Views Bangladesh Logo

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম ডিসি সম্মেলনে আসছে নতুন দিকনির্দেশনা

Manik Miazee

মানিক মিয়াজী

তুন প্রশাসনিক বাস্তবতায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রথম জেলা প্রশাসক (ডিসি) সম্মেলন। সম্মেলনের প্রথম দুদিনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে মতবিনিময়ে ডিসিদের দেয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা।

পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চলমান সম্মেলনের শেষ দিনে আসতে পারে বিশেষ কিছু নীতিগত সিদ্ধান্ত এবং আরও কিছু নতুন প্রশাসনিক দিকনির্দেশনাও, বলছেন বিশ্লেষকরা।

এসব আলোচনা ও দিকনির্দেশনা এবং বর্তমান প্রশাসনের লক্ষ্য, স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, সুশাসন নিশ্চিত এবং নতুন নীতিগত কাঠামো তৈরি।

তৃতীয় দিন মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, কৃষি মন্ত্রণালয়, আইন ও বিচার বিভাগ, লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক বিভাগ, প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনায় বসবেন জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনাররা।

পরের ধাপে পানিসম্পদ, পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, সংস্কৃতি, পররাষ্ট্র, ধর্ম ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ছাড়াও নির্বাচন কমিশন ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সংক্রান্ত বিষয়াদি সম্পর্কেও আলোচনা করা হবে। ফিডব্যাক অধিবেশন ও সম্মেলনের মূল্যায়ন শেষে হবে সমাপনী অধিবেশন।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ না হওয়ার প্রভাব

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, রেওয়াজ থাকলেও এবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ডিসি ও বিভাগীয় কমিশনারদের সৌজন্য সাক্ষাতের সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের সাক্ষাৎ পাচ্ছেন না তারা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যতিক্রমী এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিক পুনর্গঠনের অংশ বা অন্তর্বর্তী সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্তের প্রতিফলন হতে পারে। ফলে এবারের সম্মেলন মূলত কার্যকরী আলোচনা ও নীতিগত নির্দেশনার ওপর বেশি গুরুত্ব দেবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা জোরদার

নতুন সরকারের জন্য আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গণআন্দোলনের প্রেক্ষাপটে ডিসিদের দায়িত্ব আরও বেড়েছে। ফলে সম্মেলনে মাঠ প্রশাসনকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কৌশলগত নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। বিশেষ করে রাজনৈতিক কর্মসূচি, জনসমাবেশ এবং আন্দোলন মোকাবিলায় প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশনা আসতে পারে।

দুর্নীতি দমন ও প্রশাসনিক জবাবদিহিতা বৃদ্ধি


স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক প্রশাসন গঠনে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ আসতে পারে। মাঠপর্যায়ে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতেও বলা হতে পারে ডিসিদের। দুদকের কার্যক্রমকে আরও কার্যকর করতে প্রশাসনের সমন্বয় বাড়ানোর দিকনির্দেশনাও দেয়া হতে পারে।

অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ

দেশের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার মনিটরিং এবং দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে মাঠ প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কৃষকদের সহায়তা বাড়ানো এবং ভর্তুকির যথাযথ বাস্তবায়ন তদারকির নির্দেশ আসতে পারে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ সংরক্ষণ

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় জেলা পর্যায়ে প্রস্তুতি আরও জোরদারের কথা বলা হতে পারে। বন্যা, খরা, নদীভাঙন ও অন্যান্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় স্থানীয় প্রশাসনকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়া হতে পারে। বন উজাড় রোধ, জলাশয় সংরক্ষণ এবং পরিবেশবান্ধব উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে নতুন পরিকল্পনায়ও গুরুত্ব দেয়া হতে পারে।

ডিজিটালাইজেশন ও সেবার সহজীকরণ

সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি সেবাগুলো ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে আসার প্রবণতা বেড়েছে। এবারের সম্মেলনে ভূমি ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায়িক অনুমোদন এবং নাগরিক সেবা ডিজিটালাইজেশনের মাধ্যমে আরও সহজ করার নির্দেশনা আসতে পারে। ডিসিদের এই প্রক্রিয়াগুলোকে আরও কার্যকর করার নির্দেশও দেয়া হতে পারে।

প্রবাসী কর্মসংস্থান ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের উদ্যোগ


দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এবারের সম্মেলনে অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ করা, বৈধ কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং দালালচক্র প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশনা দেয়া হতে পারে। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করে এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের দিকনির্দেশনা আসতে পারে।

নির্বাচনে প্রশাসনের নিরপেক্ষতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে জাতীয় ছাড়াও স্থানীয় সরকারের নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনায় মাঠ প্রশাসনকে নির্বাচনী কার্যক্রমে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেয়া হতে পারে।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ