ট্রাম্পের জন্য 'উপহার' হিসেবে লেবাননে যুদ্ধবিরতির 'পরিকল্পনা' ইসরায়েলের
ইসরায়েল দ্রুত লেবাননে যুদ্ধবিরতির চুক্তি করতে চায় বলে জানিয়েছে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ এক উপদেষ্টা।
কয়েকজন কর্মকর্তার বরাতে বিভিন্ন গণমাধ্যম জানায়, এ উদ্যোগটি ট্রাম্পের জন্য একটি বিদেশনীতি সফলতা হিসেবে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের কৌশলগত বিষয়ক মন্ত্রী রন ডারমার রোববার (১০ নভেম্বর) তার মার্কিন সফরের শুরুতেই ট্রাম্পের ফ্লোরিডার বাসভবন মার-এ-লাগোতে বৈঠক করেন। এরপর তিনি হোয়াইট হাউসে বাইডেন প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে লেবাননের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করবেন।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তা বলেন, 'ইসরায়েল ট্রাম্পকে উপহার হিসেবে কিছু দেবে...এমন একটা বোঝাপড়া হয়েছে। জানুয়ারিতে লেবানন নিয়ে একটি বোঝাপড়া হবে।"
ট্রাম্প বলেছেন, তিনি মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ বন্ধ করতে চান।
গত মাসে নেতানিয়াহুকে একটি ফোন কলের সময় তিনি বলেছেন, 'হিজবুল্লাহ ও হামাসের বিরুদ্ধে যা করার দরকার, তা করুন'। তবে মার-এ-লাগোতে আলোচিত লেবানন প্রস্তাবের গাজায় যুদ্ধবিরতি এবং আটক ব্যক্তিদের মুক্তির আলোচনায় কী প্রভাব ফেলবে, তা স্পষ্ট নয়।
ডারমারের অফিস জানিয়েছে, তিনি সফরে অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। তবে বিস্তারিত জানায়নি কিছু তার অফিস। নেতানিয়াহু, ট্রাম্প এবং কুশনারের মুখপাত্ররাও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
একজন ইসরায়েলি কর্মকর্তার মতে, নেতানিয়াহু নিয়মিত ট্রাম্পের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। এছাড়া, নেতানিয়াহুর মন্ত্রী রন ডারমার ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। উল্লেখ্য, কুশনার ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চারটি আরব দেশের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের চুক্তি সাফল্যের সঙ্গে বাস্তবায়নে ভূমিকা রেখেছিলেন এবং তিনি এখনও মধ্যপ্রাচ্যে ব্যক্তিগত ও আর্থিক সম্পর্ক বজায় রেখেছেন।
একজন সাবেক ট্রাম্প কর্মকর্তা জানান, সৌদি আরবের সঙ্গে ইসরায়েলের ভবিষ্যৎ সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের আলোচনায় কুশনার একটি পরামর্শক ভূমিকা পালন করতে পারেন। যদিও তিনি হোয়াইট হাউসে কোনো আনুষ্ঠানিক পদে নিযুক্ত না-ও হতে পারেন, তবু তার অভিজ্ঞতা ও মধ্যপ্রাচ্যের সঙ্গে সংযোগ এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
নেতানিয়াহুর কৌশলগত এই প্রস্তুতি ও ট্রাম্পের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, ইসরায়েলের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অগ্রগতির জন্য তিনি মার্কিন প্রশাসনের ভবিষ্যৎ পরিবর্তনের সুযোগ কাজে লাগাতে চান।
ইসরায়েলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, হিজবুল্লাহ যোদ্ধারা লেবাননের লিটানি নদীর উত্তরে সরে যাবে। লেবাননের সেনাবাহিনী সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করবে, যা পর্যবেক্ষণ করবে যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন।
হিজবুল্লাহর এক সূত্র জানিয়েছে, তারা সাময়িক যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি। তবে শর্ত হলো, ইসরায়েল লেবাননের ভেতরে কোনো অভিযান চালাতে পারবে না।
তবে, আলোচনার ব্যর্থতার ক্ষেত্রে ইসরায়েল লেবাননে স্থল অভিযানের পরিকল্পনাও প্রস্তুত রেখেছে বলে জানিয়েছেন এক সামরিক কর্মকর্তা।
ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চুক্তির শর্ত অনুযায়ী হিজবুল্লাহ যোদ্ধাদের লিটানি নদীর উত্তরে সরে যেতে হবে। এই অঞ্চলটি ২০০৬ সালের সংঘাতের পর জাতিসংঘ-পর্যবেক্ষিত বাফার জোন হিসাবে নির্ধারণ করা হয়।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে লেবানিজ যোদ্ধারা দক্ষিণ ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে আসছে। এতে ৪৫ জন বেসামরিক এবং ৩১ জন সৈন্য নিহত হয়েছেন। পাশাপাশি প্রায় ৬০ হাজার মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে।
ইসরায়েলের সামরিক অভিযানে প্রায় ৯ লাখ লেবানিজ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৩,৩০০ ছাড়িয়েছে। হিজবুল্লাহর দাবি, ইসরায়েলের স্থল অভিযানের আগে তাদের ৫০০ যোদ্ধা নিহত হয়েছে। অন্যদিকে, সংঘর্ষে ৪০ জনের বেশি ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছে।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে