Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

ইন্টারনেট প্যাকেজের হিসেব হোক সরল অংকে

Rased Mehedi

রাশেদ মেহেদী

রবিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৩

আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যেখানে ইন্টারনেট মানুষের প্রতিদিনের জীবনে অপরিহার্য হয়ে উঠেছে। আমি দেখেছি, রাস্তার মোড়ে যে চায়ের দোকানদার তিনিও তার স্মার্ট ফোনে ইউটিউব কিংবা টিকটক ভিডিও দেখছেন অর্থাৎ ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন।

বিপুল আয়ের হিসেব রাখতে সদা ব্যস্ত ধনীরা সংসারে কোথায় কি খরচ হচ্ছে, তা নিয়ে চিন্তা করার সময় পান না। কিন্তু এই উচ্চ মূল্যের বাজারে তিন বেলা খাবার জোটাতে যাদের প্রতিনিয়ত কপালে ভাঁজ পড়ে, সেই স্বল্প আয়ের মানুষকে হিসেব রাখতে হয়। কোথায় কোন খাতে কত টাকা বরাদ্দ রাখতে হবে, সেই হিসেব মাসের শুরুতেই করতে হয়। এই মানুষগুলোর হিসেবের খাতায় যখন ইন্টারনেটের জন্য বরাদ্দ থাকছে, তখন বোঝা যায় যে তারা শখ করে ইন্টারনেটের জন্য ব্যয় করছেন না। তাদের নিশ্চয় কোনো প্রয়োজন আছে ইন্টারনেট ব্যবহার ঘিরে। সেটা বিদেশে থাকা স্বজনের সঙ্গে মেসেজিং অ্যাপে মেসেজ আদান-প্রদান কিংবা কল করা হোক কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে এক মুহূর্তের জন্য বিনোদন খোঁজার চেষ্টাই হোক।

দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই স্বল্প আয়ের মানুষদেরই বাজারে নানা মারপ্যাঁচে প্রতিনিয়ত ঠকতে হয়। এই মানুষগুলোই সবচেয়ে বেশী পরোক্ষ কর দেয়। বাজারে যেকোনো ধরনের পণ্য কিনতে গেলেই ভ্যাট দিতে হয়। মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গেলেও ২০২২ সালের পহেলা জুলাই থেকে ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দিতে হচ্ছে।

২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ভ্যাটের হার ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছিল। কোভিড-১৯ মহামারির পর ২০২২ সালে এসে বদলে যায় চিত্র। ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে বেশ কিছু জটিল শর্ত আরোপ করা হয়, যার ফলে মোবাইল অপারেটররা ৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায় করলে ব্যান্ডউইথ কিনতে স্তরে স্তরে যে ভ্যাট দেয় সেটা আর রেয়াত পাওয়ার সুযোগ থাকে না। অতএব অপারেটররা রেয়াত পাওয়ার সুবিধার ভেতরে থাকতে আইনের জটিল শর্তের পরিবর্তে ভ্যাটের সরল অংক, অর্থাৎ ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট আদায়ের পথে চলে যায় ঘোষণা দিয়ে। কারণ ভ্যাট আইনের শর্ত অনুযায়ী ১৫ শতাংশের নীচে ভ্যাট আদায় করা হলে মোবাইল অপারেটররা সেই রেয়াত সুবিধা পাবেন না। অর্থাৎ মোবাইল অপারেটররা ভ্যাট আইন মানার পক্ষে সরল অংকের হিসেবটাই বেছে নিয়েছে। কিন্তু গ্রাহকদের জন্য ইন্টারনেট প্যাকেজ নির্ধারণের ক্ষেত্রে বেছে নিয়েছে জটিল অংক।

বিটিআরসির তথ্যমতে, মোবাইল অপারেটরদের রয়েছে ৯৫ ধরনের প্যাকেজ। মোবাইল অপারেটররা বলেন, যত বেশি প্যাকেজ, তত বেশি অপশন বাছাই করার সুযোগ। কিন্তু বাস্তবে ৯৫টি প্যাকেজ মানে প্রায় শত দরজার "মতিঝিলের গোলক ধাঁধায়" পড়ে যাওয়া! এর মধ্যে কোনটি ৩ দিনের, কোনটি ৭ দিনের, কোনটি ১৫ দিনের, কোনটি ৩০ দিনের সেটা খেয়াল রাখাও আরেক জটিল হিসেব।

এ ধরনের জটিলতায় পড়লে গ্রাহকরা ঠকেন। যেমন কোনো অপারেটরের ১১৮ টাকায় ১৪ জিবি ডাটার প্যাকেজ দেখে কেউ চট করে কিনে ফেললেন। তারপর দেখা গেল তিন দিনের মেয়াদের মধ্যে ৪ জিবি ব্যবহার করেছেন, এরপর সব শেষ। হয়তো তখন তিনি খেয়াল করলেন, প্রকৃতপক্ষে প্যাকেজটি তিন দিনের মেয়াদের ছিল এবং অব্যবহৃত ডাটা নতুন প্যাকেজে যুক্ত হওয়ারও সুযোগ নাই? আবার অন্য এক অপারেটরের ক্ষেত্রে ১ জিবি ইন্টারনেট ৯৭ টাকায় তিন দিনের মেয়াদ দেখে কিনলেন। তারপর ইউটিউবে পছন্দের একটা মিউজিক ভিডিও শেষ হওয়ার আগেই ডাটা নেই। ১০ মিনিটের মধ্যে এক জিবি ডাটা হাওয়া হতে দেখে দুঃখ পেলেও কিছু করার নেই। বরং জেদ চেপে যেতে পারে! ৯৭ টাকাই তো! নিলাম আরও এক জিবি! এভাবে তিন দিনের মেয়াদের প্যাকেজে গ্রাহকরা দিনের পর দিন ঠকেছেন। এ কারণেই মোবাইল অপারেটরদের জন্য তিন দিনের প্যাকেজ ছিল সোনার খনি।

বিটিআরসি যে গবেষণা পরে করেছে, অপারেটররা সেটা করে রেখেছে আরও কয়েক বছর আগে। ওই গবেষণায় দেখা যায়, তিন দিনের প্যাকেজ ব্যবহারকারী বেশি। বেশি তো হবেই কারণ ওই যে কম টাকায় বেশি ডাটা পাওয়ার গোলক ধাঁধায় পড়ে যায় কম আয়ের মানুষ এবং শিক্ষার্থীরা। তারা ঠকে এবং কিছু মনে করে না। কারণ ঠকার অংকটা আপাত দৃষ্টিতে খুব বেশী নয়। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষ ঠকে বলেই তিন দিনের প্যাকেজে মোবাইল অপারেটরদের ব্যবসা ছিল রমরমা।

ব্যবসাটা কেমন রমররমা ছিল সেটাও একটু ব্যাখা করলে বোঝা যাবে। একটা মোবাইল ফোন অপারেটরের তিন দিনের প্যাকেজে এক জিবি ডাটার দাম ৯৭ টাকা। একই অপারেটর ৩০ দিনের মেয়াদে ২২ জিবি ডাটার প্যাকেজ দিচ্ছে ৪৯৯ টাকায়। সেখানে প্রতি জিবি ডাটার দাম পড়ছে ২২ টাকা। এখন যে স্বল্প আয়ের মানুষ ৯৭ টাকায় ১ জিবি কিনছেন, তিনি যদি মাসে পাঁচবারও প্যাকেজ কেনেন তাহলে তাকে ৫ জিবি ডাটার জন্য ৪৮৫ টাকা দিতে হবে, যা প্রায় ২২ জিবির ৩০ দিনের প্যাকেজের সমান!

অন্য অপারেটর বলতে পারে, ভাই আমি তো তিন দিনের মেয়াদে ১৪ জিবি ডাটা দিচ্ছি মাত্র ১১৮ টাকায়। এখানে তো প্রতি জিবি মাত্র ৮ টাকা পড়ছে। গ্রাহক স্বার্থ তো রক্ষা হচ্ছে! কিন্তু এখানেও যুক্তি আছে। কারণ ১৪ জিবি বা ১৪ হাজার এমবিপিএস ডাটা ৩ দিনে ব্যবহার করে শেষ করা অতটা সহজ নয়। আবার যদি তিন দিনে কেউ শেষ করতে চায়, তাকে অনেক বেশি ব্যবহার করতে হবে। উভয় ক্ষেত্রেই অপারেটরের লাভ। কারণ তিন দিনে ডাটা অব্যবহৃত থাকলে সেটা নতুন প্যাকেজে যোগ করার ঝামেলা নেই। গ্রাহক যদি ১৪ জিবির জায়গায় ৪ জিবি ব্যবহার করে, অপারেটরকে দায়ী করার তো কোনো সুযোগই নেই! আবার যদি বেশি ব্যবহার করে, তা হলে তিন দিনের দিনেও শেষ হলে এই ব্যবহারকারী আবারও একই প্যাকেজ নতুন করে কিনবে। এই ব্যবহারকারী যদি মাসে ১০ বার প্যাকেজ কেনে তাহলে ১ হাজার ১৮০ টাকা রাজস্ব আয় হয়ে গেল। অথচ ৩০ দিনের জন্য ১৪০ জিবি ডাটার প্যাকেজ দিয়ে তার দাম ১ হাজার ১৮০ টাকা ধরা হলে সেটা বিক্রি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি!

অবশেষে আজ ১৫ অক্টোবর (২০২৩) থেকে সেই জটিলতার কিছুটা হলেও অবসান হচ্ছে। কারণ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি শেষ পর্যন্ত ৩ ও ১৫ দিনের মেয়াদের প্যাকেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ থেকে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হচ্ছে। গ্রাহক ঠকানো বন্ধে বিটিআরসির এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাই। তবে মোবাইল অপারেটররা বসে নাই। কারণ তিন দিনের প্যাকেজ থেকে দ্রুত মুনাফা তোলার ব্যবসাটা হাতছাড়া হওয়া তারা সহজে মেনে নেবে, তা মনে হয় না। নানাভাবে তারা বিটিআরসির সিদ্ধান্ত গ্রাহকের জন্য ভালো হয়নি, সেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করতে পারে।

এরই মধ্যে কেউ কেউ আওয়াজ দিচ্ছেন, তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ তুলে দেওয়া হলে বাজার থেকে কি মিনিপ্যাক শ্যাম্পুও তুলে দেওয়া হবে? দারুন প্রশ্ন। একেবারে সৈয়দ ওয়ালিউল্লহার ‘লালসালু’ উপন্যাসের সেই আব্দুল মজিদের সেই প্রশ্নের মতোই, ‘ওই মিয়া তোর দাড়ি কই?’

উপন্যাসে গ্রামের এক যুবক পীর মজিদের দরবারে গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য যুক্তি তুলে ধরছিল। তখনই সুচতুর মজিদ তাকে থামিয়ে দিলে প্রশ্ন করেছিল, ‘ওই মিয়া তোর দাড়ি কই?’ উপস্থিত জনতার কাছে মুহূর্তেই গ্রামে স্কুল প্রতিষ্ঠার চেয়ে যুবকের দাড়ি না থাকাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত হয়েছিল! এখানেও তাই হতে পারে। মোবাইল ইন্টারনেটে তিন দিনের প্যাকেজ বন্ধ করার কারণে বাজারে মিনিপ্যাক শ্যাম্পু তুলে দেওয়ার প্যানিক ছড়িয়ে দেওয়া হতে পারে। তখন মিনিপ্যাক শ্যাম্পু বিক্রেতা এবং ক্রেতারাও তিন দিনের ইন্টারনেট প্যাকেজ বন্ধের সিদ্ধান্ত বাতিলের সমর্থনে মানববন্ধনে জড়ো হতে পারেন! তাহলে তো বিটিআরসির চাপ সামলানো একটু কঠিনই হতে পারে!

আসলে ইন্টারনেট প্যাকেজ নিয়ে এত জটিল অংকের কিছু নেই। তারের মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রে তো এক দেশ এক রেট বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এর সুফলও মানুষ পাচ্ছে। যদিও বৈধ ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো (আইএসপিবি) বলছে, এর জন্য কিছুটা হলেও ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ছে। কারণ ব্যান্ডউইথ পরিবহনের জন্য তার যে ব্যয় সেখানে এখন পর্যন্ত এক দেশ এক রেট কার্যকরভাবে চালু হয়নি। তারপরও আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো সেটা মেনে নিয়েছে।

দেশীয় এই ব্যবসায়ীরা মোবাইল অপারেটরদের মত, বিদেশি বিপুল বিনিয়োগের শক্তিতে প্রতাপশালী নয় বরং খোদ রাজধানীতেও বৈধ আইএসপিগুলোকে মার খেতে হয় পাড়ার রাজনৈতিক গুন্ডা-মাস্তানের কাছে। গুন্ডরা রাস্তার উপরে প্রকাশ্যে বৈধ  আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলোর সংযোগ তার কেটে স্তুপ করে রাখে, অন্যায়ভাবে ব্যবসায় ভাগ বসাতে। সব কর্তৃপক্ষ চোখ বন্ধ করে রাখে!

ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর  সংগঠন আইএসপিএবি’র  নেতারা দিনের পর দিন বিবৃতি দেন, কোনো লাভ হয় না। কারণ আইএসপি’র সংযোগ নেওয়া গ্রাহকদের বিকল্প আছে। তারা মোবাইল ইন্টারনেট বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করতে পারে। কোথাও কোথাও টিভি সংযোগের কেবল অপারেটররাও ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে। এখানেও আরেক ধরনের জটিলতা। যদি দিতে হয় ট্রিপল প্লে সার্ভিসের লাইসেন্স দিলেই হয়। একজন অপারেটর একই সঙ্গে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, কেবল টিভি সংযোগ এবং আইপিটিএসপি সেবা দিতে পারবে। এই ব্যবস্থা চালু হলে এখন পাড়ায় পাড়ায় কেবল টিভি আর ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে যে সংঘাত, গ্রাহক ভোগান্তি তার অবসান হবে। এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করি।

মোবাইল অপারেটদের ব্যবসায় সেই জটিলতা নেই। পাড়ায় পাড়ায় মাস্তানের কবলে তাদের পড়তে হয় না। পড়ার সুযোগও নাই। মোবাইল অপারেটরদের সমস্যায় পড়তে হয় সাইট বসানো নিয়ে। বিটিএস টাওয়ার বসাতে গেলে বিকিরণের ভূতের ভয়ে থাকা কিছু মানুষ তাদের বাধা দেন। কারণ ভূতের ভয়ের মতো ভয়ে থাকা এই মানুষগুলো বিচ্ছিন্নভাবে শুনে শুনে শিক্ষিত। জেনে, বুঝে, পড়ে শিক্ষিত না হওয়ার কারণে তারা বিকিরণ নিয়ে তটস্থ থাকেন। আর এ কারণে সাইট ঠিকঠাকমতো না বসানোর কারণে বিভিন্ন স্থানে কাঙ্খিত নেটওয়ার্ক সেবা নিশ্চিত হচ্ছে না।

অবশ্য নেটওয়ার্ক দুর্বল হলেও মোবাইল অপারটরদের তেমন সমস্যা নেই। বরং গ্রাহকের সমস্যা বেশি। কারণ দুর্বল নেটওয়ার্কে কল ড্রপই হোক আর ইন্টারনেট ব্যবহার না হোক মোবাইল অপারেটরকে তো প্যাকেজ মূল্য আগেই পরিশোধ করা আছে! এ কারণেই বলছি, মোবাইল ইন্টারনেট প্যাকেজটা সরল অংকে হওয়াটা জরুরি। প্রথমেই প্যাকেজের হিসেব হওয়া দরকার, মোবাইল অপারেটররা ঠিক কত জিবিপিএস ব্যান্ডউইথ ব্যবহারের বিপরীতে কি পরিমাণ ডাটা ভলিউম তৈরি করছে সেখান থেকে। একটা গাণিতিক ফর্মূলা নিশ্চয় আছে। সেটা নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিরও জানার কথা। এই হিসেবে ১ জিবিপিএস ব্যান্ডউইথের মূল্য এবং অন্যান্য পরিচালন ব্যয়ের বিপরীতে প্রকৃতপক্ষে কত টাকার ডাটা বিক্রি করছে, সেটা বের করলেই তিন দিনের মেয়াদে ১ জিবি ডাটার দাম ৯৭ টাকা নির্ধারণ কতটা যুক্তিযুক্ত তা বোঝা যাবে।

প্রকৃতপক্ষে মোবাইল অপারেটররা ব্যান্ডউইথ কেনে মাসিক হিসেবে। এই ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে যে ডাটা ভলিউম তৈরি হয়, তার বিক্রির হিসাবও হওয়া উচিত মাসের ভিত্তিতেই। আমি তিন দিনের প্যাকেজ অবশ্যই সমর্থন করব, যদি সেক্ষেত্রে ডাটা ভলিউম নির্দিষ্ট না হয়ে আনলিমিটেড হয়। আর দামটা নির্ধারিত হয় প্রতিদিনের আনলিমিটেড ডাটা ব্যবহারের জন্য নির্ধারিত মূল্য হারের ভিত্তিতে।

মোবাইল ইন্টারনেটের ক্ষেত্রে এক জিবিপিএস (১০০০ এমবিপিএস) ব্যান্ডউইথ ব্যবহারে ৬০ সেকেন্ডে, ৬০ মিনিট ২৪ ঘন্টা এবং ৩০ দিনের গুনফলে কি পরিমাণ ডাটা ভলিউম তৈরি হচ্ছে, তার হিসেব করে এক জিবি ডাটা প্যাকেজর একটা মূল্য নির্ধারণ করতে পারে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। সেই এক জিবি ডাটার মূল্য হিসেবেই সব প্যাকেজ নির্ধারিত হবে। এই নির্ধারিত হারে আমার কেনা ডাটা আমি কয় দিনে শেষ করলাম, সেটার উপর অপারেটরের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। ৩ দিন, ৭ দিন, ১৫ দিন, ৩০ দিন মেয়াদ থাকবে না। আর যদি মেয়াদ নির্দিষ্ট করা হয় তাহলে ১ জিবি, ৩ জিবি, ৫ জিবি, ১০ জিবি, ১০০ জিবি এ ধরনের ভলিউম নির্দিষ্ট থাকবে না। ডাটা হবে আনলিমিটেড। সেক্ষেত্র বিটিআরসি একদিনের জন্য আনলিমিটেড ডাটা ব্যবহারের মূল্য নির্ধারণ করে দেবে। সেই হিসেবে আমি যে কয় দিনের মেয়াদে আনলিমিটেড ডাটা কিনতে চাই, কিনবো।

এখন মোবাইল অপারেটরদের যে প্যাকেজ ব্যবস্থা আছে, তা ভীষণ জটিল। এ ধরনের জটিল প্যাকেজ ব্যবস্থায় স্বল্প আয়ের ও সাধারণ গ্রাহকদের প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্তত তিন দিনের প্যাকেজ তুলে দিয়ে বিদ্যমান জটিল প্যাকেজের সমীকরণকে সরল করার যে উদ্যেগ নিয়েছে তার জন্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসিকে ধন্যবাদ। তবে হয় প্রতি ১ জিবি ডাটার মূল্যহার কিংবা ১ দিনের জন্য আনলিমিটেড ডাটা ব্যবহারের হার নির্ধারণ করে দিলে সেটাই হবে  সাধারণ গ্রাহক এবং অপারেটর উভয়ের স্বার্থ রক্ষার সবচেয়ে কার্যকর হিসাব। আর সবচেয়ে জরুরি হচ্ছে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার করা। স্মার্ট বাংলাদেশের স্বপ্নের পথে থাকা বাংলাদেশের মানুষের ইন্টারনেট ব্যবহারের উপর ১৫ শতাংশ ভ্যাট নিতান্তই উপহাস।


লেখক: রাশেদ মেহেদী, সাংবাদিক

 

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ