Views Bangladesh Logo

গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান ইসরায়েলি লেখকদের

Kamrul  Ahsan

কামরুল আহসান

ঙ্গলবার সকাল থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা। গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা যায়, ১৮ মাস ধরে চলা এ যুদ্ধে এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৫১ হাজারে, আহতের সংখ্যা ১ লাখ ১৬ হাজার ৩৪৩ জন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ যুদ্ধে হামাস বাহিনী ১ হাজার ১৩৯ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। ২০০ জন ইসরায়েলি নাগরিক এখনো হামাস বাহিনীর জিম্মায় আছে বলে দাবি ইসরায়েলের।

চলতি বছরের জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর হলেও মার্চেই তা ভেঙে পড়ে। ইসরায়েলি বাহিনী এখনো গাজায় গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে। এই অমানবিক যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে বিশ্বজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, যুক্তরাষ্ট্র, মরোক্ক, তুরস্ক, বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। এবার প্রতিবাদকারীদের দলে যোগ দিলেন খোদ ইসরায়েলের লেখক-কবি-সাংবাদিকরা। ইসরায়েলি নেতাদের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে এক চিঠিতে সই করেছেন ইসরায়েলের কমপক্ষে ৩৫০ জন লেখক।

স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছেন ডেভিড গ্রসম্যান, শিফ্রা হর্ন, ফানিয়া ওজ-সালজবার্গার, ইহোশুয়া সোবোল, ইলান শেনফেল্ড, জেরুইয়া শালেভ এবং অন্যান্য লেখক, কবি, সম্পাদক, অনুবাদক, চিত্রকর এবং সাহিত্য-সম্পর্কিত পেশাজীবীরা। চিঠিতে লেখা হয়েছে, “জিম্মিদের ফেরত, বন্দীদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির জন্য একটি চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছে হামাস। প্রধানমন্ত্রী একটি চুক্তির রূপরেখা দিয়েছেন, যা পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে; কিন্তু চুক্তিটি ব্যর্থ করার জন্য গত ১৭ মাস ধরে তিনি সম্ভাব্য সবকিছু করেছেন। তিনি আসলে যুদ্ধ বন্ধ চান না, যুদ্ধই চান, কারণ যুদ্ধের অবসান মানে তার শাসনের অবসান।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, ‘নিজের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য, গ্রেপ্তারের আশঙ্কা এড়াতে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন কারণ তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন মামলা রয়েছে- প্রধানমন্ত্রী এখনো বন্দিদের স্বাধীনতা ছিনিয়ে নিচ্ছেন, আইডিএফ (ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনী) এর সৈনিকদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন। গাজার বেসামরিক জনগণের ওপর অতিরিক্ত ক্ষতি চাপিয়ে দিচ্ছেন। পাশাপাশি ইসরায়েলের ভেতর একটি সাংবিধানিক অভ্যুত্থান আরও তীব্র করছেন।’ এর আগে গাজা যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে নেতানিয়াহু বরাবর চিঠি লিখছিলেন ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর ১ হাজার প্যারাট্রুপার। তাদের সেই দাবিতে সমর্থন জানিয়েছিলেন ২৫০ জনের বেশি সাবেক মোসাদ কর্মকর্তা ও নিরাপত্তা কর্মী। সেই চিঠিতেও লেখা হয়েছিল, ‘ইসরায়েলের এই যুদ্ধ মূলত রাজনৈতিক ব্যক্তি ও স্বার্থ রক্ষার্থে। দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে নয়।’

সেই চিঠিতে সই করার পর সরকারের রোষানলে পড়েছিলেন তারা। তার জন্য তাদের চাকরি থেকে বরখাস্তের হুমকি দেয়া দেয়। ভয় পেয়ে ২৫ জন দস্তখত প্রত্যাহারও করে নেন; কিন্তু এর পরই গাজা যুদ্ধ বন্ধের তাদের সঙ্গে শামিল হয়েছেন ইসরায়েলের ২০০ সামরিক চিকিৎসক ও ১ হাজার শিক্ষাবিদ। এবার তাদের সঙ্গে যোগ দিলেন ৩৫০ জন কবি-সাহিত্যিক- লেখক-সাংবাদিক।

পাশাপাশি ইসরায়েলের বিভিন্ন স্থানে স্থানীয় অধিবাসী ও সাধারণ নাগরিকদের কাছ থেকেও প্রতিবাদলিপি ও বিক্ষোভের ডাক পাওয়া গেছে। তার মানে যুদ্ধ বন্ধের ডাক উঠছে এখন খোদ ইসরায়েলিদের থেকেই। একক ব্যক্তি বা রাজনৈতিক গোষ্ঠীর স্বার্থে যে যুদ্ধ চলমান, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি নাগরিকের মৃত্যু তার অবসান হয়তো এবার সত্যিই ঘটবে। তবে, শুধু যুদ্ধ না, গণহত্যার দায়ে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিহয়াহুর শাস্তি দাবিও তুলতে হবে এখন আন্তর্জাতিকভাবে।

সূত্র: দ্য টাইমস অব ইসরায়েল, আলজাজিরা।

মতামত দিন

মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে

ট্রেন্ডিং ভিউজ