খোঁড়াখুঁড়ি থেকে কি মুক্তি নেই ঢাকাবাসীর?
বর্ষা এলেই রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয় ঢাকা শহরে। এবার বর্ষাটা আগেভাগেই এলো। মার্চের শুরু থেকেই নিয়মিত বৃষ্টি। মোহাম্মদপুর, মিরপুর, দক্ষিণখান, মতিঝিল, ওয়ারীসহ ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যেই খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়েছে। খোঁড়াখুঁড়ির ফলে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের পরিসর কমে যায়। ফলে একদিকে দেখা দিয়েছে তীব্র যানজট, অন্যদিকে পথগুলো কাদায় মাখামাখি। জ্যামের কারণে যাত্রীরা যখন ফুটপাত ধরে হাঁটতে যান তখন বাড়ি ফিরতে হয় কাদাপানি মেখে।
রোজার মাস। অনেকেই চান কর্মক্ষেত্র থেকে ইফতারের আগে বাড়ি ফিরবেন; কিন্তু খোঁড়াখুঁড়ির কারণে সৃষ্ট জ্যাম ও ভোগান্তি থেকে তাদের মুক্তি নেই। সামনে ঈদ। ফুটপাতগুলোও চলে গেছে হকারদের দখলে। এই পরিস্থিতিতে জনদুর্ভোগ কল্পনা করা যায়! এটাকে একটা নিয়তি হিসেবে মেনে নিয়েই ঢাকাবাসী পথ চলেন।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের তথ্য বলছে, গত ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার শতাধিক স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সরকারের অন্তত ১৩টি সংস্থা সড়ক খননের অনুমতি নিয়েছে। এসব কাজের অনেক এখনো চলমান। পাশাপাশি দুই সিটি করপোরেশনও বিভিন্ন এলাকার সড়কে উন্নয়নকাজ করছে। তবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন জানিয়েছে, জনদুর্ভোগ কমাতে ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ রোজায় নতুন করে সড়ক খননের অনুমতি না দেয়ার অনুরোধ করেছিল। তাই মার্চে নতুন করে কাউকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
রাস্তা মেরামত, পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, নর্দমা পরিষ্কার কাজে শহরে খোঁড়াখুঁড়ি অবশ্যই দরকার; কিন্তু তা কতকাল! কতদিন ধরে চলবে! সড়কে খনন করায় এবং পরে মেরামত কার্যক্রমে সমন্বয় ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার অভাবে ঢাকায় প্রতি বছরই দেখা দেয় জনদুর্ভোগ। সিটি করপোরেশনভুক্ত এলাকায় সড়কে খোঁড়াখুঁড়িতে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ঘটাতে ‘ঢাকা মহানগরীর সড়ক খনন নীতিমালা-২০১৯’ প্রণীত হয়েছে। দুই সিটি করপোরেশন ছাড়া ঢাকা ওয়াসা, তিতাস গ্যাস, ডিপিডিসি, ডেসকো, বিটিসিএলের মতামত ও সুপারিশ নিয়ে চূড়ান্ত করা হয়েছিল এটি।
নীতিমালা অনুযায়ী, কোনো সড়কের পুরোটা একসঙ্গে খোঁড়া যাবে না। মাসের পর মাস একটানা কোনো সড়ক খোঁড়া যাবে না। ১৫ দিনের কয়েকটি ভাগে ভাগ করে কাজ করতে হবে। ধুলাবালি উড়ে যাতে ভোগান্তি না হয়, সে জন্য নিয়মিত পানি ছিটাতে হবে। হলুদ বা লাল ফিতা দিয়ে খনন এলাকা ঘিরে রাখতে হবে। চলাচলে বিঘ্ন ঘটিয়ে মালামাল মজুত করে রাখা যাবে না।
সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে, গতকাল সোমবার (২ এপ্রিল) মোহাম্মদপুর, লালমাটিয়া, মিরপুর ও দক্ষিণখান ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার বিভিন্ন সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি চালাচ্ছে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা। কোনো কোনো সড়ক এক মাসের বেশি সময় ধরে খুঁড়ে রাখা হয়েছে। পথচারীদের চলতে কষ্ট হচ্ছে। উত্তোলন করা মাটি না সরানোয় চারদিকে ধুলার ছড়াছড়ি। যেখানে-সেখানে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী।
তাই আমরা বলতে চাই, এই ভোগান্তি থেকে ঢাকাবাসীকে মুক্তি দেয়া হোক। ঈদ যেন আনন্দময় হয় সেই ব্যবস্থা করা হোক। নির্বিঘ্নে, নিশ্চিন্তে যেন মানুষ যাতায়াত করতে পারে। সড়কে ভোগান্তি হলে ঘরেও অশান্তি হয়। এসব দুর্ভোগ মানুষের মনের ওপর কতটা চাপ ফেলে, পীড়া সৃষ্টি করে, তা যেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা অনুভব করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে