Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

নিরাপদ স্থানে গিয়ে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের হুমকি খামেনির

 VB  Desk

ভিবি ডেস্ক

রবিবার, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪

লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ইসরায়েলের হামলায় হিজবুল্লাহ প্রধান সাইয়েদ হাসান নাসরুল্লাহসহ তিন শীর্ষনেতা নিহত হওয়ার পর ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে দেশের ভেতরেই অজ্ঞাত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।  সেখান থেকেই ইহুদি দেশটির বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন খামেনি।

শুক্রবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বৈরুতের দক্ষিণ শহরতলি দাহিয়েহতে হিজবুল্লাহর সদর দপ্তরে বিমান হামলা চালিয়ে সেক্রেটারি জেনারেল হাসান নাসরাল্লাহ ও দক্ষিণ ফ্রন্ট কমান্ডার আলি কারাকির সঙ্গে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের ডেপুটি কমান্ডার আব্বাস নিলফোরৌশনকেও হত্যা করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। একদিন পর শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) একই ধরনের হামলায় নিহত হন গোষ্ঠীটির শীর্ষ গোয়েন্দা কমান্ডার হাসান খলিল ইয়াসিন।


সূত্রের বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, হিজবুল্লাহ প্রধান নিহতের ঘটনা নিশ্চিত হওয়ার পরপরই জরুরি পদক্ষেপ নিয়েছে ইরান। তাৎক্ষণিকভাবে সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে অজ্ঞাত নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণে লেবাননের হিজবুল্লাহ ও অন্য আঞ্চলিক প্রক্সি গ্রুপগুলোর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন ইরানের শীর্ষনেতা।

এ হামলার প্রতিশোধ নিতে বৈরুত ও তেহরানকে নির্দেশনাও দিয়েছেন তিনি। বিবৃতিতে খামেনি বলেন,  ‘প্রতিরোধ শক্তিগুলোই এই অঞ্চলের ভাগ্য নির্ধারণ করবে, হিজবুল্লাহ থাকবে এর সামনের সারিতে’। পৃথক আরেক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘শহীদের রক্তের প্রতিশোধ নেওয়া হবে’।

রয়টার্স বলছে, মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সবচেয়ে সশস্ত্র ও সুসজ্জিত মিত্র হিজবুল্লাহর ওপর ইসরায়েলের ধারাবাহিক ধ্বংসাত্মক আক্রমণের পর ইরানের শীর্ষ সিদ্ধান্তগ্রহণকারীকে রক্ষার পদক্ষেপ তেহরান কর্তৃপক্ষের শঙ্কিত অবস্থার প্রকাশ।


‘নাসরাল্লাহর মৃত্যু ইরানের জন্য একটি বড় ধরনের ধাক্কা। নাসরাল্লাহ হিজবুল্লাহকে আরব বিশ্বে ইরানের ছায়া বাহিনীগুলোর মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন।’

আঞ্চলিক এসব মিত্রদের নিয়ে গড়ে ওঠা ইরানের নেটওয়ার্ক ‘প্রতিরোধ অক্ষ’ হিসেবে পরিচিত। এই অক্ষে লেবাননের হিজবুল্লাহ থেকে শুরু করে ফিলিস্তিনের হামাস, ইরাকের ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া বাহিনীগুলো ও ইয়েমেনের হুতিরা আছে।

হাসান নাসরুল্লাহর নিহতের ঘটনায় পাঁচদিনের রাষ্ট্রীয় শোকও পালন করছে ইরান সরকার।

এক বছর ধরে চলমান গাজা যুদ্ধে ফিলিস্তিনের পক্ষ নিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে আন্তঃসীমান্ত সংঘাতে লিপ্ত রয়েছে ইরান সমর্থিত সশস্ত্র জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ। মাঝেমধ্যেই ইসরায়েলের ভেতরে ও দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকায় রকেট হামলা চালিয়ে আসছে হিজবুল্লাহ। লেবাননের বিভিন্ন জায়গায় হিজবুল্লাহ’র আস্তানাগুলোতে পাল্টা ধারাবাহিক হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েলি বাহিনীও। বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়া ওই সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের আরও বেশ কয়েকজন কমান্ডার।

হিজবুল্লাহকে নির্মূলে ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান ‘সর্বাত্মক ও চূড়ান্ত’ বিমান হামলা চলছে গত সোমবার থেকে, যাতে নিহত হয়েছেন অন্তত ছয় শতাধিক লেবাননি, যাদের অনেকেই হিজুবুল্লাহর সশস্ত্র যোদ্ধা। এমনকি লেবাননে দ্রুত স্থল অভিযানেরও ঘোষণা দিয়েছে আইডিএফ। এরও সপ্তাহ খানেক আগে লেবাননে পেজার এবং ওয়াকিটকিসহ নানা ধরনের তারহীন যন্ত্র বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। দুটি আলাদা ঘটনায় হাজার হাজার পেজার এবং রেডিও ডিভাইস বিস্ফোরিত হওয়ায় কমপক্ষে ৩৭ জন নিহত এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হন।

এই হামলার আগে হিজবুল্লাহকে 'সর্বোচ্চ শক্তি' দিয়ে আঘাত করতে সামরিক বাহিনীকে নির্দেশ দেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। শুক্রবার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনের ভাষণেও তিনি বলেন, লক্ষ্য অর্জনের আগে হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে তাদের অভিযান বন্ধ হবে না।

চলতি মাসে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড কোরের বরাত দিয়ে রয়টার্সের অন্য প্রতিবেদনে বলা হয়, ইরানের মতোই হিজবুল্লাহর কাছেও ইসলামের আদর্শিক অভিভাবক আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। হিজবুল্লাহর সদস্যদের ব্যবহার করা কয়েক হাজার পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণের পর ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ড কোর তাদের সব সদস্যদের যে কোনো ধরনের যোগাযোগ ডিভাইসের ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে।

অন্যদিকে বার্তা সংস্থা আনাদোলু জানিয়েছে, গত বছরের ৮ অক্টোবর হামাসের আন্তঃসীমান্ত আক্রমণের পরে শুরু হওয়া ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজা উপত্যকায় নিহত হয়েছেন ৪১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের বেশিরভাগই নারী এবং শিশু।


মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ