বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য কি খর্ব হতে চলেছে?
সম্প্রতি রাশিয়ার কাজানে ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হলো। ব্রাজিল, রাশিয়া, ইন্ডিয়া ও চীন এই চারটি দেশ মিলে প্রাথমিকভাবে ব্রিক গঠিত হয়েছিল। পরে সাউথ আফ্রিকা এই জোটে যোগদানের পর এর নামকরণ করা হয় ব্রিকস। গত বছর অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনের মাধ্যমে আরও ৫টি দেশ এই জোটে অন্তর্ভুক্ত হলে এর সদস্য সংখ্যা ১০-এ উন্নীত হয়। তবে জোটের নাম আগের মতোই ব্রিকস অব্যাহত রাখা হয়। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কাজান সম্মেলনে ব্রিকসের ১০টি সদস্য দেশ ছাড়াও আরও ২৫টি দেশ পর্যবেক্ষক হিসেবে যোগদান করে। এই পর্যবেক্ষক দেশগুলো যে কোনো সময় ব্রিকসের সদস্যা পদ লাভ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ব্রিকস মূলত একটি অর্থনৈতিক সহযোগিতামূলক জোট। যে দেশটি দেশ বর্তমানে ব্রিকসের পূর্ণাঙ্গ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদের জনসংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার ৫৭ শতাংশ। বিশ্ব জিডিপির ৪৭ শতাংশ এখন ব্রিকস দেশগুলোর অধিকারে রয়েছে।
ব্রিকসের চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য খর্ব করে একটি বহুমাত্রিক বিশ্ব অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ব্রিকস কোনো সামরিক জোট নয়। কারণ এতে যেসব দেশ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে তাদের মধ্যেই দ্বিপক্ষীয় সমস্যা রয়েছে। তাই তারা ইচ্ছে করলেই একটি সামরিক জোটে পরিণত হতে পারবে না। ব্রিকসের মূল লক্ষ্য হচ্ছে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। যে জোট আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে।
বিশ্বব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধোত্তর বিশ্ব অর্থনীতিকে পুনর্গঠনের উদ্দেশ্যে গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল মানিটারি ফান্ড (আইএমএফ) আইএমএফ বিশ্ব অর্থনীতিতে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখতে শুরু করে; কিন্তু এই সংস্থাটি শুরু থেকেই পুঁজিবাদী দেশগুলো, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ হাসিলে অবদান রেখে চলেছে। আইএমএফ এ পর্যন্ত কখনোই এমন একটি সিদ্ধান্তও গ্রহণ করেনি, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের পরিপন্থি। ১৯৪৭ সালের আগ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ পাউন্ডের দোর্দণ্ড প্রতাপ পরিলক্ষিত হতো। সেই সময় বিশ্বের অধিকাংশ দেশ তাদের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য,বিনিয়োগ এবং রিজার্ভ ব্রিটিশ পাউন্ডের মাধ্যমে সংরক্ষণ করত। আইএমএফ ব্রিটিশ পাউন্ডের পরিবর্তে বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ডলার প্রতিস্থাপন করতে উদ্যোগ গ্রহণ করে। তারা বিভিন্ন দেশে ঋণদানের সময় মার্কিন ডলারে ঋণ প্রদান করতে থাকে এবং ঋণের কিস্তি মার্কিন ডলারে পরিশোধের শর্তারোপ করে।
এমনকি মার্কিন ডলারের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংরক্ষণের জন্য শর্তারোপ করতে থাকে। যেমন, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর কিছুদিন ব্রিটিশ পাউন্ডের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক লেনদেন করছিল। এমনকি বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভও ব্রিটিশ পাউন্ডের মাধ্যমে সংরক্ষণ করা হতো; কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই বাংলাদেশ ব্রিটিশ পাউন্ডের পরিবর্তে মার্কিন ডলারে আন্তর্জাতিক লেনদেন শুরু করে এবং একই সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে।
বিশ্বের এমন কোনো দেশ সম্ভবত নেই যারা মার্কিন ডলার গ্রহণ করে না। বিশ্বে আন্তর্জাতিক মুদ্রা বলে কোনো মুদ্রা নেই। কিন্তু মার্কিন ডলার তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতার কারণে অনেকটাই আন্তর্জাতিকতা অর্জন করেছে। মার্কিন ডলার সবচেয়ে স্থিতিশীল একটি মুদ্রা। বিশ্বের প্রায় ৬০ শতাংশ রিজার্ভ মার্কিন ডলারে সংরক্ষিত হয়। পুঁজিবাদি ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখার একটি কৌশল হচ্ছে মার্কিন ডলার। মার্কিন ডলারের বিপরীতে বেশির ভাগ দেশ তাদের স্থানীয় মুদ্রার মান নির্ধারণ করে থাকে। মার্কিন ডলার যখন শক্তিশালী হয় তখন বিশ্বের অন্যান্য মুদ্রা, বিশেষ করে প্রতিযোগী দেশগুলোর স্থানীয় মুদ্রার মান নেমে যায়; কিন্তু বিস্ময়কর ব্যতিক্রম ঘটেছিল ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর। সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ তার মিত্র দেশগুলো রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাপক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমনি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকায় (ফেড) মার্কিন ডলারে সংরক্ষিত রাশিয়ান রিজার্ভ অর্থ আটকে দেয়া হয়। অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন এতে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলের ব্যাপক মূল্য পতন ঘটবে; কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত অবস্থাই পরিলক্ষিত হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র দেশগুলোর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার বিপরীতে রাশিয়া জ্বালানি তেল রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। এমন কি কোনো দেশ যদি রাশিয়ার জ্বালানি তেল আমদানি করে তার মূল্য রুবলের মাধ্যমে পরিশোধের শর্তারোপ করা হয়।
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব আমেরিকা উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য বারবার পলিসি রেট বাড়াতে থাকে। ফলে বিভিন্ন বন্ডে বিনিয়োগ আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় লাভজনক বিবেচিত হতে থাকে। যেসব মার্কিন নাগরিক বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ করেছিলেন তারা তাদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্ড ক্রয় করতে শুরু করে। ফলে মার্কিন ডলারের অবস্থান আগের তুলনায় আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে। অন্যদিকে রাশিয়ার রুবলও একই সময়ে শক্তিশালী হয়ে উঠে। মার্কিন ডলার ও রাশিয়ান রুবল একই সময়ে শক্তিশালী হয়ে ওঠার ঘটনা আগে আর কখনো প্রত্যক্ষ করা যায়নি। শক্তিশালী মুদ্রা বিশ্ব অর্থনীতিতে প্রভাব সৃষ্টির একটি বড় উপকরণ হিসেবে বিবেচিত হবার দাবি রাখে। অর্থনীতিবিদদের মতে,মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি এতটা শক্তিশালী হয়ে অবস্থান করার পেছনে মার্কিন ডলারের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের এই একচ্ছত্র আধিপত্য অন্য যে কোনো অর্থনীতির জন্য ইর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর আগে কোনো কোনো দেশ তাদের মুদ্রাকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালিয়েছে। এর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের একক মুদ্রা ইউরোর কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। ২০০০ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে একমাত্র ব্রিটেন ছাড়া অন্য সব দেশ একক মুদ্রা হিসেবে ইউরো গ্রহণ করে। তাদের প্রাথমিক লক্ষ্য ছিল পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যে বিশ্বের মোট রিজার্ভের অন্তত ১৫ শতাংশ ইউরোতে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তাদের সেই লক্ষ্য পূরণ হয়নি। অধিকাংশ দেশেই ইউরোর বিনিময় হার মার্কিন ডলারের তুলনায় বেশি। কিন্তু শুধু মূল্যমান দিয়ে একটি মুদ্রার গ্রহণযোগ্যতা বিবেচিত হয় না। কোনো কোনো দেশ, বিশেষ করে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হবার পর দ্বিপাক্ষিক মুদ্রার বিনিময়ে লেনদেন শুরু করে। কিন্তু সেখানেও তেমন একটা ফল লাভ হয়নি। মার্কিন ডলারের আধিপত্য স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় খর্ব করার খুবই কঠিন কাজ।
বিশ্বের অধিকাংশ দেশই স্থানীয় মুদ্রার মান নির্ধারণ করে মার্কিন ডলারের বিপরীতে। মার্কিন ডলারের সরবরাহ বৃদ্ধি জনিত কারণে চাহিদা কমে গেলে স্থানীয় মুদ্রার মূল্যমান বৃদ্ধি পায়। আবার মার্কিন ডলারের জোগান কমে গেলে বাজারে মার্কিন ডলারের অভাব পরিলক্ষিত হয়। সেই অবস্থায় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি পায়। সেই অবস্থায় আগের চেয়ে বেশি স্থানীয় মুদ্রার বিনিময়ে মার্কিন ডলার ক্রয় করতে হয়। স্থানীয় মুদ্রার সঙ্গে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি চালু আছে। এর মধ্যে তিনটি পদ্ধতিই সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। একটি হচ্ছে ফিক্সড বা নির্ধারিত বিনিময় হার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্দিষ্ট সময়ভিত্তিক মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ঠিক করে দেয়। সিডিউল ব্যাংক এবং মুদ্রা ব্যবসায়িরা সেই হার অনুযায়ী মার্কিন ডলার বিনিময় করে থাকে। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয় না।
ক্রলিং পেগ নামে এক পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করা হয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মার্কিন ডলারের বিনিময় হারের স্প্রেড নির্ধারণ করে দেয়। সেই স্প্রেডের মধ্যে সিডিউল ব্যাংকগুলো মার্কিন ডলার বিনিময় হার নির্ধারণ করে থাকে। যেমন, কিছু দিন আগে বাংলাদেশ ব্যাংক ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করে দেয় ১১৭ টাকা। সিডিউল ব্যাংকগুলো ১১৭ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণ করতে পারত। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের সুযোগ দেবার ফলে মাত্র এক দিনের ব্যবধানে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা থেকে ১১৭ টাকায় উন্নীত হয়। ক্রলিং পেগ পদ্ধতি অনেকটাই মুক্তবাজার পদ্ধতির কাছাকাছি একটি ব্যবস্থা। বিশ্বব্যাপী বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় হার নির্ধারণের সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি হচ্ছে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার নির্ধারণ পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা বাজারে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ করে না। সিডিউল ব্যাংকগুলো বাজারে মার্কিন ডলারের চাহিদা ও জোগানের ওপর ভিত্তি করে প্রতিদিনের দর নির্ধারণ করে থাকে। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা হলে স্থানীয় মুদ্রার প্রকৃত মূল্যমান নিরূপিত হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক এক সময় মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে প্রভাব বিস্তার করত। কোনো কারণে বাজারে মার্কিন ডলারের সঙ্কট দেখা দিলে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে কিছু মার্কিন ডলার বাজারে বিক্রি করে দিত। এতে বাজারে মার্কিন ডলারের সংকট কিছুটা হলেও দূর হতো। আবার কোনো কারণে বাজারে মার্কিন ডলারের জোগান বেড়ে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজার থেকে কিছু মার্কিন ডলার কিনে নিতো। কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃত্তিমভাবে মুদ্রা বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয়। মার্কিন ডলারের বিনিময় হার যদি কৃত্তিমভাবে নিয়ন্ত্রণ করে রাখা হয় তাহলে প্রবাসী আয় এবং পণ্য রপ্তানি খাতের আয় কমে যায়। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের কারণে প্রবাসী আয় এবং পণ্য রপ্তানি খাতের আয় উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল। নির্ধারিত বিনিময়হার বাজারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না।
বাংলাদেশ ব্যাংক যখন প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ১১০ টাকা নির্ধারণ করে রেখেছিল তখন খোলা বাজারে অর্থাৎ কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময় হার ছিল ১০ থেকে ১২২ টাকা পর্যন্ত। প্রবাসী বাংলাদেশিরা স্থানীয় মুদ্রায় বাড়তি অর্থ পাবার প্রত্যাশায় হুন্ডির মাধ্যমে প্রবাসী আয় দেশে পাঠাতো। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণের কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এখন বৈধ চ্যানেলে অর্থ দেশে প্রেরণ করছেন। গত কিছু দিন ধরে প্রবাসী আয়ের ক্ষেত্রে উলম্ফন ঘটেছে। এর মূল কারণ হলো বর্তমানে ব্যাংকিং চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার এবং কার্ব মার্কেটের বিনিময় হারের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নেই। ফলে প্রবাসী বাংলাদেশিরা বৈধ পথে রেমিট্যান্স প্রেরণ করছে।
ব্রিকস সম্মেলনে আগামীতে ব্রিকসের নিজস্ব মুদ্রা চালুর ব্যাপারে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আগের বারের সম্মেলনেই একক মুদ্রা চালার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু তা হয় নি। এখন ব্রিকস নেতৃবৃদ্ধ আগামীতে জোটভুক্ত দেশগুলোর জন্য একক মুদ্রা প্রচলনের ব্যাপারে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ব্রিকসের এই সিদ্ধান্ত আন্তর্জাতিক মুদ্রা বাজারের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ একটি ঘটনা। অনেকেই মনে করছেন, আগামীতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য খর্ব হওয়া এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র; কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, মার্কিন ডলার বর্তমানে বিশ্বব্যাপী যে অবস্থানে রয়েছে তা একদিনে সৃষ্টি হয়নি। আর সেই অবস্থান থেকে মার্কিন ডলারকে হটিয়ে দেয়াটা খুব একটা সহজ হবে না।
জনসংখ্যা অথবা অর্থনৈতিক শক্তি দিয়েই একটি দেশের মুদ্রার মান নির্ধারিত হয় না। যদি তাই হতো তাহলে ইউরো চালু হবার পর এত দিনে নিশ্চিতভাবেই মার্কিন ডলারের পতন শুরু হয়ে যেতো। ব্রিকস একক মুদ্রা জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আন্তঃবাণিজ্য এবং আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। কিন্তু তাই বলে বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের আধিপত্য খর্ব করবে এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। মার্কিন ডলার এবং ব্রিকস জোটের একক মুদ্রা পাশাপাশি চলতে থাকলেও মার্কিন ডলারের আধিপত্য খর্ব হবে না। কারণ ব্রিকস জোটের বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করার ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারই ব্যবহার করতে হবে। তাই মার্কিন ডলারের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হবার কোনো কিছু নেই।
এম এ খালেক: অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক পিএলসি ও অর্থনীতিবিষয়ক লেখক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে