গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে ৬০ জনের বেশি নিহত
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর টানা হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ৬০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও ১৫২ জন। এতে করে গাজায় মোট নিহতের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৫৫ জন ছাড়িয়ে গেছে, এবং আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১৭ হাজার ২৪৮ জনে। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।
আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ভোর থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান হামলা গভীর রাত পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। শুক্রবার ভোরেও হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে হতাহতের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স ও চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে সংবাদমাধ্যমটি জানায়, এই হামলায় উত্তর গাজার জাবালিয়া এলাকায় একই পরিবারের ১২ জন সদস্য নিহত হয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গত ২৪ ঘণ্টায় আহত ১৫২ জনকে বিভিন্ন হাসপাতালে নেয়া হয়েছে। তবে ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়া অনেকের কাছে উদ্ধারকারীরা পৌঁছাতে পারছেন না।’
অন্যদিকে বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে গাজায় মোট ৫১ হাজার ৩৫৫ জন নিহত হয়েছেন।
দীর্ঘ ১৫ মাসের সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়। এরপর প্রায় দুই মাস গাজায় শান্তি বিরাজ করলেও গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহার নিয়ে হামাসের সঙ্গে মতবিরোধের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় পুনরায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ১৮ মার্চ থেকে এখন পর্যন্ত নতুন করে ১ হাজার ৩৯১ জন নিহত এবং ৩ হাজার ৪৩৪ জন আহত হয়েছেন। এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে ভঙ্গ করেছে।
জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলের এই আক্রমণে গাজার ৮৫ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং ভূখণ্ডটির ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই হামলার ফলে গাজার বেসামরিক জনগণ, বিশেষ করে নারী ও শিশুরা, চরম মানবিক সংকটের মুখে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিরবতা এবং কার্যকর উদ্যোগের অভাবে গাজার মানবিক বিপর্যয় আরও ঘনীভূত হচ্ছে। খাবার, পানি, ওষুধ এবং চিকিৎসাসেবার চরম সংকটের মধ্যে প্রতিদিন বেড়েই চলেছে হতাহতের সংখ্যা।
এমন পরিস্থিতিতে যুদ্ধবিরতির কঠোর বাস্তবায়ন এবং অবিলম্বে মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে