Views Bangladesh Logo

ইসরায়েলি ধ্বংসযজ্ঞে উত্তর গাজা এখন ‘ভূতুড়ে অঞ্চল’

Kamrul  Ahsan

কামরুল আহসান

০২৩ সালের অক্টোবর মাসের শুরু থেকে ইসরায়েলি বাহিনী উত্তর গাজায় যে ভয়াবহ আক্রমণ চালিয়েছে তার ফলে এ পর্যন্ত ৫ হাজার মানুষ মারা গেছেন, ৯ হাজার ৫০ জন আহত হয়েছেন আরও হাজার হাজার মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন আর যারা এখনো ধুঁকে ধুঁকে টিকে আছেন তারা বলছেন, শহরটি পরিণত হয়েছে ‘ভূতেড়ে অঞ্চলে’। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।

গাজার সরকারি মিডিয়া গত রোববার এই ঘটনাকে ‘জাতিগত নির্মূলের, ধ্বংসের এবং মানুষকে বাস্তুচ্যুতি করার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে। তারা জানিয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনীর আক্রমণের ফলে গাজার কয়েক হাজার মানুষের জীবন একেবারে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।


আল জাজিরার এক প্রতিনিধি মধ্য গাজার থেকে রিপোর্ট করে জানিয়েছেন, উত্তর গাজা এখন ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞের ক্ষত বুকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। দূর থেকে দেখলে মনে হয় এক ‘ভূতুড়ে এলাকা’। কিছু মানুষ এখনো সেখানে ধুঁকে ধুঁকে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন। এত ধ্বংসযজ্ঞের পরও তারা বাড়িঘর ছেড়ে যেতে চাচ্ছেন না। সবচেয়ে বড় কথা, তারা কোথায় যাবেন?

আল জাজিরার প্রতিবেদক জানিয়েছেন, ‘গাজা উপত্যকার প্রতিটি স্থানেই ফিলিস্তিনিদের পরিকল্পিতভাবে হামলা করা হচ্ছে। বাড়িঘরে মানুষ থাকা সত্ত্বেও সেটা বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। এমন কি স্কুলে, আশ্রয়কেন্দ্রেও হামলা চালানো হচ্ছে। হাসপাতালও ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না।’


উত্তর গাজার সবচেয়ে জনপ্রিয় স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র কামাল আদওয়ান হাসপাতাল, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গত ডিসেম্বরেই হাসপাতালটি গুঁড়িয়ে গেছে। তারপর হাসপাতালের পরিচালক আবু সাফিয়াকে গ্রেপ্তার করে কোথায় নিয়ে গেছে তাও জানে না কেউ।


ইসরায়েলি রাজনীতিবিদ ও বসতি স্থাপনকারীরা এখন উত্তর গাজায় বসতি স্থাপন নিয়ে খোলাখুলিই কথা বলছেন। তাই এই অবরোধ ও হামলা কবে শেষ হবে তাও জানেন না গাজাবাসী। গত রোববার গাজা সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গত পাঁচ দিনেই হত্যা করেছে কমপক্ষে ৭০ শিশুকে।


মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গত রোববার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ২০ জানুয়ারি অফিস ছেড়ে যাওয়ার আগে জো বাইডেন গাজার জিম্মিদের মুক্তির বিষয়ে কিছু একটা করে যাবেন। যুদ্ধবিরতি চুক্তি করার আপ্রাণ চেষ্টা করছেন তিনি।

গাজা থেকে সৈন্য সরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল। কিন্তু তেল আবিবের ‘বাফার জোনে’ তাদের সৈন্য মোতায়েন থাকবে বলে জানিয়েছে। তার মানে ‘সরবে ঠিকই, থাকবে বসে নাকের ডগায়’, যেন চাইলেই যে কোনো মুহূর্তে আবার হামলা চালাতে পারে।


গাজা যুদ্ধ সহসা বন্ধ হবে এমন আশা ইসরায়েলি নেতারাও করে না, গাজার অধিবাসীরাও করে না। এর মধ্যে গাজার মানবিক বিপর্যয় চরম দশায় পতিত হয়েছে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, গাজাবাসীকে বাইরে থেকে সাহায্য করার সব পথ বন্ধ। খাদ্য, ওষুধপত্র ও জরুরি সেবার অভাবে গাজার শিশু, নারী ও বৃদ্ধরা ধুঁকে ধুঁকে মারা যাচ্ছেন এখন।

দুর্ভিক্ষের হাত থেকে বাঁচতে গাজার হাজার হাজার অধিবাসী খোলা আকাশের নিচে শরণার্থী শিবিরগুলোতে এসে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু খেয়ে বাঁচার চেয়েও তাদের জন্য বড় চিন্তার বিষয় হচ্ছে মানসিক চাপ থেকে বাঁচা। ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজার সব শিশুর জন্যই এখন মানসিক চিকিৎসা প্রয়োজন, যাদের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ। ইসরায়েলি বোমার আঘাতে-শব্দে, বারবার স্থান পরিবর্তন করার কারণে, বিপর্যয়কর পরিস্থিতির মধ্যে টিকে থাকার কারণে, তীব্র ঠান্ডায় শারীরিক যাতনার সঙ্গে শুরু হয়েছে তাদের মানসিক পীড়ন।

জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ১৬ মাসে প্রায় ১৯ হাজার শিশু এতিম হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে ২০৩ জন সাংবাদিক মারা গেছেন। গাজার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গত রোববার জানিয়েছেন, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৪৬ হাজার ৫৬৫ ফিলিস্তিনি মারা গেছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ৯ হাজার ৬৬০ জন। গত শনিবারেই ইসরায়েলি বাহিনী হত্যা করেছে ২৮ জনকে।

তথ্যসূত্র: আল জাজিরা

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ