রাজনৈতিক চাপের মুখে হলেও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে অর্থনৈতিক সংস্কার করতে হবে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পরবর্তী ৪ দিন কার্যত দেশ ছিল সরকারবিহীন। এই সময় এক শ্রেণির দুষ্কৃতকারী বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। এতে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। সেনাপ্রধান তার ভাষণে বলেছেন, প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু বিচার হবে। দেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমরাও চাই প্রতিটি হত্যাকাণ্ড এবং রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ধ্বংসের জন্য কারা দায়ী তা নিরূপণ করে দোষিদের আইনের আওতায় আনা হোক। কোনোভাবেই যাতে দুষ্কৃতকারীরা রেহাই না পায় তা নিশ্চিত করতে হবে। একই সঙ্গে এটাও মনে রাখতে হবে, কোনোভাবেই যেন নিরপরাধ কোনো ব্যক্তি শাস্তি না পায় বা হয়রানির শিকার না হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার ৪ দিন পর অনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে। আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন অর্থনীতিবিদ ও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে ১৭ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৮ আগস্ট রাতে শপথ গ্রহণ করেছে। আশা করা হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার খুব দ্রুতই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে পারেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবার আগে আর্থিক কার্যক্রমে গতি ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। আন্দোলনকালে দেশের উৎপাদন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে স্থবির হয়ে পড়েছিল। ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ থাকায় বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছিল।
সম্প্রতি আমরা যে শিক্ষার্থী আন্দোলন প্রত্যক্ষ করলাম তা নানা কারণেই বিশেষভাবে উল্লেখের দাবি রাখে। এবারের শিক্ষার্থী আন্দোলন বেশ দীর্ঘস্থায়ী হয়। ১ জুলাই থেকে আন্দোলন শুরু হয় এবং ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের মধ্য দিয়ে আন্দোলন শেষ হয়। তবে এখনো আন্দোলনকারীরা তাদের পছন্দ মতো সরকার গঠনের জন্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সেনাপ্রধান জাতির উদ্দেশে দেয়া তার ভাষণে আগামীতে সব দল মতের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের কথা বলেছেন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নতুন সরকারে নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। কোটা সংস্কার আন্দোলনের হয়তো এভাবেই সমাপ্তি হবে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের কারণে ব্যাপক প্রাণহানি হওয়া ছাড়াও দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনোভাবেই উপেক্ষা করা যায় না। কারও কারও মতে, আন্দোলনের সময় দেশের উৎপাদন এবং অন্যান্য খাতে যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার পরিমাণ ১ লাখ কোটি টাকা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা; কিন্তু এই হিসাব পূর্ণাঙ্গ হিসাব নয়। সরকারিভাবে এখনো ক্ষয়ক্ষতির কোনো পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়নি। তবে ক্ষতির পরিমাণ যে ব্যাপক এতে কোনো সন্দেহ নেই। আন্দোলনের কারণে দেশের উৎপাদন ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়া ছাড়াও অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করা হয়েছে। এমনকি অগ্নিকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, মেট্রোরেল, সেতুভবন ইত্যাদি রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়েছে। এমনকি থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশ সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে। এগুলো মেরামত করে ব্যবহার উপযোগী করতে বেশ কিছুটা সময়ের প্রয়োজন হবে।
আন্দোলন চলাকালে পরিবহন এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকার কারণে পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম বিঘ্নিত হয়েছে। রপ্তানিকারকরা বিদেশি বায়ারদের অর্ডার সঠিক সময়ে প্রেরণ করতে পারেনি। এই অবস্থায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে অর্ডার বাতিল হয়ে যেতে পারে। আমদানি পণ্য খালাসকরণ এবং গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হয়। এতে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার কারণে স্থানীয় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনীতিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি একটি জটিল সমস্যায় পরিণত হয়েছে। গত প্রায় দুই বছর ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রবণতা মোকাবিলা করে চলেছে। বিদ্যমান মূল্যস্ফীতির গড় হার সাড়ে ৯ শতাংশ। কোনোভাবেই মূল্যস্ফীতিকে কমিয়ে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনা যাচ্ছে না। চলতি অর্থবছরের জন্য বাস্তবায়নাধীন বাজেটে মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য যে মুদ্রানীতি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে সেখানেও মূল্যস্ফীতির হার সাড়ে ৬ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে; কিন্তু শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে। ফলে মূল্যস্ফীতি হ্রাসের যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তা আবারো বিঘ্নিত হবে। জুলাই মাসের মূল্যস্ফীতির পরিসংখ্যান পাওয়া গেলে বুঝা যাবে তা কোন্ দিকে যাচ্ছে।
ইতিমধ্যে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতির বিবেচনায় লাল তালিকাভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্যমূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটের উপরে ছিল। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, যা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। অর্থবছরের কোনো সময়ই মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। করোনা উত্তর ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হলে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পায়। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পলিসি রেট বৃদ্ধিসহ নানা কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনতে সমর্থ হয়। বর্তমানে দেশটির মূল্যস্ফীতির হার ৩ দশমিক ৪ শতাংশে নেমে এসেছে। এমন কি শ্রীলঙ্কার মতো সমস্যাগ্রস্ত দেশও তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে ২০২২ সালে সৃষ্ট ৭৯ দশমিক ৮০ শতাংশ থেকে ২ দশমিক ৪০ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। শিক্ষার্থী আন্দোলনের কারণে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তাতে আগামীতে মূল্যস্ফীতি আরও বেড়ে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এই মুহূর্তে সর্বাধিক বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে মূল্যস্ফীতি কীভাবে দ্রুত কমিয়ে আনা যায় তার ব্যবস্থা করা। মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় সাধারণ মানুষ বড়ই বিপর্যয়ের মধ্যে রয়েছে।
আন্দোলনের কারণে পণ্য রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আহরণের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই অবস্থায় পণ্য রপ্তানি কার্যক্রমে যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছিল কমে দূরীকরণের উদ্যোগ নিতে হবে। রেমিট্যান্স বাড়ানোর জন্য প্রবাসী বাংলাদেশিদের যাতে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স দেশে প্রেরণ করে সে জন্য তাদের উদ্বুদ্ধ করতে হবে। সাম্প্রতিক সময়ে হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স দেশে আসার প্রবণতা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অনেকেই অভিমত প্রকাশ করছেন। এই বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। অর্থনীতির একটি বড় সমস্যা হচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্ফীতি ক্রমশ হ্রাস পাওয়া। গত এক বছওে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের পরিমাণ প্রায় ১ হাজার কোটি মার্কিন ডলার কমেছে। আইএমএফের হিসাব পদ্ধতি মোতাবেক জুলাই মাস শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৮ কোটি মার্কিন ডলার। এক বছর আগে এটা ছিল ৩ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ বাড়াতে হলে রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। সম্প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে নির্ধারণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগে যেখানে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ১১০ টাকা এখন তা ১১৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির ফলে আমদানি ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে রিজার্ভের ওপর চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীতে ধীরে ধীরে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করতে হবে।
দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের দেশের বিনিয়োগ এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের পরিবেশ মোটেও উন্নত নয়। বিদেশি বিনিয়োগকারিরা কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সেই দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নেয়। তারপরই বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন; কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের পরিবেশ মোটেও সন্তোষজনক নয়। বিশ্বব্যাংকের উদ্যোগে প্রকাশিত সর্বশেষ ‘ইজ অব ডুয়িং বিজনেস’ সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। এমন বিনিয়োগ পরিবেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা সাধারত বিনিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ করে না। সম্প্রতি শিক্ষার্থী আন্দোলনের সময় যে সহিংসতা হয়েছে তা আন্তর্জাতিকভাবে আমাদের দেশের বিনিয়োগ পরিবেশ সম্পর্কে ভুল বার্তা দেবে। আগামীতে যে কোনো মূল্যেই হোক বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত এবং আকর্ষণীয় করতে হবে। অন্যথায় কাঙ্খিত মাত্রায় বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করা যাবে না।
চলতি অর্থ বছরের জাতীয় বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার জিডিপির ২৭ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবার তেমন কোনো সম্ভাবনা দেখছি না। মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) সহযোগিতায় বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ তৃতীয়বারের মতো বিজনেস ক্লাইমেট ইনডেক্স জরিপ পরিচালনা করে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশে সম্পর্কে যে তথ্য সংগ্রহ করেছে প্রসঙ্গক্রমে এখানে তা উল্লেখ করা যেতে পারে। সংস্থাটি তাদের গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যবসায়ের পরিবেশের অবনতি ঘটেছে। সামগ্রিকভাবে ২০২৩ অর্থবছরে দেশের ব্যবসায়-বাণিজ্যের পরিবেশের সূচকের ১০০ স্কোরের মধ্যে অর্জন করে ৫৮ দশমিক ৭৫, যা আগের বছর ছিল ৬১ দশমিক ৯৫। ব্যবসায়-বাণিজ্য সহজীকরণ সূচকের এই নিম্নমুখী প্রবণতা দেশের অর্থনীতির জন্য একটি বিশেষ বার্তা দিচ্ছে। ব্যবসায়-বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা চালানো হোন না কেনো বাস্তবে অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছে না বরং দিন দিন পরিস্থিরি অবনতি ঘটছে।
দেশের পুঁজিবাজার ভালো চলছে না। এদিকে দৃষ্টি দেয়া দরকার। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো যাতে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় তার উদ্যোগ নিতে হবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে দ্রুত পুঁজি বাজারে নিয়ে আসতে হবে। আমি সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা থাকাকালে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানকে পুঁজি বাজারে তালিকাভুক্ত করেছিলাম। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠানকে পুঁজি বাজারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছিলাম।
বাংলাদেশে রাজস্ব আদায়ের হার খুবই কম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও সবচেয়ে কম। বিশ্বে যেসব দেশের ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও সবচেয়ে বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। আমাদের যে কোনো মূল্যেই হোক ট্যাক্স আদায় বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ জন্য উচ্চ হারে ট্যাক্স আরোপের পরিবর্তে তুলনামূলক কম হারে ট্যাক্স ধার্য করা যেতে পারে। একই সঙ্গে ট্যাক্স নেটওয়ার্ক বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া ধার্যকৃত ট্যাক্স যাতে সঠিকভাবে স্বচ্ছতার সঙ্গে আদায় হয় তা নিশ্চিত করতে হবে।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্থায়িত্বের ওপর কিছু বিষয় নির্ভর করবে। যদি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বল্প মেয়াদি হয় তাহলে তারা নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ব্যস্ত থাকবেন। চাইলেই অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য খাতে সংস্কার কার্যক্রম সাধন করতে পারবেন না। আর যদি দীর্ঘমেয়াদি হয় তাহলে তাই চাইলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবেন। রাজনৈতিক সরকারের পক্ষে অনেক সময় সংস্কার কার্যক্রম সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না; কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যেহেতু কোনো রাজনৈতিক চাপের মুখে থাকবেন না তাই তারা চাইলে অর্থনৈতিক এবং অন্যান্য খাতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে পারবেন।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা।
অনুলিখন: এম এ খালেক
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে