Views Bangladesh Logo

বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন ব্যতীত শুধু বিনিয়োগ সম্মেলন করে লাভ হবে না

M A  Khaleque

এম এ খালেক

ম্প্রতি রাজধানীতে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৪ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এই বিনিয়োগ সম্মেলন নানা কারণেই ছিল বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিডা) উদ্যোগে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়, সম্মেলনে আগত বিদেশি বিনিয়োগকারীরা মোট ৩ হাজার ১০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে পূর্ব থেকে পাইপলাইনে থাকা কিছু বিনিয়োগ প্রস্তাবও রয়েছে। এটা অবশ্যই অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বিশ্বব্যাপী যখন অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে এমন এক পরিস্থিতিতে ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া সত্যি আশা জাগানিয়া একটি সংবাদ। অন্য একটি সূত্র থেকে জানা গেছে, খুব শিগগিরই চীনের একজন মন্ত্রী বাংলাদেশ সফর করবেন। তার এই সফরকালে ২০০ জন বিনিয়োগকারীও বাংলাদেশে আসবেন। প্রাপ্ত সংবাদগুলো যে কোনো বিচারেই উল্লেখের দাবি রাখে।

বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাকে ধরে রাখার জন্য এই মুহূর্তে কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বিদেশি সরাসরি বিনিয়োগ আহরণ করা খুবই জরুরি। পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ ব্যতীত কোনো গত্যন্তর নেই। স্থানীয় উদ্যোক্তাগণ সব সময়ই বিনিয়োগযোগ্য তহবিলের সংকটে ভুগে থাকেন। তারা চাইলেও ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা পান না। শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠা এবং রিজার্ভ বিন্ড আপ করার জন্য বিদেশি বিনিয়োগ এবং রেমিট্যান্স বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। বিদেশি বিনিয়োগ সাধারণত দুভাবে আহরিত হতে পারে।

প্রথমত, সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ এবং দ্বিতীয়ত, যৌথ উদ্যোগে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ। যৌথ উদ্যোগে বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে উপযুক্ত স্থানীয় উদ্যোক্তা খুঁজে পাওয়া অনেক সময়ই কঠিন হয়ে পড়ে। কাজেই আগামীতে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের প্রতিই বেশি জোর দিতে হবে। বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সম্মেলন চলাকালে যেসব বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে সেগুলো যাতে বাস্তব বিনিয়োগে পরিণত করা যায় সে ব্যাপারে সংস্থাটি জোর প্রচেষ্টা চালাবে। ইতিপূর্বে দেখা গেছে, বিভিন্ন সময় যেসব বিদেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া গেছে পরবর্তীতে তার অধিকাংশই অবাস্তবায়িত থেকে গেছে। বিনিয়োগ প্রস্তাব পাওয়া এবং তা বাস্তবায়ন করা সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। কাজেই বিডা যদি নিয়মিত বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে প্রাপ্ত বিনিয়োগ প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করতে পারে তাহলে সেটা হবে খুবই আশাব্যঞ্জক একটি উদ্যোগ।

বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ একেবারেই তলানিতে অবস্থান করছে। বিশেষ করে ইনভেস্টমেন্ট জিডিপি রেশিও অত্যন্ত নগণ্য। ২০২১-২২, ২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের মোট জিডিপির পরিমাণ বা আকার ছিল যথাক্রমে ৪৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ৪৫২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও ৪৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। একই সময়ে জিডিপি-ফরেন ইনভেস্টমেন্ট রেশিও ছিল গড়ে শূন্য দশমিক ৪ শতাংশ। জাতিসংঘের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংস্থা আঙ্কটাডের তথ্য মোতাবেক, ২০১৭ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সময় বাংলাদেশ প্রতি বছর গড়ে ২৯২ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করতে সক্ষম হয়েছে যা মোট জিডিপির শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিনিয়োগ বোর্ড বা বিডা প্রতি বছর যে বিদেশি বিনিয়োগের পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তা নিবন্ধিত বিনিয়োগ। আর আঙ্কটাড যে বিনিয়োগ পরিসংখ্যান প্রকাশ করে তা বাস্তব বিনিয়োগ যা ক্যাশ ট্যান্সফারের ভিত্তিতে প্রণীত হয়। বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের সম্ভাবনা নিয়ে আমরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করি ঠিকই; কিন্তু বাস্তাবে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ আসছে খুবই কম পরিমাণে।

দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে। আঙ্কটাডের তথ্য মোতাবেক, ২০২৩ সালে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ২ হাজার ৮১৬ কোটি মার্কিন ডলার। ভিয়েতনামে ১ হাজার ৮৫০ কোটি মার্কিন ডলার, ইন্দোনেশিয়ায় ২ হাজার ১৬৩ কোটি মার্কিন ডলার এবং কম্বোডিয়ায় ৩৯৬ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আহরিত হয়েছে। একই বছর বাংলাদেশ ৩০০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ আহরণ করতে সমর্থ হয়। ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ২ শতাংশ হ্রাস পেলেও বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগে হ্রাসের হার ছিল পৌনে ১৪ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মোতাবেক, ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১ দশমিক ৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আহরণ করতে সক্ষম হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে ৮২ কোটি মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ আহরিত হয়েছে।

বিদেশি বিনিয়োগ আহরণের ক্ষেত্রে এই মন্থর গতি অর্থনীতিবিদদের ভাবিয়ে তুলেছে। অথচ বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি গন্তব্য হিসেবে পরিগণিত হবার দাবি রাখে। বাংলাদেশে রয়েছে ১৭ কোটি মানুষের বিশাল বাজার। পৃথিবীতে এমন অনেক অঞ্চল আছে যেখানে ৩/৪টি দেশ মিলেও ১৭ কোটি মানুষ নেই। বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা বাড়ছে। তিন দশক আগেও বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত পরিবারের সংখ্যা ছিল ১২ শতাংশ যা এখন ২০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। সার্বিকভাবে ভোগ ব্যয়ের প্রবণতা এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। এমনকি গ্রামীণ জনপদের মানুষগুলোও এখন শহরের মতো উন্নত জীবনযাপন করছে। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে শুল্ক হ্রাসের সুবিধা পাওয়া যায়। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত ২৭টি দেশে বাংলাদেশ থেকে পণ্য রপ্তানির জন্য কোনো শুল্ক প্রদান করতে হয় না। অনেকেই বলে থাকেন বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের পর্যাপ্ত সম্ভাবনা রয়েছে কারণ বাংলাদেশে সস্তায় শ্রমশক্তির নিশ্চিত জোগান রয়েছে; কিন্তু মনে রাখতে হবে, সস্তা শ্রম সব সময় বিনিয়োগের অনুকূল শর্ত হিসেবে বিবেচিত হয় না। কারণ দক্ষ এবং প্রশিক্ষিত শ্রমশক্তি কখনো সস্তায় পাওয়া যায় না। বাংলাদেশের শ্রমশক্তির বিরাট অংশই অপ্রশিক্ষিত এবং অদক্ষ। তাই তারা তুলনামূলক সস্তায় শ্রম বিক্রি করতে বাধ্য হন। এটা দেশের অভ্যন্তরে যেমন সত্যি তেমনি বিদেশি শ্রমশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রেও সমভাবে প্রযোজ্য।

স্থানীয় উদ্যোক্তাগণ নানা আইনি জটিলতার কারণে দেশের অভ্যন্তরে বিনিয়োগে বাধ্য হন; কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারীদের ক্ষেত্রে তেমন কোনো আইনি বাধ্যবাধকতা নেই। তারা চাইলেই বিনিয়োগ প্রস্তাব নিয়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলে যেতে পারেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীগণ হচ্ছেন শীতের অতিথি পাখির মতো। শীতের অতিথি পাখি যেমন কোনো জলাশয়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার এবং জীবনের নিরাপত্তা না পেলে আশ্রয় গ্রহণ করে না তেমনি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ মুনাফার সম্ভাবনা এবং অনুকূল বিনিয়োগ পরিবেশ না পেলে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন না। তারা একই সঙ্গে পুঁজির নিরাপত্তাও কামনা করেন। বিনিয়োগ সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী বিদেশি উদ্যোক্তাগণ নীতির ধারাবাহিকতা প্রত্যাশা করেছেন। সরকার পরিবর্তন হলেও যেন বিনিয়োগ নীতিমালার কোনো পরিবর্তন না হয় তারা সেটা প্রত্যাশা করেছেন।

বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থান এবং অন্যান্য কারণে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য আকর্ষণীয় গন্তব্যে পরিণত হতে পারে; কিন্তু বাস্তবে তা হচ্ছে না। বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে বহুমুখীকরণের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। কোনো উদ্যোক্তা এখানে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিলে প্রথমেই তারা তৈরি পোশাকশিল্প স্থাপনের কথা চিন্তা করেন; কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। ফলে এই শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে তুলনামূলক কম অবদান রাখছে। স্থানীয় কাঁচামালনির্ভর পণ্য উৎপাদনের প্রতি জোর দিতে হবে। কোনো বিনিয়োগ প্রস্তাব বাস্তবায়ন করতে হলে অনেকগুলো রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যেতে হয়। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। কোনো বিনিয়োগকারী প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছেন অথচ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের ঘুষ প্রদান করেননি এমন দৃষ্টান্ত সম্ভবত খুঁজে পাওয়া যাবে না। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করা না গেলে বিদেশি কেন স্থানীয় বিনিয়োগও কাঙ্ক্ষিতমাত্রা আহরণ করা যাবে না। বিশ্বব্যাংক তাদের সর্বশেষ ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৯০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ১৭৬তম স্থানে রেখেছিল। ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচক প্রণয়ন বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। তার পরিবর্তে সংস্থাটি স্টার্ট বিজনেস নামে একটি সূচক প্রকাশ করেছে। ৫০ দেশের অবস্থাকে বিবেচনায় নিয়ে এই সূচক প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশকে চতুর্থ সারিতে রাখা হয়েছে। বিদেশি বিনিয়োগকারীরা যখন কোনো দেশের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তার আগে সংশ্লিষ্ট দেশটির বাস্তব বিনিয়োগ পরিস্থিতি সম্পর্কে ভালোভাবে অনুসন্ধান করেন। কারণ বিনিয়োগ কোনো ছেলে খেলা নয়। বিনিয়োগ হচ্ছে একটি দীর্ঘমেয়াদি সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য প্রস্তাব নিয়ে এসে অনেকেই রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্নীতি আর হয়রানির শিকার হয়ে প্রস্তাব প্রত্যাহার করে চলে গেছেন এমন নজির রয়েছে অনেক।

বাংলাদেশে যেসব রাষ্ট্রীয় সেবামূলক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের একশ্রেণির কর্মকর্তা স্থানীয় অথবা বিদেশি বিনিয়োগকারী পেলেই তাদের হয়রানি করার সুযোগ গ্রহণ করেন। শত শত ‘ক্ষুধার্ত কুমির’ ভর্তি পুকুরে ছাগল ছেড়ে দিলে যে অবস্থা হতে পারে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে এসে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানে সেবা গ্রহণের জন্য গিয়ে ঠিক একই রকম অবস্থার মুখোমুখি হন। ছয় মাসের মধ্যে একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব বলে মনে করা হয়। তাই ব্যাংকগুলো প্রকল্পের অনুকূলে ঋণদানের পর সুদ নির্ধারণকালে ৬ মাস নির্মাণকালীন সুদ ধার্য করে থাকে। অর্থাৎ ব্যাংক মনে করে, যে কোনো প্রকল্প ৬ মাস সময়ের মধ্যে বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে পারবে; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের পর বাণিজ্যিক উৎপাদনে যেতে দেড় থেকে ২ বছর সময় প্রয়োজন হয়। এই সময়ের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদিত পণ্যের বাজার চাহিদার পরিবর্তিত হতে পারে। অন্য কোনো বিদেশি কোম্পানির পণ্য এসে বাজার দখল করে নিতে পারে। যতই বলা হোক বিনিয়োগ করুন কোনো কাজ হবে না যদি কার্যকর বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি করা সম্ভব না হয়।

যদি ব্যক্তি খাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিনিয়োগ না হয় তাহলে বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে আসবে না। কারণ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা কোনো দেশে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের হালহকিকত পর্যালোচনা করে থাকেন। বাংলাদেশে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করুণ পরিস্থিতি কারও দৃষ্টি এড়ানোর কথা নয়। সর্বশেষ মার্চ মাসে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৮২ শতাংশ। এটা বিগত ২৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের সরকার আমলে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধির ইতিবাচক প্রবণতা দেখানোর জন্য নানা কৌশলে বিনিয়োগের হার বাড়িয়ে দেখানো হতো। ব্যাংক ঋণের সুদের সর্বোচ্চ হার অনেক দিন ধরেই ৯ শতাংশে নির্ধারণ করে রাখা হয়েছিল। এমনকি একপর্যায়ে ব্যাংক ঋণের সর্বোচ্চ সুদ হার মূল্যস্ফীতির হারের চেয়ে কম ছিল। কয়েক বছর আগে এক মুদ্রানীতিতে ব্যক্তি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত ছিল ১৪ দশমিক ১ শতাংশ। আর অর্জিত হয়েছিল ১৪ দশমিক ৭ শতাংশ। একই সময়ে শিল্পে ব্যবহার্য কাঁচামাল ও মধ্যবর্তী পণ্য আমদানি হ্রাস পেয়েছিল ১৪ শতাংশ করে। আর ক্যাপিটাল মেশিনারিজ আমদানি কমেছিল ৭৬ শতাংশ। তার অর্থ হচ্ছে শিল্প স্থাপনের নামে ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করে তা অন্য খাতে প্রবাহিত করা হয়েছিল। এমনকি এই ঋণের অর্থ বিদেশে পাচার করার অভিযোগও রয়েছে।

বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নের জন্য সবার আগে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অভ্যন্তরীণ সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। কোনো পর্যায়েই কেউ যেন দুর্নীতি করে ছাড় না পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে। দলীয় সরকার আমলে দুর্নীতি এবং অনাচার বেশি হয়। তাই রাজনৈতিক দলগুলোকে দৃঢ় অঙ্গীকার করতে হবে তারা ক্ষমতায় গেলে কোনোভাবেই দুর্নীতিকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেবে না। এমন সব প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হবে যারা নিজেদের দুর্নীতি মুক্ত রেখেছেন এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সব সময়ই সোচ্চার। কেউ নির্বাচিত হয়ে দুর্নীতিতে জড়ালে তার পদ কেড়ে নেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। কেউ যাতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে কর্মরত থেকে দলীয় রাজনীতি চর্চা করতে না পারে তার ব্যবস্থা করতে হবে।

এম এ খালেক: সাবেক ব্যাংকার ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ