এখনো রাজকীয় ঐতিহ্যের সাক্ষ্য দেয় ঈশ্বরীপুর হাম্মামখানা
সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার বংশীপুর গ্রামের ঐতিহাসিক গুরুত্ববাহী স্থাপনা ঈশ্বরীপুর হাম্মামখানা। ধ্বংসের মুখে চলে গেলেও এখনো ঐতিহ্যের সাক্ষ্য দেয় মুঘল সম্রাট আকবরের সমকালীন রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজকীয় স্থাপনাটি।
বংশীপুর শাহী মসজিদ থেকে অল্প দূরে যশোরেশ্বরী মন্দিরের পশ্চিম পাশের হাম্মামখানাটি ছিল বারো ভূঁইয়ার অন্যতম প্রভাবশালী রাজা প্রতাপাদিত্যের রাজকীয় অতিথিশালার অংশ।
বাংলাজুড়ে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্নপূরণে চার শতাব্দী আগে অতিথিশালাটি নির্মাণ করেছিলেন এই ভূস্বামী। অতিথিশালাটি ধবংস হয়ে গেলেও এখনো অক্ষত অবস্থায় টিকে রয়েছে হাম্মামখানাটি।
স্থানীয়দের কাছে এটি ‘হাবসিখানা’ নামেও পরিচিত। অট্টালিকার পাশে কূপ থাকায় ধারণা করা হয়, এখানে বন্দিদের আটকে রাখা হতো। তবে স্থাপত্যিক বিশ্লেষণে এটিকে স্নানাগার বলেই প্রতীয়মান হয়।
ষোড়শ শতকের শেষদিকে নির্মিত হাম্মামখানাটি জানালাবিহীন গম্বুজাকৃতির ভবন। ছাদের গম্বুজের ছিদ্রগুলো দিয়ে সূর্যের আলো ঢুকে পুরো ঘরকে আলোকিত করে তোলে। পশ্চিমে হাম্মামের সবচেয়ে বড় কক্ষটি মূল স্নানঘরের সমান আকৃতির। পশ্চিম দেয়ালের মাঝামাঝি অংশে রয়েছে প্রবেশপথ। কক্ষটির কেন্দ্রে একটি এবং চার কোণায় চারটি ছোট গম্বুজ রয়েছে।
হাম্মামখানায় রয়েছে তিনটি চৌবাচ্চা। প্রতিটিতে পাথর দিয়ে গরম করা পানি পৌঁছানোর ব্যবস্থাও ছিল। পূর্বের একটি ঘরে ছিল পানি গরম করার ব্যবস্থা, যা সরবরাহ করা হতো মাঝখানের চৌবাচ্চায়।
ভবনটির নির্মাণশৈলীতে ছিল পর্দার গুরুত্ব, যেন বাইরে থেকে ভেতরে দেখা সম্ভব না হয়। উত্তর ও দক্ষিণ দেয়ালের পশ্চিম পাশে রয়েছে দুটি ছোট দরজা।
কিভাবে আসতে হবে :
ঢাকা থেকে সরাসরি সাতক্ষীরায় যাওয়া যায় বিভিন্ন পরিবহনের বাসে। সাতক্ষীরা শহর থেকে লোকাল বাসে শ্যামনগরের বংশীপুরে পৌঁছে কয়েকশ’ মিটার হেঁটে পৌঁছানো যায় বংশীপুর শাহী মসজিদে। সেখান থেকে কিছুটা সামনে এগোলেই চোখে পড়ে ঈশ্বরীপুর হাম্মামখানা।
শ্যামনগরের স্থানীয় বাসিন্দারা হাম্মামখানার অবস্থান জানেন। তাই পথ নির্দেশনায় সমস্যার সম্ভাবনা নেই। সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ ভ্রমণের পথে ইচ্ছা করলেই ঘুরে দেখা যায় এই রাজকীয় স্থাপনাটি।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে