা বঞ্চিত মানুষগুলোর শ্রমজীবী। তারা চাইলেই মজুরি আনুপাতিকভাবে বাড়াতে পারে না। যারা উচ্চ আয়ের মানুষ এবং চেষ্টা করলেই আয় বাড়াতে পারেন উচ্চ মূল্যস্ফীতি তাদের জন্য খুব একটা সমস্যার সৃষ্টি করে না।
যারা তৃণমূল পর্যায়ের উৎপাদক তারা যে পণ্যটি উৎপাদন করে থাকেন তার মূল্য বৃদ্ধি পাক এটাই কামনা করেন; কিন্তু ভোক্তারা সব সময়ই চান বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি না পেয়ে বরং হ্রাস পাক। ভোক্তা এবং উৎপাদকদের মধ্যে নিরন্তর চলে টানাপোড়েন। কোনো কারণে একটি পণ্যের উৎপাদন এবং যোগান কমে গেলে সেই পণ্যটির মূল্য বৃদ্ধি পেতে পারে। আবার কোনো কারণে বিশেষ পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেলেও মূল্যস্ফীতি ঘটতে পারে। উৎপাদন স্বাভাবিক থাকা অবস্থাতেও পরিবহন সংকটের কারণে পণ্য মূল্য বাড়তে পারে। বিশ্বে এমন কোনো দেশ নেই যার অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি ঘটে না। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা এবং নিম্নমুখী প্রবণতা প্রত্যক্ষ করা যায়। অন্যান্য দিকগুলো অপরিবর্তিত থেকে যদি কোনো সময় নির্দিষ্ট পণ্যসমূহের গড় মূল্য বাড়ে অর্থাৎ নেতিবাচক মূল্যস্ফীতি ঘটে তাহলে তা ভোক্তাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করে। আবার নেতিবাচক মূল্যস্ফীতি ঘটলে সাধারণ ভোক্তাদের উপকার হয়।
ভোক্তারা আগের তুলনায় কম অর্থ ব্যয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয় করতে পারেন; কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ের উৎপাদকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। কারণ তারা উৎপাদিত পণ্যের প্রত্যাশিত মূল্য পাবেন না। আমাদের মতো দেশে মূল্যস্ফীতির হ্রাস-বৃদ্ধি যাই ঘটুক না কেনো তাদের ভোক্তা এবং উৎপাদক কেউই লাভবান হয় না। কারণ যারা মধ্যস্বত্বভোগী তারা তৃণমূল পর্যায়ের উৎপাদকদের অসহায়ত্তের সুযোগ নিয়ে বাজার দরের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করে তা অতিরিক্ত মূল্য ধার্য করে ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দেন। বাংলাদেশে যত উদ্যোগই নেয়া হোক উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনার ক্ষেত্রে তা তেমন একটা অবদান রাখতে পারবে না। বাজারে রাজনৈতিক প্রভাবিত সিন্ডিকেট বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিন্ডিকেট দমন করা না গেলে কোনোভাবেই বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য স্বাভাবিক অবস্থায় নামিয়ে আনা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য এক বছর সময় প্রয়োজন হবে। তাহলে এই এক বছর সাধারণ মানুষ কী করবে? তারা কি চেয়ে চেয়ে দুর্ভাগ্য প্রত্যক্ষ করবে?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে,তারা বিগত আমলে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে দেখানোর চেষ্টা করত। ফলে প্রকৃত মূল্যস্ফীতি সম্পর্কে সাধারণ মানুষ জানতে পারতো না। এই মুহূর্তে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা বিভিন্ন পরিসংখ্যান থেকে জানতে পারি দেশে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে; কিন্তু এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি কীভাবে জনজীবন বিপন্ন করে তুলছে তা কি একবারও ভেবে দেখার প্রয়োজন বোধ করি?
করোনাকালীন সময়ে বিশ্বব্যাপী উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। করোনা উত্তর বিশ্ব অর্থনীতি যখন পুনরুদ্ধারের পর্যায়ে ছিল ঠিক তখনই শুরু হয় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার সম বিশ্বব্যাপী খাদ্য পণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন ছিল স্বাভাবিক মাত্রায়; কিন্তু সেই সময় যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এতে পরিবহন সেক্টরে মারাত্মক বিপর্যয় নেমে আসে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের সর্বত্রই উচ্চ মূল্যস্ফীতি প্রবণতা সৃষ্টি হয়েছিল। সেই অবস্থা ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা (ফেড) পলিসি রেট বৃদ্ধিসহ অন্যান্য প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উচ্চ মূল্যস্ফীতি স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সমর্থ্য হয়েছে; কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক পলিসি রেট বাড়ালেও ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার ৯ শতাংশে নির্ধারণ করে রাখার ফলে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমার পরিবর্তে আরো বাড়তে থাকে। সেই প্রবণতা এখনো বিদ্যমান রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক কাদের পরামর্শে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ নির্ধারণ করেছিল তা অনুসন্ধান করে দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা প্রয়োজন।
মূল্যস্ফীতির অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার কারণে অর্থনীতিতে কিভাবে প্রভাব ফেলে তা নিয়ে অর্থনীতিবিদরা আলোচনা করলেও দারিদ্র্য পরিস্থিতির ওপর উচ্চ মূল্যস্ফীতি কেমন প্রভাব ফেলে তা নিয়ে খুব একটা আলোচনা হয় না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সীমিত এবং নির্ধারিত আয়ের মানুষগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সাধারণ মানুষের আয় যেভাবে বাড়ছে মূল্যস্ফীতির হার তার চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা এবং অর্থ ব্যয়ের সামর্থ্য ক্রমেই কমে যাচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট’ (র্যাপিড) সম্প্রতি তাদের এক গবেষণা প্রতিবেদনে দেখিয়েছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতি দারিদ্র্য পরিস্থিতিতে কীভাবে প্রভাব ফেলে। তাদের গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, গত দুই বছরে অস্বাভাবিক উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান থাকার কারণে ৭৮ লাখ মানুষ নতুন করে দারিদ্যসীমার নিচে নেমে গেছে। এর মধ্যে ৩৮ লাখ মানুষ অতিদরিদ্র শ্রেণিতে নেমে গেছে। এ ছাড়া আরও ৯৮ লাখ ৩০ হাজার মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যাবার ঝুঁকিতে রয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি আগামীতে নিয়ন্ত্রণে আনা না গেলে এই মানুষগুলোও দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে যেতে পারে। অন্য একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, করোনাকালে ৩ কোটি ৪০ লাখ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গিয়েছিল। তাদের মধ্যে কতজন দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে তা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন।
বর্তমানে মূল্যস্ফীতির যে পরিসংখ্যান প্রদর্শন করা হচ্ছে তা যে পূর্ণাঙ্গ এবং সঠিক তা মনে করার কোনো কারণ নেই। পরিসংখ্যান ব্যুরো মূল্যস্ফীতির যে পরিসংখ্যান প্রকাশ করে বাজারে গেলে তার প্রতিফলন প্রত্যক্ষ করা যায় না। জ্বালানি তেলের মূল্যের ওঠানামা অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্যস্ফীতির ওপর নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করে থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে গত সরকারের আমলে সর্বশেষ জ্বালানি তেলের মূল্য ৪২ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। সেই সময় বলা হয়েছিল, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাস পেয়ে স্থানীয় বাজারেও জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করা হবে; কিন্তু সেই অঙ্গীকার রক্ষিত হয়নি। ক্রমবর্ধমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য জ্বালানি তেলের মূল্য হ্রাসকরণ অত্যন্ত জরুরি। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে অর্থ পাচার রোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
এ মুহূর্তে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য লিখেছিলেন,‘কবিতা তোমায় আজকে দিলাম ছুটি/ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।’ সাধারণ দরিদ্র মানুষ বিপ্লব বুঝে না তারা বুঝে দুবেলা অন্তত খাবার জোটে কি না। সাধারণ মানুষ যদি বাজারে গিয়ে সামর্থ্যের মধ্যে প্রয়োজনীয পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে না পারে তাহলে কোনো কিছুই তাদের শান্ত করতে পারবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাধারণ মানুষ সর্বময় ক্ষমতা দিয়েছে। সেই ক্ষমতা ব্যবহার করে যদি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে তাহলে জনগণের মানে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হওয়াটাই স্বাভাবিক।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে