ইরান ও ইসরায়েল যুদ্ধ এখনই নয়
দামাস্কাসে ইরানের দূতাবাসে ইসরায়েলের আক্রমণে ইরানের দুজন জেনারেল ও অন্য পাঁচ ঊর্ধ্বতন কর্মকতার নিহতের ঘটনার পর, ইরানও সম্প্রতি ইসরায়েলের ওপর আক্রমণ করেছে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, ইরান ইসরায়েলের ওপর তেমন বড় কোনো ক্ষতিসাধন করতে পারেনি। তবে কেউ আঘাত করলে ইরান যে সরাসরি প্রতিউত্তর দিতে পিছপা হবে না, সেটা যেই হোক না কেন, তা ইরান প্রতিষ্ঠিত করেছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং এমনকি জর্ডানও ইরানের মিসাইল আক্রমণ প্রতিহত করতে ইসরায়েলের সহায়তায় এগিয়ে আসে। ইরানের ছোড়া মিসাইল এক বিশাল অংশ তারা সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডানের আকাশপথেই ধ্বংস করতে সক্ষম হয়।
ইসরায়েলের উপকূলবর্তী এলাকায় ও আশপাশের এলাকাগুলোতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী ইরানের মিসাইল আক্রমণ প্রতিহত করতে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে। যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের সহায়তা দিয়ে এটা প্রমাণ করেছে যে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় তারা সদা প্রস্তুত। যদিও আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, এবারের ইরানের আক্রমণ প্রতিহত করতে ইসরায়েলের তেমন কোনো সাহায্যের প্রয়োজন ছিল না। যুক্তরাষ্ট্র ইরানের আক্রমণ প্রতিহত করে বুঝিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলকে আক্রমণ করলে ইরান একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বির সম্মুখীন হতে হবে।
মধ্যপ্রাচ্যে এখন স্নায়ু টানটান পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ ছড়িয়ে যাচ্ছে যে ইরান ও ইসরাইল কি এবার প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ল কি না! তেমনটা হলে ইতোমধ্যেই চাপে থাকা বৈশ্বিক অর্থনীতি আরও সমস্যার সম্মুখীন হবে। দুই পরমশত্রু আদৌ প্রত্যক্ষ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে কি না, সেটা নিয়ে উদ্বেগ চরমে থাকলেও, তেমনটা হওয়ার সম্ভাবনা আপাতত কম। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, পশ্চিমাদের জন্য- বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের কারণে এই যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার কৌশলগত পরিস্থিতি এখনো নেই। যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক বছর ধরে নিজেস্ব সৈন্যদের হতাহতের ঘটনা যে কোনো উপায়ে এড়িয়ে তার মিত্র বা অন্যদের সহায়তায় শক্তি প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করছে। ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের এই নীতি পরিষ্কার। ইউক্রেনকে অস্ত্র সরবরাহ করে, রাজনৈতিক কৌশল ও ইউক্রেনের পাশ্ববর্তী অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতি বৃদ্ধির মাধ্যমে ইউক্রেনের প্রতি রাশিয়ার আচরণ পরিবতনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইরাক, আফগানিস্তান ও ভিয়েতনামে প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে অনেক হতাহত, এমনকি বিব্রতকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হয়েছে। তাই নিশ্চিত বিজয় ও সংঘাত পরবর্তীকালে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে যুক্তরাষ্ট্র আপাতত প্রত্যক্ষ কোনো সংঘাতে জড়াবে না।
ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের কোনো আক্রমণে ওয়াশিংটন অংশগ্রহণ করবে না। তবে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা ও সুরক্ষায় ওয়াশিংটন সদা প্রস্তুত। ইরানের মিসাইল আক্রমণ প্রতিহত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা এক অর্থে যুক্তরাষ্ট্রের ধরি মাছ না ছুঁই পানি নীতিরই বহিঃপ্রকাশ। ইরানের মিসাইল আক্রমণের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের রুখে দাঁড়ানোর বিষয়টি ইসরায়েলকে সহায়তা নয় বরং ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান তুলে ধরা, ইরানকে হুমকি দেয়াই ছিল প্রধান লক্ষ্য।
ইরানকে নতজানু করতে পারলেই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের একনিষ্ঠ আধিপত্য নিশ্চিত হয়ে যায়। ইরান যে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রে আপামর কর্তৃত্বের জন্য একটি হুমকি, সেটা সবারই জানা। ইরানকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তার থেকে প্রতিহত করা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য খুবই জরুরি। আর গাজায় ইসরায়েলের চলমান গণহত্যার প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনে যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের কোনো শক্তিই মুখ খুলছে না, একমাত্র ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইসরায়েলের এই আচরণে কট্টর প্রতিবাদ জানিয়েছে। এর সঙ্গে ইয়েমেনের হুতিরাও সমুদ্রপথে ইসরায়েলি ও পশ্চিমাদের জাহাজ আক্রমণ ও প্রতিহতের মাধ্যমে গাজার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে। তাই ইরানকে প্রতিহত করতে মধ্যপ্রাচ্যে নিজ মিত্র, যারা আবার একই সঙ্গে ইরানের বিপক্ষীয় শক্তি, তাদের হাত মজবুত করে ইরানকে প্রতিহত করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র। ঠিক ইউক্রেনে যেমন রাশিয়ার বিরুদ্ধে করতে চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র্র। আর যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ব্যতীত অন্য পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সংঘাতে এগিয়ে আসবে না। তারাও যুক্তরাষ্ট্রের পন্থাই অবলম্বন করবে। তাই ইসরায়েলও আপাতত ইরানের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সংঘাতে যাবে না। এর আরেকটি বড় কারণ হলো, এখন ইসরায়েল ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়িয়ে গেলে বিষয়টা মধ্যপ্রাচ্যে, এমনকি বিশ্বব্যাপী ইরানের প্রতি সহানূভুতি ও সমর্থন বৃদ্ধি করবে কেবল। কারণ এসময়ে ইরানই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে গাজার জন্য সবচেয়ে বেশি সোচ্চার। ইসরায়েলের ইরানের ওপর আক্রমণ কেবল ইসরায়েলের স্বেচ্ছাচারিতা ও পশ্চিমাদের দ্বৈতনীতি আরও প্রকট করবে। যেটা পশ্চিমাদের বিশ্বব্যাপী প্রভাব আরও ক্ষুণ্ন করবে, যা ইতোমধ্যেই অনেকটাই বিশ্বব্যাপী দেখা যাচ্ছে। আফ্রিকা এর প্রধান উদাহরণ।
যুদ্ধ না বাধার আরেকটি কারণ হলো ইরান আর ইসরায়েল পার্শবর্তী বা বলা উচিত প্রতিবেশী রাষ্ট্র নয়। যে ইচ্ছে করলেই দুদেশ প্রত্যক্ষ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ল, যেমনটা আশঙ্কা পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে সর্বদা বিদ্যমান। ইরান-ইসরায়েলকে পরস্পরের ওপর কার্যকর আক্রমণ চালানোর জন্য পরস্পর প্রতিবেশী রাষ্ট্রের ভূমি ব্যবহার করতে হবে। যেমনটা কুয়েতের ভূমি ইরাকে আক্রমণের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহার করেছিল। ইরানের বিরুদ্ধে এই সুযোগটা করে দেয়ার কয়েকটি মধ্যপ্রাচ্য দেশের ইচ্ছে থাকলেও, সেই সুযোগটা ইসরায়েলকে দেয়ার কোনো জো নেই তাদের। তাহলে বিষয়টা আর ইরানের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নয় বরং ইসলামের শত্রুদের সঙ্গে আঁতাত করা হয়ে যাবে। এতে করে যে রাষ্ট্র ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে এ সুযোগ করে দিবে, সেই রাষ্ট্রের ক্ষমতাসীন সরকার নিজ জনগোষ্ঠীর সমর্থন হারাবে। এই সরকারগুলো এমনিতেই সর্বক্ষণ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার আশঙ্কায় থাকে বলেই নিজেদের যুক্তরাষ্ট্রের হাতে প্রায় বিকিয়ে দিয়েছে। যাতে তাদের একচ্ছত্র, একনায়কতান্ত্রিক শাসন টেকসই থাকে। তবে নিজ জনগণের প্রতিবাদের মুখে হয়তো যুক্তরাষ্ট্রও তাদের রক্ষা করতে পারবে না। আর এমনটি হলে যে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সমর্থন করবে, তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। আরব বসন্তের সময় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যব্যাপী গণতন্ত্র প্রতিস্থাপনের সুরে যেভাবে তাল মিলিয়ে ছিল, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর পুরোপুরি ভরসা করা কঠিনই বটে। এসব মিলিয়েই বলা যায়, ইসরায়েল কেবল ইরানের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন আক্রমণের টরেটক্কা লড়াইয়ে জড়িয়ে থাকবে। পরিস্থিতি পুরোপুরি ইসরায়েলের কিংবা বলা উচিত যুক্তরাষ্ট্রের অনুকূলে না আসা পর্যন্ত ইসরায়েল সহসা ইরানের সঙ্গে পুরোদস্তুর যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে চাইবে না।
ইসরায়েলের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ এড়ানোর আরেকটি কারণ হলো হিজবুল্লাহ। ইরানের সঙ্গে একপ্রান্তে যুদ্ধে জড়ালে হিজবুল্লাহ আরেক প্রান্তে ইসরায়েলের ওপর হামলা চালিয়ে দিতে পারে। এরকম দুপ্রান্তে কৌশলগত সমস্যা নিয়ে কোনো যুদ্ধে খুব একটা সুবিধা করা কঠিন। তাই হিজবুল্লাহকে নিঃশেষ কিংবা পুরোপুরি দুর্বল না করতে পারলে ইসরায়েল ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ এড়াতেই চাইবে। তবে, গাজা পরিস্থিতি নিয়ে ইসরায়েল বিশ্বব্যাপী যে সমালোচনার সম্মুখীন সেটা থেকে বিশ্ববাসীর মনোযোগ সরাতে ইরানের সঙ্গে সংঘাত একটি ভালো কৌশল। ইসরায়েল সেটা হাতছাড়া করবে না। এ জন্যই সামনে আমরা ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আরও ক্ষুদ্র পরিসরে আক্রমণ দেখব। সেটা ইরানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ওপর আক্রমণ ও হত্যা থেকে শুরু করে ইরানের মিত্র বাহিনী যেমন হিজবুল্লাহর ওপর জোরালো কোনো হামলার মতো ঘটনাও হতে পারে। তবে এ আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয় যে ইসরায়েল বেপরোয়া হয়ে ইরানের ওপর প্রত্যক্ষ কোনো বড় হামলা করে বসতে পারে।
নেতানিয়াহু এখন যেভাবে কারোই কথা শুনতে অপারগ এবং তার যুদ্ধপরিষদ ও মন্ত্রিসভায় যে ধরনের চরমপন্থিরা কর্মরত, তাদের জন্য হয়তো ইরানের ওপর বড় একটি হামলা চালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও অন্যদের জোর করে অনিচ্ছাকৃত একটি যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলার চেষ্টা করাটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ পশ্চিমা বিশ্ব এবং তার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের অনেকেই ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় তৎপর। আর ইরানের অধপতন সৌদি আরব ও আরও কয়েকটি মুসলিম রাষ্ট্র দেখতে উদগ্রীব। ইসরায়েল মূলত নেতানিয়াহু এমন একটি বেপরোয়া পদক্ষেপ যদি নিয়েই ফেলেন, তাহলে পরিস্থিতি যে কতটা ঘোলাটে হবে, সেটা বলে বোঝানোর উপায় নেই। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সামনে। নির্বাচন সামনে রেখে এমন ঘোলাটে পরিস্থিতি এড়িয়ে যেতে চাইবে ওয়াশিংটন। তাই নেতানয়াহুকে এরকম কিছু করা থেকে আপাততো থামাতে সব ধরনের তৎপরতা অবলম্বন করবে যুক্তরাষ্ট্র। ইউরোপও তাই করবে। আর ইউরোপের অর্থনীতির এখন যে অবস্থা, তাতে আরেকটি বৈশ্বিক সংঘাতে জড়িয়ে নিজের অবস্থা আরও কঠিন করতে চাইবে না তারা। ইতোমধ্যেই ইউক্রেন ও আফ্রিকার পরিস্থিতির জন্য তারা বেশ সমস্যায়ই ভুগছে।
কিন্তু পুরো পরিস্থিতিতে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজা থেকে সবার মনোযোগ সরানোর জন্য ওয়াশিংটন সুদানের কথা বলা শুরু করেছিল। সুদানের পরিস্থিতি নতুন নয় এবং অবশ্যই মনোনিবেশ ও গুরুত্বের দাবিদার। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের মুখে সুদানের কথা হঠাৎ শুনে এটা বোঝা যাচ্ছে যে, সুদানের প্রতি মমত্ব থেকে নয় বরং সবার মনোযোগ গাজা থেকে সরানোর জন্য এটা করছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের আক্রমণ তার এই কাজটা সহজ করে দিয়েছে। তাছাড়াও নিজ দেশে অমুসলিম যারা গাজার পরিস্থিতির জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সমালোচনা করছে, তাদেরও ইরানের হুমকির বিষয়টি একটু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের প্রতি কিছুটা নমনীয় করতে সহায়ক হবে। নির্বাচনের পর যদি ইসরায়েল-ইরান সংঘাতের অবনতি হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কৌশলগত সুবিধাজনক সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ হবে। আর নির্বাচনের আগে যদি কোনো অঘটন ঘটে যায়, তাহলে বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অত্যন্ত জটিল হলেও ইরানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘপ্রতিক্ষিত শক্তি প্রয়োগের যে তীব্র ইচ্ছা, সেটা বাস্তবায়নের পথটুকু উন্মোচিত হবে। তারপর যুক্তরাষ্ট্র কীভাবে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে সেটা নিজ স্বার্থে সুযোগের সদ্ব্যবহার করে সেটা দেখার বিষয়। তবে, যুক্তরাষ্ট্র যে এসব কৌশলে অত্যন্ত পারদর্শী, তা ঐতিহাসিকভাবেই প্রমাণিত।
ইরানের জন্য সবচেয়ে বড় মুশকিল হলো মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে তার কোনো প্রকৃত মিত্র নেই। হিজবুল্লাহর মতো মিত্র বাহিনী বা দল রয়েছে; কিন্তু কোনো মিত্র রাষ্ট্র নেই। ইরানের সেনাসংখ্যা সংরক্ষিত বাহিনীসহ এক হিসাবে প্রায় ৪১ মিলিয়ন। ইসরায়েলের সেটা ৩ মিলিয়ন। ইসরায়েলের কাছে হয়তো পারমাণবিক অস্ত্রও রয়েছে। আর ইরানের পারমাণবিক স্টেশনে আক্রমণ হলে সেটাও এক পারমাণবিক পরিস্থিতির উদ্রেক করতে পারে। আর ইরানকে কেবল ইসরায়েলের সঙ্গে নয়, পশ্চিমাদের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যেতে হতে পারে। ইরানের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতি অনেক বছর ধরে চাপের মুখে; আর সেটাও যুক্তরাষ্ট্রের প্রণীত নিষেধাজ্ঞার জন্যই। এত বড় পরিসরে একটি প্রত্যক্ষ যুদ্ধ ইরান দীর্ঘমেয়াদে সামলাতে পারবে কি না, সেটাও একটি বড় প্রশ্ন। তবে, এটা ধরে নেয়া যায় যে, ইরানের ওপর ইসরায়েল কোনো হামলা করলে ইরানব্যাপী জনগণের আবেগতাড়িত সমর্থন ইরান সরকারের প্রতি এবং পাল্টা আক্রমণ ও যুদ্ধ করার প্রতিই হবে।
ইরানের জনগণকে এ সরকারের বিপক্ষে প্ররোচিত করতে যুক্তরাষ্ট্র অনেক প্রয়াস অব্যাহত রেখেছে। সম্প্রতি ইরানে হিজাব ও হিজাব পুলিশ বিরোধী আন্দোলনে নারী অধিকারের নামে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন, এমনটি সহায়তা সেটার বড় প্রমাণ। ইরাকে যেমন এক বিশাল জনগোষ্ঠী সাদ্দামের বিপক্ষে থাকায় যুক্তরাষ্ট্র যত সহজে ইরাক ও সাদ্দামকে কাবু করতে পেরেছিল ইরানেও তেমন পরিস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিরোধী সশস্ত্র অভিযানে সহায়ক হবে। পরিস্থিতি তার ব্যতিরেকে হলে ইরানের বিরুদ্ধে কোনো সশস্ত্র অভিযানে সাফল্য পাওয়া কঠিন হবে। পরিস্থিতি সিরিয়া বা আফগানিস্তানের মতো হয়ে যাবে। সেটা কারোই কাম্য নয়। মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি সিরিয়া বা ইরাকের মতো পরিস্থিতি অঞ্চলটির নাজুক স্থিতিশীলতা ধ্বংস করে দিবে।
লেখক: রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক বিশ্লেষক।
মতামত দিন
মন্তব্য করতে প্রথমে আপনাকে লগইন করতে হবে