ফিরে আসছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা?
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আবারও ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালতের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন এরই মধ্যে সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়ে গেছে। সুপ্রিম কোর্টের চলমান অবকাশকালীন ছুটির পরই এই আবেদন আদালতে জমা দেয়া হবে বলে জানা গেছে। রিভিউকারীদের আইনজীবী শরীফ ভূঁইয়া এ ব্যপারে ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে।
২০১১ সালের ১০ মে ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে তা বাতিল করেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। তবে পরবর্তী দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে মত দেন আদালত। আর এ ক্ষেত্রে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনে সংসদে ঐকমত্যের ভিত্তিতে যে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যেতে পারে বলেও জানিয়েছিলেন আদালত। তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ রায় দেন। তবে পূর্ণাঙ্গ রায়ে পরবর্তী দশম ও একাদশ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করা যেতে পারে বলে দেয়া মত সরিয়ে ফেলে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করা হয়। তাই আমরা ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ পিটিশন (আবেদন) করছি।
দেশের নির্বাচন ব্যবস্থা নিরপেক্ষ করতে এর কোনো বিকল্প নেই। এই বিষয়টি আমরা আবেদনে তুলে ধরেছি।’ ২০১১ সালের ১০ মে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তনে করা সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আদালত তার রায়ে বলেছিলেন, আপিল বিভাগের সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতেই আবেদনটি গৃহীত হয়েছে। এর মাধ্যমে সংবিধান (ত্রয়োদশ সংশোধনী) আইন ১৯৯৬ এই নির্দেশের পর থেকে অবৈধ ও সংবিধানবহির্ভূত ঘোষণা করা হলো। তবে আইনসম্মত না হলেও (প্রয়োজনের কারণে আইনসম্মত এবং জনগণের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন, রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন- সুপ্রাচীনকাল ধরে চলে আসা নীতিমালার ভিত্তিতে) আগামী দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল করা ত্রয়োদশ সংশোধনীর আওতায়ই হতে পারে।
এ সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিদের মধ্য থেকে অথবা আপিল বিভাগের বিচারপতিদের মধ্য থেকে একজনকে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়ার বিধানটি বাতিল করার পূর্ণ স্বাধীনতাও সংসদের থাকবে।’ একই সঙ্গে ২০০৫ সালে এ প্রসঙ্গে করা লিভ টু আপিলটিও খারিজ করা হলো বলে জানান আদালত। সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী জাতীয় সংসদে গৃহীত হয় ১৯৯৬ সালে। এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে অ্যাডভোকেট এম সলিম উল্লাহসহ তিনজন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট করেন। ওই বছরের ৪ আগস্ট হাইকোর্ট বিভাগ এ রিট খারিজ করেন এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে বৈধ ঘোষণা করেন।
এরপর ২০০৫ সালে এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ। দীর্ঘ বিরতির পর গত ১ মার্চ শুনানি শুরু হয়। আদালত এ মামলায় আট জন অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) নিয়োগ করে তাদের মতামত শোনেন। তাদের মধ্যে পাঁচ জন সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে মত দিয়েছেন। তারা হলেন ড. কামাল হোসেন, প্রয়াত টি এইচ খান, সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম ও ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। অন্য অ্যামিকাস কিউরি ব্যারিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পক্ষে মত দেন। প্রয়াত ব্যারিস্টার রফিক-উল-হক ও ড. এম জহির তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার আমূল সংস্কারের পক্ষে মত দিয়ে তাদের প্রস্তাব আদালতে তুলে ধরেন। এ ছাড়া তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল প্রয়াত মাহবুবে আলম তত্ত্বাবধায়ক সরকার রাখার পক্ষে মত দেন।
এদিকে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য করা রিভিউ আবেদন প্রস্তুতের বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ভিউজ বাংলাদেশকে বলেন, ‘আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদনের মাধ্যমে হোক বা সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে হোক, যে কোনোভাবেই এটা হতে পারে।’ আপনারা জানেন সংবিধান সংস্কারের জন্য বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এরই মধ্যে একটি কমিশন গঠন করেছে, যার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ড. শাহদীন মালিককে। তারাও তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। যদি তারা এটি যুক্তিসংগত মনে করেন।
এ ব্যাপারে ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘বর্তমান সংবিধান কিছু সংশোধন করতে হবে, না কি পুরো সংবিধানই নতুন করে লিখতে হবে- এ বিষয়ে মতভেদ আছে। এজন্য কমিশন হবে। এই কমিশন ঠিক করবে কি করতে হবে। এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের বিষয়টিও আসতে পারে। তাছাড়া আপিল বিভাগে রিভিউ করলে সেখানেও এটি সমাধান হতে পারে।’
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হওয়া নির্বাচনগুলো মোটামুটি নিরপেক্ষ ছিল। এটি বাতিল হওয়ার পর নির্বাচন ব্যবস্থাই ভেঙে পড়েছে। এটা আমরা সবাই দেখেছি। কোনো পলিটিক্যাল সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। তাই এ বিষয়ে আপিল বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে করা রিভিউ ঠিক আছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটি সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে করতে পারেন।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে