সংকট নিরসনে ইশরাকের বিকল্প নেই: এলাকাবাসী

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের শেষ মেয়র ছিলেন খ্যাতিমান মুক্তিযোদ্ধা ও বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতা সাদেক হোসেন খোকা। আশির দশকে বামপন্থি রাজনীতি ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি হয়ে ওঠেন জাতীয় রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ মুখ। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকা মহানগর সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক হিসেবে তার সাহসিক নেতৃত্ব আজও ইতিহাসে স্মরণীয়। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে ভারতের বাবরি মসজিদ ভাঙার পর যখন বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, তখন পুরান ঢাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর সম্ভাব্য হামলা তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেই প্রতিহত হয়।

এই জনপ্রিয় নেতার ছেলে ইশরাক হোসেনও পিতার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। বিএনপির কঠিন সময়েও তিনি রাজপথে সক্রিয় থেকেছেন এবং জনসমর্থন ধরে রেখেছেন। সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইশরাক বিপুল জনপ্রিয় হলেও, ভোটে জিতে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়রের দায়িত্ব নেন। বিএনপির দাবি ভোটে এগিয়ে থাকলেও, ভোট কারচুপির কারণে শেষ পর্যন্ত ইশরাক বিজয়ী হতে পারেন না। তবে সরকারের পতনের পর আদালতের রায়ে ইশরাককে বৈধ মেয়র ঘোষণা করা হয়।

কিন্তু নানা প্রশাসনিক জটিলতার অজুহাতে এখন পর্যন্ত তাকে শপথ নিতে দেয়া হয়নি। এ নিয়ে নতুন করে উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিএনপি ও ইশরাকের সমর্থকরা দাবি তুলেছে- এই বিলম্ব অগণতান্ত্রিক এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, "নির্বাচন হলে এখনও ইশরাক বিপুল ভোটে জয়ী হবেন। তার শপথ না নেওয়ানো গণতন্ত্রের প্রতি চরম অবমাননা। মেয়রবিহীন সিটি করপোরেশন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।"

এদিকে বিদ্যুৎ কর্মচারী সমাজকল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, "আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও যারা ইশরাককে শপথ নিতে বাধা দিচ্ছেন, তাদের উচিত অতীত থেকে শিক্ষা নেওয়া। অন্যথায় তারা ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে স্থান পাবে।" স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল লতিফ বলেন, "বর্তমানে দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কার্যত স্থবির। জনসেবার স্বার্থে দ্রুত ইশরাক হোসেনকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া প্রয়োজন।"

জনগণের মতামতেও প্রতিফলিত হয়েছে একই সুর। ভিউজ বাংলাদেশের সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ মানুষ ইশরাককেই বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র সমাধান হিসেবে দেখছেন। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শাহাদাত হোসেন বলেন, "ইশরাক দায়িত্ব পেলে দক্ষিণ সিটির বহু সমস্যার সমাধান হবে। জনগণের দুঃখ-দুর্দশা লাঘব হবে।" ব্যবসায়ী রাজু আহমেদ বলেন, "সাদেক হোসেন খোকা ঢাকার উন্নয়নে দিনরাত কাজ করেছেন। তার ছেলেও যদি দায়িত্ব পান, নিশ্চয়ই জনগণের আশা পূরণ হবে।"

বর্তমান অবস্থায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে দ্রুত ইশরাক হোসেনকে শপথ করানো না হলে সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম আরও জটিল হয়ে পড়বে। একই সঙ্গে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ওপর আস্থা হারাবে সাধারণ মানুষ। জনগণের আস্থা ও আদালতের রায় মিলিয়ে স্পষ্ট, ইশরাক হোসেন এখন দক্ষিণ সিটির এক বৈধ মেয়র, যার দায়িত্ব নেওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার। এবং এই অপেক্ষা যত দীর্ঘ হবে, জনগণের ক্ষোভও তত বাড়বে বলেই মনে করেন দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাধারণ মানুষ।