বাজেট ২০২৪-২৫
ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে
অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য বাজেট উপস্থাপন করেছেন। নতুন অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রণয়ন নিশ্চিতভাবেই ছিল খুবই দুরূহ একটি কাজ। নতুন অর্থমন্ত্রী সেই কাজটি বেশ দক্ষতার সঙ্গেই করেছেন।
নতুন অর্থবছরের (২০২৪-২৫) জন্য জাতীয় বাজেটে সবচেয়ে জটিল চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে এনে গণদুর্ভোগ হ্রাস করা। প্রস্তাবিত বাজেটে উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এগুলো সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হলেই জানা যাবে মূল্যস্ফীতি কতটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
এ মুহূর্তে বাজেটে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত না করা গেলে স্থানীয় এবং বিদেশি কোনো বিনিয়োগই কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় আহরিত হবে না। অনেক দিন ধরেই ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ স্থবির হয়ে আছে। দেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা নেই কিন্তু এক ধরনের অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে অনেক দিন ধরেই। জিডিপি যে হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ ঠিক সে অনুপাতে বৃদ্ধি পাচ্ছে না।
২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের হার ছিল জিডিপির ২৪ দশমিক ৫২ শতাংশ। পরবর্তী বছরে এটা কিছুটা হ্রাস পেয়ে ২৪ দশমিক ১৮ শতাংশে নেমে আসে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ হতে পারে জিডিপির ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধি হ্রাসের কারণে দেশে নতুন নতুন শিল্প-কারখানা গড়ে উঠছে না। এতে নতুন কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মসংস্থানের নতুন নতুন সুযোগ না হলে দারিদ্র্য বিমোচন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারিনি। স্থানীয় একটি বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের সাম্প্রতিক জরিপে প্রমাণ পেয়েছে দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যির পরিবেশের অধঃপতন ঘটেছে। কয়েক বছর আগে বিশ্বব্যাংকের ইজ অব ডুয়িং বিজনেস সূচকে ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ১৭৬তম। অর্থাং আমাদের দেশে ব্যবসায়-বাণিজ্যের অনুকূল পরিবেশ নেই। ফলে স্থানীয় এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে খুব একটা আগ্রহী হচ্ছে না।
২০২৪-২৫ অর্থবছরের জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ প্রবৃদ্ধির হার আরো কম প্রাক্কলন করেছে। ২০০৯-১০ অর্থবছর হতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৬ দশমিক ৭১ শতাংশ; এটি ছিল সেই সময় বিশ্বের যে কোনো দেশের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাঠানো রেমিট্যান্স আসা কমে গেছে। যদিও মে মাসে এ খাতে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়েছে; কিন্তু সার্বিকভাবে এই খাতের অবস্থা মোটেও ভালো নয়।
উচ্চ মূল্যস্ফীতিই অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে সমস্যা সৃষ্টি করেছে। গত দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে রয়েছে। মে মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর মধ্যে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ডাবল ডিজিটের ওপরে রয়েছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যর্থতা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না।
লেখক: অর্থনীতিবিদ, অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে