Views Bangladesh

Views Bangladesh Logo

সাকিব নামক ক্রিকেট মহাকাব্যের এটাই কি শেষ অধ্যায়?

Dulal Mahmud

দুলাল মাহমুদ

শুক্রবার, ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪

ব কিছুর মধ্যে একটি রহস্য রেখে দিয়ে মজা নিতে পছন্দ করেন সাকিব আল হাসান, যিনি বাংলাদেশের ক্রিকেটের 'পোস্টার বয়' হিসেবে পরিচিত। প্রতীকী অর্থে ধরা যাক, তিনি যদি 'বুমেরাং' নিক্ষেপ করেন, ঠিকই তা ঘুরে ঘুরে সবাইকে বিস্মিত করে আবার তার কাছে সাবলীলভাবে ফিরে আসবে। অনেকটা এ ধরনের চমক বা দক্ষতা দেখাতে তিনি পছন্দ করেন এবং তাতে ব্যাপক বিনোদন পেয়ে থাকেন।

একটি ঘোরপ্যাঁচ সৃষ্টি করে বিনোদিত হওয়ার পাশাপাশি কার্যসিদ্ধি করার ক্ষেত্রে তার জুড়ি নেই। এটাই তার স্বভাবের বৈশিষ্ট্য। তার মিচকি মিচকি হাসির মধ্যে লুকিয়ে থাকে দুষ্টুমি করার প্রবণতা। আর আছে অসম্ভবকে সম্ভব করার জাদুর কাঠি। ক্রিকেট মাঠেও তিনি কখন কী করবেন, তাও বোধকরি তার খেয়ালের ওপর নির্ভর করে। হয় ব্যাট হাতে রানের ফোয়ারা ছোটাবেন নতুবা বল হাতে ভেল্কিবাজি দেখাবেন। কখনো কখনো উভয় ক্ষেত্রেই বাজিমাত করেন।

সহজাত প্রতিভা বলতে যা বোঝায়, সেটাই সাকিব আল হাসান। বাংলাদেশে তো বটেই, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি যে মাইলফলক গড়েছেন, এ দেশের আর কারও পক্ষে তার কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব হয়নি। আগামীতেও আরেকজন সাকিব আল হাসান কবে আসবেন, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে; কিন্তু বেলা তো একসময় ফুরিয়ে যায়। তখন আর ভেল্কি দেখানো যায় না।

সাকিব নামের ক্রিকেটীয় সূর্য এখন অনেকটাই অস্তগামী। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই বলার বিষয়টি হাল আমলের চর্চিত বিষয়। কবে নাগাদ অবসর নেবেন, আগেই তার একটা আভাস কিন্তু কথায় কথায় দিয়েছিলেন। আগামী বছরের মধ্যে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেবেন, জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে এমন একটা ধারণা দিয়ে যান।

যদিও বিশ্বকাপের পর পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার বিষয়ে নানা মহলে আলোচনা হলেও তিনি তা ঝুলিয়ে রাখেন। আসলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে যাওয়ার পর ক্রিকেট খেলা তার কাছে প্রধান অগ্রাধিকার থাকেনি। এমনিতেই তিনি নানারকম কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে ফেলেন, এর মধ্যে সমালোচিত হওয়ার মতো একাধিক বিষয় রয়েছে। সেজন্য সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হওয়া খুবই স্বাভাবিক। এ অবস্থায় ক্রিকেটে তার মনোযোগ দেয়ার সুযোগ কোথায়?

কিন্তু সাকিব তো আর সহজ-সরল পথে চলার পাবলিক নন। একটি চমক সৃষ্টি করতে না পারলে স্বস্তি পান না। শেষ পর্যন্ত ভারতের কানপুরে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট খেলার আগে আচানক তবে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন, এরই মধ্যে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের সর্বশেষ ম্যাচ তার খেলা হয়ে গেছে; গেল জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলেছেন। তবে যথারীতি রেখে দিয়েছেন খানিকটা সাকিবীয় রহস্য। এমনটি না করলে আর তিনি সাকিব আল হাসান কেন? ব্যক্তিগতভাবে পারফরম্যান্স ভালো করতে পারলে ক্রিকেট বোর্ড চাইলে তিনি টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট খেলার জন্য ফিরে আসবেন। তেমন সম্ভাবনা কি আর আছে?

আগামী বছরের গোড়ার দিকে পাকিস্তানে আয়োজিত আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি দিয়ে তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারের অবসান ঘটবে, এ তথ্যও পুরোনো। তবে সব কথা কি আর ঠিকঠাক থাকবে? এ ছাড়া মোটামুটিভাবে একটি আলোচনা ছিল, পাকিস্তান কিংবা ভারত সফরে তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে সরে দাঁড়াতে পারেন। অথচ ভারত সফরের মাঝপথে তিনি জানালেন, আগামী মাসে দেশের মাটিতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনি তার টেস্ট ক্যারিয়ারের সমাপ্তি টানবেন। যদিও এই সফর এখনো নিশ্চিত হয়নি। এতেও কি সাকিবের রহস্যময়তার প্রতিফলন ঘটেনি? দেশে খেলার কথা বললেও বিদ্যমান অবস্থায় তা কতটা বাস্তবসম্মত? সেই সুযোগ কি তিনি আর পাবেন?

পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের সংসদ সদস্য হওয়ায় অনেকের ক্ষোভের কারণ হয়ে উঠেছেন সাকিব। তাকে খুনের মামলার আসামি করা হয়েছে। মাথায় খুনের মামলার খড়গ ঝোলা অবস্থায় তিনি কি দেশে ফিরতে পারবেন? সে ক্ষেত্রে গ্রেপ্তার হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই। তা ছাড়া তাকে হেস্তনেস্ত করার সম্ভাবনা একদম উড়িয়ে দেয়া যায় না। এই ঝুঁকি নিয়ে তিনি কি দেশে ফিরতে চাইবেন?

পরিণতি কী হতে পারে, সেটা সাকিব খুব ভালো করেই জানেন। তারপরও গুটি চাল দিয়ে পাল্টা চালের অপেক্ষায় ছিলেন। তার মোক্ষম জবাব তিনি পেয়ে গেছেন। যে ভরসায় তিনি দেশে ফিরে টেস্ট ম্যাচ খেলতে চাইছেন, নির্ভরতার সেই স্থান বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি ফারুক আহমেদ সোজাসাপটা জানিয়ে দিয়েছেন, 'সাকিবের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। তাকেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বোর্ড থেকে এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না। নির্দিষ্ট একজনকে ব্যক্তিগতভাবে নিরাপত্তা দেয়ার সামর্থ্য বিসিবির নেই'। এরপর কি সাকিবের কিছু করার থাকবে?

ক্রিকেট মাঠে অনেক কঠিন চ্যালেঞ্জ নিয়ে তাতে সফল হয়েছেন সাকিব; কিন্তু রাজনীতির মাঠ অনেক বেশি তপ্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি তার আনাড়ি খেলোয়াড়। এ যাবৎ তার যাপিত জীবন পর্যালোচনা করে এই সিদ্ধান্তে অন্তত আসা যায়, রাজনীতির মাঠে ঝুঁকি নেয়ার শক্তি-সামর্থ্য ও সাহস তার নেই। যদিও রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই; কিন্তু তা সাকিবের জন্য প্রযোজ্য হবে বলে মনে হয় না। তিনি পাল্লাপাল্লি করে রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়েছিলেন, মাথায় একটি পালক সংযুক্ত করতে। তাতে সফল হলেও এখন তার খেসারত দিতে হচ্ছে।

সার্বিক বিবেচনায় চলমান কানপুরেই হতে যাচ্ছে তার শেষ টেস্ট। এ কথা তো অস্বীকার করা যাবে না, কোনো কিছুই এখন তার অনুকূলে নেই। পান থেকে চুল খসলেই তাকে কাঠগড়ার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মানসিক অস্থিরতা নিয়ে কি ক্রিকেট খেলা সম্ভব? শুধু কি তাই? প্রবাসী হয়ে কত দিন আর খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন? কেন যেন মনে হচ্ছে, দেশের হয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিব নামক ক্রিকেট মহাকাব্যের এটাই হতে যাচ্ছে অন্তিম অধ্যায়? এরপর কি আর তাকে বাংলাদেশের পক্ষে খেলতে দেখা যাবে? সাকিব আল হাসান কী বলেন?

দুলাল মাহমুদ: লেখক, সম্পাদক, পাক্ষিক ক্রীড়াজগত।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ