কালের নায়ক ইসমাইল আলী
বাংলাদেশের সমাজজীবনে অবিশ্বাসের বিষয়টি রন্ধ্রে রন্ধ্রে প্রবেশ করেছে। খাদ্যে ভেজাল, ওষুধে ভেজাল- যে যেভাবে পারছে মানুষকে ঠকাচ্ছে। বড় বড় দুর্নীতিও কম নেই। সমানে টাকা পাচার হচ্ছে দেশ থেকে। কোটি কোটি টাকার অনিয়ম হচ্ছে বড় বড় কোম্পানিতে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারির তো শেষ নেই।
এর মধ্যে পোড়োভূমিতে সুবাতাস নিয়ে এলো একটি বিশেষ খবর। যশোর শহরের ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের এক চালক ইসমাইল আলী রাস্তায় একটা টাকার থলি খুঁজে পেয়ে সেটা মালিককে ফেরত দিয়েছেন। থলিতে ছিল সাড়ে চার লাখ টাকা।
গতকাল শনিবার (৩০ মার্চ) একটি দৈনিক পত্রিকার ভেতরের পাতায় প্রকাশিত এ খবর আশা জাগানিয়া। এখনো যে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস আছে, এটাই তার প্রমাণ। এটাই মানুষের মহত্বের প্রমাণ। টাকার থলি পাওয়ার সময় ইসমাইল আলীর ইজিবাইকের যাত্রী ছিলেন আরেক যাত্রীও, তার নাম জানা যায়নি, ইসমাইল আলীর সঙ্গে তিনিও ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য, তিনিই টাকার মালিককে ইসমাইল আলীর সন্ধান দিয়েছিলেন।
ইজিবাইকের একজন চালকের দৈনিক আয় আর কতো? যশোর শহরে হয়তো তিনি পাঁচ-সাতশ টাকা আয় করেন। ইসমাইল আলীর বয়সও হয়েছে। তার বয়স ৫৮। এ বয়সে পরিবার-পরিজন নিয়ে তার বিশ্রামে থাকার কথা। রোজার দিন। তাও গাড়ি নিয়ে পথে বেরোতে হয়। মোড়ে মোড়ে খুঁজতে হয় যাত্রী।
সাড়ে চার লাখ টাকা তো ইসমাইল আলীর কাছে অনেক। তিনি টাকা ফেরত না দিলে কেউ জানত না। একমাত্র যে যাত্রী সাক্ষী ছিলেন, তাকেও টাকা ভাগযোগের সঙ্গী হিসেবে নিতে পারতেন। সেই যাত্রীও ইসমাইল হোসেনকে বিশ্বাস করে টাকা তার কাছে রেখেই চলে গিয়েছিলেন; কিন্তু ইসমাইল আলী টাকা পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে জানান।
টাকা পেলে টাকার মালিক খুশি হয়ে ইসমাইল আলী ও টাকার সন্ধান দেয়া ওই যাত্রীকে ২০ হাজার টাকা উপহার দেন; কিন্তু ইসমাইল আলী আসলে আরও অনেক বড় পুরস্কার পাওয়ার দাবিদার। তাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মান জানানো উচিত। কারণ, এই অবিশ্বাসের যুগে তিনি আমাদের বিশ্বাস ফিরিয়ে দিয়েছেন। টাকার অঙ্কে যা পরিমাপ করা যাবে না।
আজও এই বাংলাদেশে ইসমাইল আলীর মতো মানুষ রয়ে গেছেন। যারা সাধারণ হলেও আসলে অসাধারণ। তারাই আমাদের কালের নায়ক। এই নায়করাই বাঁচিয়ে রেখেছেন মানুষের মহত্ব।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে