আসন্ন মুদ্রানীতির সঙ্গে রাজস্বনীতির সমন্বয় করুন
দেশের মুদ্রানীতিতে বড় পরিবর্তন এনে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের জন্য সংকোচনমূলক নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেখানে ঋণের সুদের হার, রিজার্ভ সংকট, মুদ্রা সরবরাহ নীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এসব পদক্ষেপ এমন একসময়ে নিতে যাচ্ছে, যখন দেশে মূল্যস্ফীতি চরম আকার ধারণ করেছে।
দেশে টানা ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের আশপাশে। সাধারণত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হলো সুদের হার বাড়ানো; কিন্তু সেটি করেও অর্থাৎ সুদহার বাড়ানো হলেও মূল্যস্ফীতি লাগাম ছাড়াই রয়ে গেছে; যে কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ সিমাহীন কষ্টে আছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কাজ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রেখে মানুষকে স্বস্তিতে রাখা। প্রতি ছয় মাস পরপর মুদ্রানীতি ঘোষণার মাধ্যমে কাজটি করার চেষ্টা করে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। সে ধারাবাহিকতায় আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রথমার্ধের জন্য জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সাধারণত টাকার সরবরাহ বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে টাকার জোগান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে বাংলাদেশ ব্যাংক; কিন্তু এখন থেকে এ রকম মুদ্রা সরবরাহ নীতির বদলে সুদহারভিত্তিক নীতি নেয়া হবে। অর্থাৎ সুদের হার বাড়িয়ে বা কমিয়ে বাজারে মুদ্রার জোগান নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এ কারণে সংকট দীর্ঘমেয়াদি হয়েছে। তবে ব্যাংক ঋণের সুদহার ইতোমধ্যে ৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। তাই এখন নীতি সুদের হার বাড়িয়ে টাকাকে আরও দামি করে তোলা হতে পারে। এতে ঋণের সুদের হার আরও বাড়বে।
এদিকে ব্যাংক খাতেও বিশৃঙ্খলা চলছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ছাপানো টাকায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে সংকটে পড়া কয়েকটি ব্যাংক। এসবও এখন মাথাব্যথার কারণ। সে অনুযায়ীই পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ হলো একই সঙ্গে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে এগিয়ে নেয়া। এ ক্ষেত্রে আমরা মনে করি, বাংলাদেশ ব্যাংকের কিছু সীমাবদ্ধতার কারণে কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে মুদ্রানীতিটি প্রণয়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এ দেশে আরেকটি সমস্যা। প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ অনেক বেশি করা হয়েছে। রাজস্বনীতি হয়েছে সম্প্রসারণমূলক আর মুদ্রানীতিকে করা হয়েছে সংকোচনমূলক। তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে সংশ্লিষ্টদের এই দুই নীতি একই মুখী করতে হবে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে